somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈচিত্রময় বৃক্ষ পর্ব-১

০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রকৃতি এই বন্ধুটিকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে দিয়েছে আমাদের জন্য। কিছু কিছু গাছ আছে যা আমাদের কাছে বড়ই অদ্ভুত আর তাদের আচরণও বৈচিত্রময় মনে হয়। সেই সব কিছু গাছ নিয়ে আজকের এই প্রথম পর্ব:





বাওবাব গাছ(Baobab tree)


গাছটি ছিল স্বর্গে। তো একদিন গাছটির উপর কুনজর পড়ল শয়তানের।তার মাথায় চাপল বদ খেয়াল। গাছটিকে উপুড় করে সে ফেলে দিল দুনিয়ার মাটিতে।তারপর থেকে তার সব ডালপালা নিচে আর তার শেকড়গুলো ছড়িয়ে দিল আকাশে।
এই ছিল বাওবাবের উৎপত্তির মজার গল্প। আসলে গাছটিকে দেখলে এমনই মনে হবে যে কারু। কেউ যেন তাকে উল্টো করে মাটিতে পুতে দিয়েছে।এদের কান্ড হয় প্রকান্ড ড্রামের মত গোল আর তা বেশ মোটা। প্রায় নয় মিটার কিংবা তার থেকেও বেশি থাকে গোড়ার বেড়। গোড়াটা এমন ব্যারেল মত মোটা হলেও গাছটির উচ্চতা কিন্তু বেশি নয়।আর এই কান্ডতে থাকে গ্যালেন গ্যালেন পানি।
এই গাছের ফলটি খেতে বেশ মজা। দেখতে আমাদের লাউএর মত। আবার ওপরটা শুকনো। এই ফলগুলো বানরের খুবই প্রিয় খাদ্য।
শুধু ফলই নয় এই গাছের গোটা অংশটাই মজার। বাকল খুব পুরু হয়। বাকল থেকে লম্বা লম্বা আশ বের হয় যা থেকে রশি আর কাপড় বানানো যায়।
সবচেয়ে মজার কথা হল এত বড় সড় হলে কি হবে। এর কান্ড কিন্তু খুব নরম এবং অনেক হালকা। যে কোন জীবজন্তু বা পাখি খুব সহজেই এর কান্ডতে গর্ত করে ফেলতে পারে। মানুষ অনেক সময় এদের গোড়ায় গর্ত করে মজার বিশ্রামাগার বানায়।
বাওবাব গাছ দেখা যায় সাধারণত আফ্রিকায়। তবে এক একটি জাত ভাই অস্ট্রেলিয়াতেও আছে। সেখানে একে বোতল বৃক্ষ বলে। কারন এর কান্ড দেখতে বোতলের মতই।



লজ্জাবতী গাছ(touch-me-not):

এই গাছটিকে আমরা সবাই চিনি।এদের লজ্জার কথা আমরা সবাই জানি। লাজুক মানুষ যেমন কারো সাথে কথা বলতে বলতে লজ্জায় মাথা হেট করে ফেলে তেমনি এই লজ্জাবতি গাছ ও। যেহেতু তার মাথা নেই তাই কারু শরীরে স্পর্শেই এই তার ডালপালা সব গুটিয়ে নিয়ে আসে। বিজ্ঞানী মহলেও কিন্তু গাছটি বেশ জনপ্রিয় তার লজ্জার জন্য।



