somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষের কাছে প্রকৃতির একটি খোলা চিঠি

০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় মানব সমাজ

আজ ভগ্ন হ্দয় নিয়ে তোমাদের কাছে লিখতে বসেছি। তোমরা আমরা সবচেয়ে প্রিয় সন্তান। অনেক আদরের সাথে একলক্ষ বছর পূর্বে তোমাদের আমি নতুন একটি প্রজাতি হিসেবে তৈরী করে দিয়েছি। আধুনিক মানুষ হিসেবে তোমরা আমার এই বুকে জেগে উঠেছো তাতে আমি কিন্তু অখুশীই নই বরং খুশিই হয়েছে। নিজেকে বেশ স্বার্থক মনে হয়েছিল তখন। তোমাদের প্রতি আমার এই অন্যরকম মমতার কারনে আজ এই ভগ্ন হ্রদয় নিয়ে তোমাদের কাছে আমার আর্তনাদ লিখতে হচ্ছে।

সৃষ্টিলগ্ন থেকেই আমি পৃথিবীর সবপ্রানীকে আগলে রেখেছি পরম মমতায়। এই মমতার সংঙ্গা তোমরা কোনদিন পরিপূর্নভাবে দিতে পারবে না। তোমাদের সকল চাহিদা মেটাতে আমি তৈরী করেছি খাদ্যশৃঙ্খল। আমার প্রিয় বন্ধু বৃক্ষকে দিয়েছি দীর্ঘ জীবন। তাকে ফলে ফুলে সুশোভিত করেছি। বাতাস দিয়েছি, উন্নত পানির ব্যাবস্থা করেছি। তোমাদের জীবনের সকল মৌলিক উপাদান আমি তোমাদের দিয়ে আসছি।মনে রেখ এই উপাদান গুলো আমার অস্তিত্ব জানান দিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি মুহুর্ত্বে। তোমরা হয়ত বেশ ভালভাবেই জানো তোমাদের সারাজীবনের চলার সবকটি উপাদান আমি তোমাদের দিয়ে দিয়েছি। তোমাদের শিক্ষিত করেছি। দিয়েছি নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা। তোমাদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা আমিই দান করেছি। তোমাদের জ্ঞানের সবোর্চ্ছ স্থানটি আমিই দিয়েছি। তাই আমি এও জানি তোমরাই আমাকে সবচেয়ে ভাল বুঝতে পার। তবু্‌ও আবার বলছি তোমরা আমার এই দান আর মহানুভবতা আরেকবার অনুভব করার চেষ্টা কর।

আজ তোমরা অনেক উন্নত হয়েছ। তোমাদের অংহকার আর গর্ববোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। তোমাদের সমাজবদ্ধ এই জীবন অনেক জটিল হয়ে গেছে। তাই তোমরা অনেকেই আমাকে ছাড়াই তোমাদের জীবন চালিয়ে নেওয়া চিন্তা করছো। আমার বুকচিরে তোমরা গঠন করেছ নগর বন্দর শহর। যেখানে গড়ে তোলেছ ইট পাথরে মোড়া জটিল একটি কর্পোরেট দুনিয়া।যেখানে তোমরা আমাকে ভুলে গেছ অথবা আমাকে দেখছো সেই দুনিয়ার শত্রুরুপে। কৃত্রিমতায় আর বিলাসিতায় ডুবিয়ে দিয়েছো তোমাদের জীবন। যুদ্ধ হানা হানি আর পুজিবাদের চক্রে পরে তোমরা ভুলে গেছ আমার দেওয়া সেই প্রাচীন শিক্ষাটুকু। যুগ যুগ ধরে কিছু মানুষ সেইটা উপলব্ধি করেছিল এখনও হয়তো করছে। খাদ্যে আজ তোমরা প্রায় স্বংয়সর্ম্পূন। তোমরা আমার পরিপূর্ন ব্যবহার করছো তাতে কিন্তু আমি বেশ খুশি। আমার মাটির সর্বোচ্ছ পুষ্টি আর শক্তিদিয়ে আমিও তোমাদের সাথে চেষ্টা করে যা্চ্ছি উৎপাদন বাড়ানোর। তোমরা সংখ্যায় বেড়েছো কিন্তু বেশ ভালোভাবেই আমাকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে এতদূর এগিয়ে এসেছো।

