অনেক সময় গেছে, অনেক কথা হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। ৪ বছর পার হয়েছে পিলখানার ৫৭ সেনা অফিসার হত্যার বিচার হয়নি। উদঘাটন হয়নি কোন্ ষড়যন্ত্রে বিডিআর বাহিনী ধংস করা হলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এত অফিসার মারা যায়নি। দুর্ঘটনাসহ সে যুদ্ধে মোট ৫৫ জন অফিসার মারা গেছে। এমনকি বিশ্বযুদ্ধেও এক ঘটনায় এত অফিসার নিহত হয়নি। গত চার বছরে দেশের মানুষ পিলখানার নারকীয় ঘটনার কমবেশী জেনে গেছে। সেনাবিাহিনীর প্রতিটি সৈনিক ও প্রতিটি অফিসার জানে - কেনো, কোন্ পরিকল্পনায়, কারা পিলখানায় ৫৭ সেনা অফিসার হত্যা করেছে। বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে, কিন্তু আসল হোতারা এখনো গোঁফে তা দিয়ে ঘুরছে। ঘটনার বর্ননায় না গিয়ে আসল কথায় আসি- কে, কেনো, কোথায় জড়িত ছিলো ইতিহাসের নির্মম ঐ হত্যাযজ্ঞে।
১. RAW: ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’এর পরিকল্পনায় ও ব্যবস্থাপনায় পিলখানায় নারকীয় ঐ তান্ডব হয়। এর মূল লক্ষ ছিলো পাদুয়া ও রৌমারীর ঘটনার বদলা নেয়া এবং বিডিআর বাহিনী ধংস করে দেয়া। ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বিডিআর-বিএসএফ যুদ্ধে ১৫০ জন বিএসএফ নিহত হয়। এর আগে পাদুয়ায় নিহত হয় ১৫ বিএসএফ। বিডিআর ডিজি মেজর জেনারেল এএলএম ফজলুর রহমানের নির্দেশে ঐ যুদ্ধে অংশ নেয় বিডিআর। ঐ ঘটনার পরে ভারতীয় ডিফেন্স মিনিষ্টার জসবন্ত সিং উত্তপ্ত লোকসভায় জানান দেন, এ ঘটনার বদলা নেয়া হবে। ১৯৭১ সালে যে সব শর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সামরিক সাহায্য দেয় তার অন্যতম ছিল "Frontier Guards will be disbanded" (CIA Report SC 7941/71). অর্থাৎ বাংলাদেশের কোনো বর্ডার গার্ড থাকবে না। কিন্তু স্বাধীনতার পরে অজ্ঞাত কারনে পাকিস্তান রাইফেলস বালাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) রূপ নেয়। বিডিআর বাহিনীটি ছিলো আধাসামরিক বাহিনী, যার মূল কমান্ড ও ট্রেনিং ছিলো সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হাতে। অন্যদিকে ভারতের বিএসএফ ছিলো সিভিল বাহিনী, যাদের ট্রেনিং, জনবল সবই ছিলো নিম্নমানের। এ কারনে বর্ডারে কোনো যু্দ্ধ হলে তাতে বিডিআর সামরিক পেশাদারিত্ব দিয়ে জিতে আসত।
মূলত এসব কারনেই বিডিআর বাহিনী ধংস করার পরিকল্পনা আঁটে ভারত। এ লক্ষে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী নতুন সরকারের দূর্বল সময়টিকে বেছে নেয়া হয়। বিডিআর সৈনিকদের দাবীদাওয়ার আড়ালে মুল প্লানটি বাস্তবায়নের জন্য মোট ৬০ কোটি রুপী বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে পিলখানায় ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা বিলি হয়, যাতে প্রতিটি অফিসারের মাথার বদলে ৪ লক্ষ টাকা ইনাম নির্ধারন করা হয়। ১৯ ও ২১ ফেব্রুয়ারী ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বাছাই করা ১৫ জন শুটারকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয় যারা পশ্চিম বঙ্গ সরকারের ১ লক্ষ মিষ্টির সাথে। একজন বেসামরিক দর্জি’র কাছ থেকে তাদের জন্য বিডিআর এর পোশাক বানিয়ে বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে পিলখানায় ঢুকে। তাদের দায়িত্ব ছিলো লাল টেপওয়ালা (কর্নেল ও তদুর্ধ) অফিসারদের হত্যা করবে। তারা একটি বেডফোর্ড ট্রাক ব্যাবহার করে ৪ নং গেইট দিয়ে প্রবেশ করে সকালে। ২৫ তারিখে ১১টায় বাংলাদেশের কোনো সংবাদ মাধ্বিযম জানার আগেই ভারতের “২৪ ঘন্টা” টিভিতে প্রচার করা হয় শাকিল সস্ত্রীক নিহত। অর্থাৎ মূল পরিকল্পনা অনুসারেই তা প্রচার হতে থাকে!
পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে বা আর্মির পদক্ষেপে শেখ হাসিনার জীবন বিপন্ন হলে তাকে নিরাপদে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতের ৩০ হাজার সৈন্য, ছত্রীবাহিনী ও যুদ্ধবিমান আসামের জোরহাট বিমানবন্দরে তৈরী রেখেছিলো। বিদ্রোহের দিন ভারতের বিমান বাহিনী IL-76 হেভি লিফ্ট এবং AN-32 মিডিয়াম লিফ্ট এয়ারক্রাফট নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে পূর্ণ সহায়তা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলো। ঐসময় প্রণব মুখার্জীর উক্তি মিডিয়ায় আসে এভাবে, “এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সব ধরণের সহায়তা দিতে ভারত প্রস্তুত। ... আমি তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর সতর্কবাণী পাঠাতে চাই, যারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, তারা যদি এ কাজ অব্যাহত রাখে, ভারত হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, প্রয়োজনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে।”
২. শেখ হাসিনা : ভারতের এই পরিকল্পনাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয় বেশ আগেই। আর পরিকল্পনার বাস্তবায়নের নিমিত্তে ঘটনার ১ সপ্তাহ আগে তড়িঘড়ি করে প্রধানমন্ত্রীকে সুধাসদন থেকে সরিয়ে যমুনা অতিথি ভবনে নেয়া হয় (যদিও যমুনার মেরামত তখনও শেষ হয়নি). এ পরিকল্পনার অধীনে সেনাবাহিনীর বিরাট একটা অংশ মেরে ফেলা হবে, যেটা ১৯৭৫ সালে তার পিতৃ হত্যার একটা বদলা হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্তোষজনক ছিলো। ২৫ তারিখে পৌনে ন’টার মধ্যেই এনএসআই প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে পিলখানায় বিদ্রোহ হচ্ছে। কিন্তু তিনি কাউকে কোনো ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন নি। সকাল ১০টার মধ্যে র্যাবের একটি দল, এবং ১০.২৫ মিনিটে সেনাবাহিনীর একটি দল পিলখানায় পৌছায়। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো অভিযান চালানোর অনুমতি দেয়নি। অথচ তিনি সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। আর এ সময়ের মধ্যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। বিকালে হত্যাকারীদের সাথে শেখ হাসিনা বৈঠক করে তাদের সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করেন। কিন্তু তিনি একবারও জানতে চাননি, ডিজি শাকিল কোথায়। কি বিস্ময়!!
