২০০৯ সালের কথা। সবে মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। ফলাফল বের হতে অনেক দিন বাকি। পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিমের প্রথম ছবি ‘মনপুরা’ নিয়ে সেই হইচই। বন্ধুরা মিলে দেখে ফেললাম তার সেই ছবি। খুলনার সঙ্গীতা সিনেমা হলে দেখা ছবিটি ছিল আমার জীবনে প্রথম হলে বসে ছবি দেখা। সেই থেকে শুরু হল আমার হলে বসে বাংলা ছবি দেখা। প্রিয় পরিচালকের আরেকটি অসাধারণ নির্মাণ দেখে ফেললাম গত সপ্তাহে। বলছি ‘স্বপ্নজাল’ ছবিটির কথা।
১৩৫ মিনিট ব্যাপ্তি ছবিটিতে অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান, পরিমনি, ফজলুর রহমান বাবু, সাচ্চু, মনিরা মিঠু, মিশা সওদাগর প্রমুখ।
১৯৯০ সালের সময়টাকে উপজীব্য করে বাংলাদেশের চাঁদপুর এবং ভারতের কোলকাতাকে ধারণ করে এগিয়েছে ছবির কাহিনী। শুভ্রা (পরিমনি) এবং অপু (রোহান) একে অপরকে ভালবাসে। দুইজনের বাবা আবার একে অন্যের বন্ধু। রাতের আঁধারে শুভ্রার মাছ ব্যবসায়ী বাবার নৌকা থেকে ইলিশ মাছ ডাকাতি হয়। ডাকাতির নেপথ্যে দায়ী করা হয় শহরের আরেক প্রভাবশালী আয়নাল গাজীকে। কিন্তু দায় এড়াতে শুভ্রার বাবাকে গুম করে ফেলে আয়নাল। তাঁকে নিয়ে মিথ্যা প্রচারনা চালায় পরিবার ও এলাকায়। ঘটনার আবর্তনে শুভ্রাদের চলে যেতে হয় ভারতে। কাহিনী মোড় নেয় আরেকদিকে।
ছবির কাহিনী খুবই সাধারণ কিন্তু গল্পের অসাধারণ বুননে সেটি অন্য এক মাত্রা পেয়েছে। সেই সাথে দৃশ্যায়ন চোখে লেগে থাকার মত। আলো আঁধারের কারসাজি, প্রকৃতির যথাযথ উপস্থাপন একটু বেশীই জীবন্ত হয়ে এসেছে পর্দায়।
অভিনয়ের কথা বললে বলতে হয় সবার পরিশ্রম যথাযথ ভাবে চোখে পড়েছে। প্রতিটি চরিত্র অভিনেতা অভিনেত্রীরা নিজেদের মাঝে খুব সুনিপুণ ভাবে ধারণ করেছে।
ছবির প্রয়োজনে যেমন ধরণের গান প্রয়োজন ঠিক তেমনি ভাবে যথাযথ গান রাখা হয়েছে। হালকা ধাঁচের গানগুলো মন ছুঁয়ে যাবার মত। সেই সাথে ছবির সঙ্গীতায়জনও ভালো লেগেছে।
ছবি পোশাক পরিচ্ছদে ছিল না কোন রকম বাহুল্য। চরিত্রের প্রয়োজনে যেমনটা দরকার ছিল ঠিক তেমনি রাখা হয়েছে। সেই সাথে ৯০ এর সেই সময়টাকেও ধারণ করা হয়েছে। পরিচালক এই দিক দিয়ে বেশ সচেতন ছিলেন দেখেই বোঝা যায়।
পরিশেষে বলতে হয়, সুন্দর পরিচ্ছন্ন ছবি বলতে যা বোঝায় ‘স্বপ্নজাল’ সেই ধাঁচেরই ছবি। যারা বাণিজ্যিক ধারার ছবিকে পাশ কাটিয়ে একটু ভিন্ন ধারার ছবি দেখতে চান তাদের জন্য নিঃসন্দেহে নিদারুণ উপভোগ্য ছবি ‘স্বপ্নজাল’ ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৩৩