somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিনার মাহমুদ,আপনাকে খুব মিস করি

২৯ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত ২টা কি ৩টার দিকে হঠাৎ মোবাইলে মেসেজ আসার শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠি।মেসেজ খুলতেই দেখি ভয়াবহ নাড়া দেওয়া একটা খবর-minar Mahmud suicide korse.বিচিন্তার মিনার মাহমুদ কিনা সেটা জানার জন্য ফিরতি মেসেজ পাঠাই।আমার মেসেজ প্রেরক বন্ধু আরিফ কিছুক্ষণের মধ্যেই নিশ্চিত করে,সেসময়ে আমার ভাল লেগে যাওয়া লেখকের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন মিনার মাহমুদ কোন এক অজানা অভিমানে আত্মহত্যা করেছেন।সে রাতে আর ঘুমাই না।মোবাইলের টর্চে শেলফ থেকে মিনার মাহমুদের ‘নির্ঘুম স্বপ্নের দেশে’ বইটা নিয়ে পাতা উল্টাতে শুরু করি।যার চমৎকার-ঝরঝরে আর প্রাণবন্ত লেখা আমার সামনে জীবন্ত,সে কিনা এখন হিমঘরে শুয়ে আছে।মনে পড়ে মিনার মাহমুদের সাথে একদিন এবং সেই একবারই চ্যাটিং এর কথা।আমি বাংলায় মেসেজ পাঠিয়েছিলাম বলে উনার উত্তর ‘তোমার ভাষাপ্রেম খুব ভালো লেগেছে কিন্তু আমার কম্পিউটারে বাংলা পড়া যায় না”।তিনি তখন অসুস্থ এবং খুব সম্ভবত হসপিটালে।জানিয়েছিলেন জুনেই ‘বিচিন্তা’ আবার চালু হবে।কিন্তু মার্চেই তো তিনি বেছে নিলেন আত্মহননের মাধ্যমে না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার।
মিনার মাহমুদ বিচিন্তার শেষবার প্রকাশকালীন সময়ে কমিউনিটি ব্লগ সচলায়তন এর সাথে বিনা অনুমতিতে লেখা ছাপানো সংক্রান্ত এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন।এমন অভিযোগ অবশ্য সেবারই প্রথম ছিল না।এর আগে আলি মাহমেদ ভাইয়ের কিছু লেখাও তিনি ৯০ এর দশকে লেখকের নাম উল্লেখ না করেই ছেপেছিলেন।এবং সেজন্য আলি মাহমেদ ভাই ‘মিনার মাহমুদ,আপনাকে চোর বলতে লজ্জা লাগছে’ শিরোনামে একটা লেখাও প্রকাশ করেছিলেন তাঁর ব্লগে।পরে মিনার মাহমুদ সচলায়তন কর্তৃপক্ষের সাথে সম্মানি প্রদানের মাধ্যমে এ ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছাতে চেয়েছিলেন।কিন্তু ‘ব্রাহ্মণ’ সচলরা সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি।উল্টো নানা কটু মন্তব্যে তাঁকে জর্জরিত করেছিল।মৃত্যু এমনই একটা ব্যাপার যে আপনাকে সব অভিযোগ-ক্ষোভের উর্দ্ধে নিয়ে যায়।আলি মাহমেদ ভাইও তাঁর ব্লগ থেকে মিনার মাহমুদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সেই লেখাটা সরিয়ে নিয়েছিলেন।কিন্তু সচলরা তাদের ক্রোধে এতটাই অন্ধ ছিল যে,সচলের একজন সিনিয়র ব্লগার মিনার মাহমুদকে চোরের বদলে ‘মরহুম চোর’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। এখানে বলে রাখা ভালো,এই লেখার লেখকের সাথে সচলায়তনের পরিচয় মিনার মাহমুদের বিচিন্তা ম্যাগাজিনের মাধ্যমেই।
মিনার মাহমুদ মারা যাওয়ার পরে তাঁর বড় পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল তিনি তসলিমা নাসরিনের সাবেক স্বামী!তাঁর যে স্বৈরাচার বিরোধী একজন সাহসী সাংবাদিক পরিচয় ছিল,সেটা যেন অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছিল।স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্লান্ত মিনার মাহমুদ দীর্ঘ ১৮ বছর মার্কিন মুলুকে কাটিয়েছিলেন।দেশে ফেরত এসে যখন বিচিন্তা পুনরায় চালু করেও সফলতার মুখ দেখছিলেন না,তখন অন্য সংবাদ মাধ্যমের সাথে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন।কিন্তু কেউই এই ‘বেপরোয়া’ সাংবাদিককে নিজের কর্মস্থলে দেখতে চাননি।প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান তাঁকে ফান সাপ্লিমেন্ট ‘রস+আলো” তে লেখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন!কেউ কেউ আবার এত ঝুঁকির মধ্যে না গিয়ে কেবল মাসিক মাসোহারা দিয়ে চুপ করে রাখতে চেয়েছিলেন।নিজের এমন অবমূল্যায়ন এবং চারপাশে স্বার্থপরদের আধিক্য হয়তো সইতে না পেরে মিনার মাহমুদ সবার উপরে অভিমান করে পৃথিবী ছেড়েই চলে গেছেন।তাঁর রচনাসমগ্রের ভূমিকায় লেখা আছে গোটা বাংলাদেশের সার্বিক সমাজব্যবস্থাই তাঁকে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে।সম্পাদকের আশা,তাঁর এই অকাল মৃত্যু বাংলাদেশের সমাজকে নতুন পথ দেখাবে,তিনি হবেন তিউনিশিয়ার বো আজিজির মত সমাজ বদলের হাতিয়ার।তাঁর মৃত্যু যেন বৃথা না যায়-সেই কামনাই করি।প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে অনেক শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় স্মরণ করি এই অসাধারণ লেখনীর অধিকারী অকালপ্রয়াত সাহসী সাংবাদিককে।মিনার মাহমুদ আপনার লেখা খুব মিস করবো,আপনাকে খুব মিস করবো।আল্লাহ মিনার মাহমুদকে জান্নাত নসিব করুক।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের জাতির কপালে শনি আছে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১১



একাত্তরে যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে তারা বলেছে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, সুতরাং ভারতের অধীন হওয়ার চেয়ে পাকিস্তানের অধীন থাকা ভালো। তারা মনে করেছে অধীকাংশ নাগরিক তাদের দলে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×