৩. গোয়েন্দা সংস্থা: ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর পিলখানায় যাওয়ার আগের দিন পিলখানা অস্ত্রাগার থেকে ৩টি এসএমজি খোয়া যায়। অফিসারদের লাগানো হয় অস্ত্রাগারের পাহারায়। অথচ প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোয়েন্দাগিরি বহাল থাকে। নূন্যতম কোনো বিচ্যুতি ঘটলে প্রোগ্রাম বাতিল হয়। এত কিছু সত্তেও ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী সেখানে যান। মূলত: বিদ্রোহের আগাম বার্তা সেনাপ্রধান ম্ইন, ডিজিএফআই প্রধান মোল্লা ফজলে আকবর (ইনি হাসিনার এক সময়ের নাগর ছিলেন), এনএসআই প্রধান মেজর জেনারেল মুনির, সিজিএস সিনা জামালী, বিডিআর কমিউনিকেশন ইনচার্জ লেঃ কর্নেল কামরুজ্জামান, ৪৪ রাইফেল’এর সিও শামস, মুকিম ও সালাম-এর জানা ছিল। পরিকল্পনামত ২৪ তারিখে জানিয়ে দেয়া হয়, প্রধানমন্ত্রী ২৬ তারিখের নৈশভোজে যাচ্ছেন না (এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি).
৪. জেনারেল মইন উ আহমেদ: তৎকালীন সেনাপ্রধান ও ১/১১র মূল কুশীলব। ২০০৮ সালের গোড়ার দিকে ভারত সফর করে মইন চেয়েছিলেন পূর্ন ক্ষমতায় যাওয়ার সমর্থন। ভারত তা দেয়নি, বরং আ’লীগকে ক্ষমতায় আনার লক্ষে মইনকে কাজ করতে বলে, বিনিময়ে সেফ প্যাসেজ পাবে কুশীলবরা। উপায়ান্তর না দেখে মইন রাজী হয় এবং ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে ক্ষমতার পালবদল ঘটে। ওয়ান ইলেভেনের খলনায়কদের ও যে সব সেনাঅফিসার রাজনীতিবিদদের অত্যাচার করেছে তাদের বিচারের জন্য ফেব্রুয়ারীর তৃতীয় সপ্তাহে সংসদে প্রবল দাবী ওঠে। সেনাবাহিনীর চাপের মুখে জেনারেল মইন নিজে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সাথে সংসদ অফিসে। শেখ হাসিনা ধমকে দেন মখা আলমগীর, আবদুল জলিলদের, যাতে করে সেনাবাহিনীর বিচারের দাবী আর না তুলে। হাসিনা এ সময় হুশিয়ার করেন, “কিভাবে ক্ষমতায় এসেছি, সেটা কেবল আমিই জানি।” ভারত তার প্লানমত এগিয়ে যায় বিডিআর অপারেশন নিয়ে। মইনকে বলা হয় সাপোর্ট দিতে। মইন আগে থেকেই তার দু’বছরের অপকর্মের স্বাক্ষী আর্মি অফিসারদের পোষ্টিং দিতে থাকে বিডিআরে। এতকাল আর্মির রদ্দিমালগুলো যেতো বিডিআরে। খুব পরিকল্পিতভাবে এবারেই এত চৌকশ অফিসার একসাথে পাঠানো হয় বিডিআরে। রাইফেলস সপ্তাহের আগেই কানাঘুসা শুরু হয়- বিদ্রোহ হবে। অনেক অফিসার নানা অযুহাত দিয়ে ছুটিতে চলে যায়। মইনের সরাসরি যোগসাজসে ঘটে পিলখানা ট্রাজেডি যার প্রমান মেলে ঘটনার সাথে সাথেই মইনকে জানানো হয়, অথচ তিনি কোনো ব্যবস্থা নেন নি। তিনি চলে যান যমুনায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে । ঘটনার সাথে সাথে ডিজি শাকিল মইনকে জানালেও তাদের উদ্ধারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি, কেবল আশ্বাস দিয়ে সময় ক্ষেপন ছাড়া। পরবর্তীতে হাসিনা পিলখানায় গেলে মইন সেনা অফিসারদের ব্যাপক অসন্তোষের মুখে পরেন। এমনকি নিহতদের জানাজার সময় চেয়ার তুলে মারতে যায় কেউ কেউ। সেনাকুঞ্জে সেনা অফিসার হত্যার বিচার চেয়ে যারা জোর গলায় বক্তৃতা করেছিলেঅ, প্রতিবাদ করে ভিডিও দেখে দেখে প্রায় দু’শ জনকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। অনেক অফিসারকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মামলায় কারাদন্ড হয়েছে।
৫. সজীব ওয়াজেদ জয়: শেখ হাসিনার এই পুত্রটি আগে থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর ক্ষিপ্ত ছিলো। ২০০৮ সালের নির্বাচনের দেড় মাস আগে ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় তার Stemming the Rise of Islamic Extremism in Bangladesh শীর্ষক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, জোট সরকারের আমলে সেনাবাহিনীতে ৩০% মাদ্রাসার ছাত্ররা ঢুকে পড়ছে। এবং সেনাবাহিনী পূনর্গঠনের পরিকল্পনাও উপস্থাপন করেছিলেন। পিলখানার প্লানে সেনা অফিসার হত্যা করা হলে সেনাবাহিনীতে ব্যাপক সংস্কার করা সম্ভব হবে, নতুন নিয়োগ করা যাবে- এমন বিবেচনায় জয় প্রস্তাবটি গ্রহন করেন। পিলখানা হত্যার পরে জয় দুবাই যান এবং সেখানে আগত হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেন বলে খবর প্রকাশ।
৬. শেখ ফজলে নূর তাপস: শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘটনায় তার পিতা নিহত হয়। তাপস ঢাকা-১২র নির্বাচন করতে গিয়ে বিডিআর এলাকায় ৫ হাজার ভোট প্রাপ্তির লক্ষে ৪৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি তোরাব আলী’র মাধ্যমে বিডিআরের সাথে যোগাযোগ করে। তাপসকে নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে, বিডিআর সকল সদস্য নৌকায় ভোট দিবে। তার বদলে তাপস সম্মতি দিয়েছিল বিডিআরের দাবী দাওয়া মেনে নেয়ার ব্যবস্থা করবে। তাপসের বাসা স্কাই ষ্টারে বিডিআরের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে একাধিক বৈঠক করে। এমনকি দাবীদাওয়া পুরন না হওয়ায় পিলখানা বিদ্রোহের আগেরদিন তাপসকে বিদ্রোহের কথা জানানো হয়। তাপস তাতে সম্মতি দেয় এবং তাদের সার্বিক সহায়তা দেয়া হবে। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাপসও এই ষড়যন্ত্রকে কার্যকর হিসাবে মনে করে। ২৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ফজলে নুর তাপসের ধানমন্ডিস্থ বাসায় প্রায় ২৪ জন বিডিআর হত্যাকারী চুড়ান্ত শপথ নেয়। তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটন পরিকল্পনাকারীদেরকে গোপন আস্তানা ও যাবতীয় সহায়তা প্রদান করে। বিডিআর বিদ্রোহের বিকালে শেখ তাপসের ঘোষনা প্রচার করা হয়, যাতে করে পিলখানার ৩ মাইল এলাকার অধিবাসীরা দূরে সরে যান। আসলে এর মাধ্যমে খুনীদের নিরাপদে পার করার জন্য সেফ প্যাসেজ তৈরী করা হয়েছিল। তাপসের এহেন কর্মকান্ডের বদলা নিতে তরুন সেনা অফিসাররা পরবর্তীতে তাপসের ওপর হামলা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। পরে ৫ চৌকস কমান্ডো অফিসার চাকরীচ্যুত হয়ে কারাভোগ করছে। বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে সেনা তদন্ত এড়াতে তাপস কিছুদিন গা ঢাকা দেয় বিদেশে।