কিন্তু তোমরা আরও লোভি হয়ে গেলে। আমারই বিভিন্ন মৌলিক পদার্থ নিয়ে তোমাদের খুশিমত পদার্থ তৈরী করতে লাগলে। যে পদার্থগুলোকে আমি চিনিনা। এগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তাও আমি জানি না্। উদাহরন হিসেবে বলছি প্লাস্টিক জাতীয় পন্য অথবা রাসায়নিক সার। মাটি আমাকে প্রতিনিয়ত অভিযোগ করে যাচ্ছে সে এত রাসায়নিক উপাদান সে নিতে পারছে না। তোমাদের ও সে অভিযোগ করেছে। বিনিময়ে তাকে আরও রাসায়নিক সার দিয়েছো তোমরা। প্রতিদিন আমাকে মাটি আর তার উপর নির্ভরশীল জীবদের আর্তনাদ শুনতে হচ্ছে। তবুও আমি চুপ করে সয়ে যা্চ্ছি। তোমাদের সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা হল তোমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যা করছো কিন্তু সমাধানে ভার ছেড়ে দিচ্ছো আমার উপর। আমি তো তোমাদের নতুন এই উপাদান গুলো চিনিনা তাই আমি এর উপসারন কিভাবে করব? তোমার তাও সমাধান করার যদি উপায় বলতে আমি হয়ত চেষ্টা করতাম। তাই এগুলো আমাকে ধরে রাখতে হয়। আমার কি করার আছে?

তোমাদের ঘরে ঘরে আজ ইলেক্ট্রনিক্সের জয়জয়কার। এবারও একটু চিন্তা করতো আমি এগুলো কিভাবে অপসারন করবো? তোমরা এগুলো তৈরীর করার জন্য আমার বুক থেকে বালু নিয়ে যা্চ্ছো। অথচ তা ব্যবহারের পর আমাকে কি দিচ্ছো? আমার বুকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেো এই সব আর্বজনা।এগুলো কিন্তু আমার কাছেও আর্বজনা কারন আমি এগুলোর ব্যবহার জানিনা। অথচ তোমরা এগুলো ফেলে দাও এমন ভাবে যেন আমিই এর অপসারন করব।

আজ ইটপাথরের গড়া দালানে তোমরা বাস করো। তাও আবার আমার প্রিয় সন্তান বৃক্ষকে জবাই করে। যে তোমাদের খাদ্য উর্পাজনের জন্য নিজের সারাটি জীবন দান করে তার সাথে তোমাদের এই আচরন জুলুমের মত। তোমাদের জন্য আমি যে জীবন শৃ্ঙ্খল তৈরী করেছিলাম তা তোমারা অনেক আগেই ভেঙ্গে ফেলেছো। এই অতি ব্যবহার আমার উপরতো প্রভাব ফেলবেই তাই না।

কার্বন আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং আপনজন। সেই আপনজনই তোমাদের সৃষ্টির মূল উপাদান তা তোমরা জানো। আর আজ তোমরা তার যথেচ্ছ ব্যবহার করে আমারই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছো। কার্বন-ডাই-অক্সাইড অধিক উৎপাদন করেছো। তাতে আমার উপর একটি আবরন সৃষ্টি করেছো যা আমাকে দিনকে দিন উত্তপ্ত করে দিচ্ছে। যার ফলাফল হল সামুদ্রিক পানি উচ্চতা বৃদ্ধি। তা ইতিমধ্যেই তোমরা টের পাচ্ছ। কার্বন-ডাই-অক্সাইড কে কিন্তু আমি কাজে লাগাতে পারি। কিন্তু এর অতিরিক্ত উৎপাদন আমি কিভাবে কাজে লাগাবো? আমারওতো একটি সীমা আছে। তারপরও কার্বন-ডাই-অক্সাইড হলে তাও ভাল ছিল তোমরা আর কতধরনে রাসায়নিক উপাদান তৈরী করছো।আমি আমার সর্বোচ্ছ শক্তি দিয়েও সেগুলো আমার বুকে মিশাতে পারিনি। আর তারা আমার প্রিয় ওজোন স্থর কে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

