somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার (মার্চ ১৫, ১৯৭৪)

২৯ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি নিজে শিল্পকর্ম করে যত আনন্দ পাই, তার চেয়ে বেশী আনন্দ পাই শিল্পকলাকে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে দেখে, জীবনে প্রবিষ্ট হতে দেখলে
সাপ্তাহিক বিচিত্রা: ২য় বর্ষ ।। ৩৯তম সংখ্যা ।। ১৫ই মার্চ ১৯৭৪ ।। সা.বি.পৃ: ৩৪-৩৮


‘সমগ্র মানবজাতির জন্য সুন্দর জীবন নির্মান করাই হচ্ছে শিল্পকলার মৌল উদ্দেশ্য। আমি প্রায়ই বলি, একটি সুন্দর রঙ সুন্দর, কিন্তু তার চেয়ে বেশী সুন্দর হলো একটি সুন্দর মুখাবয়ব, তার চেয়েও সুন্দর একটি সুন্দর মন বা সুন্দর চরিত্র। মন ও চরিত্রকে সুন্দর করার জন্য অন্যান্য অনেক গুণের সাথে শৈল্পিক গুণ থাকা এবং শিল্পকলার প্রতি গভীর অনুরাগ থাকা বাঞ্চনীয়।’

‘আমি প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে ছবি আঁকছি মহৎ শিল্পী হবার আকাঙ্খায় নয়, আমার জীবনকে সুন্দর করার জন্য। আমি কেমন ছবি এঁকেছি আমি জানি না, কিন্তু কেন ছবি আঁকি তা বলতে পারি। আমি ছবি আঁকি প্রকৃতির সৌন্দর্য্যকে তুলে ধরার জন্য, জীবনে যা সুন্দর এবং জীবনে যা সুন্দর নয় তাকেও দেখাবার জন্য, জীবনে সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় যে শক্তি বিরোধিতা করে, তাকেও চিহৃত করার জন্য। যে ছবি মানুষকে সুন্দরের দিকে নিয়ে যেতে পারে, সেটাই হচ্ছে মহৎ ছবি, যে শিল্পী তা পারেন তিনি মহৎ শিল্পী। আমার সারা জীবনের শিল্প সাধনা ও শিল্প আন্দোলনও আমার জীবনকে এবং আমাদের সবার জীবনকে সেই সুন্দরের দিকে নিয়ে যাবার আন্দোলন।’
এইভাবে তাঁর শিল্প-দর্শন ও শিল্পী-জীবন-দর্শন ব্যাখ্যা করেন বাংলাদেশের চিত্রকলার গুরু শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। সুন্দরের পুজারী এই শিল্পী, ‘সুন্দর’ বলতেই বা কি বোঝেন অথবা সুন্দর জীবন বলতে?
তাঁর ভাষায়, সুন্দরভাবে বাঁচার চেষ্টাই হচ্ছে মানুষের সর্বোচ্চ আকাঙ্খা। এবং তাঁর কাছে এই সুন্দর শব্দটির অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। সুন্দর জীবন তাঁর কাছে সৎ ও সুষম জীবন, যেখানে সব কিছু রুচিসম্মত এবং ভারসাম্যবিশিষ্ট। নিজের প্রতি, সমাজের প্রতি, জাতির প্রতি, বিশ্ব মানবতার প্রতি এবং প্রকৃতি বা পরিবেশের প্রতি সততা ও সচেতনতা এই সুন্দরকে প্রতিষ্ঠিত করে। শুধু নিজের কথা ভাবলেই চলে না, সবার কথা, সমাজের কথা, ভবিষ্যতের কথাও একই সাথে ভাবতে হয়।

একটি শিল্পকলা নিদর্শন অথবা সামগ্রিকভবে শিল্পকলা ক্রমাগত একজন মানুষকে সুন্দর জগৎ সৃষ্টির কাজে সাহায্য করবে। এই রকম বিশ্বাস রাখেন জয়নুল আবেদীন। মাঝে মাঝে মানুষের ক্ষূদ্রতা দেখে, ত্রুটিপূর্ণ জীবন-দর্শন দেখে, জীবন দর্শনের অসম্পূর্ণতা দেখে তিনি হয়তো বিচলিত হন, কিছুটা হতাশ হন, কিন্তু মূলত এবং অন্তিমেও তিনি মানুষের মৌলিক সততায় এবং শক্তিতে বিশ্বাসী। প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে সুন্দর-সুষ্ঠ সমন্বয় একান্তই দরকার। এর পেছনেও কাজ করে সৌন্দর্য্যবোধ ও মানবতাবোধ। জয়নুল আবেদীন আজীবন এই বোধ দ্বারা তাড়িত হয়েছেন এবং নিজের জীবনকে সুন্দর করতে চেয়েছেন, নিজের পরিপার্শ্বকে সুন্দর রাখতে চেয়েছেন, অন্য সবার জীবনেও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। এই বোধ তাঁকে শিল্পী করেছে, এই বোধ তাঁকে প্রকৃতি প্রেমিক করেছে, দেশপ্রেমিক এবং মানবপ্রেমিক করেছে। এই বোধ থেকে তিনি ছবি এঁকেছেন, ছবি আঁকার আন্দোলন করেছেন, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক সৌহার্দ ও মানবতার ডাকে সারা দিয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কর্ম, কৃতিত্ব, সাফল্য ও সম্মান অতি সুন্দরভাবে তাঁর জীবনদর্শনকেই প্রতিনিধিত্ব করে।