৭. মীর্জা আজম: যুবলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এই হুইপ পিলখানার ঘটনাকালে বিদ্রোহীদের সাথে সেল ফোনে কথা বলতে শুনা যাচ্ছিল। সে হত্যাকারীদের সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেয় কর্ণেল গুলজারের চোখ তুলে ফেলতে এবং দেহ জ্বালিয়ে দিতে। কেননা র্যাবের পরিচালক কর্নেল গুলজারের নেতৃত্বে জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানকে ধরা হয় ও পরে ফাঁসি দেয়া হয়। শায়খ রহমান ছিল মির্জা আজমের দুলাভাই। আজম এভাবেই দুলাভাই হত্যার বদলা নেয়। এছাড়াও ২০০৪ সালে নানক-আজমের ব্যবস্থাপনায় শেরাটন হোটেলের সামনে গানপাউডার দিয়ে দোতলা বাসে আগুন দিয়ে ১১ বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারার ঘটনা তদন্ত করে এই গুলজারই নানক-আজমকে সম্পৃক্ত করে। এর প্রতিশোধেই গুলজার দাহ হয়।
৮. জাহাঙ্গীর কবির নানক: এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী। উনি বিডিআরের ঘাতকদের নেতা ডিএডি তৌহিদের ক্লাশমেট। বিডিআর ট্রাজেডির আগে থেকেই তৌহিদ যোগাযোগ রাখত নানকের সঙ্গে। ঘটনারদিন ২০৪ মিনিট কথা বলে তারা। বিকালে পিলখানার বিদ্রোহীদের নিয়ে শেখ হাসিনার কাছে নিরাপদে গিয়ে মিটিং করে আসে। এবং তৌহিদকে বিডিআরের অস্থায়ী ডিজি ঘোষণা করে। কর্নেল গুলজার হত্যায় আজমের মত সরাসরি জড়িত নানক। কেননা, র্যাবের পরিচালক গুলজারই তদন্ত করে উদঘাটন করে- শেরাটনের সামনে দ্বোতলা বাস জ্বালিয়ে ১১ যাত্রী হত্যা করা হয় নানকের নির্দেশে। সেনাবাহিনীর তদন্ত পর্ষদ এড়াতে তদন্তের সময় হঠাৎ বুকের ব্যথার অযুহাতে চিকিৎসার কথা বলে নানক অনেকদিন সরে থাকে সিঙ্গাপুরে। এ নিয়ে সেনা অফিসারদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ব্রিগেডিয়ার হাসান নাসির দায়িত্বচ্যুত হন।
৯. সাহারা খাতুনঃ সুপরিকল্পিত বিডিআর ধংসযজ্ঞ সংগঠনের নিমিত্ত ভারতের পরামর্শে হাসিনার কেবিনেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিয়োগ করা হয় অথর্ব সাহার খাতুনকে। বিদ্রোহের দিন তার কোনো তৎপরতা ছিলো না সাহারার। বরং সেনা অভিযান ও পিলখানায় র্যাব ঢোকার অনুমতি চাইলে সাহারা খাতুন ‘না’ করে দেন। বিকালে বিদ্রোহীদের সাথে করে প্রেস ব্রিফিং করে এই মন্ত্রী। অথচ তার ডিজির কোনো খোঁজ নেয়নি। বিদ্রোহীদের সাথে সমঝোতার পরে রাতে তিনি যান পিলখানায় প্রধানমন্ত্রীর বুলেটপ্রুফ গাড়িতে চড়ে। তিনি বিডিআর অফিসারদের পরিবার পরিজন উদ্ধার না করে কেবল আইজিপি নুরমোহাম্মদের কন্যাকে উদ্ধার করেন। অথচ বাকী পরিবার রাতের আধারে নির্যাতিত হয়। সাহারা খাতুনের সাথে প্রধানমন্ত্রীর মেডিকেল টীম ও রেড ক্রিসেন্টের এম্বুলেন্স পিলখানায় ঢুকে। এরপরে পিলখানার বাতি নিভিয়ে ঘাতকেদের ঐ এম্বুলেন্সে করে পিলখানার বাইরে নিরাপদ যায়গায় সরানো হয়। তখনও অনেক অফিসার আহত হয়ে পিলখানা নানাস্থানে লুকিয়ে ছিলো্ কিন্তু সাহারা এদের উদ্ধার করেনি। কর্নেল এমদাদ, কর্নেল রেজা্, ও কর্নেল এলাহীকে হত্যা করা হয়।
১০. শেখ সেলিম: শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই। ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ সে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়, কিন্তু তার ভাই শেখ মনি নিহত হয়। সেনাবাহিনীর ওপরে তারও রাগ ছিলো প্রচন্ড। তা ছাড়া ১/১১র পরে সেনারা ধরে নিয়ে যায়, এবং ডিজিএফআই সেলে ব্যাপক নির্যাতন করে শেখ হাসিনার অনেক গোপন কথা, চাঁদাবাজি, বাসে আগুণ দেয়া সংক্রান্ত জবানবন্দী দিতে হয়। বিডিআরের বিদ্রোহী দলটি কয়েকদফা মিটিং করে শেখ সেলিমের সাথে। ১৩ ফেব্রুয়ারীতে শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় এ ধরনের একটি মিটিং হয় বলে সেনা তদন্তে প্রমান পাওয়া গেছে।
১১. সোহেল তাজ: স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজকে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শেখ সেলিমের বাসায় অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে সোহেল যোগ দেয়। বিদেশী হত্যাকারীদেরকে নিরাপদে মধ্যপ্রাচ্য, লন্ডন ও আমারিকায় পৌছানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সোহেল তাজকে। জনগনকে ধোকা দেয়ার জন্য প্রচার করা ঘটনার সময় তাজ আমেরিকায় ছিল। এটি সম্পুর্ন মিথ্যা কথা। সে সময়ে তাজ ঢাকায়ই ছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারী সন্ধায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে কয়েকজন হত্যাকারীসহ তাকে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং সে রাতেই তাজ ওসমানী বিমানবন্দর থেকে বিদেশের পথে যাত্রা করে। সেই হেলিকপ্টারের একজন পাইলট ছিল লেঃ কর্নেল শহীদ।যাকে পরে হত্যা করা হয় রহস্যজনক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলামের সাথে। এছাড়া বিমানের বিজি ফ্লাইট ০৪৯ দু’ঘন্টা বিলম্ব করে চারজন খুনী বিডিআরকে দুবাইতে পার দেয়া হয়। এখবরটি মানবজমিন ছাপে ৩ মার্চ ২০০৯.
