somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সঙ্গী যখন পরকীয়ায়...

৩০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পরকীয়া৷
কেমন ধারার সম্পর্ক! সেকি প্রেম, নাকি প্রণয়! নাকি শুধুই গোপন অবৈধ আকর্ষণ! টানাপড়েন, যন্ত্রণা, লুকোচুরি, লুকোছাপা—তিক্ততায় মোড়ানো নিষিদ্ধ সুখ৷ পরকীয়া মানে নিষেধে ভরা একটি ভুল সম্পর্ক৷ একজন মনোবিদের অভিজ্ঞতা থেকে এমনটা বলাই শ্রেয় মনে করছি৷
এ প্রণয় কাঁটায় কাঁটায় ভরা৷ যখন সঙ্গীর পরকীয়ার কথা জেনে গেলেন, তখন মনে হয়, এই জীবনের কোনো অর্থ নেই৷ এর থেকে সংসার ছেড়ে চলে যাওয়া ভালো৷ আদৌ কি এতে কোনো সমাধান হয়?

সেকাল-একাল
যুগে যুগে পরকীয়া ছিল৷ বিল ক্লিনটনের পরকীয়া, প্রিন্স চার্লস বা প্রিন্সেস ডায়ানার পরকীয়ার গল্প আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি৷ ধারাবাহিক নাটকগুলোতেও এখন পরকীয়ার ছড়াছড়ি৷ অনেকেই গালমন্দ করি৷ তার পরও দর্শক আকর্ষণ কিছুতেই কমে না৷ ফলে, পরকীয়া আগেও ছিল, এখনো আছে৷

একটা সময় বাড়ির কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়তেন কেউ কেউ৷ এর বাইরে বড়জোর পাশের বাড়ির কেউ বা অফিসের সহকর্মী৷ গণ্ডিটা এখানেই সীমাবদ্ধ থাকত৷
এখন আর সেই দিন নেই৷ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে দ্রুত৷ ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ যোগাযোগের নানা মাধ্যমের কারণে অনেক অচেনা, অপরিচিত জন হয়ে ওঠেন কাছের মানুষ৷ একটু চ্যাটিং বা মন্তব্য করা থেকেই হয়তো সম্পর্কের সূত্রপাত হয়৷ এরপর ভার্চুয়াল সম্পর্ক আর ভার্চুয়াল থাকে না৷ সামনে এসে হাজির হয় অন্তর্জালের আড়ালে থাকা ব্যক্তিটি৷ অনেক ক্ষেত্রে এটা শারীরিক সম্পর্কে গিয়ে দাঁড়ায়৷ তখন এই সম্পর্কের মোহ থেকে বের হয়ে আসা কঠিন হয়৷ অনেকে অবশ্য বলেন, ‘একটু চ্যাটিংই তো করেছি৷ প্রেম তো করিনি৷ বাস্তবে তোমাদের সঙ্গেই তো আছি৷’ কিন্তু চ্যাটে বলা কথাগুলো হয়তো আপত্তিকর, যা যেকোনো সঙ্গীর জন্য মেনে নেওয়া কঠিন৷ ফলে, এটিও পরকীয়া; নিছক বন্ধুত্ব নয়৷


কারা জড়িয়ে পড়ছেন?
আগে এবং এখন—দুই সময়েই সাধারণত মধ্যবয়সী নারী-পুরুষ এই সম্পর্কে বেশি জড়িয়ে পড়েন৷ পরকীয়ায় দুই রকমের সঙ্গী-জোড় দেখা যায়৷ ১. একজন বিবাহিত, অন্যজন অবিবাহিত৷ ২. দুজনই বিবাহিত৷
বিবাহিত সঙ্গী তাঁর নিজস্ব জীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগান৷ অবিবাহিত সঙ্গীকে বশে আনতে বেশ পারদর্শী ভূমিকা রাখেন৷ আর যে ক্ষেত্রে দুজনই বিবাহিত, পারস্পরিক নির্ভরতা আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে যৌনতা সেখানে প্রধান আকর্ষণ হয়ে থাকে৷
একাকিত্ব, ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, স্বামী বা স্ত্রী প্রবাসে বা অন্যত্র থাকায় নিঃসঙ্গতা, বিকৃত রুচি, পছন্দ-অপছন্দে বিস্তর ফারাক, জীবনসঙ্গীর শারীরিক অসুস্থতা ও যৌনচাহিদা পূরণ করতে না পারা থেকেই অনেক সময় এই অসুস্থ সম্পর্কের বেড়াজালে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন৷


গোপন কথাটি যখন রয় না গোপন
সঙ্গীর গোপন সম্পর্কের বিষয়টা হঠাৎ করে সামনে চলে এল৷ সেই মুহূর্তে মনে হতে পারে, পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেছে৷ আকাশ ভেঙে পড়েছে মাথার ওপর৷ খুব উত্তেজিত না হয়ে পুরো পরিস্থিতি আগে বুঝে নিন৷ সঙ্গীকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করুন, যাতে কোথাও কোনো ভুল বোঝাবুঝি না থাকে৷ তিনি যদি স্বীকার করে নেন, তবে তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন, তাঁর পরিকল্পনা কী৷ কেননা, সঙ্গীর পরকীয়ার কথা জানামাত্র সংসার ছেড়ে চলে আসা বা বিবাহবিচ্ছেদ কোনো সমাধান হতে পারে না৷ সন্তান থাকলে তাঁর মতামতও এখানে জরুরি৷ মা-বাবার সম্পর্কের এই জটিলতার জাঁতাকলে সন্তানের ক্ষতিটাই হয় সবচেয়ে বেশি৷ অনেক সময় সন্তানই পারে এই টানাপোড়েন দূর করতে৷
কিন্তু সঙ্গী যদি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কটি থেকে বেরিয়ে আসতে না চান, তাহলে স্বামী-স্ত্রী মিলে আলোচনা করে একটা সমাধান বের করতে হবে৷ প্রয়োজনে কোনো সালিসি পদ্ধতিতে সমাধান বা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন৷


