
২০১৫ সালের মার্চে ঢাকা থেকে অপহৃত হওয়ার দুই মাস পর ভারতের শিলংয়ের এক গলফ মাঠে পাওয়া গিয়েছিল বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে। তৎকালীন বিরোধীদলীয় মুখপাত্র হিসাবে পরিচিত সালাহউদ্দিন আহমেদের দল বিএনপি ও পরিবারের পক্ষ হতে দাবি করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৫ই আগস্টের পর সুস্থ হয়ে দেশে চলে আসেন তিনি। বর্তমানে দলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৭ সালের জুলাইতে কবি, দার্শনিক, মানবাধিকার কর্মী ও পরিবেশবাদী ফরহাদ মজহার নিখোঁজ হওয়ার পর সারাদেশে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তার পরিবার থেকে বলা হয়, অপহৃত হয়েছেন তিনি। এর ঘণ্টাখানেক পর মুক্তিপণ হিসেবে ৩৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে! এর ১৬ ঘণ্টা পর যশোরের একটি বাস থেকে উদ্ধার করা হয় ফরহাদ মজহারকে। তিনি নিজেই সেই টিকেট কেটেছেন বলে জানান।
২০২০ সালের জুনে ইসলামিক বক্তা আবু ত্বহা আদনান তার গাড়ির চালক ও দুইজন সহকর্মীসহ নিখোঁজ হয়েছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ত্বহা তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাহারকে জানান, তার গাড়ি ঢাকার গাবতলি পৌঁছেছে। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে এক সপ্তাহ তিনিসহ চারজনের আর কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না পরিবার। পরে দেখা গেল আবু ত্বহা আদনানের সঙ্গে অপর যে তিনজন নিখোঁজের কথা বলো হলো, ডিবি পুলিশ গিয়ে তাদের নিজ নিজ বাসায় পায়। ত্বহার সন্ধান পাওয়া যায় শ্বশুরবাড়িতে। প্রথম স্ত্রীর সাথে ঝামেলা হয়েছিল কি না- এ রকম কথা বাজারে চালু ছিল।
পুলিশের মতে ত্বহা নিজেই লুকিয়েছিলেন। যদিও ফিরে আসার পর তাঁকে ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’ দেখাচ্ছিল বলে জানিয়েছিল পরিবার। সম্প্রতি তার কিছু আমলনামা নিয়ে একাধিক ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন তার স্ত্রী সাবিকুন নাহার। বেশ কিছুদিন আলোচনা চলেছে।
২০২২ সালের অক্টোবরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মা রহিমা বেগমকে আত্মগোপনে রেখেছিলেন মরিয়ম মান্নান নামে এক তরুণী। এরপর অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন তিনি। যে রাতে মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম নিখোঁজ হয়েছিলেন, সেদিন বিকেলে মাকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একহাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান। এর ২০-২৫ দিন আগে ঢাকায় গিয়ে মরিয়ম মান্নানের বাড়িতে কয়েক দিন থেকেও এসেছিলেন রহিমা বেগম।
ঐ ঘটনার আগেও রহিমা বেগম বহুবার কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে আবারো ফিরে আসতেন। রহিমা বেগমের এই ঘটনা অনেকেই মনে রেখেছেন, কারণ, মরিয়ম মান্নানের অতিনাটকীয়তা সন্দেহ তৈরি করেছিল, বস্তুত মানুষের আবেগে মূত্র বিসর্জন করে দিয়েছিল।
গত বুধবার (অক্টোবর ২০২৫) সকালে টঙ্গীর বাসা থেকে হাঁটতে বের হয়ে নিখোঁজ হন বিটিসিএল টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব ও পেশ ইমাম মো. মুহিবুল্লাহ মিয়াজী (৬৫)। এ ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়েছে সারাদেশে।
মুহিবুল্লাহ মিয়াজী জানিয়েছিলেন, ১১ মাস ধরে তাকে বেনামি চিঠি দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এসব চিঠিতে তাকে অখণ্ড ভারত ও ইসকনের পক্ষে কথা বলতে বলা হয়। বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক দলগুলো ও বিএনপি-এনসিপির বিরুদ্ধে কথা বলতে বলা হয়। সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবরের চিঠিতে তাকে কোরআন, ইসলাম, আল্লাহ শব্দ বলতে নিষেধ করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
তবে পুলিশ বলছে অপহরণের ঘটনা মিথ্যা, তিনি নিজেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন। আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান জানান, ইমাম মুহিবুল্লাহ অপহরণের পেছনে ইসকন জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছিল। তবে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে তিনি নিজে শ্যামলী পরিবহনের বাসের টিকিট কেটে পঞ্চগড় গেছেন। পরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় চাঞ্চল্যকর এই মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুহিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, আমি হাঁটতে গেছি। হাঁটতে যাওয়ার পর আমার মাথায় এলো যে আমি চলতে থাকি, যাই। কোন দিকে যাই, বলতে পারি না। একপর্যায়ে আমি অটো পাইছি, অটোতে উঠছি, মীরের বাজার নামছি। নামার পরে মনে চাইল যে আমি জয়দেবপুর যাই। সিএনজি দিয়ে জয়দেবপুর গেছি। এরপরে আমার মাথায় আসলো যে আমি এখন এই বাসে উঠি। বাসে উঠে শ্যামলী না কোন জায়গায় যেন নামাইছে। এইখান থেকে আমি আরেকটা বাসে উঠে গাবতলী গেছি। ওইখান থেকে মনে চাইল যে আমি টিকিট করি। কই যাব, খেয়াল হইল যে আমি পঞ্চগড় যাই।
অনেক রাতে পঞ্চগড় নামছি। নামার পরে হাঁটতেছিলাম, কোন দিকে হাঁটতেছি আমি জানি না চিনি না, হাঁটতেছিলাম।
অন্য সময় হলে ঘটনাটা সত্যি বলে প্রচার করা যেত। পুলিশকে দালালও বলা যেত। এখন বলা যাচ্ছে না, কারণ তাদেরও তো জীবনের মায়া আছে। ঘটনাটিকে নাটক বলাতে অনেকে বিশ্বাস করছেন না, বলছেন, জোর করে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে। একজন ইমানদারকে জোর করে কি স্বীকারোক্তি নেয়া সম্ভব?
মানে অবস্থা দাঁড়িয়েছে আপনি যা বলবেন বা বিশ্বাস করবেন সেটাই ঠিক। সত্যতা নিশ্চিত করলেও আপনি বিশ্বাস করবেন না। অন্য ধর্মের বা আপনার রাজনৈতিক বিশ্বাসের বাইরের হলে গুজবও বিশ্বাস করে ফেলবেন? বোঝাই যাচ্ছে, হিন্দুদের ওপর একটা বড় ধরনের আঘাতের পরিকল্পনা ছিল। এখন ফাঁস হয়ে গেছে।
দেশে অনেক গুম-খুন হয়েছে বিভিন্ন সময়ে- এ তো সত্যি কথা। এসব ঘটনাকে নিজেদের মতো সাজিয়ে সত্য-মিথ্যা গল্প বানানো হয়। পরে দেখা যায় আসল ঘটনা ঘটলেও হালে পানি পায় না। যারা আসলেই বিপদে, তাদের ভাগ্যে মানুষের সহানুভূতি জোটে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




