আজ ৩১ শে মার্চ ২০১২। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ ৪৬ তম সমাবর্তন। আজকের সমাবর্তনে সনদ দেয়া হচ্ছে ১৬ হাজার ৮০০ স্নাতক, ৭৫ জন এমফিল, ৮৯ জন পিএইচডি ডিগ্রীধারিকে এবং স্বর্ণ পদক দেয়া হচ্ছে ৫৯ জন বিশেষ কৃতিত্তের অধীকারি ছাত্রছাত্রী কে। এই সমাবর্তনে অংশ গ্রহনের জন্য নিবন্ধিত ডিগ্রিধারীগণকে গাউন ও উপহার সামগ্রী বন্টনের ব্যবস্থা ছিল গত ২৮শে মার্চ। কিন্তু বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের কিছু ছাত্রছাত্রী এই উপহার সামগ্রী নিতে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে গিয়ে চরম বিশৃঙ্খলার পরিচয় দিয়েছে। লাইন ভেঙ্গে কিছু ছাত্র ছাত্রী একাধিক উপহারের থলে নিয়ে যায়। (প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য একটি করে থলে বরাদ্ধ ছিল) একই সময়ে কিছু ছাত্রী লাঞ্ছনার শিকার হয়। ধাক্কা-ধাক্কিতে বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছাত্র ছাত্রী আহত ও অজ্ঞান হয়ে যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও উপাচার্য ঘটনাস্থলে যান। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আচরনে ক্ষেদোক্তি করেন “তোমাদের আমরা এই শিখিয়েছি, এই শিক্ষা দিয়েছি?” পরে অনেক ছাত্রের কাছে পাওয়া যায় ছাত্রীদের হাত ব্যাগ, আবার অনেক ছাত্রীর কাছে পাওয়া যায় ছাত্রদের টাই। উল্লেখ্য উপহার সামগ্রীর মধ্যে ছাত্রদের জন্য ছিল টাই এবং ছাত্রীদের জন্য ছিল হাতব্যাগ।
গতবছরের অন্যতম বিশ্ব আলোড়িত দুর্ঘটনা ছিল জাপানে সুনামীর আঘাত ও তৎপবর্তী পারমানবিক বিপর্যয়। ১১ই মার্চ ২০১১ সালে সুনামির আঘাতে জাপানের কয়েক টি জনপথ লন্ড-ভন্ড হয়ে যায়। এর ফলে দেখা দেয় চরম মানবিক বিপর্যয়। হাজার হাজার লোক (যারা বেচে ছিল) খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে বাধ্য হয়। স্বজন হারা মানুষগুলোকে ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করে জীবন বাঁচাতে হয়েছে। সুনামি আঘাত হানার সপ্তাহ খানেক পরের কাহিনী। নিরাপত্তার দায়িত্ত্বে নিয়োজিত এক ভিয়েতনামী স্বেচ্ছাসেবী পুলিশ লক্ষ্য করলেন ৯ বছরের একটি বালক খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। মুখ দেখে বালকটিকে মনে হচ্ছিল খুবই ক্ষুধার্ত। কিন্তু সে যখন খাবার নিতে যাবে ততক্ষনে খাবার হয়ত শেষ হয়ে যাবে। পুলিশটির মায়া হল, বাচ্ছা ছেলেটার মুখ দেখে। পুলিশ কিছুটা কৌতূহলী হয়ে বালকটি সম্পর্কে জানতে চাইল; এবং জানতে পারল তাদের বাড়ি ছিল সমুদ্র তীরে, সুনামি যখন আঘাত হানে সেই সময় বালকটি ছিল স্খুলে। বাবা মাকে ভাসিয়ে নিয়েছে সুনামি। পুলিশ নিজের রুটিটি বালকটিকে দিয়ে দিল। বালকটি রুটিটি নিয়ে যেখানে রুটি বন্টিত হচ্ছিল সেখানে রেখে আগের জায়গায় এসে দাঁড়াল। এবার পুলিশের অবাক হবার পালা!!! তাঁর এইরূপ আচরনের কারন কি!!! উত্তরে বালক যা বললেন তা শুনে পুলিশের আবেগ সংবরন করতে অসমর্থ হলেন। বালক জানাল ‘সে ক্ষুধার্ত। তবে অনেক মানুষ লাইনে তাঁর আগে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে। তারাও নিশ্চয় ক্ষুধার্ত। তাই সে তাঁর রুটিটি বণ্টনের জন্য দিয়ে এসেছেন যাতে লাইনের আগের লোকেরা আগে খেতে পারেন ।’
Click This Link
আমাদের আসলেই চিন্তা করা উচিত আমদের নৈতিকতা কতটুকু নেমেছে? আসলে কি নেমেছে নাকি আমরা আদৌ কোন নৈতিকতা অর্জন করতে পেরেছি? আমরা আমাদের সন্তানদেরকে ডাক্তার –ইঞ্জিনিয়ার কিনবা বহু জাতিক কোম্পানির চাকুরে করার জন্য মন প্রান দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমদের সন্তানদেরকে কি নৈতিকতা শিক্ষা দিচ্ছি? আজকে যে ছাত্র ছাত্রী সমাবর্তনে অংশ নিয়ে পদক নিয়ে যাবে তারা আমাদের দেশ ও জাতিকে কি দিবে? এই জন্যই প্রকৃতই এই সু শিক্ষিত মানবাকৃতির জীব গুলো খুব কমই দেশকে দিয়েছে যতটুকু দেশ থেকে নিয়েছে। (আমি সত্যিকারের স্কলারদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করেই বলছি তারা এদের মধ্যে নেই)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



