
জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত লাগে, আর কেউ বাড়াবাড়ি করলে তো আরও বিরক্ত হওয়ার কথাই। তার ওপর আবার পড়ালেখার বারোটা বেজে গেছে। পাশের হার বাড়াতে গিয়ে গরু-ছাগলও ডিগ্রিধারী।
নতুন কিছু দরকার, নতুন কাউকে দরকার। বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগকে মোটামুটি গর্তে ফেলতে পেরেছে। নিজেদের ভালো প্রমাণের চেষ্টা করেছে। জেনজিরা তো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামল (২০০১-২০০৬) দেখেনি। তখন যে কী স্বর্ণযুগ ছিল, মোটামুটি ৩০-৩৫ বছর যাদের বয়স তারা কিছুটা জানে। জেনজিরা জানার কথাও না। ওই আওয়ামী লীগ পড়ালেখার যে দশা করেছে, ব্রেন ব্যবহারের তো দরকার নেই।
১৯৭৮-এ জিয়া যখন বিএনপি গঠন করেন, তখন আওয়ামীপন্থিদের বেশিরভাগ তার সাথে যোগ দেয়নি। কিছু উচ্চাভিলাষী এবং ভিন্ন মতাদর্শী লোকজন অবশ্য যোগ দেয়। জাতীয় চার নেতা যদি ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরবর্তীতে খোন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিতেন, তাহলে হয়তো অকালে মরতে হতো না। পরে জিয়ার দলে যোগ দিলে তো আরো সুবিধা পেতেন।
তো জিয়া যখন আওয়ামী লীগের সমর্থন তেমন পেলেন না, আওয়ামীবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী এবং ভিন্ন মতাদর্শের লোকদের নিয়ে দল করলেন। তবে যে পথে এসেছিলেন একসময় সে পথেই চলে যেতে হলো। জিয়ার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির কিছু লোক ভাগিয়ে এরশাদ দল করলেন। তার পতনের পর ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলো। তাদের সাথে স্বাধীনতাবিরোধীরাও যোগ হলো। ২০০১-২০০৬ সালেও তাই। প্রতিপক্ষ কেবল আওয়ামী লীগ।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তীতে ‘দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে গেছে বেঁকে’। এতদিন ওরা খন্ডিত ছিল, এখন স্বাধীন সত্তা। এতদিন জাতি আওয়ামী লীগের কুকীর্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল। এখন বিএনপি ও জামায়াতের লোকজন একজন আরেকজনের পেছনে লেগেছে। আওয়ামী লীগ দর্শক গ্যালারিতে। এমন স্বাধীন রাজনীতি তো তারা আগে পায়নি। যদিও দেড় বছরে জেনজিদের মোহভঙ্গ হয়েছে।
জিয়া সম্ভবত একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা, যাকে স্বাধীনতা বিরোধীরাও পছন্দ করে। কেন করে সে কথা বলার দরকার নেই। পছন্দের তালিকায় এমএ জলিলও আছেন অবশ্য। তাহেরের নাম বলা যেত। কিন্তু জিয়া যেহেতেু তাকে ওপারে যাওয়ার রাস্তা করে দিয়েছেন, তাই তার নাম নিয়ে বিএনপি বিপদে পড়তে চায় না।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দুই দলের (বিএনপি-জামায়াত) ভেতরের অনেক খবর অজানা থেকে যেত। আওয়ামী লীগ বললেও বিশ্বাস করত না। এখন বোঝা যাচ্ছে কে কেমন? স্বার্থের দ্বন্দ্বে গোপন বিষয়ও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। যে জামায়াত বাংলাদেশ চায়নি, তারাই এখন বড় দেশপ্রেমিক। কিন্তু কী আর করা যাবে? আওয়ামী লীগ ব্যর্থ তাই দায়িত্ব তো কাউকে নিতেই হবে। কিন্তু গোলাম আজমকে প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে অপদস্থ করে রাগ মেটানো হচ্ছে।
এখন খুব ইতিহাস চর্চা হচ্ছে। আগে শুনতাম আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা কুক্ষিগত করে ফেলেছে। এখন তো সবাই বুঝতে পারছেন মুক্তিযুদ্ধ আসলে কারা বহন করে। গত ডিসেম্বর আর এই ডিসেম্বর দেখে বোঝা যায় এই মাসে বিজয় লাভ করেছিল বাংলাদেশ?
এই দিনও একদিন পরিবর্তিত হবে, তখন আবার ইতিহাস বদলাবে। কিন্তু মূল যেটা সেটা থাকবেই।
ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



