somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা(বাংলাদেশী আপডেটেড ভার্সন)

০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদা বাংলাদেশ নামক একটি দেশ ছিলো।সেই দেশের রাজধানী ছিলো ঢাকা।ঢাকায় খালি টাকা উড়ত।অর্থ্যাৎ ঢাকার মানুষ খুব সুখি ছিল।তারা খুব শান্তিতে জীবনযাপন করত।কিন্তু হঠাৎ করে তাদের জীবনে নেমে আসে এক ভয়াবহ বিপদ।সন্ধ্যা হতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা এসে আক্রমণ করা শুরু করে।
মানুষজন ঘর থেকে বের হতে পারত না মশার অত্যাচারে।মশারি, কয়েল,স্প্রে –কিছুতেই কোনো লাভ হচ্ছিল না।মশারির ভেতরে ঢুকেও মশারা কামড় দেওয়া শুরু করল।সারা শহর অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ল।অবস্থা বেগতিক দেখে শহরের মেয়র জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মশার আক্রমণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করলেন।কিন্তু বৈঠকে কেউই কোনো সমাধান দিতে পারল না।শেষে মেয়র নিরুপায় হয়ে ঘোষণা করলেন যে এই সমস্যার সমাধান দিতে পারবে তাকে নগদ ১ কোটি টাকা দেওয়া হবে। হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা তখন ইউরোপের গ্রীসে অবস্থান করছিল।সেখানে তখন চরম অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। মন্দার ধাক্কাটা বাঁশিওয়ালার জীবনেও ভালোভাবে পড়েছিল।তার উপর গার্লফ্রেন্ডের সমস্ত আবদার মেটাতে গিয়ে তার ত্রাহিকাহি অবস্থা।ঢাকা শহরে মশার উপদ্রব ও মেয়রের বিশেষ অফারটি ফেসবুক ও মিডিয়া মারফত হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার কানে যেতেও দেরী হলো না।‘পাইছি একখান সুযোগ’ বাঁশিওয়ালা মনে মনে চিন্তা করতে লাগল। ১ কোটি টাকা দিয়ে তার অর্থনৈতিক মন্দা ঘুচে যাবে – এ চিন্তাই বাঁশিওয়ালার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল।সে ঢাকার মেয়র এর অফিসে বাংলাদেশে আসার জন্য মেইল করল।নিজের অতীত পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সে ঢাকার মেয়রকে স্বচ্ছ চুক্তিপত্র তৈরির জন্যে বলল।

পরদিন মিডিয়ার মাধ্যমে সারা শহরে বাঁশিওয়ালা আসার কথা ছড়িয়ে পড়ল। মেয়রের বিরোধী পক্ষ হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার ঢাকায় আসার তীব্র বিরোধীতা করল।বিরোধী পক্ষ এক বিবৃতিতে বলল, হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার ঢাকা সফর সার্মভৌমত্বের প্রতি হুমকীস্বরূপ। শহরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে তার মতো ভিনদেশীর হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া যায় না। হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার ঢাকা সফরের প্রতিবাদে তার ঢাকা আসার দিন তারা সকাল –সন্ধ্যা হরতাল আহবান করল। পাল্টা বিবৃতিতে মেয়র ললেন, হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা একজন মানবদরদী মানুষ। তাই তিনি আর্তমানবতার ডাকে সারা দিতে ঢাকা শহরের মশা সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছেন মাত্র ১ কোটি টাকার বিনিময়ে।যাই হোক যথা সময়ে হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা ঢাকা আসল। এসেই প্রথমে মেয়রের সাথে দেখা করে স্বচ্ছ চুক্তিপত্রে সই করল।এরপর তার ঝোলা থেকে বাঁশি বের করে বাজাতে লাগল।এমন অদ্ভুত সুর শহরের কেউ শোনে নি।সেই অদ্ভুত সুরে দিনের বেলায়ও সারা শহরের সমস্ত মশা ঝাঁকে ঝাকে বের হয়ে তাকে অনুসরণ করতে লাগল। হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে বুড়িগগ্ঙার দিকে এগিয়ে যেতে থাকল। বুড়িগগ্ঙার নোংরা কালো পানি দেখেও ১ কোটি টাকার লোভে পনিতে ডুব দিল। সাথে সাথে সমস্ত মশাও পানিতে ডুব দিয়ে মারা পড়তে থাকল।এক পর্যায়ে শহরের সমস্ত মশা মারা গেল।
মিশন সম্পন্ন করে বাঁশিওয়ালা নাচতে নাচতে মেয়রের সাথে দেখা করতে গেল পাওনা টাকা আদায়ে।মেয়রের কাছে গিয়েই বলল,স্যার,আমার পাওনাটা ? মেয়র তখন হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালাকে ২০ লাখ টাকার চেক দিয়ে বলল,নাও বাপু ,তোমার টাকা।
-মাত্র বিশ লাখ কেন?এ টাকা দিয়ে তো খালি বিমান ভাড়া হইব।বাকী ৮০ লাখ কই?
-কস কী মমিন! মেয়র হুংকার দিয়ে উঠল।কীসের ৮০ লাখ?
- চুক্তিপত্রের ৮০ লাখ।
-বাপু,ওইসব জিনিস দেখাবে না।তুমি ঢাকা আসায় আমার বিরোধীপক্ষ হরতাল দিসে। এতে শহরবাসীর কয়েক কোটি টাকার লোকসান হইসে।আর এই লোকসানের পিছনে দায়ী তুমি।তোমারে যে জরিমানা করি নাই এটাই বহুত।ভালোয় ভালোয় ২০ লাখ টাকা নিয়ে চলে যাও। হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা বুঝল এই মেয়রটাও হ্যামিলিন শহরের মেয়রের মতো। এর সাথে বেশি কথা বলে কোনো লাভ নাই।সে আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেল।
বাইরে এসে অন্য বাঁশি বের করে বাজাতে লাগলো ।অনেকক্ষণ ধরে বাজানো সত্ত্বেও বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুরে একটা ছেলেমেয়েও বের হলো না।বাঁশিওয়ালা বুঝল এইগুলা বাঙালি পোলাপাইন। হ্যামিলিন শহরের পোলাপাইনের মতো হাবাগোবা না যে যেনতেন বাঁশির সুরে বেরিয়ে আসবে।বাঁশিওয়ালা এবার ঝোলা থেকে আরো দুইটা বাঁশি বের করল।এবার একটা বাঁশি দিয়ে হিন্দী সিরিয়ালের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজাতে লাগল।এতে কাজ হলো। শহরের সব মেয়েরা বের হয়ে তার পিছনে ছুটতে লাগল।আরেকটা বাঁশি দিয়ে আশিকি টুর ‘তুম হি হো’র সুর তুললো।এতে শহরের সব ছেলে হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালাকে অনুসরণ করতে লাগল।সব ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাঁশিওয়ালা শহর থেকে দূরবর্তী একটি পাহাড়ের বুকের মধ্যে ঢুকে পড়ল।সারা শহর খালি হয়ে পড়ল।ছেলেমেয়েদের অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হওয়ার বদলে খুশি হলেন এই ভেবে যে তাদের ছেলেমেয়েরা হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার সাথে অজানা সেই দেশে সারাদিন হিন্দী ছবি-সিরিয়াল দেখবে না কারণ সেখানে নিশ্চয় ডিস লাইন নেই!!!!তারা সেখানে ভালোভাবেই মানুষ হবে।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×