somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় মামা ও একটি সুখি পরিবার

২৩ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সিকান্দার সাহেবের ছোট সন্তান আলিফ। সারাক্ষণ একে ওকে জ্বলিয়ে তটস্থ করে রাখে। বাসায় কোন নালিশ এলে সেদিন আর রক্ষে নেই। আলিফের শান্ত শিষ্ট আম্মুর হাতে যে ঝাড়ু থাকে সেটা সারাঘর ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।

ঃছেলেটাকে এমন পাষন্ডের মতন করে মারলে? [ বাবা বললেন]
ঃ মারব না...!! ও... ও... ও বড় হয়ে কি হবে? [ মায়ের উত্তেজিত গলা]

বাবা মায়ের টক-ঝাল-মিষ্টির সুযোগে আলিফের মাথায় নতুন নতুন দুষ্টু বুদ্ধি খেলতে থাকে। বড় মামার কাছে গিয়ে হাত পায়ে ঝাড়ুর কারুকাজ দেখাতেই বড় মামা রেগে অগ্নিশর্মা। নানু বাড়ির সবাইকে নিয়ে মিটিং-এ প্রধান আসামী সেকান্দার সাহেব ও তার স্ত্রী নিশি।

বড় মামাঃ আলিফ আমার সন্তান। তুই তো সারাজীবন সিকান্দারের সাথে বাইওরে ছিলি। তুই কোন সাহসে আমার বাচ্চার গায়ে হাত তুললি?

নিশি কিছু বলতে গেলে বড় মামা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেন। এরপর সিকান্দার সাহেবের বকা খাওয়ার পালা।

বড় মামাঃ তুমি কেমন মানুষ সিকান্দার? তোমার সামনে নিশি কিভাবে এমন কাজ করে?

সিকান্দার সাহেব পড়েন ত্রি-সংকটে। একদিকে পুত্র, অন্যদিকে বড় ভাইয়ের মত সম্বন্ধী আর তৃতীয়দিকে সবচেয়ে মধুর প্রিয়তমা স্ত্রী। একটা আমলা তান্ত্রিক হাসি দিয়ে সিকান্দর সাহেব সব কিছুর সমাধান খুজে আনেন।

বাসায় ফেরার পথে বড় ভাইয়ের হাতে এভাবে ধমক খাওয়ানোর জন্য আলিফকে বকতে থাকেন নিশি।

দুষ্টু আলিফও সুর করে বলেঃ বল, বল, আরো বল। বড় মামাকে আবার বলে দিয়ে আসি। নিশি এবার আলিফের কানটা টেনে দিয়ে শান্ত হন। প্রিয় স্ত্রী আর সন্তানের এধরণের খিটমিট দেখে সিকান্দার সাহেব হাসতে থাকেন।

বাসায় ফিরেও আলিফের দুষ্টামী কমে না। বড় ভাইয়া আরিশের মাথাটা খেয়ে বেড়ায়। আরিশ মা-বাবার বাধ্য সন্তান। প্রচন্ড মেধাবী। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই পার্টটাইম জবের অফার আসে। এই চাকরি নিয়ে সিকান্দার সাহেবের যত আপত্তি। আলিফ ভাইকে বাহবা দিতে থাকে।

আলিফঃ ভাইয়া, ভাইয়া। এই তো তুমি স্টাবলিশ হয়ে যাচ্ছ। সাবাশ, সাবাশ।

বাবা[সিকান্দার সাহেব]ঃ আলিফফফ, আমার দুই ছেলে সারাজীবন বসে খেলেও যেন টাকার প্রয়োজন না হয় সে ব্যবস্থাই করে যাচ্ছি। তাই ওসব চিন্তা না করে তোমরা পড়াশোনাটা ভাল করে কর।

আলিফঃ মারহাবা, মারহাবা। আমি তো পড়াশোনা করে কিছু করব না। খালি খাব আর ঘুমাব। ভাইয়া, ভাইয়া তুমি চাকরি কর।

মাঃ থাক, আরিশকে চাকরি করতে দাও। ও নিজের পায়ে দাড়াতে শিখুক।

মায়ের সাপোর্ট পেয়ে আরিশ চাকরি করতে থাকে। বেতনের প্রথমদিন আলিফ তার বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে আরিশের কাছ থেকে একটা গ্রান্ড পার্টি আদায় করে নেয়। দ্বিতীয় দিন হয়ত সে (আলিফ) ডেটে যাবে। তৃতীয়দিন আরিশকে মায়ের কাছে টাকার জন্য হাত পাততে হয়।

মা মুখ টিপে হেসে বললেনঃ তুই না পরশু বেতন পেলি?

