somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ কারাগার - অনিয়ম (পর্ব - দশ): কাজ পাশ :কাজ প্রদানের নামে অবৈধ আয়ঃ

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিটি কারাগারে দু’ধরণের বন্দী রয়েছে (ক) হাজতী বন্দী (খ) কয়েদী বন্দী। যে সমস্ত বন্দীদের মামলা বিচারাধীন তাদেরকে হাজতী বন্দী বলা হয়। যে সমস্ত বন্দীগণ মামলার সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের কয়েদী বন্দী বলা হয়। সাজাপ্রাপ্ত বন্দীও দু’ধরণের হয়ে থাকেঃ (ক) সশ্রম করাদন্ড ও (খ) বিনাশ্রম কারাদন্ড। সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত কয়েদী বন্দীদের কারাগারের ভিতরে কাজ করতে হয়; বিনাশ্রম বন্দীদের কাজ করতে হয় না। সাজা প্রাপ্ত বন্দীদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দফা বা বিভিন্ন পেশায় কাজ দেয়া হয়ে থাকে যেমন রাইটার, ইনচার্জ পাহারা, পাহারাসহ বিশেষ দফা, সুইপার দফা, চৌকা, নাপিত দফা, দর্জী দফা, ধোপা দফা , কামার দফা, মোড়া দফা, তাঁত দফা সহ আরো অনেক বিভাগ রয়েছে।

সশ্রম কারাদন্ড বন্দীদের মধ্যে শুধুমাত্র ফাঁসীর দন্ডাদেশ বন্দীগণ ছাড়া সকলকে কাজ পাশ করাতে হয়। প্রতি মাসেই এই কাজ পাশ করাতে হয়। তবে ব্যতিক্রম ঘটে হাসপাতাল, কেইস টেবিল ও চৌকায় নিয়োজিতদের ব্যাপারে। কেননা হাসপাতালের রাইটারদের যেহেতু একটি বিশেষ ও সেনসেটিভ এলাকায় কাজ করতে হয় এবং দীর্ঘ সময়ে কাজ করিয়ে অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলা হয় সেই কারণে হাসপাতাল রাইটারদের কাজ পাশও বদলাতে হলে ডাক্তারদের পূর্ব অনুমতি নিতে হয়। সাধারণত ডাক্তারগণ এ ব্যাপারে কাজ পাশ বদালানোর পক্ষে মত দেন না।

কেইস টেবিল চীফ রাইটার, পুট-আপ রাইটার সহ প্রায় ৮/৯ জন যারা অনেক টাকার ও তদ্বীরের জোড়ে কেইস টেবিল রাইটার হয়েছে; তাদেরকে সাধারণত এক বছরের আগে বদলানো হয় না। যদি তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরণের অভিযোগ প্রমান করা যায় তবেই তাদের কেইস টেবিল হতে সরিয়ে দেয়া হয়। সাধারণত বন্দীদের পক্ষ থেকে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনে সাহস কেউ দেখায় না। কয়েদী বন্দীদের মধ্যে আবার যদি কেউ টাকার জোরে, তদ্বীরের কারণে বা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এদের সরিয়ে দিয়ে নিজে প্রবেশ করতে পারে তবেই সম্ভব। চৌকার অর্থই হলো রান্না করা। রাত ১২.০০ টার সময় সকালের রুটি বানানো; সকালে ভাত ডাল রান্না করা; দুপুরে সবজি,মাছ, মাংস রান্না করার কাজ। এই রান্নার লোক বারবার সরানো সম্ভব না। কেননা কয়েদীরা সাধারণত এই কাজে আসতে চায় না। আর যারা একবার এসে টিকে গিয়েছে; তারা টাকা পয়সা কামানোর পথটা খুঁজে পেয়েছে; তারা আবার অন্য কাউকে চৌকায় আসতে দিতে রাজী নয়। তাই এই দফা অর্থাৎ চৌকার কাজ পাশ সাধারণত বদলানো হয় না।