১৯৩৩ সনে ময়মনসিংহের এক রক্ষণশীল পরিবারের যে কিশোর সুদূর কলকাতায় গিয়ে আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়েছিল সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায়, শিল্পবোধের তাড়নায়, সে ছাত্রাবস্থাতেই সারা বাংলায় সুপরিচিত হয়ে গেল এবং পাস করতে না করতেই নিখিল ভারত চিত্র প্রদর্শনীতে (১৯৩৮) শ্রেষ্ঠ শিল্পীর স্বর্ণপদক অর্জন করে। শিল্প শিক্ষার শুরুর মাত্র দশ বৎসরের মধ্যে, ১৯৪৩-এ এই জয়নুল তাঁর দুর্ভিক্ষের স্কেচের মাধ্যমে ভারত বর্ষের একজন শক্তিশালী শিল্পী হিসেবে চিহিৃত হলেন। তারপর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর, জয়নুল ঢাকায় এলেন এবং এসেই এদেশের শিল্পকলার নেতৃত্ব তিনি নিজ হাতে তুলে নেন, শুরু হয় শিল্পকলা আন্দোলন, ১৯৪৮ সনেই প্রতিষ্ঠা করেন আর্ট স্কুলের, যার আজ রজতজয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে। শুধু চিত্রকলার জন্যই নয়, বাংলার সাংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে সংগ্রাম চলে আসছে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তার অন্যতম প্রধান সৈনিকও জয়নুল আবেদীন। একই সাথে আবার জয়নুল বিশ্বসংস্কৃতিতে বিশ্বাসী এবং যথার্থ অর্থে মানবপ্রেমিক। বাংলার লোকশিল্পের প্রতি তাঁর গভীর ভালবাসা, বাংলার প্রকৃতি ও বাঙালী জাতির জন্য তাঁর প্রেম যেমন তাঁকে একজন সত্যিকার বাঙালী হিসেবে গড়ে তুলেছে, দেশে-বিদেশে ভ্রমণ এবং তাঁর স্পর্শকাতর মন তাঁকে সহজেই বিশ্বমানবতার প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল করেছে।

জয়নুল আবেদীন তাঁর শিল্প প্রতিভার স্বীকৃতি পেয়েছেন বৃটিশ ভারতে এবং পাকিস্তানী আমলে। শিল্পকলা আন্দোলনে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি বাংলা একাডেমীর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন, ভারতের দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি লাভ করেছেন এবং অন্যান্যভাবেও সমাদৃত হয়েছেন। তাঁর মানবতা প্রেমের স্বীকৃতি হিসেবে অতি সাম্প্রতিক ‘কংগ্রেস ফর ওয়ার্ল্ড ইউনিটি’ কর্তৃক জয়নুল আবেদীনকে সদস্য পদে নির্বাচন উল্লেখযোগ্য।

শিল্পী জয়নুল আবেদীন একাধারে বাংলাদেশের শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃত, বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান ধারক, বাহক ও সেবক এবং মানবতার প্রেমিক। প্রকৃতি-জীবন-জনতা ও পরিমন্ডলকে একাত্ম করে নেয়া এবং সমন্বিত করার যে চিন্তাধারা আজ সারা বিশ্বের প্রধান চিন্তাবিদদের প্রচন্ডভাবে আলোড়িত করেছে, জয়নুল আবেদীন, আজীবন, যেন নিজের অজান্তেই সেই চিন্তাধারাকে প্রচার করে এসেছেন। তাঁর কর্ম, জীবন ও বিশ্বাস দিয়ে দৃষ্টান্ত নির্মাণ করে এসেছেন। তাঁর অভিধানের যে ‘সৌন্দর্য্য’ তা এই সমন্বিত সৌন্দর্য্য, সুন্দর পরিবেশ, সুন্দর পরিমন্ডল নির্মাণের দর্শন। সেই পরিমন্ডল ব্যক্তিগত তথা পারিবারিক তথা জাতীয় তথা সারা বিশ্বের।