১২. কর্নেল ফারুক খান: তিনি ছিলেন পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তের লক্ষে গঠিত ৩টি কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে। জনগণকে ধোকা দেয়ার জন্য প্রথমেই তিনি ঘোষণা করেন, পিলখানার ঘটনায় ইসলামী জঙ্গীরা জড়িত। এটার খাওয়ানোর জন্য সোবহান নামে এক লোককে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়। পরে আবার সেখান থেকে সরে আসেন। সেনাবাহিনীর তদন্তে অনেক সত্য কথা উঠে আসলেও তা আলোর মুখ দেখেনি এই ফারুক খানের জন্য। ধামাচাপা দেয়া হয় মূল রিপোর্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মূল রিপোর্ট বদলে গোজামিলের রিপোর্ট তৈরী করা হয়।
১৩. হাজী সেলিম: লালবাগ এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা। তিনি বিডিআর হত্যাকান্ডের সময় রাজনৈতিক সাপোর্ট দিয়েছেন। হাজী সেলিম ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে বেশ কিছু গোলাবারুদ ক্রয় করে, যা বিদেশী ভাড়াটে খুনীরা প্রথমে ব্যবহার করে। ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোর এক সাংবাদিক এটা জানার পর সে এনএসআইকে এই মর্মে অবহিত করে যে, পিলখানা সংক্রান্ত ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি চলছে যার সাথে বিডিআর ও আওয়ামীলীগের নেতারা জড়িত। উক্ত সাংবাদিককে এনএসআই থেকে বলা হয় বিষয়টা চেপে যেতে। ঘটনার দিন দুপুরে হাজী সেলিমের লোকেরা বিডিআর গেটে বিদ্রোহীদের পক্ষে মিছিল করে। ২৫ তারিখ রাতের আঁধারে পিলখানার বাতি নিভিয়ে দেয়াল টপকে সাধারন পোষাক পরে বিদ্রোহীরা তার এলাকা দিয়ে পালিয়ে যায় হাজী সেলিমের সিমেন্ট ঘাটকে ব্যবহার করে। হাজী সেলিম তার লোকজন দিয়ে স্থানীয় জনগনকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। একটি বেসকারী টিভি চ্যানেল ২৫ তারিখ রাত ১টার সংবাদে উক্ত ঘটনার খবর প্রচার করে। সেই রিপোর্টে ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য তুলে ধরে, যাতে বলা হয় যে, বেশ কিছু স্পীডবোর্টকে তারা আসা যাওয়া করতে দেখেছে; কিন্তু তারা কাছাকাছি যেতে পারেনি যেহেতু কিছু রাজনৈতিক কর্মীরা তাদেরকে সেদিকে যেতে বাধা দেয়।
১৪. তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটন: আওয়ামীলীগের ৪৮ নং ওয়ার্ডের সভাপতি। বিডিআরদের পরিচয় করিয়ে দেয় এমপি তাপসের কাছে। পরে মূল পরিকল্পনায় তোরাব আলীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তার বাড়িতেও বিদ্রোহীরা মিটিং হয়েছে। সে মূলত অবৈধ অস্ত্রের ডিলার। তার ছেলে সন্ত্রাসী লেদার লিটনের মাধ্যমে বিদ্রোহী বিডিআরদের পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা হয়। এ সংক্রান্ত খরচাদি আগেই তাকে দেয়া হয়। উক্ত লিটনকে ২ মাস আগে তাপস ও নানক জেল থেকে ছাড়িয়ে আনে। ২৫ ফেব্রুয়ারী রাত ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে স্পীড বোট যোগে হত্যাকারীদের বুড়িগঙ্গা নদী পার করিয়ে দেয় লেদার লিটন।
১৫. মহিউদ্দিন খান আলমগীর: পিলখানার ঘটনার সময় এই সাবেক আমলা ও জনতার মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা মেতে উঠেন বিভৎস উল্লাসে। বার বার ফোন করে খোঁজ নেন বিদ্রোহীদের কাছে। এমনকি নিহতদের লাশ গোপন করার জন্য এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হুকুমদাতা ছিলেন তিনি।
১৬. হাসানুল হক ইনু: বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার গলির নেতা। তিনি ১৯৭৫ সালে অনেক সেনা অফিসার হত্যা করেছেন কর্নেল তাহের বাহিনীতে থেকে। ১৯৭৫ সাল থেকে দেশে সংঘটিত সকল সামরিক অভ্যুত্থানে তার যোগসাজস রয়েছে। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের সময় তিনি তার ঘনিষ্টদের ফোন করে হত্যায় উৎসাহ যুগিয়েছেন।
চার বছর হয়ে গেছে ৫৭ সেনাঅফিসার সহ ৭৭ মানুষ হত্যার বয়স। বিডিআর বাহিনী বিলুপ্ত করা হয়েছে। ভারতীয় সহায়তায় বিজিবি গঠন করা হয়েছে, যারা এখন বিএসএফের সাথে ভাগাভাগি করে ডি্উটি করে। কয়েক হাজার বিডিআর সদস্যকে কোমরে দড়ি লাগিয়ে বিচারের প্যারেড করানো হয়েছে। জেল হয়েছে সবার। ৫৩ জন বিডিআরকে পিটিয়ে হত্য করা হয়েছে, রাঘব বোয়লদের বিরুদ্ধে সাক্ষী গায়েব করতে। কিন্তু হত্যার বিচার এখনো বাকী। সেনা অফিসাররা চায় না, এ হত্যার যেনোতেনো বিচার হোক। তাই হত্যা মামলা আগাচ্ছে না। সব মিলিয়ে, বিচার হবে নাকি বদলা হবে, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছে দেশবাসী।
অনেক সময় গেছে, অনেক কথা হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। ৪ বছর পার হয়েছে পিলখানার ৫৭ সেনা অফিসার হত্যার বিচার হয়নি। উদঘাটন হয়নি কোন্ ষড়যন্ত্রে বিডিআর বাহিনী ধংস করা হলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এত অফিসার মারা যায়নি। দুর্ঘটনাসহ সে যুদ্ধে মোট ৫৫ জন অফিসার মারা গেছে। এমনকি বিশ্বযুদ্ধেও এক ঘটনায় এত অফিসার নিহত হয়নি। গত চার বছরে দেশের মানুষ পিলখানার নারকীয় ঘটনার কমবেশী জেনে গেছে। সেনাবিাহিনীর প্রতিটি সৈনিক ও প্রতিটি অফিসার জানে - কেনো, কোন্ পরিকল্পনায়, কারা পিলখানায় ৫৭ সেনা অফিসার হত্যা করেছে। বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে, কিন্তু আসল হোতারা এখনো গোঁফে তা দিয়ে ঘুরছে। ঘটনার বর্ননায় না গিয়ে আসল কথায় আসি- কে, কেনো, কোথায় জড়িত ছিলো ইতিহাসের নির্মম ঐ হত্যাযজ্ঞে।