ফেরার পথ খোলাই থাকে
নিষিদ্ধ গোপন সম্পর্ক বড়ই যন্ত্রণার৷ বড়ই তিক্ত ও কণ্টকাকীর্ণ৷ একবার সম্পর্কের জল গড়িয়ে গেলে ক্রমেই বিষময় হয়ে ওঠে সবকিছু৷ যখন জানাজানি হয়, তখন পারস্পরিক সম্মানবোধ ও আস্থা থাকে না৷ পরিবার, আত্মীয়স্বজন, সন্তান—সবার কাছে হাস্যরসের পাত্র হওয়াই তখন নিয়তি৷ অনেকে সেই ধকল সহ্য করতে না পেরে ঘুমের ওষুধ খান, বিষণ্নতায় ভোগেন, সংসার হয়ে ওঠে সারহীন, অর্থহীন৷ মনোজগৎ হয়ে ওঠে টালমাটাল৷ এসব ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিজীবনের সমস্যাগুলো নিয়ে সাহসের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলতে হবে৷ এসব কথা শোনার মতো মানসিক শক্তি থাকতে হবে৷ কারও কোনো দুর্বলতা আড়াল করা যাবে না৷
সঙ্গী যদি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরতে চান, তাহলে তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা উচিত৷ পাশাপাশি আরেকবার নিজেকেও প্রশ্ন করতে হবে, ‘আমার কোনো আচরণে কি ও দূরে সরে যাচ্ছে?’ তবে এ কথাও ঠিক যে বিশ্বাস ভেঙে গেলে আবার সহজে বিশ্বাস করা যায় না৷ যিনি ভুল করেছেন, তাঁকে পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে হবে৷ আপনি যে ভুল করে অনুতপ্ত, সেটি আপনার সঙ্গী ও সন্তানদের বোঝাতে হবে৷ তাঁদের কোনো আচরণে প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে না৷ মনে রাখবেন, আপনার কাছ থেকে তাঁরাও আঘাত পেয়েছিলেন৷ ফলে, গ্রহণ করার প্রক্রিয়াটি একটু জটিল হলেও হাল ছেড়ে দেবেন না৷ ভালোবাসাই পারে ভালোবাসাতে৷


আরও কিছু কথা

দাম্পত্যের একটা প্রধান শর্ত হলো পরস্পর সুখে-দুঃখে কাছে থাকা৷ দাম্পত্যজীবনের অনেক টানাপড়েন ও তিক্ততা দূর করতে পারে পরস্পরের প্রতি আস্থা ও মানসিক নৈকট্য৷ যেসব পুরুষ তাঁর পৌরুষজনিত নানা সমস্যা-সংকটে ভোগেন, সেগুলো গোপন করলেই বাড়ে জটিলতা৷ অনেক সময় নারীও থাকেন নিষ্ক্রিয়, উদ্যমহীন৷ সেটাও অসুখ৷ এখন আধুনিক নানা চিকিৎসা আছে৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা না নিয়ে তাঁরা সমস্যাকে তীব্র করে তোলেন৷ দেশে এখন সেক্সথেরাপি হচ্ছে৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেক্স ক্লিনিকও চালু হয়েছে৷ অসুখকে রোগ হিসেবেই দেখা উচিত৷ রোগ নিরাময় না করে নিজেকে এবং সংসারকে অসুখী করার কোনো মানে নেই৷
আগে বলা হতো চল্লিশেই জীবন শেষ হয়ে যায়৷ আর চল্লিশ পেরোনো নারী যেন ছিলেন বুড়ি৷ এখন জীবনবোধ পাল্টাচ্ছে৷ চল্লিশ কেন, পঞ্চাশেও জীবন পানসে হয়ে যাচ্ছে না; বরং জীবনবোধ আরও পরিপূর্ণ ও অর্থবহ হয়ে উঠছে৷ এখানে না বললেই নয়, পঁয়তাল্লিশ বা পঞ্চাশে এই যে নতুন শুরু, এর সঙ্গে সমানভাবে পা ফেলে এগোতে হবে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে৷ পেছনের পনোরো-বিশ বছরের যাপিত জীবন যে সঙ্গী-সঙ্গিনীকে নিয়ে সুখময় ছিল, মধ্যবয়সের পরিপূর্ণ জীবনে সেটাকে ফেলনা ভাবা চলবে না৷ সবকিছু শেয়ার করতে হবে৷ পরস্পর নির্ভরতার অর্জিত আনন্দ ও জীবনের অভিজ্ঞতা পরকীয়ার গোপন সুখের প্রলোভনে জলাঞ্জলি দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷
দাম্পত্যজীবনে একে অপরের ওপর নির্ভর করুন, আস্থা রাখুন, চাওয়া-পাওয়াগুলো একজন আরেকজনকে বলুন৷ ভালোবাসা-বিশ্বাস—সপ্রেম সম্পর্কের বন্ধনে জীবন হয়ে উঠবে প্রাণময় ও আনন্দময়৷

###লেখাটি দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত। ছবিটি দৈনিক প্রথম আলোর সৌজন্যে। আমার লেখাটির সাথে ছাপা হয়েছিল।

মডেল: রুনা খান, রাজেশ্বরী ও সুজাত হোসেন৷ ছবি: কবির হোসেন
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×