সব জীবনই আমার কাছে পরমপ্রিয়। আমাকে সবারই দেখভাল করতে হয়। তাই সবার ভালোর জন্যই আমাকে মাঝে মাঝে রুক্ষ আচরন করতে হয়। তাই আমাকে ভারসাম্য রক্ষায় ঘুর্নিঝড়, ভুমিকম্প আর ঝড় ঝাপ্টা। এগুলো অনেক আগেই ছিল আমার মধ্যে কিন্তু ইদানিং আমি এর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছ।তোমাদের নিয়েই তো আমার এই আদরের সংসার। সবাই আমার কাছে চায়। আমিও সবাইকেই আমার মমতা সমান ভাবে দিতে চাই। উন্নত প্রানী হিসেবে তোমরা হয়ত আমার কাছে একটু বেশিই দাবী কর।আমিও কিন্তু কিছুটা বেশিই দিই তোমাদের। কিন্তু বিনিময়ে তোমরা কি করো? সমস্যা তৈরী করে সমাধানে ভার দিয়ে দাও আমার উপর। এটা বড়ই স্বার্থপর আচরন। এই স্বার্থপরতা আমি তোমাদের শেখাতে চাইনি। জটিল জীবনের জটিলতা মেটাতে তোমরা আমার উপর চড়াও হয়েছো। তাতেও আমি সয়ে গেছি, তোমাদের দিয়েছি, আরও দিয়ে যাবো।
নির্মম হলেও সত্য যে আজ তোমরা জানো আমিকে কিভাবে ধ্বংস করতে হয়। আজ তোমরা পারমানবিক শক্তি সম্পন্ন। যার এক একটি ক্ষত আমি আমার সারাজীবনেও সারাতে পারব না। আমার পক্ষে তা সম্ভব নয় তা তোমাদের আমি অনেক বারই বলেছি। তাই আজ আমি তোমাদের কাছে বড়ই অসহায়।

তোমরা নিজেকে উন্নত করেছো আমাকে শোষন করে। আমাকে ব্যবহার করে পেয়েছো বিলাসবহুল জীবন। আমার বুকচিরে তোমরা গড়েছো তোমাদের কর্পোরেট জটিল জীবন। সেই আমাকে ধ্বংস করলে মনে রেখ তোমাদের ফল কখনও ভাল হবে না। আমার ক্ষমতা কিন্তু কম নয়। আজ ব্যাথ্যাহত হ্রদয়েই তোমাদের এই হুমকিটুকু দিতে হচ্ছে। কারন আমি আজ আশাহত। কার্বন নিঃসরনের মাএা তোমরা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েও এই ২০১১ সালেই তোমরা আমার ইতিহাসে সর্বোচ্ছ কার্বন নিঃসরন করেছো। কতবার আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আমাকে দেবে? আমি কি করতে পারি তা তোমার জাপানে দেখেছো। সবার প্রতি আমার এই রুক্ষ আচরন তোমাদের অমানবিক আচরনের জন্যই। আর হয়তো হবে এরকম দূর্যোগ তোমরা তার জন্য প্রস্তুত থেকো। আজ আমার কান্না আর আর্তনাদ যদি শক্তিতে পরিণিত করে তবে তোমাদের জীবিত থাকার কোন উপায়ই কিন্তু থাকবে না। কারন তোমরা এখনও আমার উপর নির্ভরশীল।

মা সন্তানকে আগলে রাখে ভালবাসে সে যতই খারাপ হোক না কেন। তোমরা এতকাল খারাপ ছিল না আমার জন্য কিন্তু আমার জন্য কিন্তু শেষ কিছু দিন তোমরা আমার উপর রীতিমত অত্যাচার শুরু করেছো। আমি মুখ বুঝে সব সহ্য করে গেছি, আর যাবো। কারন আমি যে তোমাদের মা। তোমাদের আমি ভালবাসি।আমি সকল জীব জগতে মা তাই সবার খেয়াল আর ভাল খারাপের খবরই আমাকে রাখতে হয়। তোমরা তোমাদের এই মাতার প্রতি নির্দয় হয়ো না। তোমাদের কাছে এই আমার নিবেদন।

আমি তোমাদের পাশে আছি পাশে থাকবো। প্রতিদিন তোমাদের জন্য নিয়ে আসব সূর্যময় একটি সুন্দর দিন, একটি পূনিমায় ময় রাত, সমুদ্রে গোধুলি রেখা আর আকাশের কোনে লেগে থাকে এক টুকরো মেঘ। বিভিন্ন প্রানীর নানা সুরে গেয়ে যাওয়া গান। শুধু তোমরা আমাকে একটু ভালবাস, আমার পাশে থাকো।


ইতি
তোমাদের পরমপ্রিয়
এই প্রকৃতি।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×