বই সব আসুক, তারপর যাব- এসব ভেবে যাচ্ছি-যাব করেও বইমেলায় যাওয়া হচ্ছিল না এতদিন, অবশেষে আজকে যাওয়া হল। পুরো মাসের মধ্যে এই প্রথমবার (এবং হলেও হতে পারে শেষবার) আমার বইমেলা দর্শন, এবং বেছে বেছে আজকের দিনটাতেই প্রকৃতি তার কেরামতি দেখালো।
বিকেলবেলা বেরুলাম। দুপুর থেকেই কেমন যেন ভ্যাপসা একটা গরম ছিল। সেই ভ্যাপসা গরম যে আসন্ন প্রলয়ের সংকেত সেটা তো আর বুঝতে পারি নি! বইমেলায় দিব্যি ঘুরছি-ফিরছি, বই কিনছি- হঠাৎ চোখে পড়ল যে আকাশ বেশ মেঘলা। তখন ব্যাপারটাকে খুব একটা আমল দেই নি। ঢাকার আকাশ এ ধরনের ঢং প্রায়ই দেখায়। কিন্তু আজকে যে সে হঠাৎ সিরিয়াস হযে যাবে তা কে জানত! হঠাৎ করেই বালুঝড়, প্রচণ্ড বাতাস, তারপর বৃষ্টি শুরু হল। বাংলা একাডেমির বটতলা কাছাকাছি থাকায় সেদিকেই হাঁটা দিলাম। উপরে কাপড়ের ছাউনি দেয়া ছিল, একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিল সেই জন্য। বৃষ্টি শুরু হয়েছিল ঢিমেতালে, আস্তে আস্তে তার লয় বাড়তে লাগল। আর বৃষ্টির বেগ বাড়ার পর বোঝা গেল সেই কাপড়ের ছাউনি কত দুর্বল ছিল! সেটা কথা নেই- বার্তা নেই জায়গায় জায়গায় খুলে গিয়ে সবাইকে ভিজিয়ে দিতে লাগল। আমিও তখন, আর দশজনের মতন, কাকভেজা। (মিথ্যা বলব না, চমৎকার লাগছিল ব্যাপারটা। অনেকদিন পর এরকম ঝড় দেখলাম... বাড়ির বাইরে থেকে। মাথায় ওই যে ঝড়ের মেঘের কোলে ধরনের গানও আসছিল। হঠাৎ করেই প্রকৃতির এমন অনাকাঙ্খিত পরিবর্তন, উপভোগ করব না দুশ্চিন্তা- এমন মিশ্র একটা অনুভূতি বোধ করি সবার মাঝেই ছিল।) পাশে থেকে কে যেন বললেন, ‘এ তো দেখি পুরা টাইটানিক!’ আমি তখন থরথরি কম্পমান, গায়ে কাঁটা দিচ্ছে ঠাণ্ডায় (আক্ষরিক অর্থেই)।
প্রথমে তো পানির আক্রমণ ছিল কেবল উপর থেকে, এরপর নিচেও পানি জমতে লাগল। আর জোর ঠাণ্ডা বাতাস তো ছিল পুরো সময়টা জুড়েই। কতক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম খেয়াল নেই। একসময় বৃষ্টি একটু কমলো, মেহেরবানি করে। যাঁরা সেখানে ছিলেন তাঁদের কয়জনের যে ঠাণ্ডা লাগবে আর কয়জনের জ্বর হবে কে জানে! আর যাদের স্টলে নিচে বই রাখা ছিল তাদের নিশ্চয়ই বেশ মুশকিলে পড়তে হয়েছে। এরপর সেই বটতলা এলাকা থেকে বের হবার পালা। সেখান থেকে তো বের হওয়া গেল, কিন্তু বইমেলা থেকে বের হতে গিয়ে আবার ঝক্কি পোহাতে হল- পানি জমে একাকার। এদিক দিয়ে হাত-পা সব ঠাণ্ডায় অবশ হয়ে আছে। তারপর ঘুরপথে পেছন দিক দিয়ে বের হতে হল। তখনো শুনছি কে যেন বলছে- ‘এই অন্বেষা’র স্টলটা কোথায়, অন্বেষা?’ তার অন্বেষা-অন্বেষণ শেষ পর্যন্ত কতটুকু সফল হয়েছিল জানি না, তবে আমাকে এই পানি-বন্দি অবস্থার কারণে লিস্টের একটা বই বাদ রেখেই বাসায় ফিরতে হয়েছে...
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৯:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