আবেদীনের জ্ঞানার্জন তথাকথিত বিদ্যায়তনিক পদ্ধতিতে আহরিত হয়নি, সর্বইন্দ্রিয়ের সচেতন অভিজ্ঞতা, অনুভুতি ও বোধ তাঁকে শিক্ষিত করেছে। যার জন্যে আজ নিজ দেশে এবং সর্বদেশে তাঁর সমাদর। তিনি এমন এক ব্যক্তি যিনি বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার প্রকৃতি, বাংলার সংস্কৃতি ও বাংলার মানুষকে জানেন ও ভালবাসেন এবং এক উদার মন নিয়ে এরই সাথে বিজ্ঞানের ও আধুনিক চিন্তাধারা এবং সমাজ ব্যবস্থার সাথে একাত্ম হযে যেতে পারেন। তেমন কোন বিরোধ আসে না, বার বার তিনি তরুণদের নেতা হয়ে যান -এই অগ্রগামিতা কেবলমাত্র যুগজয়ী এবং সত্যিকার জ্ঞানী ব্যক্তিদের দ্বারাই সম্ভব। দেশী-বিদেশী বড় বড় পন্ডিতরা তাঁর সাথে কথা বলে মুগ্ধ হন, বিস্মিত হন, যেমন হন তাঁর শিল্পকর্ম দেখে। প্রায় ৬০-এও তিনি তরুণ, কর্মে, চিন্তায় ও আদর্শে।

১৯৭৩-এ বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রজত জয়ন্তী এবং এই বছর এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম অধ্যক্ষ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের শিল্পী জীবনের ৪০ বৎসর পূর্তি। রজত জয়ন্তী উদ্বোধন অনুষ্ঠানের (১০ই মার্চ ১৯৭৪) পরে এক সাক্ষাৎকারে অনেক আলোচনার মধ্যে নীচের কয়েকটি প্রশ্নেরও উত্তর দেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। শিল্পাচার্যের সাথে ঘরোয়া আলোচনার সুযোগ আমার প্রায় সাপ্তাহিক ঘটনা। কিন্তু রজত জয়ন্তী উপলক্ষে বিচিত্রার জন্যে শিল্পাচার্যকে কয়েকটি বিশেষ প্রশ্ন করি, যার উত্তর শিল্পাচার্য তাঁর স্বভাবসিদ্ধ সহজ সুন্দর পদ্ধতিতে দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, জয়নুল আবেদীন যেমন অক্লান্ত শিল্পী-শ্রমিক, তেমনি অসাধরণ কথক, ও অনির্বাণ ধুমপানে অভ্যাসী এবং চা পানে আসক্ত। ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি গল্প করে যেতে পারেন, যেকোন শ্রোতাকে তিনি সম্মোহিত করে রাখতে পারেন।

