আমার এক বন্ধুর একটা কালচারাল একাডেমি আছে। সেখানে শিশুদের নাচ ও গান শেখানো হয়। আমার বন্ধুটি খুবই পরিশ্রমী। সে নিজে নাচ শেখায় শিশুদের।
প্রথম দিকে তার প্রতিষ্ঠান ভালো চললেও পরবর্তীতে তার প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী কমে যায়। সে তার প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে হিসসিম খায়। পরে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে চলে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করে অভিভাবকদের। অভিভাবকরা যা জানায়, তাতে তার ব্যবসায়িক বুদ্ধি খুলে যায়।
তার ছাত্র-ছাত্রীরা আরেকটি কালচারাল একাডেমিতে চলে যাচ্ছে। কারণ কী ? কারণ ওই কালচারাল একাডেমির সঙ্গে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ভালো সম্পর্ক আছে এবং তারা নাচ-গান ভালো মতো শিখুক বা না শিখুক অল্প কিছু দিনের মধ্যে সেই চ্যানেলের অনুষ্ঠানে তাদের দেখা যায়। ফলে সেই প্রতিষ্ঠানের দিকে ছুটছে সবাই।
কালচারাল একাডেমি খুললে যে টিভি চ্যানেলের সঙ্গে ভাব রাখতে হবে এই চিন্তা আমার বন্ধুর মাথায় আসে নি। সে চেয়েছিল কিছু শিল্পী তৈরি করতে, স্টার নয়। কিন্তু অভিভাবকদের চাপে এবং ব্যবসায়িকভাবে মার খাওয়ার ফলে সে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।
আমার বন্ধুটি বাধ্য হয়ে অন্য আরেকটি চ্যানেলের সঙ্গে ভাব করে। শিশুদের নাচের ও গানের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান বানায়। আগে যেই অভিভাবকরা তার প্রতিষ্ঠানের বেতন ঠিক মতো পরিশোধ করত না, তারাই এখন সেই অনুষ্ঠান বানানোর খরচ বাবদ দেদার টাকা দেয় তাকে। অনুষ্ঠান বানানোর পরও তার হাতে নগদ কিছু টাকা থেকে যায়। এখন তার কালচারাল একাডেমিতে নাচ-গান শেখানো লাটে উঠেছে। প্রতিমাসে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান বানানোই তার মূল পেশায় পরিণত হয়েছে।
সবাই স্টার বানাতে চায়, শিল্পী নয় :
নাচ ও গান শিখে শিল্পী হওয়া সত্যি কঠিন। গুণী শিল্পী হতে গেলে দীর্ঘদিন লেগে থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত চর্চা করে নিজেকে গুণী হিসেবে তৈরি করতে হয়। কঠোর পরিশ্রম করে গুণ অর্জন করে নিতে হয় ।
কিন্তু এখনকার অভিভাবকদের সেই সময় নাই, ইচ্ছাও নাই। তারা চায় তাদের সন্তানদের চেহারা টেলিভিশনে দেখাতে। সে শিল্পী হোক বা না হোক, স্টার হলেই হল। তাকে টিভিতে দেখা গেলেই হল। অভিভাবক মহোদয়/মহোদয়া সেই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হওয়ার সময় তার পরিচিত সবাইকে ফোন করে করে বলতে থাকে, তার সন্তানকে টিভিতে দেখাচ্ছে। যেন টিভিতে দেখানোই মানে হল সে বড় শিল্পী।
অভিভাবকদের এই মানসিকতার জন্য অনেক অনেক নতুন কুঁড়ি পরবর্তীকালে হারিয়ে যায়, আর শিল্পী হতে পারে না। অল্প বয়সের সেই অনর্থক খ্যাতি শিশুটির মাথা গুলিয়ে দেয়, সে নিজেকে বিশাল বড় শিল্পী বলে ভাবতে শুরু করে। সে ভেবে নেয়, তার আর চর্চা করা দরকার নাই। ফলে তার চর্চায় ঘাটতি দেখা দেয় এবং অহংকারী হয়ে ওঠে সে। এভাবেই অকালে মারা যায় একটি সম্ভাবনার।
অথচ একটু ধৈর্য ধরে চর্চা করে গেলে তার সেই সন্তানটিই হয়তো গুণী শিল্পী হতে পারত।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





