somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাত সকালে কাঁক ও শেয়াল ভেজা ও অপরিচিতা

০৬ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক সকালে ঘুম ভাঙল আজ, ৬ টার দিকে, কারণও আছে ঘুম ভাঙার, ৫ মিনিট পরপর অ্যালার্ম দিয়েছিলাম যে অনেকগুলো :P, শেষমেশ পোষ্টপোনড করতে করতে ৬ টায় উঠতে পারলাম!:P অনেকদিন পর এত সকাল সকাল উঠতে পারলাম বলে অনেক গর্ব হচ্ছিল নিজের উপর :P অনেক দিন পর সকালের মৃদু আলো দেখতে পেলাম! বিছানা ছেড়ে জানালার পর্দা সরিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে দেখলাম আজকের সকাল। ভালোই লাগলো!

অনেক কষ্টে নিজের ব্রাশটা খুজে বের করলাম, পেস্ট লাগিয়ে আবার কিছুক্ষণ জানালার পাশে দাঁড়ালাম, আজ বৃষ্টি হবে নাকি?

ব্রাশ শেষে শাওয়ার নিলাম, রুমে আসতেই আম্মা চা দিয়ে গেল। কাপে চুমুক দিতেই অসাধারণ সেই স্বাদ পেলাম! আমার আম্মা যে এত সুন্দর চা বানাতে পারে! আমার সব ফ্রেন্ডই আম্মার রান্নার , বিশেষকরে চায়ের ফ্যান।
চা শেষ করেই বের হলাম, লিফট বেয়ে নিচে নামলাম। আজ ভাগ্য ভালো, এত সকালেও রিক্সা পেয়েছি! আজ আর ভাড়া ঠিক করলাম না, আজ মুডটা বেশ ভালো, মানিব্যাগটাও যে বেশ মোটা :P

কোচিং এ ঢুকেই বরাবরের মতো সালাম পেলাম, মনটা ভরে গেল :P
ক্লাস নিয়ে হাউজ বিল্ডিং এ আসলাম, বিআরটিসির একটা ১৫ টাকার টিকিট কিনলাম,
দিলাম ২০ টাকা, আর উনি ফেরত দিলেন ৪ টাকা, বললাম এর ১ টাকা? বলল, “নাই”
সাথে সাথে পকেটে হাত দিলাম, দেখি একটা চকলেট আছে, বের করে উনাকে দিয়ে বললাম ২ টাকা দাও! X( X(
লোকটার চেহারা দেখার মতো হয়েছিল! এরপর আর কিছু বললেন না, ১ টাকা বের করে দিলেন।:)
পাশেই একটা ভিক্ষুক ছিল, তাকেই দিলাম ঐ ৫ টাকা।
টাকা দিলে ভিক্ষুককে দিব! ওকে কেন দেব?X(
বাসে উঠে বসতেই মনে হল আকাশটা মেঘলা। ব্র্যাকে যাচ্ছি, এডমিশন টেস্ট দিতে, আজ সাথে ফোন নেই, নিজেকে তাই অনেক হাল্কা লাগছে! :P
আজ সাথে আইপডও নিইনি, এরই বাসে একটা ছেলে উঠলো, তার একটা হাত নেই,একহাতে শুধু একটা টিনের কৌটা! ওটাতে তাল দেয় আর গান গেয়ে টাকা রোজগার করে, দেখে ভালো লাগলো যে অ্যাটলিস্ট ভিক্ষা করে না! ভালোই গেয়েছিল, ভাণ্ডারী ।১০ টাকা দিলাম তাকে। বনানী পর্যন্ত গান শোনাল ও।

বনানী রেলক্রসিং পার হতেই শুরু হল বৃষ্টি, প্রথমে একটু কম ছিল, কিন্তু ক্রমেই টা বাড়তে লাগলো। বুঝলাম আজ কাঁকভেজা হয়ে এক্সাম দিতে হবে!
কাকলীতে নামলাম, বৃষ্টির মধ্যেই। নেমেই ভো দৌড়! আজও দৌড় , কালও দৌড়! একটু সামনেই দেখলাম একটা যাত্রী ছাউনি। যাক! বাচা গেল! কিন্তু ততক্ষণে তো কাকভেজা- শেয়ালভেজা সব কোর্স কমপ্লিট! ছাউনিতে পৌছাতে পৌছাতে আরও অনেক মানুষ জমা হয়ে গেছে। পা রাখারও জায়গা নেই, কোনমতে মাথাটা বৃষ্টির হাত থেকে বাচালাম। গ্রামীণফোনকে এই প্রথন ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে হল! এখন বুঝতে পারলাম যাত্রী ছাউনির প্রয়োজনীয়তা কি! কলরেট কমাক না কমাক মানুষকে উপকার করছে গ্রামীণফোন! :P