ন.ই: আমরা শুনেছি এবং জানি যে আপনি ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকতে খুব ভালবাসতেন এবং শিল্পী হবার দুর্বার প্রেরণা আপনাকে ঘরছাড়া করে, কিন্তু ময়মনসিংহের বহ্মপূত্র তীরের ছেলে আপনি স্কুলের পাঠ শেষ না করেই সুদূর কলকাতার পথে পাড়ি জমালেন, শিল্পী হবেন বলে। আপনার আকাঙ্খা শেষ পর্যন্ত কেমন করে সম্ভব হলো?
শিল্পাচার্য: তখন তো জানো, ময়মনসিংহ - কলকাতা কত দূর। সেই ১৯৩২-৩৩ সালে। আমি স্কুলে পড়ি, কিন্তু ছবিও আঁকি। নিজে নিজেই। তখন ময়মনসিংহের ছেলেরা কলকাতায় থাকতো, পড়তো, এর মাঝে কেউ কেউ আর্ট স্কুলেও পড়তো, তারা যখন দেশে আসতো আমার সাথেও আলাপ হত। আমার কলকাতায় যাবার জন্য, তখনকার যুগে বাংলার একমাত্র আর্ট স্কুলে পড়বার জন্য ভীষণ ইচ্ছা করতো। কিন্তু কাজটি অসম্ভব। বাড়ীতে ঘুমানো দায়। আমার স্কুলের অনেক শিক্ষকরাও আমার হয়ে অভিভাবকের কাছে সুপারিশ করলেন। তবু হয় না। ময়মনসিংহে আমাদের তখন একটা গ্রুপ ছিল যারা শিল্পী হতে চাইতাম। এ রকম কয়েকজন বেরিয়ে পড়লাম। ঘুরে ফিরে একবারে কলকাতা। কিন্তু খরচা জোগাবে কে? তখনকার দিনে যারা নিজের পয়সায় পড়তে পারতো না, তাদের অনেকেই জেলা বোর্ডের বৃত্তি পেতো। আমিও আমাদের জেলা বোর্ডের দু’একজনকে ধরলাম, কিন্তু নিয়ম ছিল আর্ট স্কুলের অধ্যক্ষের সার্টিফিকেট ছাড়া কিছুই হবে না। আবার এই সার্টিফিকেটও একবছর পড়ার পর পরীক্ষা হলে তার ফলের ভিত্তিতে হবে। কিন্তু আমার চলবে কেমন করে? কলকাতায় গেলাম। এখানে সেখানে থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। প্রথম হলাম। মুকুল দে তখন প্রিন্সিপাল। ভর্তি পরীক্ষাতেই আমার আঁকার হাত দেখে তিনি এবং সব শিক্ষকরা খুশী হলেন। ভর্তি হবো কিন্তু চলবে কি করে? প্রিন্সিপালকে বললাম, জেলা বোর্ডের বৃত্তি পাবো, যদি তিনি একটা সার্টিফিকেট আগেই দেন এই বলে যে, আমি বৃত্তির যোগ্য। কিন্তু তাই বা কেমন করে হয়? আর্ট স্কুলে কখনও এমন হয়নি যে প্রথম বর্ষের পরীক্ষার আগেই বৃত্তির জন্য অধ্যক্ষ অনুমোদন দেবেন। মুকুল দে ছিলেন কড়া মানুষ। বললেন, হবে না। এক বছর দেখবো তারপর। কেঁদে ফেললাম। ধমকে বললেন, কি হে তোমার চোখ-টোখ খারাপ নাকি, জল পড়ছে যে চোখ থেকে? আচ্ছা দাড়াও এই প্রথম আমার নিয়ম ভাঙছি। তোমার জন্য অনুমোদন লিখছি। হয়ে গেল আমার বৃত্তি। সেই যুগে ১৫ টাকা। মোটামুটি চলে যেতো।

ন.ই: তাহলে সে যুগেও বৃটিশ আমলেও, প্রতিভার স্বীকৃতিতে একজন ভারতীয় নিয়ম ভেঙে নতুন নিয়ম গড়তে পারতেন। লাল ফিতার ভয় পেতেন না?
শিল্পাচার্য: মুকুল দে তো তাই দেখালেন।

ন.ই: কলকাতা আর্ট কলেজে আপনার ছাত্রজীবন কেমন কাটলো?
শিল্পাচার্য: বুঝতেই পারছো, নিজের উপরেই নির্ভর। বৃত্তির ওই টাকায় আমার থাকা-খাওয়া, পরা এবং ছবি আঁকার সব সরঞ্জাম ব্যবস্থাÑসবকিছুই করতে হতো। খুব কষ্ট হতো। তবে হাত ভাল ছিল, সবাই ভীষণ আদর করতেন। মাস্টার মশাইরা আদর করে ডাকতেন, ‘বাবা জয়নাল’; আমার ড্রইং-এর হাত বেশ ভাল ছিল। উপরের ক্লাসের ছাত্ররাও খুব আদর করতো, অনেকে তাদের বাড়ী নিয়ে যেতো। ওরা তো প্রায় সবাই কলকাতার ছেলে, হিন্দু, আমি পূর্ব বাংলার, মুসলমানের ছেলে, কিন্তু কারো কোন সংস্কার দেখিনি আমার ব্যাপারে। প্রায়ই ছবি দেখতে নিয়ে যেত, ওদের সাথে প্রায়ই খেতাম। থার্ড ইয়ারে যখন পড়ি, তখন থেকে অবশ্য আনোয়ার সাহেবদের (শিল্পী আনোয়ারুল হক) ওখানে খেতাম। সত্যি বলতে কি, ভাল ছবি আঁকার হাত ছিল বলে অনেকেই আমাকে অনেকভাবে সাহায্য করতে চাইতেন। আমি যেমন লাজুক ছিলাম তেমনি আবার আত্মসম্মান বোধটা টন-টনে ছিল। কারো কাছ থেকে কিছু নিতে পারতাম না। নিজের উপরই চলতাম।