১. RAW: ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’এর পরিকল্পনায় ও ব্যবস্থাপনায় পিলখানায় নারকীয় ঐ তান্ডব হয়। এর মূল লক্ষ ছিলো পাদুয়া ও রৌমারীর ঘটনার বদলা নেয়া এবং বিডিআর বাহিনী ধংস করে দেয়া। ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বিডিআর-বিএসএফ যুদ্ধে ১৫০ জন বিএসএফ নিহত হয়। এর আগে পাদুয়ায় নিহত হয় ১৫ বিএসএফ। বিডিআর ডিজি মেজর জেনারেল এএলএম ফজলুর রহমানের নির্দেশে ঐ যুদ্ধে অংশ নেয় বিডিআর। ঐ ঘটনার পরে ভারতীয় ডিফেন্স মিনিষ্টার জসবন্ত সিং উত্তপ্ত লোকসভায় জানান দেন, এ ঘটনার বদলা নেয়া হবে। ১৯৭১ সালে যে সব শর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সামরিক সাহায্য দেয় তার অন্যতম ছিল "Frontier Guards will be disbanded" (CIA Report SC 7941/71). অর্থাৎ বাংলাদেশের কোনো বর্ডার গার্ড থাকবে না। কিন্তু স্বাধীনতার পরে অজ্ঞাত কারনে পাকিস্তান রাইফেলস বালাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) রূপ নেয়। বিডিআর বাহিনীটি ছিলো আধাসামরিক বাহিনী, যার মূল কমান্ড ও ট্রেনিং ছিলো সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হাতে। অন্যদিকে ভারতের বিএসএফ ছিলো সিভিল বাহিনী, যাদের ট্রেনিং, জনবল সবই ছিলো নিম্নমানের। এ কারনে বর্ডারে কোনো যু্দ্ধ হলে তাতে বিডিআর সামরিক পেশাদারিত্ব দিয়ে জিতে আসত।
মূলত এসব কারনেই বিডিআর বাহিনী ধংস করার পরিকল্পনা আঁটে ভারত। এ লক্ষে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী নতুন সরকারের দূর্বল সময়টিকে বেছে নেয়া হয়। বিডিআর সৈনিকদের দাবীদাওয়ার আড়ালে মুল প্লানটি বাস্তবায়নের জন্য মোট ৬০ কোটি রুপী বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে পিলখানায় ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা বিলি হয়, যাতে প্রতিটি অফিসারের মাথার বদলে ৪ লক্ষ টাকা ইনাম নির্ধারন করা হয়। ১৯ ও ২১ ফেব্রুয়ারী ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বাছাই করা ১৫ জন শুটারকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয় যারা পশ্চিম বঙ্গ সরকারের ১ লক্ষ মিষ্টির সাথে। একজন বেসামরিক দর্জি’র কাছ থেকে তাদের জন্য বিডিআর এর পোশাক বানিয়ে বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে পিলখানায় ঢুকে। তাদের দায়িত্ব ছিলো লাল টেপওয়ালা (কর্নেল ও তদুর্ধ) অফিসারদের হত্যা করবে। তারা একটি বেডফোর্ড ট্রাক ব্যাবহার করে ৪ নং গেইট দিয়ে প্রবেশ করে সকালে। ২৫ তারিখে ১১টায় বাংলাদেশের কোনো সংবাদ মাধ্বিযম জানার আগেই ভারতের “২৪ ঘন্টা” টিভিতে প্রচার করা হয় শাকিল সস্ত্রীক নিহত। অর্থাৎ মূল পরিকল্পনা অনুসারেই তা প্রচার হতে থাকে!
পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে বা আর্মির পদক্ষেপে শেখ হাসিনার জীবন বিপন্ন হলে তাকে নিরাপদে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতের ৩০ হাজার সৈন্য, ছত্রীবাহিনী ও যুদ্ধবিমান আসামের জোরহাট বিমানবন্দরে তৈরী রেখেছিলো। বিদ্রোহের দিন ভারতের বিমান বাহিনী IL-76 হেভি লিফ্ট এবং AN-32 মিডিয়াম লিফ্ট এয়ারক্রাফট নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে পূর্ণ সহায়তা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলো। ঐসময় প্রণব মুখার্জীর উক্তি মিডিয়ায় আসে এভাবে, “এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সব ধরণের সহায়তা দিতে ভারত প্রস্তুত। ... আমি তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর সতর্কবাণী পাঠাতে চাই, যারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, তারা যদি এ কাজ অব্যাহত রাখে, ভারত হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, প্রয়োজনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে।”
২. শেখ হাসিনা : ভারতের এই পরিকল্পনাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয় বেশ আগেই। আর পরিকল্পনার বাস্তবায়নের নিমিত্তে ঘটনার ১ সপ্তাহ আগে তড়িঘড়ি করে প্রধানমন্ত্রীকে সুধাসদন থেকে সরিয়ে যমুনা অতিথি ভবনে নেয়া হয় (যদিও যমুনার মেরামত তখনও শেষ হয়নি). এ পরিকল্পনার অধীনে সেনাবাহিনীর বিরাট একটা অংশ মেরে ফেলা হবে, যেটা ১৯৭৫ সালে তার পিতৃ হত্যার একটা বদলা হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্তোষজনক ছিলো। ২৫ তারিখে পৌনে ন’টার মধ্যেই এনএসআই প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে পিলখানায় বিদ্রোহ হচ্ছে। কিন্তু তিনি কাউকে কোনো ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন নি। সকাল ১০টার মধ্যে র্যাবের একটি দল, এবং ১০.২৫ মিনিটে সেনাবাহিনীর একটি দল পিলখানায় পৌছায়। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো অভিযান চালানোর অনুমতি দেয়নি। অথচ তিনি সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। আর এ সময়ের মধ্যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। বিকালে হত্যাকারীদের সাথে শেখ হাসিনা বৈঠক করে তাদের সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করেন। কিন্তু তিনি একবারও জানতে চাননি, ডিজি শাকিল কোথায়। কি বিস্ময়!!
