somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নৌ বাহিনীর চৌকশ নেতৃত্বে স্বতন্ত্র মর্যাদার শিল্প প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ড

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক সময়ের রুগ্ন খুলনা শিপইয়ার্ড এখন লাভজনক ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে। এর দক্ষ ব্যবস্থাপনার পেছনে চালকের আসনে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তা।
জলযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড ১৯৫৪ সালে স্থাপনের পর ১৯৫৭ সালে উৎপাদন শুরু হয়। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জার্মান ও ব্রিটিশ কোম্পানি যৌথভাবে পরিচালনা করে। এ বছরই শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয় ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এর দায়িত্ব বর্তায় বাংলাদেশ স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (বিএসইসি)’র উপর। ৮০’র দশকে অতি সামান্য লাভে চললেও এরপর থেকে বাড়তে থাকে লোকসানের বোঝা এবং এক সময় প্রতিষ্ঠানটি রুগ্ন শিল্পে পরিণত হলে তৎকালীন সরকার ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯৯ সালে সরকার দৈন্যদশায় নিমজ্জিত শিপইয়ার্ডকে টেনে তুলতে শেষ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এক সাহসী উদ্যোগে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় এ শিল্প প্রতিষ্ঠানের দেনা ছিল প্রায় সাড়ে ৬৩ কোটি টাকা। যা কাটিয়ে ওঠা অকল্পনীয় ব্যাপার হলেও এই দুঃসাধ্য সাধন করে নৌ বাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও চৌকশ পরিচালনায় শিপইয়ার্ড এখন একটি লাভজনক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে জলযান নির্মাণ শিল্পের এক সোনালী অতীত বহু বছর যাবত বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যেতে বসেছিল। অতীতে এশিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশ আমাদের নির্মিত জাহাজ ও নৌকা ক্রয় করে নিয়ে যেত। চৌদ্দ শতাব্দীর পরিব্রাজক ইবনে বতুতা সোনার গাঁয়ের একটি ডকইয়ার্ডে নির্মিত কাঠের নৌকায় চড়ে তার দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। সতের শতাব্দীতে তুরস্কের সুলতানের জন্য পুরো ফ্লিট তৈরি করেছিল চট্টগ্রামের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। মুঘলদের নৌ বহরের জাহাজও নির্মিত হয়েছে চট্টগ্রামে। এই সমৃদ্ধ ইতিহাসকে ধারণ করে বিলম্বে হলেও একটু একটু করে আবারো জেগে উঠছে দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এরই ধারাবাহিকতায় নৌ বাহিনীর চৌকশ নেতৃত্বে খুলনা শিপইয়ার্ড জেগে উঠেছে বিস্ময়কর ভাবে। এ পর্যন্ত মেরামত করেছে ১৮০০ এর উপরে জাহাজ। নির্মাণ করেছে সাড়ে ৬শত। নৌ বাহিনীর ব্যবস্থাপনায় অগ্রগতির শিখরে উঠে তৈরি করেছে যুদ্ধ জাহাজ। অর্জন করেছে সর্বোচ্চ দু’হাজার টনি জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের ক্ষমতা। যে কারণে গত বছর আই, এস, ও ৯০০১ঃ২০০৮ সার্টিফিকেটও অর্জন করেছে। খুলনা শিপইয়ার্ডের জাহাজ ডকিং এবং আনডকিং এর জন্য ৭শ’ টন ক্ষমতা সম্পন্ন স্লিপওয়ে, জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য ৮টি বার্থ আছে যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৪২৫ ফুট। অতি দ্রুত নির্মাণ ও মেরামত কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি “নো কমেপ্রামাইজ উইথ কোয়ালিটি” এ মূল মন্ত্রকে ধারণ করায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ দেয়ার জন্য ধারাবাহিক যোগাযোগ বাড়ছে।

দেশে এই প্রথমবার ৫টি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ তৈরি করছে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড। এ শিপইয়ার্ডে জাহাজগুলো নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জাহাজ নির্মাণ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। গত বছর জুন থেকে জাহাজ তৈরির প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় থেকে মোট ৪২ মাস অর্থাৎ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাহাজ নির্মাণ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই যুদ্ধ জাহাজ গুলির প্রতিটি দৈর্ঘ্য হবে ৫০ মিটার ও প্রস্থ ৭ মিটার। ৫টি জাহাজ নির্মাণে ব্যয় হবে মোট ২৮০ কোটি টাকা। এ ধরনের জাহাজ বিদেশ থেকে আমদানি করা হলে তার ১টির মূল্য পড়ত প্রায় ২০০ কোটি টাকা। জাহাজের গতি হবে ঘণ্টায় প্রায় ২০/২৫ মাইল। বাংলাদেশ নৌবাহিনী এই যুদ্ধজাহাজগুলো ব্যবহার করবে। অপারেশনাল কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য জাহাজে দুই ধরনের গান (অস্ত্র) থাকবে।

দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নে শিপইয়ার্ড প্রতি বছর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন কুয়েট, বুয়েট ও বিভিন্ন কারিগরি বিদ্যাপীঠের প্রায় দু’হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে গত পাঁচ বছরে অন-জব-প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। যার ধারাবাহিকতায় এ বছর ৫শ’ জনের মত প্রশিক্ষণরত রয়েছে। এছাড়া আধুনিক কারিগরি শিক্ষা বিস্তারে শিপইয়ার্ড’এর বর্তমান বোর্ড অব ডিরেক্টরস ইতোমধ্যে একটি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার চালু করেছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের পৃথিবীর সর্বত্র শিপইয়ার্ড’এ কাজ করার যোগ্য করে তুলে গ্লোবাল ভিলেজের উপযোগী মানব সম্পদে পরিণত করাই যার লক্ষ্য।

খুলনা শিপইয়ার্ড প্রতি বছরের রাজস্ব কর, ভ্যাট, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য সকল পাওনাদি শতভাগ পরিশোধ করে আসছে। শ্রমিক কর্মচারীদের প্রতি মাসের ১ তারিখেই পূর্ববর্তী মাসের বেতন দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে পহেলা তারিখ ছুটির দিন থাকলে চলতি মাসের শেষ দিনেই সে মাসের বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে যা দেশে এক বড় বিরল দৃষ্টান্ত। শ্রমিকদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আবাসিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। প্রতি বছর পাঁচ পার্সেন্ট প্রোফিট বোনাসসহ কল্যাণ তহবিল হতে সুদ-বিহীন ঋণ আবেদন করার এক দিনের মধ্যেই আবেদনকারীর হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। শ্রমিক কর্মচারীদের অবসরপ্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে সমুদয় পাওনাদি পরিশোধ করে এক স্বতন্ত্র মর্যাদার শিল্প প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ডকে। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে এখানে লোকবল ১ হাজার জন। যাদের ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়ার জন্য রয়েছে হাইস্কুল, প্রাইমারী স্কুল ও মাদ্রাসা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বমোট প্রায় ১৬শ’ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।

বর্তমানে খুলনা শিপইয়ার্ডের জায়গার পরিধি কম হওয়ায় খুলনা শিপইয়ার্ড সব অর্ডার গ্রহণ করতে পারছে না। এ ও পূর্বের দৈন্যদশা পাল্টে যাওয়ার এক উদাহরণ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:২২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×