হঠাৎ অনুভব করলাম, ছাউনির সবই ঠিক আছে, শুধু আমার মাথাটা যেখানে, তার ঠিক উপরে একটা ছোট্ট ফুটা! রোদ থাকলে হয়তো ঐ ফুটা দিয়ে যে আলো আসতো, তা কিছু মনেই হত না, কিন্তু ঐ ফুটা দিয়ে এখন যে পানি পড়ছে, তা আমাকে গোসল করানোর জন্য যথেষ্ট! মেজাজ খারাপ করে বোকার মতো দাড়িয়ে থাকলাম। রাস্তা একদম ফাঁকা। হঠাৎ কোথা থেকে একটি মেয়ে ভিজতে ভিজতে আসলো , আমার ঠিক সামনে আছাড় খেলে বসলেন! কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। হাত বাড়িয়ে দিলাম, নিজে ভিজে তাকে উঠালাম রাস্তা থেকে!

বোকার মতো মুখ ফসকে বলে ফেললাম , “কোথাও লাগেনি তো?” :P
তিনি উত্তর দিলেন না, বললেন, “থ্যাংকস” :D

এরপর তিনি এসে আমি যেখানটাতে দাড়িয়ে ছিলাম, ওখানে দাঁড়ালেন! কিছু বুঝলাম না! ছাউনিতে আর তিল পরিমাণ জায়গা অবশিষ্ট নেই যে আমি দাঁড়াব! তারমানে আমাকে এখন ভিজতে হবে! মেজাজটা আরও খারাপ হয়ে গেল! কেন যে এই মহিলা প্রজাতিকে বারবার সাহায্য করতে যাই! আর নিজেই বাঁশটা খাই! সদ্য ব্রেকাপের পর আবার এই ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিল, মহিলাজাতিকে সাহায্য করতে নেই! :P

কিন্তু ইনি সম্ভবত একটু ডিফরেন্ট! বললেন, “এখানে আসুন” আমি আবার বোকার মতো গেলাম তার পাশে, কিভাবে যেন আমার দাঁড়ানোর জায়গাও মেনেজ হয়ে গেল! তার দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম তিনি এই পরিবেশটাতে খাপ খাওয়াতে পারছেন না, তার সারা শরীর ভেজা! হাতেও একটা ভেজা ক্যালকুলেটর, আর একটা ছোট্ট ট্রান্সপারেন্ট প্যাকেট,যার মধ্যে দেখতে পেলাম ব্রাকের অ্যাডমিট কার্ড! বুঝলাম ইনিও পরীক্ষার্থী!

হঠাৎ বলে উঠলেন, “ব্রাক ইউনিভার্সিটিতে কিভাবে যাব? বলতে পারেন?”
বললাম, “ব্র্যাকে যাবেন? আমিও যাব”

হয়তো আমার উত্তর শুনে ভয়ই পেলেন তিনি! কিন্তু কিছু বললেন না!
তার দিকে এইবার ভালো করে তাকালাম, দেখতে তো তিনি মাসাল্লাহ! বিশেষ করে চোখ দুইটা অনেক সুন্দর, হরিণীর মতো! ভেজা চুল, অনেক লম্বা। যাই হোক, হয়তো অন্যের গার্লফ্রেন্ড, এভাবে পর্যবেক্ষণ করা ঠিক না। :P


বৃষ্টি থামলে আমি রাস্তা পার হলাম, পেছন ফিরে দেখি তিনিও আসছেন !
ভয় হল এই অপরিচিতার সাথে আবার রিক্সায় না উঠতে হয়! কিন্তু কথায় আছে, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে…….:P

কিছুদূর হাটার পর একটা রিক্সা পেলাম, আসেপাশে আর কোন রিক্সাও দেখলাম না, বেচারির(!) জন্য মায়া(!) হল। বললাম, “উঠুন”
আর উনি কিছু না ভেবেই উঠে পড়লেন, এর মধ্যে আবার ফিসফিসিয়ে বৃষ্টি শুরু ! তারপরও হুড তুললাম না! দুজনেই কাকভেজা হচ্ছি, এরই মধ্যে চলে আসলাম ব্র্যাকে। রিক্সা ভাড়া নাকি উনি দিবেন!

বললাম, “নতুন টিউশনি করছি, পকেট ভারি ই আছে, আমিই দিচ্ছি! আপনি না হয় আরেকদিন …….”
উনি বললেন, “আবার?” :P

কিন্তু মজার ব্যাপার, এত কিছুর পরও তার নামটা জিজ্ঞেস করা হয়নি…… :(

ভালো থাকবেন অপরিচিতা, শুভকামনা আপনার জন্য, আমার এক্সাম ভালোই হয়েছে । কদম ফুল এখনো ভালমত ফোটেনি, পৃথিবী নাকি চ্যাপ্টা? নেক্সট কোনোদিন দেখা হলে কদম দিতে ভুলবো না আমি , হোক আপনি অন্যের গার্লফ্রেন্ড, কদম সর্বজনীন :)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:২৪
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×