ন.ই: আমরা শুনেছি আপনি নাকি ছাত্র থাকতেই কলকাতা আর্ট কলেজের শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
শিল্পাচার্য: হ্যাঁ। আমাদের কলেজের কোর্সটা ছিল ছয় বছরের, তবে ফিফথ ইয়ারে থাকতেই আমাকে কলেজের একটি খালি পোষ্টের জন্য নিয়ে নেয়া হয়। আমি তখন থার্ড ইয়ারে পড়াতাম। শফিউদ্দিন সাহেব আমার বন্ধু আবার ছাত্রও (শিল্পী শফিউদ্দিন আহমদ) ওর সাথে ওই ক্লাসে ছিল রাজেন তরফদার আর কলকাতা আর্ট কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ সত্যেন ঘোষাল। আমি পাস করে বেরোই ১৯৩৭-৩৮ সেশনে। মুকুল দে অবশ্য আমি ফিফথ ইয়ারে থাকতেই বলতেন, চাওতো তোমাকে আগেই ডিগ্রী দিয়ে দিতে পারি, এমন কি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হিসেবে। আমি অবশ্য সাধারণ নিয়মেই কোর্স শেষ করেছি।

জয়নুল আবেদীনের ছাত্রাবস্থায় শিক্ষকতা লাভের কথা, আমাকে সি পি স্নো’র লেখা একটি প্রবন্ধের কথা মনে করায়। স্নো ম্যাগানানিমিটি সম্বন্ধে একবার আটলান্টিক মান্থলীতে লিখেছিলেন যে, বিলেতে বড় আকারের উদারতা বিরল, তবে আমেরিকায় এধরনের উদারতা বিস্তর। ইংরেজদের উদারতার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন নিউটনের কথা। নিউটন যখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, তাঁর অংকের মেধা দেখে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান তাঁর নিজের চেয়ারটি নাকি নিউটনকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিভার স্বীকৃতি যে বৃটিশ আমলেও বাঙালীরা দিতে পারতো; তার অন্যতম উজ্জ্বল উদাহরণ মুকুল দে’র আর্ট কলেজ এবং জয়নুল আবেদীন। 

ন.ই: আপনি যখন কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন তখন তো বাংলাদেশে চিত্রকলায় অবনীন্দ্র নাথের নেতৃত্বে ভারতীয় তথা ওরিয়েন্টাল আর্টকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার একটা আন্দোলন চলছিল। কিন্তু আপনি ইউরোপীয় চিত্রাংকন পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন। কারণ কি?
শিল্পাচার্য: আসলে মুকুল দে’ও আমাকে ওরিয়েন্টাল আর্টেই যেতে উপদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার মারাত্মক দুর্বলতা ছিল ইউরোপীয় চিত্রাংকন রীতির প্রতি। আমি ছোটবেলা থেকেই নিসর্গ থেকে ছবি এঁকেছি। সেই আঁকার রীতি আমার নিজস্ব এবং বস্তুত ইউরোপিয়ান একাডেমিক পদ্ধতির। মনে হতো, ওভাবেই প্রকৃতির দৃশ্যাবলী, গাছপালা, নদী ইত্যাদী আমি ঠিকভাবে দেখাতে পারবো। ওরিয়েন্টাল রীতি তো বেশ স্টাইলাইজ, তাতে যেন তৃপ্তি পেতাম না।


ন.ই: আপনি কি তখন ইউরোপীয় শিল্পীদের ছবির সাথে পরিচিত ছিলেন? থাকলে বিশেষ করে কাদের ছবি ভাল লাগতো?
শিল্পাচার্য: আমার সবচেয়ে ভাল লাগতো ইম্প্রেশনিস্টদের ছবি। এবং তাদের কিছু প্রভাব আমার মধ্যে তখন পড়েছিল। আমি দিল্লীতে ১৯৩৮ সনে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত চিত্র প্রদর্শনীতে গোল্ড মেডেল পেয়েছিলাম, বহ্মপূত্র নদের উপর আঁকা কয়েকটি ছবির জন্য, সেগুলো ইম্প্রেশনিস্ট রীতির ছবি। আমার কাছে অন্যান্য ইউরোপিয়ান শিল্পী যাদের কাজ খুব ভাল লাগতো তারা ছিলেন ভেলাজ কয়ে, রেমব্রান্ট এবং সেজান।