৩. গোয়েন্দা সংস্থা: ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর পিলখানায় যাওয়ার আগের দিন পিলখানা অস্ত্রাগার থেকে ৩টি এসএমজি খোয়া যায়। অফিসারদের লাগানো হয় অস্ত্রাগারের পাহারায়। অথচ প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোয়েন্দাগিরি বহাল থাকে। নূন্যতম কোনো বিচ্যুতি ঘটলে প্রোগ্রাম বাতিল হয়। এত কিছু সত্তেও ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী সেখানে যান। মূলত: বিদ্রোহের আগাম বার্তা সেনাপ্রধান ম্ইন, ডিজিএফআই প্রধান মোল্লা ফজলে আকবর (ইনি হাসিনার এক সময়ের নাগর ছিলেন), এনএসআই প্রধান মেজর জেনারেল মুনির, সিজিএস সিনা জামালী, বিডিআর কমিউনিকেশন ইনচার্জ লেঃ কর্নেল কামরুজ্জামান, ৪৪ রাইফেল’এর সিও শামস, মুকিম ও সালাম-এর জানা ছিল। পরিকল্পনামত ২৪ তারিখে জানিয়ে দেয়া হয়, প্রধানমন্ত্রী ২৬ তারিখের নৈশভোজে যাচ্ছেন না (এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি).
৪. জেনারেল মইন উ আহমেদ: তৎকালীন সেনাপ্রধান ও ১/১১র মূল কুশীলব। ২০০৮ সালের গোড়ার দিকে ভারত সফর করে মইন চেয়েছিলেন পূর্ন ক্ষমতায় যাওয়ার সমর্থন। ভারত তা দেয়নি, বরং আ’লীগকে ক্ষমতায় আনার লক্ষে মইনকে কাজ করতে বলে, বিনিময়ে সেফ প্যাসেজ পাবে কুশীলবরা। উপায়ান্তর না দেখে মইন রাজী হয় এবং ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে ক্ষমতার পালবদল ঘটে। ওয়ান ইলেভেনের খলনায়কদের ও যে সব সেনাঅফিসার রাজনীতিবিদদের অত্যাচার করেছে তাদের বিচারের জন্য ফেব্রুয়ারীর তৃতীয় সপ্তাহে সংসদে প্রবল দাবী ওঠে। সেনাবাহিনীর চাপের মুখে জেনারেল মইন নিজে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সাথে সংসদ অফিসে। শেখ হাসিনা ধমকে দেন মখা আলমগীর, আবদুল জলিলদের, যাতে করে সেনাবাহিনীর বিচারের দাবী আর না তুলে। হাসিনা এ সময় হুশিয়ার করেন, “কিভাবে ক্ষমতায় এসেছি, সেটা কেবল আমিই জানি।” ভারত তার প্লানমত এগিয়ে যায় বিডিআর অপারেশন নিয়ে। মইনকে বলা হয় সাপোর্ট দিতে। মইন আগে থেকেই তার দু’বছরের অপকর্মের স্বাক্ষী আর্মি অফিসারদের পোষ্টিং দিতে থাকে বিডিআরে। এতকাল আর্মির রদ্দিমালগুলো যেতো বিডিআরে। খুব পরিকল্পিতভাবে এবারেই এত চৌকশ অফিসার একসাথে পাঠানো হয় বিডিআরে। রাইফেলস সপ্তাহের আগেই কানাঘুসা শুরু হয়- বিদ্রোহ হবে। অনেক অফিসার নানা অযুহাত দিয়ে ছুটিতে চলে যায়। মইনের সরাসরি যোগসাজসে ঘটে পিলখানা ট্রাজেডি যার প্রমান মেলে ঘটনার সাথে সাথেই মইনকে জানানো হয়, অথচ তিনি কোনো ব্যবস্থা নেন নি। তিনি চলে যান যমুনায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে । ঘটনার সাথে সাথে ডিজি শাকিল মইনকে জানালেও তাদের উদ্ধারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি, কেবল আশ্বাস দিয়ে সময় ক্ষেপন ছাড়া। পরবর্তীতে হাসিনা পিলখানায় গেলে মইন সেনা অফিসারদের ব্যাপক অসন্তোষের মুখে পরেন। এমনকি নিহতদের জানাজার সময় চেয়ার তুলে মারতে যায় কেউ কেউ। সেনাকুঞ্জে সেনা অফিসার হত্যার বিচার চেয়ে যারা জোর গলায় বক্তৃতা করেছিলেঅ, প্রতিবাদ করে ভিডিও দেখে দেখে প্রায় দু’শ জনকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। অনেক অফিসারকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মামলায় কারাদন্ড হয়েছে।
৫. সজীব ওয়াজেদ জয়: শেখ হাসিনার এই পুত্রটি আগে থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর ক্ষিপ্ত ছিলো। ২০০৮ সালের নির্বাচনের দেড় মাস আগে ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় তার Stemming the Rise of Islamic Extremism in Bangladesh শীর্ষক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, জোট সরকারের আমলে সেনাবাহিনীতে ৩০% মাদ্রাসার ছাত্ররা ঢুকে পড়ছে। এবং সেনাবাহিনী পূনর্গঠনের পরিকল্পনাও উপস্থাপন করেছিলেন। পিলখানার প্লানে সেনা অফিসার হত্যা করা হলে সেনাবাহিনীতে ব্যাপক সংস্কার করা সম্ভব হবে, নতুন নিয়োগ করা যাবে- এমন বিবেচনায় জয় প্রস্তাবটি গ্রহন করেন। পিলখানা হত্যার পরে জয় দুবাই যান এবং সেখানে আগত হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেন বলে খবর প্রকাশ।
৬. শেখ ফজলে নূর তাপস: শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘটনায় তার পিতা নিহত হয়। তাপস ঢাকা-১২র নির্বাচন করতে গিয়ে বিডিআর এলাকায় ৫ হাজার ভোট প্রাপ্তির লক্ষে ৪৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি তোরাব আলী’র মাধ্যমে বিডিআরের সাথে যোগাযোগ করে। তাপসকে নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে, বিডিআর সকল সদস্য নৌকায় ভোট দিবে। তার বদলে তাপস সম্মতি দিয়েছিল বিডিআরের দাবী দাওয়া মেনে নেয়ার ব্যবস্থা করবে। তাপসের বাসা স্কাই ষ্টারে বিডিআরের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে একাধিক বৈঠক করে। এমনকি দাবীদাওয়া পুরন না হওয়ায় পিলখানা বিদ্রোহের আগেরদিন তাপসকে বিদ্রোহের কথা জানানো হয়। তাপস তাতে সম্মতি দেয় এবং তাদের সার্বিক সহায়তা দেয়া হবে। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাপসও এই ষড়যন্ত্রকে কার্যকর হিসাবে মনে করে। ২৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ফজলে নুর তাপসের ধানমন্ডিস্থ বাসায় প্রায় ২৪ জন বিডিআর হত্যাকারী চুড়ান্ত শপথ নেয়। তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটন পরিকল্পনাকারীদেরকে গোপন আস্তানা ও যাবতীয় সহায়তা প্রদান করে। বিডিআর বিদ্রোহের বিকালে শেখ তাপসের ঘোষনা প্রচার করা হয়, যাতে করে পিলখানার ৩ মাইল এলাকার অধিবাসীরা দূরে সরে যান। আসলে এর মাধ্যমে খুনীদের নিরাপদে পার করার জন্য সেফ প্যাসেজ তৈরী করা হয়েছিল। তাপসের এহেন কর্মকান্ডের বদলা নিতে তরুন সেনা অফিসাররা পরবর্তীতে তাপসের ওপর হামলা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। পরে ৫ চৌকস কমান্ডো অফিসার চাকরীচ্যুত হয়ে কারাভোগ করছে। বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে সেনা তদন্ত এড়াতে তাপস কিছুদিন গা ঢাকা দেয় বিদেশে।
