somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজুস প্রেম। পর্ব-৬

২২ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূত্রপাত:

ডিজুস প্রেম। পর্ব-১
ডিজুস প্রেম। পর্ব-২
ডিজুস প্রেম। পর্ব-৩
ডিজুস প্রেম। পর্ব-৪
ডিজুস প্রেম। পর্ব-৫

অনেকভাবে বুঝিয়েও তাকে কিছুতেই যখন পিছু ছাড়াতে পারলাম না, তখন ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম, যাই একবার সরাসরি দেখা করে সব কথা খুলে বলে যদি তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কটা স্থায়ী করা যায়। অফিস থেকে ছুটি পাওয়া অনেক মুশকিল হলো, কিন্তু তবুও নির্ধারিত তারিখের ২দিন আগে ৪দিনের ছুটি ম্যানেজ করে চেপে বসলাম গাড়িতে। সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ওকে আগে জানাই নি যে আমি রওনা হয়েছি।

রাত ১২.১০ মিনিটে সে ফোন দিল:
- মনে আছে আজ কয় তারিখ?
- হুম মনে আছে, কিন্তু অফিস থেকে তো ছুটি দিচ্ছে না।
- চাকুরী ছেড়ে দিয়ে আসো। তোমাকে সারা জীবন বসিয়ে রাখবো আমার পাশে, চাকুরী করে যতটাকা বেতন পাও তার ডাবল দেবো। তোমার ডিউটি শুধু আমাকে ভালোবাসা।
- ওমা তাই, তাহলে তো ভেবে দেখতে হয় তোমার প্রস্তাব। কিন্তু আমার বউ-বাচ্চার কি হবে?
- ওদেরও সঙ্গে করে নিয়ে আসো। আমার বাড়িটা অনেক বড়ো। সেখানে সবার যায়গা হয়ে যাবে।
- আচ্ছা ভেবে দেখি!
- ভেবে দেখি মানে কি? তুমি যদি কালকে না আসো আমি কিন্তু সত্যি সত্যি চলে আসবো তোমার বাড়িতে।
- তাই! তাহলে প্রস্তুতি নাও। আমি আসতে পারবো না।
- তুমি এত নিষ্ঠুরের মতো আচরণ করছো কেনো? আমাকে ভালোবাসো না?
- হুম ভালোবাসি, তবে প্রেমিকা নয় একজন সত্যিকারের ভালো বন্ধুর মতো।
- ফাজলামো ছাড়ো, তুমি যদি কাল সকালে রওনা না করো আমি কিন্তু সত্যি সত্যি দুপুরে বেরিয়ে পড়বো। আব্বুকে বলেছি তিনি আমাকে টাকাও দিয়েছেন।
- মানে? কি বলছ তোমার আব্বুকে?
- বলছি আব্বু আমি একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসি, কিন্তু সে আমার সঙ্গে দেখা করতে চায় না, তাই আমি যাবো তার সঙ্গে দেখা করতে, আর তাকে বিয়েও করতে চাই।

কথাটি শুনে আমার শরীরের সব লোমগুলি দাঁড়িয়ে গেলো মুহুর্তে! বলে কি মেয়ে!

- তুমি ফান করছো, তুমি আগে বলছো তুমি তোমার আব্বুকে খুব ভয় পাও। তাই তুমি কখনোই এসব কথা বলতে পারো না।
- বলছি, আরো বলছি, যদি তুমি আমাদের সম্পর্ক বা বিয়ে করার পর আমার স্বামীকে মেনে না নাও তাহলে আমি চিরদিনের মতো তোমার বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবো।
- শোনো পাগলামি রাখ। আমি ভেবে দেখি কি করা যায়।
- ভাবাভাবি বাদ, কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে সোজা গাড়িতে উঠবে। আমি সকালে ফোন দিয়ে তোমাকে জাগিয়ে দেবো।
- তার মনে হয় দরকার হবে না, যেভাবে কথা বলা শুরু করেছো তা তো মনে হয় সকালের আগে থামবে না।
- তোমার কি কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে?
- নাহ্ কষ্ট হবে কেনো? তুমিই তো বললা, কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে তোমার বাড়ির দিকে রওনা দিতে। তা ঘুমাতেই যদি না দাও তাহলে সকালে ঘুমিয়ে গেলে রওনা দেবো কিভাবে? আর ঘুম চোখে যদি রওনা দেই আর গাড়িতে ঘুমিয়ে গেলে যদি অন্যকোথাও চলে যাই।
- আরে হারিয়ে যাবে কিভাবে, তোমার যে চেহারা কেউ নেবে না তোমাকে এই আমি ছাড়া!
- ও, তাই! এত আত্মবিশ্বাস।
- হুম, আত্মবিশ্বাস এবং গভীর ভালোবাসা!
- আচ্ছা ঠিক আছে বুঝছি এবার আমাকে ঘুমাতে দাও, সকালে উঠে চিন্তা করে দেখি।
- ওকে, আমার পরাণ পাখি, তাহলে সকালে তুমি রওনা হবে তো?
- আগে তো ঘুমাই, আর সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকি।
- ইশ্! কি বাজে কথা, তুমি আমার আগে কখনও মরবে না! আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমাও সোনা। সকালে ফোন দেবো।

