somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছদ্ববেশী এক রোগ

১৭ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ এখনো ঝারফুক কবিরাজী এসবের পিছনে ছুটে বেড়ায়। এর পিছনে কিন্তু কারন রয়েছে অনেক। এর প্রধান কারন ডাক্তারের রোগ খুজে না পাওয়া। অনেক রোগী ২০-২৫ বছর বসে থাকে অনেক রোগ নিয়ে।কেননা ডাক্তার ঠিক মত ডায়াগনোসিস করতে পারে না। তাই তারা ভাবে তাদেরকে কেউ জাদু টোনা করেছে। তারা এসব ঝাড়ফুক করে মনে কিছুটা স্বস্তি আনার চেষ্টা করে কিন্তু অসুখ তো র‍য়েই যায়। এমন একটা অসুখ হল 'মাইকোব্যক্টেরিয়াম আবসেসাস'।

মাইকোব্যাক্টেরিয়াম আবসেসাস ছদ্ববেশী এক ব্যক্টেরিয়া। যত সাধারণ টেস্ট আছে, তার সব সম্পাদন করলেও বেশির ভাগ সময় এই রোগ খুজে পাওয়া যায় না। ভাইরাস অনেকটা সহজে ধরা পড়ে টেস্ট করলে কিন্তু ব্যক্টেরিয়া খুবই চালাক ধরনের হয়। যেমন টিউবারকুলোসিস বা কুষ্ঠ। খুব সহজে কিন্তু এসব ব্যক্টেরিয়ার উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। অনেক বছর শরীরের কোণায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে। যখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম দূর্বল হয়ে যায়, তখন সেসব ক্ষুদ্র অনুজীবগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে। অনেক সময় এমন হয় যে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে যায় আর মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনে। টিউবারকিউলোসিস বা সংক্ষেপে টিবি ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ড্রপলেট বা শ্বাস প্রশ্বাস্বের মাধ্যমে। আর আক্রান্ত স্থান মুলত ফুস্ফুস। কিন্তু ফুসফুস ছাড়াও প্রতিটা অংগ প্রত্যংগ আক্রমণ করতে পারে টিবি। এমনকি মস্তিষ্কে পর্যন্ত ছড়াতে পারে। এর প্রধান লক্ষণ কাশি, ক্ষুধামন্দা ভাব, বিকালে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, খুব দূর্বল লাগা ও রাত্রীকালীন ঘাম দেওয়া। টিবি রোগ নির্ণয়ের প্রধান পদ্ধতি হল স্পুটাম বা কফ টেস্ট।

মাইকোব্যাক্টেরিয়াম আবসেসাস এর সাথে টিবির অনেক মিল আছে। তাই অনেকে এই ব্যক্টেরিয়াকে টিবি ভেবে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই ব্যক্টেরিয়ার গঠন অনেকাংশে টিবির সাথে মিলে কিন্তু ভাল করে লক্ষ্য করল্ব পার্থক্য দেখা যায়। এই রোগ মূলত টিবি আর কুষ্ঠ রোগের সংমিশ্রণ। আপনি বেচে থাকবেন, কিন্তু স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থাকবে না। এই ব্যক্টেরিয়া নির্ণয় করে অনেক কঠি এবং সময়সাপেক্ষ কেননা এই ব্যক্টেরিয়া মূলত মানুষের শরীরের নরম টুস্যু বা কোষে অবস্থান করে। সফট টিস্যু বলতে ত্বকের নিচ, মাংসপেশি, চর্বি স্থান, ফুস্ফুসের পর্দা, হাড়ের আশপাশের নরম জায়গায় এমনকি নার্ভ পর্যন্ত। মাঝে মাঝেই এই ব্যক্টেরিয়া ফুসফুসে এসে ইনফেকশন করে দিবে। এই রোগের লক্ষণ টিবি আর কুষ্ঠ রোগের মত। আর এই অনুজীব সাধারণ কোন টেস্টেই পাওয়া যায় না বেশিরভাগ সময়। অনেক সময় ব্রনকোস্কোপিতে দেখা যায় কিন্তু বেশিরভাগ প্যাথোলজিতেই টিবি ভেবে ভুল করে ভুল চিকিৎসা দেয়। ব্রংকোস্কোপী হল একধরনের টেস্ট যা ব্রংকোস্কোপ দিয়ে করা হয় যা মূলত এক ধরনের ক্ষুদ্র মাইক্রোস্কোপ যা তারের মাধ্যমে মুখ দিয়ে ফুস্ফুসে ঢুকানো হয়।

