আজকেও আকাশটা মেঘলা, সকাল থেকেই। ক্লাস-টাস বাদ দিয়ে বাসায় গিয়ে কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমাতে পারলে ভাল হত। আজকের লেকচারটা শোনা নেহায়েতই জরুরি বলে কেটে পড়ছে না ধীরেন।
মানুষের চিন্তাধারা কিভাবে বদলায়...। একসময় মেঘলা আকাশ দেখে যে ধীরেন গল্প ফেঁদে ফেলতে পারত, সেই ধীরেন ভাবছে বাসায় গিয়ে ঘুমানোর কথা। অবশ্য ধীরেনকে ও দোষ দেওয়া যায় না। ও তো লিখতেই চায়। কিন্তু বছরখানেক হল গল্পরা যেন ওকে ছেড়েই চলে গেছে। কোনভাবেই মাথায় কিছু আসেনা। এই অলিখিত শত্রুতার কারণ ধীরেন বোঝেনি। আপনা থেকে না আসায় একসময় বিরক্ত হয়ে রীতিমত জোর করেই গল্প বানাতে বসেছিল। কিন্তু গল্প আর এলো কই...
অলস ভঙ্গিতে বসে ধীরেন ক্লাসটায় চোখ বুলাতে লাগল। এই পিরিয়ডটা অফ। এরপরের ক্লাসটা করেই ও নির্ঘাত বাড়ি চলে যাবে। একসময় এই ক্লাসরুম, কানে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের ছাড়া ছাড়া কথা- এসব নিয়েই হয়ত কিছু লিখে ফেলতে পারত ধীরেন।
ধীরেনের লেখার হাত ছোটবেলা থেকেই ভাল। অবশ্য এই ছোটবেলা মানে ঠিক শিশুকাল নয়। ১২/১৩ বছর হবে তখনকার কথা। হ্যা, এর আগেও যে বাচ্চাদের ছড়া কি গল্প লেখেনি এমন না, তা ওইগুলো বাদই দিলাম নাহয়। বড় হতে হতে লেখায় দখল আরও বাড়তে লাগল ধীরেন এর। পত্রিকায়, বেশ কিছু লিটল্ ম্যাগাজিনে গল্প ছাপা হতে লাগল ওর। বন্ধুমহলে লেখক ধীরেনের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। ধীরেনের মাথায় তখন প্লট গিজগিজ করে...যা দেখে তাকেই গল্প বানিয়ে ফেলতে চায় সে। কিন্তু হঠাৎ করেই একসময় ও আবিষ্কার করল যে, কেন যেন আর গল্প আসছেনা। প্রথমে ব্যাপারটাকে খুব একটা আমল দেয়নি ও। ও তো আর মেশিন না যে গল্প একের পর এক লিখে যেতেই থাকবে... ঠিক হয়ে যাবে নিশ্চয়ই। কিন্তু ঠিক হয়নি। এবং এই ঠিক না হওয়ার মেয়াদের দীর্ঘতা দেখে ধীরেন সত্যিই বিচলিত হয়ে উঠেছিল। বন্ধুদের প্রশ্ন, সান্তনা আর উপদেশের ফাঁকে যেই কথাটা বেশি মাথায় আসত তা হল, গল্পরা কি তবে ছেড়ে যাচ্ছে?
আজ কী একটা গল্প নিয়ে ভাবা যায় না? অনেকদিন পর ধীরেন ভাবে এই কথা। ধরি আমারই গল্প...এই যে, এই গল্প লিখতে না পারা...লেখকের এই তৃষ্ণা, কিছু সৃষ্টি করার আপ্রাণ চেষ্টা, আকুলতা...এ ও কি লেখা যাবেনা? একটা গল্পও কি আসবে না আর! ধীরেন ভাবে। ক্লাসের এক কোণে বসে নিবিষ্ট মনে ভেবে চলে ধীরেন। ওর এই মৌনী সাধুর মত রূপ দেখেই যেন বা, ওর বন্ধুরা ওকে ঘাটায় না। কিছু সময় যায়। ধীরেন তখনও স্থির বসা। হ্যা, কিছু একটা আসছে ওর মাথায়...হয়ত...।
সবটুকু প্লট না গুছিয়ে লেখেনা ধীরেন। মাথায়ই আগে মোটামুটি একটা খসড়া করে নেয়। ভাবতে ভাবতেই ক্লাস রুম থেকে বের হতে থাকে ধীরেন। লেকচার চুলোয় যাক। মাথায় আর কিছুই ঢুকাতে চায় না সে। কেবল এই গল্পটা, আর কিচ্ছু না। 'এই শমী, আমি গেলাম। নোটগুলা টুকে রাখিস, পরে নেব নে।' বন্ধুকে বলে বের হয়ে আসে ধীরেন। 'গেলাম মানে! কই যাস তুই? ক্লাস না করবি বললি?' প্রশ্ন আসে। 'পরে, পরে..পরে বলব।' বলেই হাঁটা দেয় ধীরেন।
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