আরিশ কাচুমাচু হয়ে বলেঃ জ্বি আম্মু। টাকা শেষ হয়ে গেছে।

মাঃ কিভাবে শেষ হল? নিশ্চয় আলিফের কাজ?

আরিশ তার ছোট ভাইটিকে বাচাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে। পাছে মায়ের হাতে না আবার ঝাড়ু পেটা খায়। মা আরিশের নামে ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করে দেন।

কয়দিন পর আলিফের মাথায় ভুত চাপল। খালাত ভাই মারুফ তার ট্রাকিং গুরু। মারুফ ভাইয়ের সাথে বান্দরবনে ট্র্যাকিং-এ যাবে। যথারীতি আরিশের একাউন্ট শেষ। আরিশকে বলল যে বন্ধু ইমরানের বাবা খুব অসুস্থ। এ মুহূর্তে বাবা মাকে বলতে ভয় পাচ্ছে। টাকা ইমরানকে দিয়েই সে ঘরে ফিরবে। ইমরানের কাছে যাবে বলে সেই যে বাসা থেকে বার হল, ফেরার নাম গন্ধ নেই। কখন ফিরবে কেউ জানে না। মা চুপ হয়ে আছেন। বাবা বারবার আরিশকে জিজ্ঞেস করছেন। বেচারা আরিশ আজকের আগে জীবনেও এত জেরার মুখোমুখি হয়নি।

নয়দিন পরের ঘটনা। আলিফ গুটিসুটি পায়ে বাড়ির দরজা পার হল। মা স্থির হয়ে বাড়ান্দায় দাড়িয়ে রইলেন। মাকে ভয়ে ভয়ে পার হতে গিয়েই অগ্নিশর্মা মায়ের হাতের ঝাড়ু আলিফের গায়ে সপাং সপাং আওয়াজ তুলতে লাগল। আরিশ ভাইকে বাচাতে গিয়ে বেশ কয়টা মার নিজের কাধে নিয়ে নিল। বাবাও এলেন ধরতে এবং যথারীতি ঝাড়ু তার শরীরও স্পর্শ করল। আলিফ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।

বড় মামা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে আলিফের পিঠের ছাল তুলে ফেলবেন। আলিফ সামনে আসতেই বড় মামার চোখের জল এক হয়ে গেল। খবর পেয়েই বড় মামা বাসায় চলে এলেন। এসেই বড় গলায় বললেনঃ "কই, আলিফ কই? ডাক ওকে। আজকে ওর পিঠের ছাল তুলব আমি। কই আমার চাবুকটা কই?"

ও আপনাদের বলাই হয়নি বড় মামা রেগে গেলে এক কাল্পনিক চাবুকের কথা বলেন। আলিফ বা আরিশ কোনদিন চাবুক তো দূরের কথা, বড় মামার বকা পর্যন্ত খায় নি। তো এহেন বড় মামাকে পটাতে আলিফের দু'মিনিটেরও বেশি লাগবে না সেটা এতক্ষণ বুঝে গিয়েছেন আশাকরি। মুখে অসহায় ভাব নিয়ে ঝাড়ু পেটা জায়গায় আকর্ষণ করতে করতে আলিফ মামার কাছে এসে জড়িয়ে ধরল।

বড় মামাঃ কিরে... কই গিয়েছিলি?

আলিফ হাতের ফোলা অংশে হাত বুলিয়ে বললঃ ইস...

বড় মামাঃ কিরে কি হয়েছে? দেখা তো......... নিশিইইইইইইইই তুই কি মানুষ...!! আমার বাচ্চাকে তুই আবার অমানুষের মতন করে মেরেছিস। তুই জানিস, এ দু'ইটা আমার জানের ধন। তোর এত বড় সাহস কিভাবে হল যে আমার বাচ্চার গায় হাত তুলিস।

মাঃ ভাইয়া, হইসে থাম। তোমার আশকারা পেয়ে আলিফ গোল্লায় যাচ্ছে। ওকে শাসন করা দরকার।

বড় মামাঃ তোর সাহস তো কম না নিশি। আবার যদি আলিফের গায়ে হাত তুলেছিস, আমি ওকে নিয়ে যাব। শুধু আলিফকে কেন আরিশকেও আমি নিয়ে যাব।

মাঃ ভাইয়া, তুমি বুঝতে চেষ্টা কর।

বড় মামাঃ তুই থাম।

পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা দেখে সিকান্দর সাহেব স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলেন। এরপর যথারীতি ডাক আসল "সিকান্দার"

সিকান্দার সাহেব একটা আমলাতান্ত্রিক হাসি দিয়ে সব কিছু ঠিক করে ফেলেন।

এই হল বড় মামা ও একটি সুখী পরিবারের গল্প।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১:৪৬
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×