৭. মীর্জা আজম: যুবলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এই হুইপ পিলখানার ঘটনাকালে বিদ্রোহীদের সাথে সেল ফোনে কথা বলতে শুনা যাচ্ছিল। সে হত্যাকারীদের সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেয় কর্ণেল গুলজারের চোখ তুলে ফেলতে এবং দেহ জ্বালিয়ে দিতে। কেননা র্যাবের পরিচালক কর্নেল গুলজারের নেতৃত্বে জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানকে ধরা হয় ও পরে ফাঁসি দেয়া হয়। শায়খ রহমান ছিল মির্জা আজমের দুলাভাই। আজম এভাবেই দুলাভাই হত্যার বদলা নেয়। এছাড়াও ২০০৪ সালে নানক-আজমের ব্যবস্থাপনায় শেরাটন হোটেলের সামনে গানপাউডার দিয়ে দোতলা বাসে আগুন দিয়ে ১১ বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারার ঘটনা তদন্ত করে এই গুলজারই নানক-আজমকে সম্পৃক্ত করে। এর প্রতিশোধেই গুলজার দাহ হয়।
৮. জাহাঙ্গীর কবির নানক: এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী। উনি বিডিআরের ঘাতকদের নেতা ডিএডি তৌহিদের ক্লাশমেট। বিডিআর ট্রাজেডির আগে থেকেই তৌহিদ যোগাযোগ রাখত নানকের সঙ্গে। ঘটনারদিন ২০৪ মিনিট কথা বলে তারা। বিকালে পিলখানার বিদ্রোহীদের নিয়ে শেখ হাসিনার কাছে নিরাপদে গিয়ে মিটিং করে আসে। এবং তৌহিদকে বিডিআরের অস্থায়ী ডিজি ঘোষণা করে। কর্নেল গুলজার হত্যায় আজমের মত সরাসরি জড়িত নানক। কেননা, র্যাবের পরিচালক গুলজারই তদন্ত করে উদঘাটন করে- শেরাটনের সামনে দ্বোতলা বাস জ্বালিয়ে ১১ যাত্রী হত্যা করা হয় নানকের নির্দেশে। সেনাবাহিনীর তদন্ত পর্ষদ এড়াতে তদন্তের সময় হঠাৎ বুকের ব্যথার অযুহাতে চিকিৎসার কথা বলে নানক অনেকদিন সরে থাকে সিঙ্গাপুরে। এ নিয়ে সেনা অফিসারদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ব্রিগেডিয়ার হাসান নাসির দায়িত্বচ্যুত হন।
৯. সাহারা খাতুনঃ সুপরিকল্পিত বিডিআর ধংসযজ্ঞ সংগঠনের নিমিত্ত ভারতের পরামর্শে হাসিনার কেবিনেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিয়োগ করা হয় অথর্ব সাহার খাতুনকে। বিদ্রোহের দিন তার কোনো তৎপরতা ছিলো না সাহারার। বরং সেনা অভিযান ও পিলখানায় র্যাব ঢোকার অনুমতি চাইলে সাহারা খাতুন ‘না’ করে দেন। বিকালে বিদ্রোহীদের সাথে করে প্রেস ব্রিফিং করে এই মন্ত্রী। অথচ তার ডিজির কোনো খোঁজ নেয়নি। বিদ্রোহীদের সাথে সমঝোতার পরে রাতে তিনি যান পিলখানায় প্রধানমন্ত্রীর বুলেটপ্রুফ গাড়িতে চড়ে। তিনি বিডিআর অফিসারদের পরিবার পরিজন উদ্ধার না করে কেবল আইজিপি নুরমোহাম্মদের কন্যাকে উদ্ধার করেন। অথচ বাকী পরিবার রাতের আধারে নির্যাতিত হয়। সাহারা খাতুনের সাথে প্রধানমন্ত্রীর মেডিকেল টীম ও রেড ক্রিসেন্টের এম্বুলেন্স পিলখানায় ঢুকে। এরপরে পিলখানার বাতি নিভিয়ে ঘাতকেদের ঐ এম্বুলেন্সে করে পিলখানার বাইরে নিরাপদ যায়গায় সরানো হয়। তখনও অনেক অফিসার আহত হয়ে পিলখানা নানাস্থানে লুকিয়ে ছিলো্ কিন্তু সাহারা এদের উদ্ধার করেনি। কর্নেল এমদাদ, কর্নেল রেজা্, ও কর্নেল এলাহীকে হত্যা করা হয়।
১০. শেখ সেলিম: শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই। ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ সে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়, কিন্তু তার ভাই শেখ মনি নিহত হয়। সেনাবাহিনীর ওপরে তারও রাগ ছিলো প্রচন্ড। তা ছাড়া ১/১১র পরে সেনারা ধরে নিয়ে যায়, এবং ডিজিএফআই সেলে ব্যাপক নির্যাতন করে শেখ হাসিনার অনেক গোপন কথা, চাঁদাবাজি, বাসে আগুণ দেয়া সংক্রান্ত জবানবন্দী দিতে হয়। বিডিআরের বিদ্রোহী দলটি কয়েকদফা মিটিং করে শেখ সেলিমের সাথে। ১৩ ফেব্রুয়ারীতে শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় এ ধরনের একটি মিটিং হয় বলে সেনা তদন্তে প্রমান পাওয়া গেছে।
১১. সোহেল তাজ: স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজকে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শেখ সেলিমের বাসায় অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে সোহেল যোগ দেয়। বিদেশী হত্যাকারীদেরকে নিরাপদে মধ্যপ্রাচ্য, লন্ডন ও আমারিকায় পৌছানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সোহেল তাজকে। জনগনকে ধোকা দেয়ার জন্য প্রচার করা ঘটনার সময় তাজ আমেরিকায় ছিল। এটি সম্পুর্ন মিথ্যা কথা। সে সময়ে তাজ ঢাকায়ই ছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারী সন্ধায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে কয়েকজন হত্যাকারীসহ তাকে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং সে রাতেই তাজ ওসমানী বিমানবন্দর থেকে বিদেশের পথে যাত্রা করে। সেই হেলিকপ্টারের একজন পাইলট ছিল লেঃ কর্নেল শহীদ।যাকে পরে হত্যা করা হয় রহস্যজনক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলামের সাথে। এছাড়া বিমানের বিজি ফ্লাইট ০৪৯ দু’ঘন্টা বিলম্ব করে চারজন খুনী বিডিআরকে দুবাইতে পার দেয়া হয়। এখবরটি মানবজমিন ছাপে ৩ মার্চ ২০০৯.
