সময়টা ২০০৮ সালের দিকে হবে । আমি তখন কলেজের ছাত্র । কলেজে স্বাধীনতা দিবসে অনুষ্ঠান হলো । আগে থেকেই প্যারোডি গানে আমার কিছুটা সুনাম (!) ছিল । । মঞ্চে বেশ কয়েকটা প্যারোডি গাইলাম । কৌতুক অভিনয় করলাম । দর্শক চরম খুশি আর হাততালি । তখন মঞ্চে আমি একটা কথা বলেছিলাম " আমার গান শুনে সবাই খুশি হয় । সবাই আমারে অনেক পছন্দ করে । কিন্ত প্রেম করতে চাইলে বলে চেহারা খারাপ " যদিও ফান করে কথাটা বলেছিলাম ,কিন্তু এর মধ্যে ছিল এক চরম সত্য । আমি স্কুল কলেজ , হোমিও কলেজ , পিপলস ইউনিভার্সিটি , আর BIST মিলে বেশ কিছু প্যারোডী গান করেছি । কৌতুক অভিনয় করে মানুষের মুখে হাসি দিয়েছি । কিন্তু বিনিময়ে পেয়েছি জোকার উপাধি । অনেকেই আমায় বলে আমার সাথে কথা বললে নাকি মন ভালো হয়ে যায় , আমারে দেখলেই নাকি হাসি পায় । আমি জিজ্ঞেস করি আমার চেহারা কি এতই হাস্যকর । বলে না , আসলে তোর কথা শুনলে হাসি পায় , মন ভালো হয় ।
যারা মানুষকে হাসায় তারি শুধু জানে মানুষ হাসানো কত কষ্টের কাজ । তাদের ভিতরে কতটা কষ্ট শুধু তারাই জানে । কিন্তু তারা সবসময় বলে চলে তাদের কষ্ট নেই । কিন্তু চরম সত্য হলো বুকের পাজর গুড়ো করে মানুষকে হাসাতে হয় । সাধারন মানুষের দুঃখের কথা সবাই শুনে , শুনতে চায় । কিন্তু আমাদের যে দুঃখ আছে মানুষ এটাই বিশ্বাস করতে চায় না । যারা মানুষ হাসায় তাদের অনেক বন্ধু থাকে , ফ্যান থাকে । বন্ধুরা বুক ফুলিয়ে বলে মামা চরম একখান জিনিস তুই । কিন্তু একবারও বুঝতে চায় না , কতটা কষ্ট বুকে চেপে মুখে হাসি দেখিয়ে মানুষকে হাসাতে হয় । অনেক মেয়ে ফ্যান আছে আমাদের যারা আমাদের জন্য পাগল , কিন্তু একবার বলে দেখুন "বিয়ে করবে কিনা " উত্তর পাবেন " গো টু দ্যা হেল" । অথচ এরাই আবার ছুটে আসে মন ভালো করতে । আমার গানের সুরে মুগ্ধ হয়ে পঞ্চমুখি প্রশংসাতে সবাই আত্বহারা হয় , তালিতে তালিতে ভরিয়ে দেয় । কিন্তু যদি বলি বাড়িয়ে দাও হাত ,বলে তুমিতো একটা জোকার ।
পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ অন্য মানুষকে হাসানো। শুধু মাত্র তারাই জানে এটা কতটা কঠিন, যারা মানুষ হাসায়। যদিও এই সমাজ তাদের আলাদা করে রাখে। আপনি যদি লোক হাসান, একসময় দেখবেন সমাজ আপনাকে সিরিয়াস বিষয় থেকে বের করে দিয়েছে। বন্ধুরা বলবে "তুই এসব বুঝবিনা "। পরিবার আপনাকে ডাকবেনা কোন সিদ্ধান্ত নিতে। গার্লফ্রেন্ড হবেনা। হলেও কখনো পাত্তা দিবেনা। আপনার কঠিন সময় গুলো মানুষ ফান হিসেবে নিয়ে মজা করবে। ঠোটের কম্পন,চোখের পানি,বুকের যন্ত্রনা গোপন করে আপনাকে মানুষ হাসাতে হবে। শত কষ্ট বুকে চেপেও আপনি কাউকে শেয়ার করতে পারবেন না। একদিকে আপনার বুকের পাজর গুড়ো হবে,আরেকদিকে আপনি লোক হাসাবেন। এই হাসির আড়ালে যে কত কষ্ট কেউ ভাবার চেষ্টাও করবেনা। বুঝতেই চাইবে না আপনি এই হাসির আড়ালেই চিতকার করে কাদছেন। আপনার যে কষ্ট থাকতে পারে এটা তাদের অকল্পনীয়। আপনাকে পছন্দ করবে কিন্তু ভালবাসা পাবেননা। সমাজের মধ্যে থেকেও তারা আলাদা। অথচ মানুষের সব চেয়ে দরকারি বন্ধু। আমি নিজের জীবন থেকে বলতে পারি , মানুষ হাসানোর মত কঠিন কাজ আর নেই । প্রতিটা সেকেন্ড নিজের কষ্ট বুকে চেপে থাকতে হয় । অথচ , পরিচয় হয় জোকার অথবা কৌতুকম্যান ।