আমি ওকে বলে ফোনটা কেটে দিয়ে মনে মনে ভাবছি, কোন ভুল করছি না তো! মেয়েটা আবার কোন চক্রের সঙ্গে জড়িত নয় তো! আর এ ভয় থেকেই তাকে না জানিয়ে আমি হঠাৎ করে রাতেই রওনা দিলাম। আর সে যেনো গাড়ির শব্দ বুঝতে না পারে সেজন্য তাড়াতাড়ি কথা শেষ করে দিলাম ঘুমানোর বাহানা করে।

গাড়ি ছুটে চলছে! কখনও হালকা ঝাঁকুনিতে আমার তন্দ্রা ভেঙ্গে গেলে বাইরে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করি কোথায় এলাম, আর কতটুকু পথ রয়েছে তা রাস্তার পাশের মাইলপোষ্ট দেখে বোঝার চেষ্টা করি। যদিও রাতের গাড়ি তীব্র গতিতে ছুটে চ'লছে তবুও মাঝে মাঝে দুয়েকটা মাইলপোষ্টে একঝলক চোখ বুলিয়ে নিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করি।

একসময় পৌছে গেলাম আমার নির্দিষ্ট গন্তব্যে। ঠিকানা জানা ছিল পুরোপুরি। কিন্তু সমস্যা হলো এখন রাত প্রায় ৩টা বাজে আর আমার সঙ্গে বেশ-কিছু টাকা পয়সাও ছিল, তাই কাউকে কিছু না জিজ্ঞেস করেই রাস্তার সাইনবোর্ড দেখতে দেখতে হাঁটতে থাকি। নির্জন শহর, ঘুমে বিভোর, রাস্তায় একটি রিকশা বা সিএনজি অথবা অন্য কোন জনমানুষ নেই। রাস্তার ধারের দোকানগুলি সব বন্ধ। দুয়েকবার টহল পুলিশের গাড়ি হুশ করে চলে গেলো আমার পাশ দিয়ে। আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে হাঁটছি, এমন ভাব করছি যে এ শহর আমার সম্পূর্ণ চেনা, আমি জানি আমার গন্তব্য কোথায়। কিন্তু আধাঘণ্টা হেঁটেও যখন ইপ্সিত জায়গা খুঁজে পেলাম না তখন ফোন দেই তাকে।

-ঘুম জড়ানো কণ্ঠে, হ্যালো সোনা কি হলো?
- ঘুম আসছে না তো তাই ফোন দিলাম। তুমি ঘুমাচ্ছিলে? বিরক্ত করলাম।
- আরে কি বলো, ঘুমাচ্ছিলাম ঠিক আছে কিন্তু এখন তো ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে। আর তোমার সঙ্গে কথা বলব তাতে আবার কিসের বিরক্ত।
- ও, আচ্ছা ভালো। আচ্ছা তোমার বাড়ির আশপাশে স্কুল না কলেজ কি যেন একটা আছে না? ওটার নাম কি?
- ........... মাদ্রাসা, পাশে একটা বিরাট খেলার মাঠ, আর মাঠের উত্তর দিকে আমাদের তিনতলা বাড়ি। বাড়িটা অনেক বড়।
- ও হ্যাঁ মনে পড়েছে।
- কিন্তু এত রাতে তুমি ফোন দিয়ে কোথায় একটু ভালোবাসার কথা বলবা তা না এসব উল্টা-পাল্টা কেনো জিজ্ঞেস করছো?
- দরকার আছে। আচ্ছা বাসস্ট্যন্ড থেকে কোনদিকে ঐ মাদ্রাসাটা।

এবার সে ফোনে ডিরেকশন দিচ্ছে আর আমি হাঁটছি আর তার বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে পরের রাস্তা খুঁজে নিচ্ছি। একবার রাস্তা ভুল করে একটা গলির মধ্যে ঢুকে পড়ি। মেইন রাস্তা থেকে গলিপথে বেশ কিছুদুর যাওয়ার পর তাকে বলি গলির আশেপাশের স্থানের বর্ণনা দেই, সে বলে

- আশ্চর্য তুমি কিভাবে জানলে, একদম ঠিক মিলে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বাড়ি তো ঐ দিকে না ঐ দিকে যাওয়ার আগে একটা রাস্তা বামদিকে গেছে সে রাস্তায় অল্প কিছুদুর আসলেই দেখবা মাদ্রাসা ও তার সামনে অনেক বড় মাঠ।
- ও তাই! আচ্ছা, ঠিক আছে মনে রাখলাম।
- তুমি সত্যি কাল সকালে রওনা দেবে তো?
- ভেবে দেখি।

মোবাইলে এভাবে কথা বলছি আর হাঁটছি। হঠাৎ একটা মোড় ঘুরেই দেখি সামনে ৩/৪ টা ছেলে দেয়ালে কি যেনো লিখছে, আমি তাদের দেখে প্রথমে ভীষণ ভয় পাই। থমকে দাঁড়াতে গিয়েও একই গতিতে চলতে থাকি। মনে শঙ্কা জাগল এইবার বুঝি গেলাম! ছিনতাইকারীর হাতে সব খোয়াতে হবে। মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছি যদি তারা আমাকে ধরে বসে তাহলে যা আছে সব দিয়ে দেবো বিনা প্রতিবাদে, কোন হিরোগিরি দেখাতে যাবো না। ভাবছি আর আমার মতো হাঁটছি। নেজেকে বার বার বোকা ভাবছি। এভাবে একটা মেয়ের পাল্লায় পড়ে এতদূরে এতরাতে একা আসা উচিত হয়নি, এবার না বেঘোরে প্রাণটা খোয়াতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:১৩
৬টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×