সবাই যখন খেলা দেখায় মগ্ন , তখন হঠাতই ইচ্ছে হলো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো । ঘুরতে ঘুরতে এই মুহুর্তে আমি যেখানে বসে আছি যায়গাটা মগবাজার আর কাওরান বাজার এর মাঝামাঝি । কিছুটা নিরিবিলি । নিহারিকা এর সাথে হঠাতই রামপুরা বাজারে দেখা । আমি আর নিহারিকা সামনাসামনি বসে আছি । সবাই খেলা দেখায় মগ্ন । নিহারিকা এসেছে আত্বহত্যা করতে , আর আমি এসেছি কারন ছাড়াই । কারন ছাড়া ঘুরাঘুরি কিশোর অপরাধের লক্ষন । আমি অবশ্য কিশোর না । আসলে মানুষিকভাবে কিছুটা এলোমেলো । আমি যতই ঝামেলাবিহিন ভাবে থাকতে চাই, আমার আশে পাশের মানুষগুলো ততটাই আমায় ঝামেলায় টেনে নিয়ে যায় । অথচ আমি কারো ব্যাক্তিগত লাইফ নিয়ে মাথা ঘামাইনা । নিহারিকা আত্বহত্যা করতে এসেছে প্রায় আমার কাছাকাছি কারনে । সেও প্রায় বিপর্যস্ত ।
নিহারিকা আসলে হারিয়ে গিয়েছিলো । যায়নি, আসলে হারিয়ে ফেলেছিলো । ছেলেটাকে সে অনেক ভালবেসেছিলো । বাট যখন ছেলেটা হারিয়ে যায় ,তখন থেকেই হারিয়ে যায় নিহারিকা এর নিজস্ব সত্তা । নিহারিকা বহুবর্নের পুরুষের মাঝে মিশে নিজেকে উজার করে দেয় । খাওয়া ঘুম পড়া শুনা সব বাদ দিয়ে ফেসবুক আর ফোনে বিজি । রিলেশন না , জাস্ট টাইম পাস । তার সময় কাটতো , আর পুরুষেরাও মজা পেতো । একসময় নিহারিকা আবিস্কার করে সবাই জাস্ট টাইম পাস করেছেই , আপন বলতে কেউ ছিলোনা । চারদিকে তাকিয়ে দেখে তার আপন বলতে কেউ নেই । সে একদম একা । সত্যি কেউ নেই , যারা ছিল তারা বেশ ভাল অবস্থায় আছে । নিহারিকা আত্বহত্যা করবে । আমি দেখার জন্য বসে আছি । কি অদ্ভুত , একজন মানুষ আত্বহত্যা করতেছে , আমি তাকে বাধা না দিয়ে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি ।
কি অদ্ভুত আমার লাইফটা । সমস্ত ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে যখন একাকি হতে চাইলাম , কারো কারো বিষয়টা একদম ভাল লাগলো না । আমরা বাঙ্গালী । কারো ভাল দেখতে পারিনা । অথচ আমি চাই সবসময় শান্তির মধ্যে থাকতে । আমি বুঝিনা , একজন মানুষ পারসোনাল লাইফে কি করবে সেটা একান্তই তার ব্যাক্তিগত । সেটা দেখে কারো কারো অন্তর জ্বলন শুরু হয় কেন ? অবশ্য একটা কারন হতে পারে , বালিকার সাথে আমার আজ পর্যন্ত ঝগড়া মনোমালিন্য ভুল বুঝাবুঝি হয়নি । এটা দেখে তাদের জ্বলে ।
মুল কথা থেকে অন্যকথায় চলে যাচ্ছি । নিহারিকা আমায় বললো "এপি , মেয়েরা মায়ের জাতি । মেয়েদের সম্মান করিস । মেয়েদের শুধু সন্তান উৎপাদন আর ভাত রান্নার যন্ত্র হিসেবে না দেখে মেয়েদের মানুষ ভাবিস । " হঠাত নিহারিকা ধাক্কা দিয়ে রেললাইন থেকে দূরে ঠেলে দিলো । কিছু বুঝে উঠার আগেই রক্ত ছিটে গায়ে এসে পড়লো । ট্রেন চলে যাওয়ার পরে আমি তাকিয়ে দেখলাম ছিন্নভীন্ন দেহ ।
মেসেঞ্জারের শব্দে সম্বিত ফিরে পাই । বালিকা লিখেছে "অনেক্ষন হয়েছে । বাসায় ফিরে যাও । বাইরে অনেক ঠান্ডা ।" সাথে রাগের ইমো । আমি হাটা শুরু করলাম । আরো কিছু লেখার ছিলো । রাস্তায় হাটতে হাটতে লেখা সম্ভব নয় ।
...........
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৩২