somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপ্রকাশিত কাজল-কথন: পর্ব-২

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্থির হয়ে কাজল বসে আছে , স্থির দৃষ্টি এক হাত দূরে বসে থাকা নীল প্রজাপতিটার দিকে ... ভারী পছন্দ হয়েছে প্রজাপতিটাকে ওর । প্রজাপতি ধরার ব্যাপারে সে খুব অপটু , তবু মনে মনে প্ল্যান কষছে কি ভাবে ব্যাথা না দিয়ে প্রজাপতিটাকে ধরা যায় ... তাই এমন ধৈর্য্য নিয়ে টার্গেটের দিকে তাকিয়ে থাকা । যখন সে মানসিকভাবে প্রস্তুত প্রজাপতিটাকে খাপ করে ধরার জন্য , তখনই কাজলকে অবাক করে দিয়ে প্রজাপতিটা নিজে কাজলের বাম হাতের উল্টো পিঠে এসে বসলো ! অন্য সময় হলে কাজল এটা নিয়ে পুরো বাড়ি মাথায় তুলতো , কিন্তু আজ প্রজাপতির পাখায় হালকা আদর করে ওকে উড়িয়ে দিল কাজল । মন ভালো নেই তার , একটুও ভালো নেই ।

প্রজাপতি ধরার পুরো ঘটনাটা ঘটছিল কাজলের পড়ার টেবিলে । কাজলের সামনে কেমিস্ট্রি বই খোলা কিন্তু সেটা খোলাই , কাজল সবসময়ের মত কালো কলম , পেন্সিল আর নীল কলম একসাথে ইলাস্টিক দিয়ে বেধে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে বইয়ে দাগাদাগি করছে না , চোখ বন্ধ করে সদ্য পড়া কোনো তত্ব বা সূত্রও আওড়াচ্ছে না । পাশে একটা খাতা খোলা , সেখানে একেকবার একেকভাবে শুভ্রের নাম লেখা হয়েছে , তবে খাতাটাও এখন অলস অবস্থায় পড়ে রয়েছে । কাজল পড়ালেখার সময় অমনোযোগী হতে চায় না , সময়ও অপচয় করে না তখন অযথা , কিন্তু আজ যেন কোনো কিছুই স্বাভাবিক নেই ... আসল কথা ... শুভ্রের সাথে যোগাযোগ বন্ধ কাজলের ।

প্রতিমাসেই যদিও এমনটা হয়েই থাকে , তবু কাজল বিষয়টার সাথে এখনো খাপ খাওয়াতে পারেনি । শুভ্রকে ছাড়া কাজলের চলে না । প্রতিদিন শুভ্রের সাথে একটু কথা বলা , ওর সারাদিনের খোজ নেওয়া - এসব করে যেন দূরে থেকেও কাছে থাকা হ্য় দুজনের । কথা বলার সময় মনে হয় শুভ্র তার সামনে বসে আছে , দুজনে সামনাসামনি গপ্পো চলছে । কিন্তু কাজলের বাবা ছুটিতে বাসায় আছেন এখন । শুভ্রের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই কাজলের .. কিন্তু রিস্ক নিতে চায় না সে । তাই বাবা থাকাকালীন যোগাযোগ বন্ধ থাকে ওদের। দুজনের সম্পর্কটা এখনো সিক্রেট । ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে এখন ওরা । দুজনে ক্যারিয়ার গুছিয়ে তারপর দাড়াবে দুই পরিবারের সামনে , জানাবে ভালোবাসার কথা , জানাবে সারাজীবন একসাথে থাকার ইচ্ছে । আর তারপর ? " স্বপ্ন এবার হয়ে যাবে বেলা সত্যি , এতদিন ধরে এত অপেক্ষা !"

" খাওয়ার সময় হয়েছে , খেতে এসো ।"
দরজার ফাক করে বাবার বলা এই কথাগুলো ছেদ ধরায় কাজলের চিন্তায় । চুপচাপ খেতে চলে যা্য সে । বড় হওয়ার সময় বাবাকে কাছে পায়নি সেভাবে , তাই বাবা আর মেয়ের পৃথিবী যেন কয়েক আলোকবর্ষ দূরে , সহজ হতে পারে না কাজল ওনার সাথে , তাই যেটুকু দরকার , সেইটুকুই ভাবের আদান-প্রদান তাদের । অবশ্য মায়ের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ সে , মা প্রায় বন্ধুরই মত যেন । কিন্তু চাকরীজীবি মায়ের সেভাবে ওদের সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না ওকে । ভাত মাখতে মাখতে শুভ্রের পরিবারের কথা খুব মনে পড়ে তার। শুভ্রের বাসায় যাওয়া হয়েছে তার কয়েকবার । শুভ্রের বাবাকে একবারই দেখেছে । কিন্তু শুভ্রের মায়ের সাথে বেশ কয়েকবারই গল্প হয়েছে তার । ভারী সুইট মানুষ । অসুস্থ , তবু যতটুকুই দেখেছে ওনাকে কাজল , কখনো একবারের জন্যেও উহ করতে শোনেনি । যেমনটা কাজলের মা । মন থেকে এই দুই নারীকেই কাজলের খুব ভালো লাগে । শুভ্রের ফুপুর বাসায়ও গিয়েছে সে একবার । ভাই-বোনদের আড্ডা দেখেছে সেখানে । যদিও শুভ্র বলে কাজলের দেখা আড্ডা আসল আড্ডার কাছে কিছুই না । তবু ভালো লেগেছে কাজলের । নিজের জীবনে কখনো এমন ঘরোয়া আড্ডার অভিজ্ঞতা হয়নি তার । চুপিসারে কি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো কাজল ??


