বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এ বছর মুক্তি পাওয়া একমাত্র ছবি ‘নূর জাহান’। বাংলাদেশ ভারতের যৌথ প্রযোজনায় মুক্তি পাওয়া ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন নবাগত ওপার বাংলার অদ্রিত রায় ও বাংলাদেশের পূজা চেরি। পরিচালক অভিমান্য মুখার্জির এ ছবিতে আরো ছিলেন অপরাজিতা, তুলিকা বসু, রজতভ দত্ত, সব্যসাচী চক্রবর্তী প্রমুখ।
২০১৬ সালের মারাঠি ছবি ‘সাইরাত’ এর রিমেক এই ছবির কাহিনী আবর্তিত হয় কলেজের প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত নূর এবং জাহানারাকে কেন্দ্র করে। বোর্ড পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে কলেজে ভর্তি হওয়া নূর নিতান্ত গরীব ঘরের বাপ মরা ছেলে। মা সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালায়। অন্যদিকে রাজনৈতিক ক্ষমতাধর মহিলা মন্ত্রী আমেনার মেয়ে জাহানারা। মা ক্ষমতাধর হওয়া সত্ত্বেও জাহানারা নিজের মত করে চলতে চায়। নিজের পরিচয়ে বড় হতে চায়। এদিকে কলেজের রিপ্রেজেন্টেটিভ নির্বাচনে ভাগ্যক্রমে নূর জিতে যায় যদিও রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে জাহানারার জেতার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক বেড়াজাল থাকা সত্ত্বেও দুই জনের মাঝে সৃষ্টি হয় প্রেম। কিন্তু ভিন্ন অর্থনৈতিক অবস্থা ও ভিন্ন রাজনৈতিক দল হওয়ার কারণে তৈরি হয় টানাপড়েন। কাহিনী মোড় নেয় অন্য দিকে।
প্রচলিত বাংলা বাণিজ্যিক ধারার ছবি বলতে যা বোঝায় ‘নূর জাহান’ সেই ধাঁচের ছবি। তাই এই ছবিটি থেকে শিক্ষণীয় কিছু না পেলেও পরিপূর্ণ বিনোদন পাবেন দর্শক। রোমান্স, রাজনৈতিক কলহ, পারিবারিক টানাপড়েন, ট্রাজিডি সব কিছুর কম্বো পাবেন দর্শক।
ছবিতে প্রত্যেকের অভিনয় ভালো ছিল। কোন ছবি দেখতে যাবার আগে নবাগত অভিনেতাদের অভিনয় নিয়ে একটু দ্বিধায়ই থাকে দর্শক। কিন্তু সেই দ্বিধা দ্বন্দ্বের সুযোগ দেয়নি ছবির নবাগতেররা। নূর চরিত্রের আদিত্যের মাঝে চরিত্র পরিপূর্ণ ভাবে ধারণ করতে দেখা গিয়েছে। বরাবর শিশু চরিত্রে অভিনয় করে আসা পূজার ব্যাপারে একটু সন্দিহান ছিলাম যে তার মাঝে শিশুসুলভ ব্যাপার থাকবে কিনা। কিন্তু সব কিছুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সেও অসাধারণ অভিনয় করে গিয়েছে। অন্যান্য চরিত্রের অভিনয়ও যথাযথ লেগেছে।
ছবিতে সব মিলিয়ে মাত্র তিনটি গান ব্যবহার করা হয়েছে। কম হলেও তিনটি গানই শ্রুতিমধুর লেগেছে। সেই সাথে আবহসঙ্গীতও ভালো ছিল।
ক্যামেরার কাজ বেশ ছিল। তবে ফ্রেমিং এর ক্ষেত্রে আরেকটু যত্নশীল হলে ভালো হত। যেহেতু এটি যৌথ প্রযোজনার ছবি সেহেতু সবার আকাঙ্ক্ষাও বেশী ছিল ছবিটি নিয়ে।
পোশাক পরিচ্ছদ ও সাজসজ্জা যথাযথই ছিল। তবে কিছু কিছু জায়গায় দৃষ্টিকটু ছিল। যেমন নূরকে গলায় তাবিজ পরিয়ে তার মুসলিমত্ব বোঝানো হয়েছে। এটার কোন দরকার ছিল না। নূর নামটার মধ্যেই মুসলিম ব্যাপারটা বোঝা যায়।
পরিশেষে বলতেই হয়, যারা নিছক প্রেমের গল্প পছন্দ করেন, যারা সিনেমায় নির্মল বিনোদন খোঁজেন ‘নূর জাহান’ তাদের জন্য একটি আদর্শ সিনেমা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৮ রাত ১২:৫৪