ন.ই: আমি নিজে আপনার চিত্রকলা দেখে যা বুঝতে পারি, তা হলো আপনার চিত্রকলায় চারটি প্রধান ধারা পাওয়া যায়- প্রথমতঃ ১৯৩৩ থেকে ৪২ পর্যন্ত একাডেমিক বা ইম্প্রেশনিস্ট, দ্বিতীয়তঃ ১৯৪২-৪৩ এর দুর্ভিক্ষের উপর আঁকা স্কেচ, যেগুলো খুব প্রকাশবাদী বা এক্সপ্রেশনিস্ট, তৃতীয়তঃ ১৯৪৭ উত্তর বাংলার লোকজ শিল্পধারাভিত্তিক চিত্রকলা, এবং চতুর্থতঃ বিগত দশকে অংকিত বিমূর্ত প্রকাশবাদী চিত্ররীতি। আপনি নিজে এ ধারা বিবর্তনকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন, বিশেষ রাজনৈতিক ও সামাজিক পটভূমির প্রেক্ষিতে কি কোন ব্যাখ্যা করতে আমরা উৎসাহিত হতে পারি? 
শিল্পাচার্য: ব্যাখ্যা আছে। আমার মনে হয়, প্রথম দিকে আমি যখন তরুণ, ছাত্র, তখন ইউরোপীয় চিত্রকলার প্রচন্ড শক্তি আমাকে আকর্ষণ করে এবং আমি তাদের শিল্পরীতির অনুকরণে ছবি আঁকতে অভ্যাস করি। প্রকৃতিকে এবং আমার পরিবেশকে ও মানুষকে আঁকতে চেষ্টা করি। তখন সামাজিক চেতনা ততটা হয় নাই। আমি ইম্প্রেশনিস্ট বা একাডেমিক পদ্ধতিতেই আঁকতাম, তারপর এলো সেই ভয়াল দুর্ভিক্ষ, আমি কলকাতার সেই ভয়াবহ দৃশ্যাবলী ধরে রাখতে চাইলাম। চটপট কাজ করতে হয়, তাছাড়া সব জিনিসের দাম চড়া, আমি সস্তা কাগজে দ্রুতহাতে কঠিনের আঁচড়ে অবিরাম এঁকে চললাম, শত শত স্কেচ, দুর্ভিক্ষের বিভিন্ন দৃশ্যের। প্রয়োজনের তাগিদে, নেহাত অবস্থার প্রয়োজনে আমার স্টাইল বদলে গেল, এক্সপ্রেশনিস্ট হতে বাধ্য হলাম, খুব সহজ অথচ শক্ত রেখায়, কিছুটা জ্যামিতিক আকৃতির মধ্যে সেইসব দৃশ্য ধরে রাখতে চাইলাম। তারপর বৃটিশ রাজত্ব শেষ হলো। পাকিস্তানে এলাম, পূর্ব পাকিস্তানে রাজধানী ঢাকায়। বাঙালীর ভাষা, বাঙালীর সংস্কৃতির জন্য সবার যে আন্দোলন, সম্ভবত তারই প্রভাব পরলো অবচেতভাবে আমারও মনে, বাঙালীর লোকজ শিল্পীরীতিকে তুলে ধরতে হবে, পাশ্চাত্য প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা এবং পশ্চিম পাকিস্তানীদের প্রধান্যকে অস্বীকার করার একটা বিদ্রোহ হিসেবেই রচিত হলো আমার একটি চিত্রপর্যায় এবং সম্ভবত নিজেরই অজ্ঞাতে এইসব শক্তি কাজ করেছে। কিন্তু পরবর্তীকালে বিগত দশকে যখন মনে হতো যে, ওরা আর আমাদের সংস্কৃতিকে চেপে রাখতে পারবে না, তখন যেন কিছুটা মুক্ত হয়েই কিছু কিছু বিমূর্ত প্রকাশবাদী ছবি আমিও এঁকেছি, অন্যান্যরা বিশেষ করে তরুণরা যেমন এঁকেছে। কিন্তু সত্যি বলতে কি, এই রীতি আমার জন্য নয়। আমার চিত্র প্রকৃতি ও মানব নির্ভর, বিষয় নির্ভর এবং আমার ছবির উৎপত্তি রংয়ের পেছনে বাংলার ঐতিহ্যবাহী অংকন ধারা, লোকজ রীতিগুলো বেশী উৎসাহ জোগায়।

