দেশে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে ধর্ষণ। ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছে না কন্যাশিশু ও বৃদ্ধ নারীরাও। এমনকি রেহাই পাচ্ছে না বাক বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরাও। শুধু তাই নয়, ধর্ষণ শেষে নির্মম নির্যাতন, এমনকি চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়ে কিংবা আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। মানুষ নামধারীরা এক বিভত্স রূপ নিয়ে হাজির হচ্ছে আমাদের কন্যাশিশু, কিশোরী ও নারীদের সামনে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ছোঁয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক-হেলপাররা কলেজছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রূপাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পঁচিশমাইল এলাকায় (মধুপুর বন) রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। তারপর সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে রাতে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বাহেরচর গ্রামে যাওয়ার উদ্দেশে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন বাহেরচর গ্রামের মেয়ে ঢাকার কল্যাণপুরে অবস্থিত ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স শাহিনূর আক্তার তানিয়া। পরে মেয়েটিকে একা বাসে পেয়ে বাসের চালক নূরুজ্জামান, হেলপার লালনসহ আরও একজন বাজিতপুর উপজেলার বিলপাড় গজারিয়া নামক স্থানে চলন্ত বাসে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে ড্রাইভার, হেলপারসহ অন্যরা তাকে গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে হত্যা করে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশে ধর্ষণের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটেছিল নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। ধর্ষণের শিকার চার সন্তানের একজন মা। গত ৩০ ডিসেম্বরের ওই ঘটনা দেশবাসীকে বিক্ষুব্ধ করেছিল।
তারপর আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে ধর্ষক পরিমল জয়ধরের কথা যে ভিকারুননিসা স্কুলের ছাত্রীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছিল হয়তো আরো মনে আছে টাঙ্গাইলের এক নারী তার দেবরের হাতে ধর্ষণের শিকার হন ৷ তার স্বামী প্রবাসী৷ ঘটনার সময়ও তিনি প্রবাসে ছিলেন ৷ ধর্ষণের পর ওই নারীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টাও করা হয় ৷
সর্বশেষ আলোচিত ঘটনা সিলেটের এমসি কলেজে ঘুড়তে যাওয়া এক নবদম্পতির স্বামীকে বেধে রেখে তার স্ত্রীকে ছাত্রলীগের ছেলেদের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কারণে সমগ্রদেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ছাত্রলীগের ছেলেদের কতৃক এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে বর্বরোচিত নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে বাংলাদেশ। প্রতিবাদে গতকাল সোমবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। ধর্ষণবিরোধী গণজমায়েতে উত্তাল ছিল রাজধানীর শাহবাগ। উত্তরায় প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রেখেছে শিক্ষার্থীরা।
ধর্ষণের পরে যত ‘অন্যরকম ধর্ষণ’ - তদন্ত, বিচার প্রক্রিয়া এবং আইনের মধ্যেই অনেক ফাঁক আছে।
তদন্ত, বিচার প্রক্রিয়া এবং আইনের মধ্যেই অনেক উপাদান ও ফাঁক আছে যা ধর্ষণের শিকার নারীর জীবন দুর্বিসহ করে তোলে ৷ বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার নারীর জীবনে ধর্ষণ কখনো শেষ হয় না ৷নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে সে পরোক্ষ ধর্ষণেরই শিকার হতে থাকে ৷ মামলা, তদন্ত, সাক্ষ্য গ্রহণ, বিচার প্রত্যেকটি পর্যায়েই যেন পরোক্ষ ‘ধর্ষণের শিকার হয়' নারী ৷ ভিকটিমের শারীরিক আলামত সংগ্রহের নামে যে ডাক্তারি পরীক্ষা হয় তাও ভয়াবহ ৷ওয়ার্ড বয়দের মাধ্যমে এই পরীক্ষার সময় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷আর এই পরীক্ষায় শরীরের অনেক স্পর্শকাতর অঙ্গের মাপ উল্লেখ করা হয়, যা ধর্ষকের পক্ষে যায় ৷যেমন স্তনের আকার যদি বড় হয় তাহলে নারীকে হ্যাবিচুয়েটেড প্রমাণের চেষ্টা চলে ৷
ভিকারুননিসা স্কুলের ছাত্রী ধর্ষণের বিচারের সময় অভিযুক্ত শিক্ষক পরিমল জয়ধরের পক্ষে ৬-৭ জন অ্যাডভোকেট ছিলেন ৷ তারা আদালতে প্রচণ্ড হইচই করে মেয়েটির শারীরিক গঠন নিয়ে আদালতকে বলছিলেন ৷তার শরীরের বর্ণনা দিচ্ছিলেন ৷তারা প্রমাণের চেষ্টা করছিলেন ঐ ছাত্রীর যা শারীরিক গঠন তাতে ওই মেয়ের সম্মতি ছাড়া কিছু হয়নি ৷
সুতরা ধর্ষণের এই বিভীষিকাময় সময়ে আমাদের সবার স্লোগান হোক - নারীর প্রতি বর্বরতা রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ ll
সূত্র ও ছবি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:০৯