কিন্তু কেন সে এতো লজ্জা পায়?
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য:- একটু লক্ষ করলেই দেখা যায় এই গাছে পাতার গোড়াটা একটু ফোলা থাকে। সেই ফোলা অংশের ভিতরে থাকে বড় বড় কোষ। এসব কোষ যখন জলভর্তি থাকে তখন পাতার বোটা ফুলে থাকে এবং ডাটা সোজা থাকে। কিন্তু যখন কেউ একে স্পর্শ করে তখন এর সারা গায়ে এক প্রকার বিদুৎপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। এদের শরীরে অ্যাসিটাইলিন কোলিন নামে এক প্রকারের রাসায়নিক পদার্থ আছে। এই অ্যাসিটাইলিন কোলিন পদার্থের মাধ্যমে বিদুৎপ্রবাহ সারা গায়ে ছড়িয়ে পড়ে।
তখন এই রাসায়নিক পদার্থ দ্রুত এক কোষ থেকে আরে কোষে ছুটতে থাকে এর ফলে গাছের কোষ থেকে খনিজলবন বেরিয়ে যায়। আর খনিজ লবন বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যে পানি জমা ছিল তাও বের হয়ে আসে। এর ফলে গাছের কোষ গুলো চুপসে যা্য়। ফলে এদের শক্তি আর চাপ কমে আসে। তখন গাছের পাতাগুলো শুক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়ে নুয়ে পড়ে।
এই অবস্থায় বেশ কিছুক্ষন থাকে। আবার যখন বিদুৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় কখন কোষ গুলো পানি আবার জমা হতে শুরু করে, গাছটি আবার সোজা হয়ে দাড়ায়।


অতি লজ্জাবতি গাছ (Telegraphic Tree)
তবে গাছটি সত্যিকার না কিন্তু এটি নয়। একে বলা হয় টেলিগ্রাফিক ট্রি(Telegraphic Tree), বৈজ্ঞানিক নাম ‘ভেসমেডিয়াম গাইরানস’। এদের স্বভাবটাও আমাদের দেশের লজ্জাবতী গাছের মতোই।তবে তার লজ্জা একটু বেশি। লজ্জাবতী গাছের পাতা ছুয়ে দিলেই লজ্জায় নুয়ে পড়ে। আর এই গাছগুলোর কে ছুয়ে দেবারও দরকার হয়না। কাছে গিয়ে তুড়ি মারলে শব্দ শুনেই লজ্জায় কুঁকড়ে যায়।এতো লজ্জা তার।



পথিক বন্ধু গাছ(The Travellers Tree)

এটিও একটি বিচিত্র প্রজাতীর গাছ। এদের সত্যিকার নাম র‍্যাভেনাল(Ravenala) গাছ্
এদের নামকরনের কারন হল পথিকে দের জন্য এই গাছটি সরবরাহ করে ঠান্ডা পানি। পথের মাঝে ক্লান্ত আর তৃষ্ঞার্ত পথিকরা এই গাছের কাছে এসে তাদের ক্লান্তি দূর করে।


গাছগুলো তাদের মোটা কান্ডে পানি ধরে রাখে।এবং খরার সময় তা কাজে লাগায়। গাছগুলো আদি জন্মস্থান মাদাগাস্কার দ্বীপে। দেখতে অবিকল প্রায় আমাদের দেশের কলা গাছের মত, তবে এদের কান্ড আছে। পাতাগুলো কলা পাতার মত বিশাল।
অনেকেই মনে করে এই গাছটি নিজেরাই পানি তৈরী করতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন অন্য তথ্য এরা নিজেরা পানি তৈরী করতে পারেনা। যখন বৃষ্টি হয় তখন বিশাল আকারের পাতার সাহায্যে পানি ধরে রাখে।এই ধরে রাখার পানিই ক্লান্ত পথিকেরা পান করে।
র‍্যাভনোলা গাছ থেকে শুধু পানীয় পানিই পাওয়া যায় না, এর বিচিও মানুষের খাদ্য তালিকার অন্তভুর্ক্ত।এর বিচি সেদ্ধ করে রুটি তৈরী করে খাওয়া যায়।
(চলবে...)

গাছ আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাদের সভ্যতার শুরু থেকেই পরম মততায় সে আমাদের খাদ্যসহ সবকিছুরই ব্যবস্থা করেই যাচ্ছে। আমরা প্রকৃতি এই অকৃত্রিম বন্ধুকে কিছু দিতে না পারি অন্তত তার ক্ষতি যেন না করি। তাহলে প্রকৃতি কিন্তু আমাদের ছেড়ে দেবে না। সামনেই আসছে বর্ষাকাল, গাছ লাগানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।আসুন দেশি গাছ লাগাই দেশকে বাঁচাই

সূত্র:
ছবি: উইকিপিডিয়.ওআরজি, বিভিন্ন বই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৫৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×