ন.ই: আপনার এই চারটি ধারা পর্যালোচনাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক পটভূমি থেকে বিচার করে খুব স্বাভাবিক বলে মনে করি। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ শিল্পীরা দেখছি প্রথম ধারা মানে একাডেমিক থকে একেবারে শেষ ধারা বা বিমূর্তে চলে আসেন। একে আমাদের কাছে খুব অবাস্তব মনে হয়, এই পরিস্থিতি দেখে আপনার কি প্রতিক্রিয়া?
শিল্পাচার্য: আমাদের এধরনের শিল্পীদের অধিকাংশই কিছুটা অপরিণত বয়সে বিদেশে গিয়েছিল এবং গিয়ে সেখানে যেসব চিত্রাঙ্কন ধারা দেখেছে, তাতে তাদের চোখ আটকে গিয়েছিল এবং সেই সব ধারাকে অনুসরণ করে তারা ছবি এঁকেছে, ভাল ছবিও এঁকেছে, কিন্তু আমার মনে হয় ওরা যতই পরিণত হবে, ততই আবার প্রকৃতিতে, জীবনে, জনতায় ও স্বপরিবেশের মধ্যে ফিরে আসবে, নিজ ঐতিহ্য ও নিজ জন-মানুষকে তারা জানতে পারবে এবং তাদের চিত্রকলায় তা ফুটাতেও পারবে। ওদের অনেকেরই অঙ্কন ক্ষমতা অসাধারণ, হয়তো বিভিন্ন কারণে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হয় নাই। জীবনবোধ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই প্রকৃত আর্ট নির্মিত হয়। যে রীতিতেই শিল্পকলা নির্মিত হোক না কেন তার সাজুয্য থাকতেই হবে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, নিজ সমাজ, পরিবেশ বা পরিমন্ডলের সাথে।

ন.ই: আপনি চারুকলা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। খুব ক্ষূদ্র অবস্থা থেকে পঁচিশ বছরে এই কলেজ আজ সুন্দর ও বৃহৎ এক প্রতিষ্ঠান। একই সাথে আপনি বহুদিন ধরে লোক-শিল্পের যাদুঘর এবং জাতীয় চিত্রশালা তথা জাতীয় মিউজিয়ামের জন্য অবিরাম দাবী জানাচ্ছেন, আপনার কি মনে হয় না যে, এই ধরনের দাবী দাওয়ায় সময় ব্যয় না করে আপনি শুধু শিল্প নির্মাণেই নিজেকে ব্যপৃত রাখতে পারেন এবং তাতে শিল্প-কলার সেবা হবে বৃহত্তর?
শিল্পাচার্য: না, আমি নিজে শিল্পকর্ম করে যত আনন্দ পাই তার চেয়ে বেশী আনন্দ পাই শিল্পকে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে দেখলে, আমার নিজের শিল্পকে জীবনে প্রবিষ্ট হতে দেখলে। ছবি আঁকার সাফল্যের চেয়ে আমি তৃপ্তি পাই আরো অনেকে ছবি আঁকতে পারবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করবার প্রচেষ্টায়। কেননা এখান থেকেই জন্ম নিবে সুন্দরের নির্মাতারা, এখান থেকেই জন্ম নেবে সুন্দরের চিন্তা, এবং সুন্দর। আমি একটি সুন্দর বা মহৎ ছবি এঁকে আর কতদূর কি করতে পারবো। ‘শিল্পকলা শুধু শিল্পকলার জন্য’ এধরনের বিশ্বাস আমার নয়। আমি বিশ্বাস করি শিল্পকলা মানুষের জন্য, তার জীবনকে সুঠম (ছাপার অক্ষরের অস্পষ্টতার কারণে ‘সুঠম’ শব্দটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি) ও সুন্দর করার জন্য। প্রকৃতি, মানুষ, জীবন সবকিছু যখন এক হয়ে যাবে, তখনই সম্ভব হবে সবচেয়ে সুন্দরের সৃষ্টি। সেই অবস্থায় আমাদের পৌঁছুতে হবে, সকল মানুষকে, সারা বিশ্বের মানব সমাজকে, বাঙালী জাতিকেও এই অবস্থায় পৌঁছুতে হলে সকলকে সুন্দরের মর্ম বুঝতে হবে, শিল্পকলার চর্চা সেজন্যই সার্বজনীন করা একান্ত বাঞ্চনীয়। তার জন্য চাই জাতীয় চিত্রশালা, জাতীয় লোক-শিল্প যাদুঘর ইত্যাদি। চাই সর্বস্তরে শিল্প শিক্ষা। অর্থনৈতিক স্বচ্ছন্দ ও মুক্তি যেমন কাম্য তেমনি কাম্য হওয়া উচিত সুন্দর রুচিশীল ও সৎ জীবন, শৈল্পিক জীবন। আমি বারবার বলি, আমাদের বর্তমান দুর্ভিক্ষ খাদ্যের দুর্ভিক্ষ ততটা নয়, যতটা রুচির দুর্ভিক্ষ। একে দূর করতেই হবে। হয়তো অর্থনৈতিক দারিদ্র এবং রুচির দারিদ্র সমান্তরালভাবে অগ্রসর হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের সংগ্রাম ওই উভয় দারিদ্রের বিরুদ্ধেই হওয়া উচিত। আমি সুন্দর প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অন্যতম সৈনিক।

- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করতে চান সার্বিক অর্থে। প্রকৃতি-পরিবেশের সাথে সমাজ সচেতনতা এবং জীবন সচেতনতার সমন্বয় থেকে এই সুন্দর-প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। তাঁর সুদীর্ঘ শিল্পী জীবনের শিল্পকর্ম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তাঁর বক্তব্য ও বিষয় প্রধানত তিনটি; প্রথমত - প্রকৃতি বা নিসর্গকে তাঁর চেনারূপে সুন্দরভাবে তুলে ধরা, দ্বিতীয়ত - সাধারণ গণ জীবনকে চিত্রায়িত করা, তৃতীয়ত - সুন্দর এবং সৃষ্টিতে মানুষের অসহায়তাকে তুলে ধরা। তাঁর ৪৩ এর দুর্ভিক্ষ চিত্রাবলী এবং ‘নবান্ন’ (৬৯) বা ‘মনপুরা ৭০’ (১৯৭৩) জাতীয় সুদীর্ঘ স্ত্রুল চিত্র যেন মানুষের নির্লিপ্ততার, ব্যর্থতার প্রতি ব্যঙ্গ। তবে তিনি আজীবন আশাবাদী, চিত্রকলার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যেমন, জীবনে সুন্দর প্রতিষ্ঠায় যেমন, তেমন মানুষের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধেও। তাই তাঁর সর্বসাম্প্রতিক মহৎ চিত্র ‘মনপুরা-৭০’ এ দেখা যায় মৃত্যের মিছিলের শেষ এক প্রান্তে এক জীবিত পুরুষ, যার ভবিষ্যৎ কন্টকময়, দুর্লঙ্ঘ, সংগ্রামী কিন্তু বাস্তব এবং জীবন্ত।

শিল্পী জয়নুল আবেদীন প্রায় ৫৭ বছর বয়সেও এখন নিয়মিত ছবি আঁকেন, শিল্পকলার জন্য আন্দোলনে শরিক হন, নেতৃত্ব দেন, বক্তৃতা করেন। তিনি একটি সুন্দর সুখী পরিবারের কর্তা এবং সাধারণ সামাজিক ও আন্তর্জাতিক মানুষ। প্রকৃতি ও জীবনের সমন্বয় হোক এই তাঁর আজীবন বাসনা। তাঁর তিন সন্তান - তিন পুত্র। সবাইকে তিনি জ্ঞানের অন্বেষণে উৎসাহিত করেছেন যেখানে প্রকৃতি ও জীবনের সমন্বয় সাধনের শিক্ষালাভ সম্ভব। বড় ছেলে স্থাপত্যের ছাত্র (বর্তমানে বার্কনো বিশ্ববিদ্যালয়ে), মেজ ছেলে ভূগোল অনার্সের ছাত্র (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এবং ছোট ছেলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্র যার আকাঙ্খা পরিবেশ প্রকৌশলী হবার। তাঁর স্ত্রী শিল্পীর যথার্থ সহধর্মিনী। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন তাঁর শিল্পে এবং জীবন ও শিল্পদর্শনে বস্তুতঃই প্রদীপ্ত ও জীবনের সমন্বয়ে একান্তভাবে বিশ্বাসী। এবং বাঙালী সংস্কৃতির এই অন্যতম ধারক ও বাহক একই সাথে একজন যথার্থ মানবপ্রেমিক।

১৯৭৪ সালে সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন (করেছিলেন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর ও চারুশিল্পের সম্পাদক নজরুল ইসলাম। 

তথ্যসূত্র:
১. সাপ্তাহিক বিচিত্রা: ২য় বর্ষ ।। ৩৯তম সংখ্যা ।। ১৫ই মার্চ ১৯৭৪ ।। সা.বি.পৃ: ৩৪-৩৮ (সাপ্তাহিক বিচিত্রা’র এই সংখ্যার সম্পাদক ছিলেন: নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী)
২. সাপ্তাহিক বিচিত্রা’র পাতা থেকে নির্বাচিত সাক্ষাৎকার, সংকলন ও সম্পাদনা: এ.এম.আহাদ লিও, বইমেলা ২০১৮, দেশ পাবলিকেশন্স
।। বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন ।।


।। বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন ।।
এ.এম. আহাদ লিও
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৫:১৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×