রাতে খাওয়া সেরে নিজের পড়ার ঘরে আবার থিতু হয়েছে কাজল । শুভ্রের কথা ভাবছে বরাবরের মতই । ছোটবেলা থেকে একা থাকতে থাকতে একা থাকাটা অভ্যেস হয়ে গেছে কাজলের , কিন্তু তার একদম ভালো লাগে না এটা । নিজেকে প্রায়ই প্রাসাদের বন্দিনী মনে হয় তার । শুভ্র যেন ওর জন্য একটা মুক্ত দিগন্ত , যেখানে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারে সে । একমাত্র শুভ্র ছাড়া আর কারোর প্রতি নির্ভরশীল নয় কাজল । শুভ্র আসার আগে একাই থেকেছে সে , কিন্তু এখন শুভ্রকে ছাড়া থাকাটা অসম্ভব না হলেও অত্যন্ত কষ্টকর । শুভ্র আসার পর পাল্টে গেছে কাজলের জীবন , কাজলের একান্তই নিজের ছোট্ট জগত টা সেজে উঠেছে নতুন ভাবে , এক নতুন খেলার সাথী পেয়েছ যেন সে । স্পষ্ট মনে আছে এখনো ৩ বছর আগের সেই দিনটা।


মানুষ ছোটবেলায় চঞ্চল থাকে , বড় হয়ে শান্ত হয় । কাজলের হয়েছে উল্টো । ফাইভ পর্যন্ত খুব ঠান্ডা মানুষ ছিল সে ,যত বড় হয়েছে তত ডানপিটে হয়েছে । বয়:সন্ধিতে যখন তার বাকি বান্ধবীদের চলা-ফেরায় সঙ্কোচ, লজ্জাবোধ আসতে শুরু করেছে , তখনও কাজল বলতে গেলে শিশুই মানসিকভাবে । এমনকি ক্লাস নাইনে ওঠার পরও শান্ত কিংবা লাজুক কোনোটাই হয়নি কাজল । লুকিয়ে লুকিয়ে সে তখনো জমিয়ে মিচকে শয়তানি করে বেড়াচ্ছে ঘরে বাইরে । সেই সময়েরই একটা দিন । শীতকাল চলছে তখন , কিন্তু ভারী সুন্দর একটা মিষ্টি রোদও উঠেছিল সেদিন । রোদ পোহাতে পোহাতে বুকমার্ক বানাচ্ছিল কাজল । হঠাৎ বাসার কাজের মেয়েটা বলে গেলো ২ জন ছেলে এসেছে , কাজলের সাথে দেখা করতে চায় । বিষয়টা অপ্রত্যাশিত , কারণ কাজল গার্লস স্কুলে পড়ে , তাই কারা এসেছে সেটা আন্দাজ করা কঠিন কাজলের পক্ষে । কারোর সাথে সাম্প্রতিক কালে আলাপও হয়নি যে দুম করে বাড়িতে হানা দেবে । ভাবতে ভাবতে নিচে নেমে গেটের কাছে গেলো সে । দেখে ক্লাস ফাইভের এক সহপাঠী বন্ধু এসেছে , আমেরিকায় চলে যাচ্ছে বরারবরের মত , তাই জানাতে এসেছে । সাথে তারই এক বন্ধু এসেছে । ছেলেটা কাজলের অচেনা ।


বিদেশগামী বন্ধুটির সাথে কথা চলছিল কাজলের । কিন্তু ফাকে ফাকে বন্ধুর সাথে আসা ছেলেটাকে দেখার চেষ্টা করছিল সে , মানুষকে স্টাডি করার মত একটা নতুন মজার কাজ সে আবিষ্কার করেছে , তার জন্যই দেখার চেষ্টা । কিন্তু ছেলেটা যেন একটা কি !!! পারে না নিজের বন্ধুর ছায়ার পিছনে গিয়ে লুকায় । ফাস্ট ইম্প্রেশনে ছেলেটাকে বিশ্ব লাজুক মনে হয়েছিল কাজলের । পরের দিন নিজের সবচেয়ে কাছের বান্ধবীর কাছে লাজুক ছেলেটার বর্ণনা দিতে গিয়ে যেন কাজল হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খায় ! কে জানে , হয়তো আর কখনো দেখা হবে না ছেলেটার সাথে ... তাই তাকে নিয়ে দু-একদিন ছেলেটাকে নিয়ে আলাপ-আলোচনা । পুরোনো সহপাঠীর সাথে হঠাৎ আলাপের ঘটনার ব্যাপ্তি ঐটুকুই !

পৃথিবীটা গোল । চিরন্তন সত্যটা আবার প্রমাণিত হলো যখন দেড় বছর পর ছেলেটা আবার ফিরে আসলো কাজলের জীবনে , অপ্রত্যাশিত ভাবে ।
হ্যা পাঠক , আপনি ভুল করেননি , সেদিনের সেই লাজুক ছেলেটাই শুভ্র !


চলবে ....


বি:দ্র: পুরো গল্পের অর্ধেক যে , যার কথা না জানলে গল্পটা অসম্পূর্ণ থেকে যায় ,
তার বয়ান জানতে নিম্নের লিংকে ক্লিক করুন
শুভ্র আর তার অপ্রকাশিত জীবন( দ্বিতীয় পর্ব): Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×