আগেও অন্য একটা ব্লগে প্রকাশিত।
-----------------------------------------------------------------------
জন স্টাইনবেকের ''অফ মাইস এন্ড ম্যান'', আমার অসম্ভব প্রিয় কিছু বইয়ের একটা। এক সপ্তা ধরে শয্যাশায়ী থেকে অনেকগুলো পুরানো বই রিভাইজ করছিলাম, তার মধ্যে এই নভেলাটাও পড়েছি, আর পড়ে আবারও মুগ্ধ হয়েছি। মাত্র ১০৬ পাতার এই বইটা থেকে রোজ না হোক, এক দুই দিন পর পর একটা করে পাতা অনুবাদ করবো ভাবছি। আমার অগণিত শেষ না হওয়া প্রজেক্টে আরেকটা যোগ হবে হয়তো।
-----------------------------------------------------------------------
সোলদাদের কয়েক মাইল দক্ষিণে সালিনাস নদী এসে পাহাড়ের পায়ের তলায় গভীর আর সবুজ হয়ে মিশে গেছে। সেই সংকীর্ণ জলাশয়ে এসে শেষ হবার আগের রাস্তাটুকু প্রখর সূর্যে তেতে থাকা হলদে বালির উপর দিয়ে এঁকেবেঁকে পার হয়ে আসায় নদীর পানি যেন এখানে খানিকটা উষ্ণও। নদীর একপাশে ছোট ছোট সোনারংয়া পাহাড়গুলো মাথা তুলে মিলিয়েছে শক্ত আর পাথুরে গ্যাবিলান পর্বতমালার সাথে। আর উপত্যকার পাশটিতে তীর ঘেরা সারি সারি উইলোগাছে- প্রতি বসন্তে নতুন পাতায় সবুজ হয়ে উঠে তারা আর তাদের নীচু শাখাগুলিতে শীতের তুষার প্লাবনের ক্ষতচিহ্ন রয়ে যায়। সাইকামোর গাছের চিত্রল, সাদা আর বাঁকানো ডালপালাও দেয়ালের মতো ঘিরে থাকে নদীর ধার। গাছের নীচের বালুময় তীরে পাতারা এতো গভীর আর মুচমুচে হয়ে পড়ে আছে যে একটা তক্ষকও তার ভেতর দিয়ে চলতে গেলে গোটা দুনিয়াকে শব্দে চমকে দেবে। সন্ধ্যেবেলায় খরগোশেরা ঘনঝোপ থেকে বেরিয়ে আসে বালির উপরে বসবার জন্য, আর সমস্ত পারজুড়ে ভেজা সমতটের বালিতে বিছিয়ে থাকে র্যাকুনদের রাতজাগা পায়ের ছাপ, খামারের কুকুরগুলোর চওড়া পায়ের চিহ্ন আর যেই হরিণগুলো রাতের আঁধারে পানি খেতে আসে তাদের দু'ভাগ হওয়া খুরের ছাপ।
উইলোর ভেতর দিয়ে সাইকামোরদের পাশ ঘেঁষে একটা পথ আছে, খামার থেকে আসা দুষ্টু ছেলের দল নদীতে গোসল করতে আসার জন্য জংগলকে শক্ত করে পিটিয়ে সরিয়ে বানিয়েছে সেই পথ, আর সন্ধ্যেবেলায় উঁচুরাস্তা থেকে মাতালের দল টলোমলো পায়ে সেই পথ ধরে পানির পাশে জটলা বাঁধানোর জন্য নেমে আসতে গিয়েও আচ্ছাসে পিটিয়ে সরায় আশেপাশের জংগল। একটা দানবীয় সাইকামোর এর সমান্তরাল ডালের সামনে উঁচু হয়ে জমে আছে ছাই এর স্তুপ, আর ডালটার উপরে মানুষেরা বসে বসে প্রায় মসৃণ করে দিয়েছে ইতোমধ্যে।
কোন এক ঊষ্ণ দিনের সন্ধ্যায়, পাতাদের ভেতর দিয়ে ছোটখাটো একটা ঘূর্ণিমতো বয়ে যাচ্ছিলো। গাছেদের ছায়া যেন উঁচু হতে হতে পাহাড়ের চূড়া ছুঁয়ে ফেলছিলো প্রায়। বালুতীরে খরগোশেরা ছোট্ট ধুসর পাথরের মূর্তির মতো ঠায় বসে ছিলো। আর তখনি উঁচুরাস্তার দিক থেকে মুচমুচে সাইকামোর পাতার উপরে পায়ের আওয়াজ শোনা গেলো, খরগোশগুলো একদম নিঃশব্দে আড়ালে চলে গেলো, চিত্রার্পিত ধূসর একটা বক হঠাৎই শূণ্যে উঠে নদীর দিকে ঝাঁপ দিলো। কয়েক মুহূর্তের জন্য জায়গাটা যেন প্রাণহীন হয়ে গেলো, আর এর পরপরই সেই পথে দুজন মানুষ দেখা গেলো যারা সবুজ সেই জলাশয়ের পাশের খোলা জায়গাটায় এসে দাঁড়ালো।