somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হরতাল এবং হিমু

২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবার হিমু !!!!!!!! - হুমায়ুন স্যার আমাকে মাফ করে দিন ।
---------------------------------------------------------------------------------
আকাশ টা অসম্ভব রকমের পরিস্কার , মেঘের ছিটেফোঁটাও নাই । দেখে মনে হচ্চছে আকাশটাকে তার প্রিয় কোন বন্ধু নীল চাদর উপহার দিয়েছেন । আর আকাশ সেটা সারাক্ষন গায়ে জড়িয়ে রাখতেছে । ঘরের জানালায় উকি দিয়ে সেই অদ্ভুত আকাশ দেখছে হিমু । অনেক টা বিরক্ত এবং অস্বস্তি বোধ করছে । সবসময় ঘরে থাকার মতো সে নয় । অন্যসময় এরকম আকাশে সে দিন রাত্রি এক করে রাস্তায় হাটতো । মাজেদা খালার বাসায় বাসি পোলাও খেতে যেত । কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস তাকে শুধু চা সিগারেট এবং মেসের রান্না করা ছাইপাঁশ খেয়ে থাকতে হচ্ছে । যদিও তার খারাপ লাগছে না । লাগার কথাও না । কারন হিমুরা পৃথিবীর সকল বিষয় বস্তুর প্রতি লোভলালসা থেকে মুক্ত । তার সব চেয়ে যেটা খারাপ লাগছে সেটা হলো পাশের রুমে ওঠা নতুন বর্ডার বারবার তার কাছে এটা ওটা নিতে আসছে । অথচ হিমুর কাছে দেওয়ার মতো কিছুই নাই । তার এরকম অনিচ্ছাকৃত স্বেচ্ছা মেস বন্দী থাকার উদ্দেশ্য তেমন কিছুই না আবার সবকিছুই ।কারন বিরোধী দল অনির্দিষ্ট কালের জন্য হরতাল ডেকেছেন । ঢাকা শহরে ঘন ঘন বন্দুকের গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে । হিমু জানালা দিয়ে তাকিয়ে একটা জিনিস লক্ষ্য করলেন । গুলি কাউকে উদ্দেশ্য করে ছোঁড়া হচ্ছে না । ছোঁড়া হচ্ছে ফাকা গুলি মানুষকে ভয় দেখিয়ে হরতাল থেকে দূরে রাখার জন্য । অথচ প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় একটি করে মিছিল আসতেছে । অদ্ভুত সব নাম সেইসব মিছিলের ঝটিকা মিছিল , লাঠি মিছিল , কক্টেল মিছিল, মৌন মিছিল , সাধারন মিছিল ।হিমু জানালার ধারে বসে এইসব মিছিলে দুইটা জিনিস লক্ষ্য করলো । প্রথমেই যে মিছিল গুলো লোক বলতে ব্যানার ধরতে যে কয়জন লাগে । আর মৌন মিছিল কারীরা ইট পাটকেল ছুরতেছে কিন্তু ঝটিকা মিছিল নীরব ।
এর মানে কি ? হিমুরা কোন কিছুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারে না ।মিসির আলী কে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে । হঠাত করে হিমুর মনে হলো মিসির আলী এই মুহূর্তে কি করতেছে ? উনি কি এই সময় হরতাল নিয়ে কোন গবেষণা করছেন ? এই লোক টির সাথে হিমুর দেখা করার খুব ইচ্ছা কিন্তু কেন জানি হয়ে উঠে না । এসব ভাবতে ভাবতে রুপার কথা মনে হলো । রুপার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করতেছে । তার এই নতুন মেসের ম্যানেজার বরকত সাহেব হিমুকে যথেস্টই সম্মান করেন উনার কাছে তার মোবাইল টা নেওয়া যেতে পারে কথা বলার জন্য । মোবাইল অবশ্য হিমুর ও ছিলো একটা। মাজেদা খালা দিয়েছিলো , কিন্তু হিমু সেটা ফেরত দিয়ে দিয়েছে । হিমু ঊঠে চলে গেলো বরকত সাহেবের ঘরে । - হিমু ভাই যে কেমন আছেন ।
- বরকত সাহেব আপনার মোবাইল থেকে কথা বলা যাবে ?
- এই নিন মোবাইল ।যতক্ষন ইচ্ছা কথা বলুন । দরকার হলে মোবাইল টা রেখে দিন ।
বরকত সাহেবের মতো কিপটা লোক হিমুকে একটা মোবাইল দিতে চাচ্ছে এর কি কারন হতে পারে ? হয়তো সবার মতো বরকত সাহেবের ও বিশ্বাস হিমু একজন মহাপুরুষ । কিন্তু ভালো করেই জানে সে এই বিষয়ে পাশ করতে পারে নাই । তার বাবার স্কুলে সে যে মহাপুরুষ হবার ট্রেনিং নিয়েছিলো সেইখানে সে উত্তীর্ণ হতে পারে নাই ।
- হ্যালো ।
- রুপা কেমন আছো ।
- ভালো । তুমি ?
- আমিও ভালো আছি । আচ্ছা রুপা আকাশ টাকে দেখেছ কত পরিস্কার ।
- হুম দেখেছি ।
- এই পরিস্কার নীল আকাশে একটা রুপালী কবুতর খুব সুন্দর দেখাতো তাই না ?