হাসপাতালের রাইটার, চৌকা ওস্তাদগারসহ ঐ কাজে নিযুক্ত কয়েদীদের কাজ পাশ মাসে মাসে নবায়ন করতে হয়। সেক্ষেত্রে উৎকোচ প্রদান করতে হয় কাজ পাশ রাইটারকে। কাজ পাশ রাইটার হলো দু’জন। একজন হলো রাইটার, ইনচার্জ পাহারাদারের মাসিক কাজের এলাকা বরাদ্দ সংক্রান্ত তালিকা প্রস্তুত করত কয়েদীর টিকেট সহ সুবেদারের মাধ্যমে জেলারের কাছে পেশ করা দায়িত্বে নিয়োজিত। আরেকজন পাহারাদারের সাপ্তাহিক কাজ প্রদানের তালিকা প্রস্তুত করত বন্দীর টিকেট সুবেদারের মাধ্যমে জেলারের কাছে উত্থাপন করে। পাহারা হলেন ঐ সমস্ত বন্দী যারা দিনে কাজ করে রাতে কোন না কোন দফায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে বা সেলে লক-আপে ঘুমান ও পাহারা দেন এক সপ্তাহের জন্য। সপ্তাহ শেষে তাকে অন্য এলাকায় আরেক সপ্তাহের জন্য লক-আপ দেয়া হয়।
কাজ পাশ রাইটার দু’জনই হল কেইস টেবিল রাইটারের আওতাধীন। রাইটারদের ও ইনচার্জ পাহারাদের মাসিক কাজ পাশ ও নবাগত সাজাপ্রাপ্তদের কাজ বন্টন করে টাকার বিনিময়ে নাম তালিকাভূক্ত করেন। ইনচার্জ পাহারাগণ মাস শেষ হবার পূর্বেই ৩ হাজার টাকা দিয়ে বুকিং দিয়ে যান কোন এলাকায় পরবর্তী মাসে কাজ করতে তার নির্ধারনের জন্য। যদি কোন ক্ষেত্রে প্রতিযোগি থাকে সেক্ষেত্রে কাজ পাশ ১০ হাজার টাকা হতে সর্বচ্চ ৩০,০০০/- টাকা পর্যন্ত হয়।

বুকিং মানির পরে যে টাকা বাকী থাকে তা কাজ পাশ করার আগের দিনের মধ্যে কাজ পাশ রাইটারকে অবশ্যই পরিশোধ করে দিতে হয়। কলিং-রাইটার, কোর্ট-রাইটার ওয়ার্ড-রাইটার, আপিল-রাইটার, বিভিন্ন জনকে মাসিক ৬০০০ টাকা হারে প্রদান করতে হয়। এই টাকা প্রদানের পরই কাজ পাশের জন্য নাম তালিকাভূক্ত হবেন। সাধারনত কোন বন্দীই উৎপাদন শাখায় কাজ করতে চায় না, যদিও কোন কারণে তালিকায় নাম উৎপাদন শাখায় চলে যায় সেক্ষেত্রে, সুবেদারকে ম্যানেজ করে (টাকার বিনিময়ে) সাজাপ্রাপ্ত বন্দী কয়েদী ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়ায়। সেক্ষেত্রে এমডির শাখায় ওস্তাগার মাসিক কিছু নিয়ে গননার সময় শুধু গুণতি মিলিয়ে দেয়। বিভিন্ন দফার কনভিক্ট ওভারশিয়ার একই পদ্ধতিতে তাদের কাজ। মাসের পর মাস; বছরের পর বছর একই দফায় নবায়ন করে থাকেন। যাতে তারা যে আয় করে সেই আয়ে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করতে না পারেন।

রাতের পাহারা ও ফালতুদের কাজ পাশের তালিকা যে কয়েদী রাইটার তৈরী করেন তাকে প্রতি পাহারা সাপ্তাহিক ১০০ টাকা প্রদান করে। সাপ্তাহিক পাহারা বন্দীদের তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত করে যাতে তার ইচ্ছা মাফিক এলাকায় পাঠানো হয়; আর টাকা প্রদান না করলে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হবে হয়তো মোড়া দফায় অথবা এমন কোন এলাকায় যেখানে টাকা আয়তো দুরের কথা ঘুমানোর ব্যবস্থা পর্যন্ত থাকে না। কাজ পাশ-রাইটার। পাহারাদের সাপ্তাহিক ডিউটি বদলী থেকে যত টাকা আয় করেন তার একটা অংশ নিজে রেখে বাকী টাকা সুবেদারের মাধ্যমে জেলারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। সুবেদার নিজের জন্য রেখে দেন নিজের হিসাব মত, বাকী টাকা জেলারের বাসায় পৌছে যায় যথারিতী। প্রতিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে কাজ পাশ বাবদ আয় হয় গড়ে ২/৩ লক্ষ টাকা, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিমাণ ৪/৫ লক্ষ টাকা। যদিও ২০০৫ সালের সেপ্টম্বর মাসে ডি.আই.জি হিসেবে মেজর সামছুল হায়দার সিদ্দিকী দায়িত্ব নেয়ার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কাজ পাশ হতে আয় ১/২ লক্ষ টাকা নেমে এসেছে। প্রতিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে কাজ পাশ রাইটার ও সাপ্তাহিক ডিউটি বন্টণ রাইটাররের মাসিক আয় গড়ে যথা ক্রমে ২০ হাজার ও ১০ হাজার টাকা, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যথাক্রমে ৫০ হাজার টাকা ও ৪০ হাজার টাকা ।

বাংলাদেশ কারাগার - অনিয়ম (পর্ব -আট) পড়তে somewherein এখানে অথবা bd news এখানে ক্লিক করুন ।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×