ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠনের সন্ত্রাস, দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ দেশবাসী। এমনিতেই জিনিসপত্রের চড়া দাম, পানি-বিদ্যুত্সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকট সমস্যা, তার মধ্যে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যে বিষিয়ে উঠেছে জনজীবন। সাধারণ মানুষ তো অবশ্যই, তাদের হুমকি-ধমকিতে তটস্থ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও। স্থানীয় প্রশাসন পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়েছে এদের হাতে। বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন বিভাগে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যেসব কর্মকর্তা জড়িত থাকেন তারাই থাকেন সব চেয়ে বেশি আতঙ্কে। তাদের জীবননাশের হুমকিও আসে অহরহ। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো স্থান থেকে আওয়ামী সমর্থিত এসব সংগঠনের অপকর্মের একাধিক খবর আসছে। দরপত্রকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে চট্টগ্রামে প্রকৌশলী সঞ্জীব দাশ খুন হয়েছেন। টেন্ডারবাজি নিয়ে গতকালও পঞ্চগড়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেন নিহত হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশের প্রতিটি স্থানে দখল, নিয়ন্ত্রণ, হয়রানি ও চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, বাস টার্মিনাল, দোকানপাট, জলমহাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিটি স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এই চাঁদার রেটও বেড়ে চলেছে। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও তারা চাঁদাবাজি করছে। সম্প্রতি তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুকে সামনে রেখে নতুন ধরনের চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব শুরু করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিতর্কিত ভূমিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী অভিযোগে মামলা করার হুমকি দিয়ে তারা চাঁদাবাজিসহ তাদের জায়গা জমি দখল করে নিচ্ছে। ওই সময় স্বাধীনতার পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো ধরনের ভূমিকা রাখেননি এমন ব্যক্তিদেরও তারা হয়রানি করছে। এমনটি শুধু আওয়ামী লীগ না করার ‘অপরাধে’ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক ব্যক্তিকে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
যুবলীগ-ছাত্রলীগ এগিয়ে
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রায় প্রতিটি সংগঠনের বিরুদ্ধে দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ থাকলেও এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির জন্য ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে দায়ী করা হয়েছে। প্রতিটি সরকারি টেন্ডারে হস্তক্ষেপের পাশাপাশি এমন কোনো জায়গা বাকি নেই যেখানে তারা সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি করছে না। টেন্ডার বাক্স ছিনতাই, বাক্সে আগুন, টেন্ডার দাখিলকারী প্রতিপক্ষের ওপর হামলা-মামলা চলছে দেদাছে। সরকারি জমিসহ পাবলিক টয়লেট থেকে শুরু করে স্কুলগৃহ পর্যন্ত তারা দখল করে নিচ্ছে। সংখ্যালঘু তো আছেই এদের হাত থেকে রেহাই পায়নি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারও। সম্প্রতি ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা রাজধানীর আজিমপুরের নিউ পল্টন এলাকায় এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখল করে নিয়েছে। যুব মহিলা লীগও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
ডিসিসির টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে যুবলীগ
আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগ নিয়ন্ত্রণ করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) যাবতীয় টেন্ডার। যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহি এবং সাধারণ সম্পাদক ও ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের হস্তক্ষেপ ছাড়া ডিসিসির কোনো টেন্ডারই হয় না। পুরো সিটি কর্পোরেশনই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। শাওন তার নাওয়াল কনস্ট্রাকশন ও মহি ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে টেন্ডারবাজি করে। নাওয়াল কনস্ট্রাকশন মতিঝিলের বহুতল বিশিষ্ট কারপার্কিংসহ ঢাকার বড় বড় কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই দুইজন ডিসিসির সব কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে।
টেন্ডারবাজি নিয়ে গতকাল ছাত্রলীগ নেতা নিহত
দরপত্র দাখিলকে কেন্দ্র্র করে গতকাল পঞ্চগড় উপজেলা পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেন (২২) নিহত হয়েছেন। নিহত ফারুক হোসেন পঞ্চগড় পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
এদিকে ফারুক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তোয়াবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালায়। ঘটনায় শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বুধবার চট্টগ্রামে প্রকৌশলী নিহত
রেলওয়ের একটি কাজের টেন্ডারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে বুধবার রাতে সঞ্জীব কুমার দাশ নামে এক প্রকৌশলী নিহত হন। সঞ্জীব দাশ রেলওয়ের ঠিকাদার আসগর আলীকে নিয়ে আড্ডার সময় তাদের ওপর এলোপাতাড়ি হামলা চালিয়ে সঞ্জীব দাশকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পুলিশের তথ্যমতে, রেলওয়ের একটি কাজের টেন্ডার শিডিউল জমাদানকে কেন্দ্র করে ওইদিন ঠিকাদার আসগর আলীর সঙ্গে প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপের দ্বন্দ্ব হয়। এর জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশের ধারণা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