ও পাশ থেকে কোন সাড়া নেই । হিমু স্পষ্ট বুঝে গেছে রুপা এখন কাদছে । হিমুও তাকে আর ডিস্টার্ব করলো না । আসতে করে ফোন টা কেটে দিয়ে বরকত সাহেবের ঘর থেকে বের হল । গায়ে হলুদ পাঞ্জাবীটা চাপিয়ে মেস থেকে বেড়িয়ে আসলো ।
ভেতরে বসে বসে যা ভাবছিলো পরিস্থিতি তার চেয়ে একটু হাল্কাই মনে হলো ।
শুধু দোকান পাট গুলোই যা বন্ধ আর কি । হিমু এক মনে উদ্দেশ্য হীন ভাবে হাটছে ।
হঠাত একটা মৌন মিছিল তার দিকে দৌড়ে আসছে । পিছনে পুলিশ । হিমুও কোন কিছু না ভেবে মিছিলের সাথে দৌড় দিলো । কিন্তু সামনে দেখে আরেক পুলিশ বাহিনী । প্রায় পুরা মিছিলের দলটাই ধরা পড়লো । সব মিলিয়ে ১৫ জন ।
তাদের কে নিয়ে যাওয়া হলো থানায় ।
ওসি সাহেব একে একে সবার এন্ট্রি নিচ্ছেন ।
নাম কি ?
হাফিজুর রহমান
নাম কি ?
আব্দুল কালাম ।
নাম কি ?
হিমু ।
কি ?
স্যার হিমু । ভালো নাম হিমালয় ।
আমার সাথে ফাজলামি করছো ?
না স্যার আমার বাবা একটু পাগল টাইপ লোক ছিলেন তাই আমার এই উদ্ভট নাম ।
ও ।
স্যার একটা সিগারেট হবে ।
চুপ সালা ।
ওসির মেজাজ দেখেই বুঝলেন খুব চটে আছেন । এই মুহূর্তে হিমু তার খেলাটা খেললো
- স্যার অভিনন্দন । আপনার বৌ পীরের মাজারে গিয়েছিলো পায়েশ দিতে ।আপনি বাবা হতে চলেছেন ।
- কি ?আবার ফাজলামো হচ্ছে ? ডীম থেরাপি লাগবে ?
- স্যার আমি সত্যি বলছি । বাসায় টেলিফোন করে দেখুন । আপনার বাসার করিম মিয়া ধরবে টেলিফোন ।
রাগে গজগজ করতে করতে বাসায় টেলিফোন করলেন । শুধু হ্যালো বলেই মুখখানা বিকৃত করলেন । বুঝা গেলো তার স্ত্রী বাসায় নাই ।
একটু পরে হিমুকে জেল থেকে বের করে ওসি সাহেবের রুমে নিয়ে যাওয়া হলো ।
তার সামনে দেওয়া এক কাপ চা এবং একটি বেন্সন এন্ড হেজেজ এর সিগারেট ।
- এই যে মিস্টার .........
- স্যার আমার নাম হিমু । ভালো নাম হিমালয় ।
- ও হ্যা হিমু সাহেব । আপনি কিভাবে জানলেন আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট ।
- স্যার আপনাকে বলেছিলাম না আমার বাবা একজ পাগল টাইপ মানুষ ছিলেন। তিনি একটা স্কুল খুলেছিলেন । মহাপুরুষ তৈরীর স্কুল । আমি ছিলাম সেই স্কুলের একমাত্র ছাত্র ।যদি উনার ইচ্ছাটা পুরন হয় নাই । আমাকে মহাপুরুষ বানিয়ে যেতে পারেন নাই ।
- ও । আপনি মিছিলে গেছিলেন কেন ।
- আমি তো মিছিলে যাই নাই । মিছিল আমার কাছে গেছিলো ।
-মানে ?
- আমি রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম । হঠাত মিছিল টা আমার দিকে দৌড়ে আসলো । আমিও মিছিলের সাথে দৌড় দিলাম ।
- ও। আপনি জানেন না এখনডাকায় সকল মিছিল মিটিং এর উপর নিষেধাজ্ঞা আছে ।
- জানতাম । কিন্তু রাস্তায় হাটা আমার অভ্যাস তো তাই । আইন ভঙ্গ করেছি ।
- আচ্ছা যান এখনি বাসায় ফিরে যান । আর আপনার ঠিকানাটা দিয়ে যান ।
হিমু ঠিকানা লিখে দিলেন ।
- স্যার আর একটা সিগারেট খাওয়াবেন ।
ওসি সাহেব সিগারেট দিলেন ।
- স্যার আপনাকে আরেক টা সংবাদ দেই । আপনি আজকেই এই থানা থেকে বদলি হবেন ।
কথাটা বলেই থানা থেকে সিগারেট টানতে টানতে বেড়িয়ে এলো হিমু । থিক সেই মুহূর্তে ওসি সাহেবের কাছে ফোন এলো । আর ওসি হুরমুর করে বাইরে বেড়িয়ে এসে হিমু সাহেব হিমু সাহেব বলে চিৎকার করতে লাগলেন ।
হিমু ততক্ষনে চলে গেছে তার অজানা গন্তব্যে । হয়তো মিশে যাবে আরেক টি মিছিলে । ধরা পড়বে অন্য আরেক থানার পুলিশের কাছে ।
*****
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×