হাসপাতালের সর্বশেষ রুমের বেড এর পাশে টেবিলে এক গুচ্ছ জবাফুল রাখা । ফুলগুলো যে মেয়েটার জন্য রাখা তার নাম নীলিমা ।
ছোট্ট দুই কিশোর কিশোরি । ভুল করে ভুল সময়ে জন্ম নিয়ে ভুল করে ভালবেসেছিলো । ভুলটা ভালবাসায় ছিলনা, ছিলো সময়ে । কেউ ভালবাসা মেনে নেয়নি । মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলো । স্বামী সন্তান অল্প দিনেই ব্যস্ত সংসার । তবুও কোথায় যেন টান । প্রথম ভালবাসা কে ভুলতে পারে । সেও পারেনি । কত স্বপ্ন ছিলো, কিন্তু বাবা মায়ের কারনে সব স্বপ্ন বিসর্জন দিলেও ভালবাসাকে বিসর্জন দিতে পারেনি ।
ছেলেটিও একা মেয়েটিও একা । হাজার মানুষের ভীরেও একা । একদিন সকাল বেলা মেয়েটিকে ঝুলতে দেখা গেলো বাইরের বারান্দায় । নিথর নিস্তব্ধ । দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলো । কিন্তু সে যে সব কিছুর উর্ধে চলে গেছে ।
এখন সে প্রানহীন নিথর দেহ । প্রেমিকের স্পর্শ যে দেহে আর শিহরন আনবেনা । অথচ এখনো তার বুকের মধ্যে সেই কিশোরের দেয়া স্বপ্ন। সেই ঘর বাধার স্বপ্ন, সেই আশা সেই ভরসা । মেয়েটির ভাই প্রেম করতো, কই কোন সমস্যা হয়নি । অথচ মেয়েটি প্রেম করায় কতইনা আঘাত সহ্য করতে হয়েছিল ।
ছেলেটি মাথা ঠুকরে কাদছে এখন । চিৎকার করে ডাকছে “নীলিমা ওঠো জাগো দেখো আমি ফিরে এসেছি । তুমিতো গল্প নও। ফিরে আসো । প্লিজ ফিরে আসো । আমি তোমায় নিয়ে এই মিথ্যে কথার প্রেমহীন শহরের অনেক দূরে চলে যাবো । হাসপাতালতো তোমার আশ্রয় না , তুমিতো বলেছিলে সারাজীবন এই বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে । বলেছিলে মরতে হলে একসাথে মরবে । তাহলে আজ কেন একা ? তুমিতো হাজারো মানুষকে বাচার স্বপ্ন দেখিয়েছিলে । ফিরে এসো নীলিমা ।”
বিয়েটা হয়েছিল ভাল ঘর দেখেই । বলা যায় এক প্রকার জোর করেই বিয়ে করেছিলো । কিন্তু কেন যেন ম্যাচ করতে পারতেছিলোনা মেয়েটা । মনের মধ্যে অন্য জনের স্মৃতি নিয়ে সংসার করা হাসিমুখে সময় কাটানো যে কতটা দুঃসহ যন্ত্রনার তা কাউকে বুঝাবার নয় ।কিন্তু কেন যেন কিছুতেই ভুলতে পারছিলোনা । কিন্তু পরিবার তাদের স্ট্যাটাসের ভয়ে তাকে এই জায়গাতেই তুলে দিয়েছিলো ।
ছেলেটি এবার ফুটপাত ধরে হেটে চলেছে । শুন্যে দু হাত ছুড়ে চিৎকার করতেছে । নার্স এসে বেড খালি করে দিয়ে গেছে । জবা ফুলটা এখনো বেড এর পাশে রাখা ।
লাশকাটা ঘরটা খুব অদ্ভুত জায়গা । বাবা মা যে মেয়েটার গায়ে ফুলের টোকা পর্যন্ত লাগতে দেয়নি ,সেই মেয়েটিকে একটু আগে কেটে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে । কতটা সহজেই একটা মানুষের শরীর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করা যায় লাশকাটা ঘরে না এলে বুঝা যায়না । বাইরে বাবা মা চিৎকার করে কাদছে ।
আমার ক্যান জানি এখন আর কান্না পাচ্ছেনা । তবে খুব ইচ্ছে করছে কেউ এসে আমার খোপায় জবা ফুল দিয়ে বলুক,”নীলিমা চলো হারিয়ে যাই দূর পাহাড়ের দেশে” । যখন পেট চিড়ে ফেলছিলো চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো বুকে কিছু করোনা, এই বুকে যে একজনের নাম লেখা । বাবা মায়ের চোখে পানি দেখে কিছুটা হাসিও পাচ্ছে,তাদের জন্যইতো আজ আমার ঠিকানা লাশকাটা ঘরের এই টেবিল । কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে, আর কোনদিন ফিরবোনা সেই মেঠোপথ ধরে । কোনদিন কেউ পাগলী বলে ডাকবেনা । খুব ইচ্ছে হচ্ছে জবা ফুল খোপায় গুজে টি এস সি , শাহবাগ, রমনাইয় ঘুরে বেড়াতে । ঢাকা মেডিকেল থেকে একটু দুরেই চারুকলা,খুব ইচ্ছে হচ্ছে চারুকলার পাশের চুড়ির দোকান থেকে চুড়ি কিনতে ।
হাসপাতালের সর্বশেষ রুমের যে বেড এর পাশে জবাফুল রাখা , সেই বেড এ একটি মেয়ে শুয়েছিলো । সে গতরাতে মারা গেছে । সেই মেয়েটি আমি ।
বিঃদ্রঃ লেখাটি কেউ চুরি করে নিজের নামে কোথাও প্রকাশ করলে তার নাম ছবি সহ স্কৃনশট এই পোষ্টের কমেন্টে এবং ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ গ্রুপে পোষ্ট করা হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:০২