
১৯৭৮ সালে যখন বিএনপি গঠিত হয়, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত, আওয়ামী লীগবিরোধী লোকজন, উচ্চাভিলাষী এবং আধুনিক লোকজনকেই বাছাই করেন জিয়া। কট্টর আওয়ামী লীগাররা বিএনপিতে যাওয়ার কথা না। যদিও পরবর্তীতে শেখ হাসিনা দলটাতে যখন পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত করেন, তখন অনেকেই বিএনপি বা জাতীয় পার্টিতে চলে যান। পরিণাম যে ভালো হবে না সেটা তখন বোঝেননি; মনে হয় না এখনও বোঝেন।
একই রকম ভুল তাঁর বাবা করেছিলেন। ১৯৭২ সালে যখন জাসদ গঠিত হয়, তখনই বোঝা গিয়েছিল তাঁর রাজনীতি কঠিন হয়ে যাবে। অথচ উনি চাইলেই জাসদের লোকজনকে ব্যালেন্স করে দলে রাখতে পারতেন। একটা দলে বিভিন্ন মতাদর্শের লোকজন থাকে না? শেষদিকে যেহেতু বামপন্থার দিকে ঝুঁকতেই হলো, আগে থেকে অনুমান করতে পারলে হয়তো বেঁচে যেতেন।
বিএনপি রাজনীতিতে বেশিরভাগ সময় জামায়াত বা তাদের সমমনাদের আশ্রয় দিয়েছে। তাই তো দেখা যায় জামায়াতিরা আর কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে পছন্দ না করলেও জিয়াকে ঠিকই পছন্দ করে। মেজর ডালিম বা কর্নেল রশিদ, হুদাদেরও পছন্দ করে যেহেতু তারা শেখ পরিবারকে সমূলে ধ্বংসে আমেরিকার দেওয়া গুরু দায়িত্ব পালন করেছে।
এম এ জলিলও তাদের পছন্দ। কারণ ওই একটাই না যে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের লুটপাটের বিরোধিতা করেছেন। ভদ্রলোক মুক্তিযোদ্ধা হলেও তার আফসোস ছিল কেন পাকিস্তান ভাঙার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। তার মৃত্যু কিন্তু পাকিস্তানে হয়েছিল সম্ভবত কোনো একটা ধর্মীয় আয়োজনে গিয়েছিলেন।
তাহেরকেও তারা পছন্দ করত যেহেতু শেখ হত্যার প্রেক্ষাপট রচনায় তাঁর ও তাঁর দলের লোকজনের অবদান ব্যাপক। তবে তাকে নিয়ে আলোচনা কম। কারণ সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে জিয়া তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ছিলেন। তাহের ও তাঁর লোকজনের কপাল খারাপ। এতকিছু করেও ভাগে কিছুই পাননি। জিয়া উড়ে এসে জুড়ে বসে সব নিয়ে নিয়েছিলেন।
৫ই আগস্ট পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ আন্ডারগ্রাউন্ডে। এখনই সম্ভবত সবচেয়ে স্বাধীনমতো রাজনীতি করতে পারছে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্যরা। গ্যাঁড়াকলে শুধু আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও তাদের জোটসঙ্গীরা। জামায়াত বেশ কিছু জায়গায় সাফল্যও দেখাচ্ছে অবশ্য। যেমন তাদের ছাত্রসংগঠন শিবির ডাকসুতে জিতল। জাতীয় রাজনীতিতে কতটুকু ভালো করে সেটাই প্রশ্ন।
ডাকসুতে জেতা মিরাকল ছিল, এখানেই যেহেতু সফল হলো জাতীয় রাজনীতিতে ভালো করার সম্ভাবনা আছে। ৫ই আগস্টের পরপরই বা ৬ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হলে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিজয়ী হতো নিশ্চিত। এখন মনে হয় না সম্ভব হবে। কারণ তাদের ২০০১-২০০৬ সালের ইতিহাস ফিরে ফিরে আসছে নেতাকর্মীদের কাজকর্মে। চাঁদাবাজিসহ এহেন কর্ম নেই তারা করছে না।
জামায়াত কিন্তু জায়গামতো হাত দিয়েছে। তারা প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে নজর দিয়েছে। আদর্শ যাই হোক, তারা কিন্তু নেতা নির্বাচনে সঠিক লোকই বাছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টির মতো পারিবারিক বলয়ে নেই।
সামনে নির্বাচন; বিরাট ফাটাফাটি হবে সে কথা বলাই বাহুল্য। বিএনপির জন্য একটু মায়া লাগছে। কারণ তারা তো এতদিন বড় একটা দলের সাথে লড়াই করেছে। এখন তাদের নেতাকর্মীদের এমন লোকদের সাথে লড়তে হচ্ছে যারা তাদের নেতাদের অনুগ্রহে বাঁচতে হয়েছে। যাদেরকে তাদের নেতা আশ্রয় দিয়েছে, রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে তারাই এখন চোখ রাঙাচ্ছে। পাশাপাশি কচিকাঁচাদের বালখিল্যতাও সহ্য করতে হচ্ছে।
সমস্যা নেই। দুঃসময়ে অপমান গায়ে মাখতে নেই। নির্বাচনে জিততে পারলে সব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যাবে।
ছবি
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



