somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জবা ফুল কিংবা নীলিমার গল্প

১০ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাসপাতালের সর্বশেষ রুমের বেড এর পাশে টেবিলে এক গুচ্ছ জবাফুল রাখা । ফুলগুলো যে মেয়েটার জন্য রাখা তার নাম নীলিমা ।
ছোট্ট দুই কিশোর কিশোরি । ভুল করে ভুল সময়ে জন্ম নিয়ে ভুল করে ভালবেসেছিলো । ভুলটা ভালবাসায় ছিলনা, ছিলো সময়ে । কেউ ভালবাসা মেনে নেয়নি । মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলো । স্বামী সন্তান অল্প দিনেই ব্যস্ত সংসার । তবুও কোথায় যেন টান । প্রথম ভালবাসা কে ভুলতে পারে । সেও পারেনি । কত স্বপ্ন ছিলো, কিন্তু বাবা মায়ের কারনে সব স্বপ্ন বিসর্জন দিলেও ভালবাসাকে বিসর্জন দিতে পারেনি ।
ছেলেটিও একা মেয়েটিও একা । হাজার মানুষের ভীরেও একা । একদিন সকাল বেলা মেয়েটিকে ঝুলতে দেখা গেলো বাইরের বারান্দায় । নিথর নিস্তব্ধ । দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলো । কিন্তু সে যে সব কিছুর উর্ধে চলে গেছে ।
এখন সে প্রানহীন নিথর দেহ । প্রেমিকের স্পর্শ যে দেহে আর শিহরন আনবেনা । অথচ এখনো তার বুকের মধ্যে সেই কিশোরের দেয়া স্বপ্ন। সেই ঘর বাধার স্বপ্ন, সেই আশা সেই ভরসা । মেয়েটির ভাই প্রেম করতো, কই কোন সমস্যা হয়নি । অথচ মেয়েটি প্রেম করায় কতইনা আঘাত সহ্য করতে হয়েছিল ।
ছেলেটি মাথা ঠুকরে কাদছে এখন । চিৎকার করে ডাকছে “নীলিমা ওঠো জাগো দেখো আমি ফিরে এসেছি । তুমিতো গল্প নও। ফিরে আসো । প্লিজ ফিরে আসো । আমি তোমায় নিয়ে এই মিথ্যে কথার প্রেমহীন শহরের অনেক দূরে চলে যাবো । হাসপাতালতো তোমার আশ্রয় না , তুমিতো বলেছিলে সারাজীবন এই বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে । বলেছিলে মরতে হলে একসাথে মরবে । তাহলে আজ কেন একা ? তুমিতো হাজারো মানুষকে বাচার স্বপ্ন দেখিয়েছিলে । ফিরে এসো নীলিমা ।”
বিয়েটা হয়েছিল ভাল ঘর দেখেই । বলা যায় এক প্রকার জোর করেই বিয়ে করেছিলো । কিন্তু কেন যেন ম্যাচ করতে পারতেছিলোনা মেয়েটা । মনের মধ্যে অন্য জনের স্মৃতি নিয়ে সংসার করা হাসিমুখে সময় কাটানো যে কতটা দুঃসহ যন্ত্রনার তা কাউকে বুঝাবার নয় ।কিন্তু কেন যেন কিছুতেই ভুলতে পারছিলোনা । কিন্তু পরিবার তাদের স্ট্যাটাসের ভয়ে তাকে এই জায়গাতেই তুলে দিয়েছিলো ।
ছেলেটি এবার ফুটপাত ধরে হেটে চলেছে । শুন্যে দু হাত ছুড়ে চিৎকার করতেছে । নার্স এসে বেড খালি করে দিয়ে গেছে । জবা ফুলটা এখনো বেড এর পাশে রাখা ।
লাশকাটা ঘরটা খুব অদ্ভুত জায়গা । বাবা মা যে মেয়েটার গায়ে ফুলের টোকা পর্যন্ত লাগতে দেয়নি ,সেই মেয়েটিকে একটু আগে কেটে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে । কতটা সহজেই একটা মানুষের শরীর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করা যায় লাশকাটা ঘরে না এলে বুঝা যায়না । বাইরে বাবা মা চিৎকার করে কাদছে ।
আমার ক্যান জানি এখন আর কান্না পাচ্ছেনা । তবে খুব ইচ্ছে করছে কেউ এসে আমার খোপায় জবা ফুল দিয়ে বলুক,”নীলিমা চলো হারিয়ে যাই দূর পাহাড়ের দেশে” । যখন পেট চিড়ে ফেলছিলো চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো বুকে কিছু করোনা, এই বুকে যে একজনের নাম লেখা । বাবা মায়ের চোখে পানি দেখে কিছুটা হাসিও পাচ্ছে,তাদের জন্যইতো আজ আমার ঠিকানা লাশকাটা ঘরের এই টেবিল । কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে, আর কোনদিন ফিরবোনা সেই মেঠোপথ ধরে । কোনদিন কেউ পাগলী বলে ডাকবেনা । খুব ইচ্ছে হচ্ছে জবা ফুল খোপায় গুজে টি এস সি , শাহবাগ, রমনাইয় ঘুরে বেড়াতে । ঢাকা মেডিকেল থেকে একটু দুরেই চারুকলা,খুব ইচ্ছে হচ্ছে চারুকলার পাশের চুড়ির দোকান থেকে চুড়ি কিনতে ।
হাসপাতালের সর্বশেষ রুমের যে বেড এর পাশে জবাফুল রাখা , সেই বেড এ একটি মেয়ে শুয়েছিলো । সে গতরাতে মারা গেছে । সেই মেয়েটি আমি ।

বিঃদ্রঃ লেখাটি কেউ চুরি করে নিজের নামে কোথাও প্রকাশ করলে তার নাম ছবি সহ স্কৃনশট এই পোষ্টের কমেন্টে এবং ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ গ্রুপে পোষ্ট করা হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:০২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×