খারাপ কথা হল এর নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা আজো আবিষ্কৃত হয় নি। কয়েক ধরনের কম্বিনেশান এন্টিবায়োটিক দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয় অনেক সময় আজীবন ও খেতে হয়। মূলত ডায়াবেটিস এর মত কন্ট্রোলে রাখতে হয় এই রোগ। এই ব্যক্টেরিয়া মূলত মাটি, দূষিত পানি এসব জায়গায় থাকে। হয়তো সেই ব্যটেরিয়াযুক্ত মাটিতে আপনি আছাড় খেলেন বা সেই ব্যটেরিয়াযুক্ত পানি পান করলেন। ব্যাস, আপনার শরীরে তা প্রবেশ করে গেল। আর এই ব্যক্টেরিয়া খুবই দ্রুত বর্ধনশীল যেখানে টিবি খুব ধীরগতিতে বর্ধনশীল।

এই ব্যক্টেরিয়ার খবর আজো মানুষ খুব একটা জানে না। আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ডে এই রোগ নিয়ে গবেষণা চলছে কিন্তু খুব একটা পাবলিকেশনস প্রকাশ করে না তারা! ২০০৭ এর পর ২০২০ এ এর কিছু নুতন পাবলিকেশন বের হয়েছে। এই পুরো পৃথিবীতে কিন্তু একই ভুখন্ড। তাই নর্থ এশিয়া তথা বাংলাদেশেও এর বিস্তার অবশ্যই আছে কিন্তু বাংলাদেশ বা উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশে হয় এই রোগ ধরা যায় না বা গেলেও একে ভুল চিকিৎসা দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তারা ভাবে তাদের উপর কালো জাদু প্রয়োগ হয়েছে। আবার সর্বরোগের ওষুধ বলে অনেক প্রতারক খুব দূষিত জিনিঢ দিয়ে কিছু একটা প্রচলন করে যা অনেক কুসংস্কার বিশ্বাসী মানুশকে ভিক্টিম বানায়। আবার অনেক পিতামাতা সন্তান বেশি দুষ্টামি করে বলে নিয়ে যায় ভন্ড ফকির সাধুদের কাছে, আর সেখান থেকেও শিশুদের শরীরে ছড়াতে পারে। ছোট হবার দরুন তারা তখন বুঝতেও পারে না। ফলে অনেকে বড় হবার আগে মারাও যায়


মাইকোব্যাক্টেরিয়াম আবসেসাস এর মত এমন অনেক রোগ নিয়ে হয়ত মানুষ বসবাস করে, যেসব রোগের নির্ণয় খুবই কঠিন এবং অনেকাংশে হয়ত বা রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কারই হয় নি। পৃথিবী মেডিক্যাল সেক্টরে যতটা উন্নত হবার কথা আসলে কি তা হয়েছে? সবার কাছে প্রশ্ন রইল।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৪০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে কোনটি মত এবং কোনটি মতভেদ?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৪




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কতভাগ ব্লগার মহা-ডাকাত তারেককে সরকারে দেখতে চায়?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১২



জিয়া মিথ্যা হ্যাঁ/না ভোটে সামরিক এডমিনিষ্ট্রেটর থেকে আইয়ুবের নতো দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলো, ৫% ভোটকে মিথ্যুকেরা ৯৮% বলেছিলো ; আওয়ামী লীগ বাধা দিতে পারেনি। জিয়ার মৃত্যুর পর, বেগম জিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাষ্ট্র যখন হত্যার দর্শক

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১৯

রাষ্ট্র যখন হত্যার দর্শক
দায়হীন সরকারের শাসনে বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে?


দিপু চন্দ্র দাস মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন—
“আমি নবীকে নিয়ে কিছু বলিনি, আমাকে মারবেন না।”
রাষ্ট্র তখন কোথায় ছিল?

আগুনে পুড়তে পুড়তে ছোট্ট আয়েশা চিৎকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান'

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯



১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×