তবে সত্যি বলতে কি , যারা মানুষ হাসায় তারাও মানুষ। তাদেরও একটা সুন্দর মন আছে । তাদেরও ইচ্ছে করে হাত হাত চোখে চোখ রেখে ভালোবাসি বলতে ।
যখন অনুভব তার অনুভুতি হারিয়ে ফেলে তখন মানুষ ভীষন রকম প্রাকৃতিক হয়ে ওঠে । মানুষের মন অনেক অদ্ভুত একটা জিনিস । মন নিজেও মনকে বুঝে না । মাঝে মাঝে নিজেই নিজেকেও কোথায় যেন হারিয়ে ফেলি । পদ্মা নদীর ঢেউয়ের মত মন উঠলে ঊঠে । চেয়ে দেখি মনের ভিতর মনের বিরোধ , কোন এক অজানা কারনে অবিরত রক্ত ঝড়ে । কি যেন চায় নাকি কিছু চায় না বোঝা যায় না । মন আসলেই এক জটিল বিষয় ।
মেঘের দেশের মেয়েরা ঘুরে বেড়ায় মেঘে মেঘে । কি সুন্দর । কিন্তু শুধু দূর থেকেই দেখা যায় । কাছে যাওয়া যায়না , ধরা যায়না , ছোয়া যায় না । শুধু রাত জেগে কবিতা লেখা ।সে শুধু উড়েই বেড়ায় মেঘ থেকে মেঘে । মাঝে মাঝে ভিজিয়ে দিয়ে যায় । আমি ভাবি মেঘেরা বুঝি আমায় ভালবাসে , কিন্তু বুঝিনা দিন শেষে আমরা সবাই একা । তবুও মাঝে মাঝে একলা না থাকার অভিনয় করে যাই । আর মেঘের দেশের রাজকন্যারা দেখা দিয়ে হারিয়ে যায় ।
অচেনা পথিক কোন অভিমানে তুই থেমে যেতে চাস ? অনির্বান শিখা হয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কি সুখ নিজেকে ভষ্ম করায় ?
অভিমান খুব খারাপ জিনিস। আর নীরব অভিমান আরো খারাপ। একটা মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়,অথচ তার পাশের মানুষটাও জানতে পারেনা। এক সময় হঠাত করেই সে হারিয়ে যায়। তখন মানুষেরা জানে, কতটা অভিমান আর কতটা চাপা কষ্ট পেয়ে ছেলেটি হারিয়ে গেলো। কিছু অভিমান লেখা থাকে হলুদ ডায়রীর পাতায়। চুপি চুপি রোজ রোজ লিখে, আবার ছিড়েও ফেলে। পুড়িয়ে ছাই করে দেয় জমানো কষ্ট আর না পাওয়ার বেদনাগুলো। কাগজের পাতা গুলো যখন একটু একটু করে পুড়ে, তখন যে কি ভয়াবহ যন্ত্রনা হয় ছেলেটির বুকে শুধু সেই জানে।
এরপর?
এরপর একদিন হারিয়ে গেলো অদ্ভুত ছেলেটি।
আর কোনদিন ফিরে এলোনা।
বেইলি রোড,রমনা, টি এস সি, চারুকলা কোথাও না।
ভাল থেকো.....
বিঃদ্রঃ এই লেখাটি নিত্বান্তই অলস মস্তিস্কের উর্বর কল্পনা মাত্র । লেখক দূরে থাক বাস্তবের কারো সাথে কোনরকম মিলে গেলে তা কাকতালমাত্র ।
বিঃদ্রঃ এই লেখাটি কেউ চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করলে তার নাম ছবিসহ চোর ক্যাপশন দিয়ে বিভিন্ন ব্লগ ও ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:০০