
সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার উত্তরে পশুর নদীর তীর ঘেঁষে যখন রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নেয়া হলো, লোকজন খুব সমালোচনা করছিল। বিশেষ করে পরিবেশবিদরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিলেন ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কয়লাভিত্তিক এ প্রকল্পটি বন্ধ করার। তারা বলেছিলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তাবিত অবস্থান রামসার কনভেনশনের শর্ত তথা আইন লঙ্ঘন করবে (রামসার কনভেনশন জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ চুক্তি। সুন্দরবন রামসারের আন্তর্জাতিক গুরুত্বের জলাভূমিগুলির তালিকাতে রয়েছে)। শেখ হাসিনা সরকার গোয়ার্তমি করে প্রকল্পটি হাতে নিয়েই ফেলে।
দেশে তো বিদ্যুৎ অবশ্যই দরকার, সেজন্য কি পরিবেশবিদদের কোনো পরামর্শ নিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার? নেয়নি। নিলে এমন জায়গায় প্রকল্পটি নেয়া উচিত ছিল যেখানে সবাই রাজি হতো। সে সময়ের সরকার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ আরো অনেক প্রকল্প পরে খেয়াল-খুশিমতো হাতে নিয়েছিল।
বলা যায়, শত শত প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। কিছু কিছু অহেতুকও ছিল। বাস্তবায়ন হয়েছে আবার হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতিও হয়েছে। তো সরকারের কী করা উচিত ছিল? অবশ্যই জনগণের মনমর্জি বোঝা। সে মতো চলা। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়া। চক্রান্ত হচ্ছে কি না সেসবেরও খোঁজ রাখা। একটার পর একটা প্রকল্প হাতে নিয়ে কি বাঁচা গেছে?
দেশে প্রতিদিন খুন-ধর্ষণসহ এমন কোনো অনাচার নেই হচ্ছে না, তেমন হৈচৈ পাওয়া যায়? আজকের খবর কাল বাসি হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা সমর্থক মনে হয় না একজনও বাইরে আছে। পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু এত এত খুন-ধর্ষণ হচ্ছে, কয়জনকে ধরতে পারছে? এত এত চাঁদাবাজি হচ্ছে, কয়জন চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?
একটা প্রজন্ম আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন দেখে বড় হয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের দুঃশাসন দেখেছে কিন্তু তারা সে সময় দেখেনি যখন একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা হয়েছে, যখন দেশ টানা চারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, যখন ৫ বছরের এক মেয়াদে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎও উৎপাদন করেনি, সারের জন্য মিছিল করতে গেলে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যারা দেখেছে তারা চুপ হয়ে আছে হয় জানের ভয়ে অথবা লাভের গুঁড় খাওয়ার জন্য।
যদিও গত এক বছরের অনেককিছু দেখেছে দেশ। ফেরেশতারা এখন ইবলিশে পরিণত হয়েছে। গুঁড় খাওয়া নিয়ে কোন্দলও চলছে। অনেকে তো বলা শুরু করেছে, আগেই ভালো ছিলাম। এটা কি বলার কথা? আন্দোলনের নামে অনেকে ধান্ধা করতে গিয়ে মরেছে আবার অনেকে তো ভালো কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল।
দল বদলের একটা রাজনীতি সবসসময় চালু ছিল। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ টাকা খেয়ে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে পদ দিয়েছে। পরবর্তীতে দেখা গেল নিজেদের খোলস ছেড়ে তারা বেরিয়ে এসেছে। এখন দেখা যাচ্ছে ভোট বাড়াতে বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। যদিও বোঝা যাচ্ছে না এরা আসল আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নাকি গুপ্ত। আসল যদি হয়ই, তাহলে কি তারা তাদের আদর্শ মুছে ফেলবে? নাকি গুপ্ত থেকে গা বাঁচাবে, পরে সুবিধামতো আসল চেহারা বের করে ফেলবে?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




