somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্র্যাক প্লাটুন গঠনের ইতিহাস

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্র্যাক প্লাটুন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ঢাকা শহরে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করেন একদল তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত দল, যারা তৎকালীন সময় একটি কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন।
সেই গেরিলা দলটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে "হিট এন্ড রান" পদ্ধতিতে অসংখ্য আক্রমণ পরিচালনা করেন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
মধ্যে ব্যাপক ত্রাসের সঞ্চার করেছিলেন।সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ নির্দেশনা দেন হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে বিদেশী
সাংবাদিক এবং অতিথিরা থাকাকালীন ঢাকা শহরের পরিস্থিতি যে শান্ত নয় এবং এখানে যুদ্ধ চলছে তা বোঝানোর জন্য শহরের
আশে-পাশে কিছু গ্রেনেড ও গুলি ছুড়তে হবে, কিন্তু দুঃসাহসী এই তরুণেরা ঢাকায় এসে ৯ই জুন তারিখে সরাসরি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গ্রেনেড হামলা করেন এবং বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে যা ছিলো অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ ও অচিন্তনীয় কাজ। সন্ধ্যায় বিবিসির খবর থেকে খালেদ মোশাররফ এই অপারেশনের কথা জানতে পেরে বলেন, দিজ অল আর ক্র্যাক পিপল! বললাম, ঢাকার বাইরে বিস্ফোরণ ঘটাতে আর ওরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এসেছে। তিনিই প্রথম এই দলটিকে "ক্র্যাক" আখ্যা দেন যা থেকে পরবর্তীতে এই প্লাটুনটি "ক্র্যাক প্লাটুন" নামে পরিচিত হয়।সেই দলটি গঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম এবং এটিএম হায়দার, বীর উত্তম।এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ২ নং সেক্টরের অধীন একটি স্বতন্ত্র গেরিলা দল যারা মূলত গণবাহিনীর অংশ বলে পরিচিত।সেই বাহিনীর সদস্যরা ভারতের মেলাঘর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেই প্রশিক্ষনে গ্রেনেড ছোড়া, আত্ম-গোপন করা প্রভৃতি শেখানো হতো।আরবান গেরিলা যুদ্ধের জন্য বিশেষায়িত ভাবে তৈরি করা হয়েছিল সেই দলটি।


সেই গেরিলা দলটিতে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেনঃ

আবুল বারক আলভী ।
শহীদ আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল, বীর বিক্রম ।
আজম খান ।
আমিনুল ইসলাম নসু ।
আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন, বীর প্রতীক ।
ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ।
কাজী কামাল উদ্দিন, বীর বিক্রম ।
কামরুল হক স্বপন, বীর বিক্রম ।
গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক ।
চুল্লু ।
জহির উদ্দিন জালাল ।
জহিরুল ইসলাম ।
নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ।
নীলু ।
পুলু ।
ফতেহ চৌধুরী ।
শহীদ বদিউজ্জামান ।
বদিউল আলম বদি, বীর বিক্রম ।
মতিন - ১ ।
মতিন - ২ ।
শহীদ মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ ।
মাহবুব ।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীর বিক্রম ।
মাযহার ।
রাইসুল ইসলাম আসাদ ।
লিনু বিল্লাহ ।
শহীদ শফি ইমাম রুমী ।
শহীদুলাহ খান বাদল ।
শাহাদত চৌধুরী ।
সাদেক হোসেন খোকা ।
সামাদ ।
হাবিবুল আলম, বীর প্রতীক ।
হিউবার্ট রোজারিও ।
হ্যারিস ।

পাঁচ হতে ছয় জনের এক একটি গ্রুপ তৈরী করে হিট এন্ড রান পদ্ধতিতে ঝটিকা আক্রমণ করে এই গেরিলা দলটি অপারেশনে অংশ নিতো। ঢাকা শহরে তারা মোট ৮২টি অপারেশন পরিচালনা করেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলোঃ
অপারেশন হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল
এই অপারেশনের লক্ষ্য ছিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের বোঝানো যে, পশ্চিম পাকিস্তানের অবস্থা স্বাভাবিক নয়।
অপারেশন ফার্মগেট চেক পয়েন্ট১৯৭১ সালের ৯ ই জুন সন্ধ্যায় ১৭ জন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা মিলে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল আক্রমণের ছক আঁকে। তাদের কাছে ছিল ১২ টি গ্রেনেড, ১৬০ রুপি আর প্রত্যেকের কাছে একই করে বেয়নেট। তাদের দলনেতা ছিলেন হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক। অপারেশনের জন্য তাদের গাড়ি চালাচ্ছিলেন এফডিসির ক্যামেরাম্যান বাদল। পিস্তল নিয়ে তার পাশের সিটে কামরুল হক স্বপন বসে ছিলেন। আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং পেছনের সিটে বসা হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক। তাদের তিনজনের হাতেই ছিল গ্রেনেড। হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের সামনে এসে জিয়া, মায়া এবং হাবিবুল অনেকগুলো গ্রেনেড ফাটিয়ে পালিয়ে গেলেন।সেই অপারেশনের লক্ষ্য ছিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের বোঝানো যে, পশ্চিম পাকিস্তানের অবস্থা স্বাভাবিক নয়।


অপারেশন ফার্মগেট চেক পয়েন্ট

প্লাটুনের সদস্য সামাদের নিউ ইস্কাটনের বাসায় ৭ই আগস্ট রাত ৮টায় সেই অপারেশন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। পুরো অপারেশনের জন্য সময় নির্ধারিত ছিল মাত্র এক মিনিট। সেই দলের সদস্য ছিলেন ৭ জন- জুয়েল, আলম, পুলু, স্বপন, সামাদ আর বদি এবং দলনেতা ছিলেন শহীদ বদিউজ্জামান। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক সামাদ চালাবেন গাড়ি, আলমের হাতে থাকবে চায়নিজ এলএমজি আর অন্য সবার হাতে স্টেনগান এবং সামাদের কাছে ছিল রিভলবার, জুয়েল আর পুলুর কাছে ছিল ফসফরাস গ্রেনেড আর গ্রেনেড-৩৬। এক মিনিটের এই অপারেশনে পাঁচজন মিলিটারি পুলিশ এবং ছয়জন রাজাকার নিহত হয়েছিল। পুরো ঢাকাজুড়ে সেই ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করে।



অপারেশন গ্যানিজ পেট্রল পাম্প
অপারেশন দাউদ পেট্রল পাম্প
অপারেশন এলিফ্যান্ট রোড পাওয়ার স্টেশন
অপারেশন যাত্রাবাড়ী পাওয়ার স্টেশন
অপারেশন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন
অপারেশন সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন
অপারেশন উলন পাওয়ার স্টেশন
অপারেশন তোপখানা রোড ইউএস ইনফরমেশন সেন্টার
অ্যাটাক অন দ্য মুভ
ডেস্টিনেশন আননোন



সদস্যদের মধ্যে যারা মৃত্যু বরণ করেন।
১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জালাল উদ্দিনের ধানমণ্ডি বাসা থেকে বদিউন আলমকে ধরে নিয়ে যায় পাকা হানাদার বাহিনী। পরবর্তীতে তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাকে বীরবিক্রম উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। সেইদিনই ধরা পড়েন রুমী, আজাদ, জুয়েল, সামাদ, মাসুদ সাদেকসহ ক্র্যাক প্লাটুনের অনেক সদস্য। পরবর্তীতে তারা সবাইই শহীদ হোন।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৩২
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×