১২. কর্নেল ফারুক খান: তিনি ছিলেন পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তের লক্ষে গঠিত ৩টি কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে। জনগণকে ধোকা দেয়ার জন্য প্রথমেই তিনি ঘোষণা করেন, পিলখানার ঘটনায় ইসলামী জঙ্গীরা জড়িত। এটার খাওয়ানোর জন্য সোবহান নামে এক লোককে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়। পরে আবার সেখান থেকে সরে আসেন। সেনাবাহিনীর তদন্তে অনেক সত্য কথা উঠে আসলেও তা আলোর মুখ দেখেনি এই ফারুক খানের জন্য। ধামাচাপা দেয়া হয় মূল রিপোর্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মূল রিপোর্ট বদলে গোজামিলের রিপোর্ট তৈরী করা হয়।
১৩. হাজী সেলিম: লালবাগ এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা। তিনি বিডিআর হত্যাকান্ডের সময় রাজনৈতিক সাপোর্ট দিয়েছেন। হাজী সেলিম ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে বেশ কিছু গোলাবারুদ ক্রয় করে, যা বিদেশী ভাড়াটে খুনীরা প্রথমে ব্যবহার করে। ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোর এক সাংবাদিক এটা জানার পর সে এনএসআইকে এই মর্মে অবহিত করে যে, পিলখানা সংক্রান্ত ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি চলছে যার সাথে বিডিআর ও আওয়ামীলীগের নেতারা জড়িত। উক্ত সাংবাদিককে এনএসআই থেকে বলা হয় বিষয়টা চেপে যেতে। ঘটনার দিন দুপুরে হাজী সেলিমের লোকেরা বিডিআর গেটে বিদ্রোহীদের পক্ষে মিছিল করে। ২৫ তারিখ রাতের আঁধারে পিলখানার বাতি নিভিয়ে দেয়াল টপকে সাধারন পোষাক পরে বিদ্রোহীরা তার এলাকা দিয়ে পালিয়ে যায় হাজী সেলিমের সিমেন্ট ঘাটকে ব্যবহার করে। হাজী সেলিম তার লোকজন দিয়ে স্থানীয় জনগনকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। একটি বেসকারী টিভি চ্যানেল ২৫ তারিখ রাত ১টার সংবাদে উক্ত ঘটনার খবর প্রচার করে। সেই রিপোর্টে ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য তুলে ধরে, যাতে বলা হয় যে, বেশ কিছু স্পীডবোর্টকে তারা আসা যাওয়া করতে দেখেছে; কিন্তু তারা কাছাকাছি যেতে পারেনি যেহেতু কিছু রাজনৈতিক কর্মীরা তাদেরকে সেদিকে যেতে বাধা দেয়।
১৪. তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটন: আওয়ামীলীগের ৪৮ নং ওয়ার্ডের সভাপতি। বিডিআরদের পরিচয় করিয়ে দেয় এমপি তাপসের কাছে। পরে মূল পরিকল্পনায় তোরাব আলীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তার বাড়িতেও বিদ্রোহীরা মিটিং হয়েছে। সে মূলত অবৈধ অস্ত্রের ডিলার। তার ছেলে সন্ত্রাসী লেদার লিটনের মাধ্যমে বিদ্রোহী বিডিআরদের পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা হয়। এ সংক্রান্ত খরচাদি আগেই তাকে দেয়া হয়। উক্ত লিটনকে ২ মাস আগে তাপস ও নানক জেল থেকে ছাড়িয়ে আনে। ২৫ ফেব্রুয়ারী রাত ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে স্পীড বোট যোগে হত্যাকারীদের বুড়িগঙ্গা নদী পার করিয়ে দেয় লেদার লিটন।
১৫. মহিউদ্দিন খান আলমগীর: পিলখানার ঘটনার সময় এই সাবেক আমলা ও জনতার মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা মেতে উঠেন বিভৎস উল্লাসে। বার বার ফোন করে খোঁজ নেন বিদ্রোহীদের কাছে। এমনকি নিহতদের লাশ গোপন করার জন্য এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হুকুমদাতা ছিলেন তিনি।
১৬. হাসানুল হক ইনু: বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার গলির নেতা। তিনি ১৯৭৫ সালে অনেক সেনা অফিসার হত্যা করেছেন কর্নেল তাহের বাহিনীতে থেকে। ১৯৭৫ সাল থেকে দেশে সংঘটিত সকল সামরিক অভ্যুত্থানে তার যোগসাজস রয়েছে। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের সময় তিনি তার ঘনিষ্টদের ফোন করে হত্যায় উৎসাহ যুগিয়েছেন।
চার বছর হয়ে গেছে ৫৭ সেনাঅফিসার সহ ৭৭ মানুষ হত্যার বয়স। বিডিআর বাহিনী বিলুপ্ত করা হয়েছে। ভারতীয় সহায়তায় বিজিবি গঠন করা হয়েছে, যারা এখন বিএসএফের সাথে ভাগাভাগি করে ডি্উটি করে। কয়েক হাজার বিডিআর সদস্যকে কোমরে দড়ি লাগিয়ে বিচারের প্যারেড করানো হয়েছে। জেল হয়েছে সবার। ৫৩ জন বিডিআরকে পিটিয়ে হত্য করা হয়েছে, রাঘব বোয়লদের বিরুদ্ধে সাক্ষী গায়েব করতে। কিন্তু হত্যার বিচার এখনো বাকী। সেনা অফিসাররা চায় না, এ হত্যার যেনোতেনো বিচার হোক। তাই হত্যা মামলা আগাচ্ছে না। সব মিলিয়ে, বিচার হবে নাকি বদলা হবে, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছে দেশবাসী।
সুত্র: Click This Link
আরো কিছু লেখা লেখা। দেখুন এই ব্লগে।
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




