তের চৌদ্দ বছরের ছোট্ট মেয়ে মালঞ্চ। আমাদের বাসায় কাজ করে বছর দুই হল। মালঞ্চের ফুফাত বোন হাজের আমাদের বাসায় সুদীর্ঘ পাঁচ বছর কাজ করেছে। যখন প্রথম কাজ শুরু করেছিল তখন মালঞ্চের বয়সিই ছিল। বিবাহের বয়স পুর্ণ করে তার মা বাবা দেশে নিয়ে গেছে মেয়েকে বিবাহ দেবার জন্য। সেই সাথে আমাদের বাসায় হাজেরার মা তার আপন ছোট ভাইয়ের মেয়ে মালঞ্চকে রেখে গেছে। তার ছোট ভাইকে আশ্বস্ত করে বলেছে যে, তোর মেয়ে এখানে নিরাপত্তা সহ স্বসম্মানে বছরের পর বছর থাকতে পারবে। অনেক বাসা থেকে বেশী বেতনে অফার আসলেও মালঞ্চর বাবা তার মেয়েকে আমাদের কাছে রাখতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। মেয়েটা সবে মাত্র বয়সন্ধিকালে পা রেখেছে। একদিকে যেমন গায়ের রংটা কুচকুচে কালো অন্যদিকে মুখের গঠনও তেমন সুবিধা জনক নয়। তার পরেও মাঝে মাঝে দেখা যায় রাস্তায় দাড়িয়ে কোন মিস্ত্রি বা লেবার গোছের কেউ ভুলকি মারছে। একটা মেয়েকে তার বাল্যকাল থেকে মৃত্যু অবধি কত যে নোংরা অভিজ্ঞতার ভিতর পার করতে হয় তা বোধ করি কারো অজানা নয়। রাস্তা ঘাটে, মার্কেটে, স্কুল, কলেজে, ভীড়ের মাঝে, একাকী চলার পথে, দিনের বেলায়, রাতের অন্ধকারে সর্বদা ওৎ পেতে থাকে এক শ্রেণীর মানুষ রূপি জানোয়ার। সুযোগ পেলেই তারা নারীদের খাবলে খেতে শুরু করে। ভাল লাগা, মন্দ লাগা, স্থান বা কালের কোন ভেদা ভেদ না করেই ঝাপিয়ে পড়ে এসকল মানুষ রূপি হায়নার দল। কেহ কেহ মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারে না আর কেহ আছে যারা লাজ লজ্জার তোয়াক্কা না করে জন সম্মুখে এসকল হায়নাদের মুখোশ খুলে দেয়।
আমাদের পাঁচ তলার জামাল ভাইয়ের ড্রাইভার মনির। বয়স ৪০ এর কোঠায়, ঘরে স্ত্রী এবং একটা বাচ্চা। যে বেতন পায় তা দিয়ে ঢাকা শহরে কোন মতে চলে যায়। টান পোড়নের সংসারে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলেই হাত পাততে হয় বন্ধ বান্ধবের কাছে। এভাবে মাথার উপর বেশ লোনের বোঝা চেপে আছে অনেক দিন ধরে। জামাল ভাইয়ের কাছ থেকে ২৫,০০০/- টাকা অগ্রীম নিয়ে লোনের কিছু টাকা শোধ দিলেও বেতনের সাথে সমন্বয় করার কারনে সংসারে অভাবের তাড়না থেকেই যায়। এমন যার অবস্থা তার ভিতর রিপূর তাড়না আসে কি করে বুঝি না। গতকাল মালঞ্চকে সকাল ৮ টার দিকে আমার স্ত্রী নীচে দাড়ানো তরকারি ওয়ালার কাছে পাঠিয়েছিল কিছু শাকপাতা কেনার জন্য। যথারীতি মালঞ্চ নীচে নেমে শাকের মোটা নিয়ে উপরে উঠছিল। দারোয়ানের রুমের পাশে চেয়ারে বসেছিল ড্রাইবার মনির। মালঞ্চকে একা নামতে দেখেই ওর মনে শয়তান এসে খোঁচা দিল। এইতো সুযোগ !! তুই ওকে টেনে নিয়ে দারোয়ানের রুমের ভিতর যা খুশী তাই করতে পারিস; শয়তান মনিরের দেমাগ খারাপ করে দিল। মালঞ্চর হাত ধরে টেনে নিয়ে জোর করে দুই হাত দিয়ে শরীরের সংগে চেপে ধরল। তোমাকে আমার ভাললাগে, আমি তোমাকে ভালবাসি ইত্যাদি ডায়লগ চলতে লাগল সেই সাথে দুই হাত দিয়ে মালঞ্চর শরীরটাকে দুই হাতে খাবলাতে শুরু করল। এভাবে প্রায় পাঁচ মিনিট পার করার পর উপর থেকে আমার স্ত্রীর গলার স্বর টের পেয়ে তাকে ছেড়ে দিল শয়তান রূপি মনির। এদিকে তিন তলায় শাকপাতা নিয়ে উঠতে দেরী দেখে দরজা খুলে আমার স্ত্রী গলা ছেড়ে মালঞ্চকে ডাকতে শুরু করেছে। গুটি গুটি পায়ে ও উপরে এল, তাকে দেরীর কারন জিজ্ঞেসা করার পর সব কথা অকপটে স্বীকার করল অবুঝ শিশু মালঞ্চ। অবশেষে আমার কাছে বিচার; আমি প্রথমে হস্তক্ষেপ না করে জামাল ভাইয়ের স্ত্রীর কানে বিষয়টা দেবার জন্য আমার স্ত্রীকে পরামর্শ দিলাম। যথারীতি ভাবিকে জানানো হল, সে জামাল ভাইয়ের কানে দিতেই যা হবার তাই হল। ড্রাইভারকে নিয়ে আমার বাসায় চলে এল সরে জমিনে তদন্ত করার জন্য। প্রথমে মনির মেয়েটাকে চরম মিথ্যাবাদী বলে সম্বোধন করল এর পর সে সত্যের কাছে হেরে গেল। জামাল ভাই ড্রাইভারের অভাব এবং আর্থিক সহযোগীতার কথাও জানাল। ভাবী কিছুতেই ঐ ড্রাইভারের পিছনে বসে তার মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতে পারবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিল। ড্রাইভার হাউমাউ করে কেঁদে এবারের মতো ক্ষমা করে দিতে বলল। তার কান্না দেখে আমার স্ত্রীর খুব খারাপ লাগছিল কারন তার ঘরে ছোট্ট একটা বাচ্চা আছে হঠাৎ করে চাকরী চলে গেলে ঢাকা শহরে নতুন চাকরী পাওয়া সহজ নয়। যে পুরুষ ঘরে স্ত্রী সন্তান রেখে কাজের মেয়ের শরীরে হাত চালয় তাকে রাখা জামাল ভাইয়ের পক্ষে সম্ভব নয় তাই তখন তাকে বিদায় করে দেওয়া হল।
একেই বলে রিপুর তাড়না। রিপু মানুষকে অমানুষ করতে বেশী সময় নেয় না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫০