
আরও একবার এল এবং ঝড়ের গতিতে চলে গেল আমাদের তথাকথিত বিজয় দিবস। আরও একবার আমরা পড়লাম দেশপ্রেমের সাগরে। যতটা না পড়েছি, তার চাইতে বেশি দেখিয়ে দিলাম মানুষকে।
এই দেশ কি সত্যিই স্বাধীন হয়েছে? তা তো নয়! এখনও তো পরাধীনই রয়ে গেছে! কিভাবে?
পুরানো কথাগুলিই আবারও বলতে কিংবা শুনতে কারোরই ভালো লাগবে না। এইটা জানা কথা। তবুও বলছি..... দুঃখিত সেজন্য। এই প্রসঙ্গটির অবতারণা আমি করতে চাইনি, তবুও হয়ে গেল।
১৬ ডিসেম্বর রাত ১২টার কিছু সময় পরের ঘটনা। আমাদের বাসা থেকে একটু সামনেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস(ছেলেদেরটা। মেয়েদেরটা মেডিকেল কলেজের এরিয়ার ভিতরেই। ছেলেদেরটা মেডিকেল কলেজ থেকে মোটামুটি দূরে)। তো সেখানকার মাঠে মেডিকেল কলেজের কিছু ছাত্র যথারীতি কয়েকটি গান বাজাচ্ছিল। কয়েকটি গান বাজানো হলো। সেগুলোও রিপিট করা হচ্ছিল। তো, দেশাত্ববোধক গানগুলির মাঝে একটি কিংবা কয়েকটি গান অনেকেরই প্রিয় থাকে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমার প্রিয় গানটি হল, "মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি"। তবে সেটা শুধুই আপেল মাহমুদ গাইলে। অন্য কেঊ গাইলে তখন এই গানটিই আমার কাছে তেমন লাগে না। কারণ, আপেল মাহমুদের গাওয়া গানটার মত আর কেউ কখনও গাইতে পারে না। গানটার সবকিছুই তার প্রমাণ।
১৬ ডিসেম্বর রাতে আমি তখনও এই ব্লগেই ঘোরাফেরা করছিলাম। কার একটা পোষ্টে যেন কমেন্টও করছিলাম। গানটি শুনতে শুনতে কিপ্যাডের ওপর নিজের অজান্তেই চোখের পানি পড়লো কয়েকফোঁটা। সাথে সাথে আমার খুব হাসিও পেল। এই আমি!!! অজায়গায় আমার দেশপ্রেম!!! কেন!?! যাঁদের বদৌলতে আমি আজ এই দেশটাকে নিজের মনে করে(!) ঘুরে বেড়াই, তাঁরা লাঞ্চিত!(সামুর লাঞ্চের লাঞ্চণা নয় কিন্তু)। আর আমরা? নাকে তেল দিয়ে নির্দ্দিধায় ঘুমাচ্ছি খাচ্ছি-দাচ্ছি। রাজাকার-আল বদরের গোষ্ঠি এখনও দেশের ভেতর মাথা উঁচিয়ে ঘুরে বেড়ায়! "ধন-ধান্য পুষ্পে ভরা" গানটির মাঝে একটি কথা আছে না?? "এমন দেশটি কোথাও তুমি, পাবে নাকো খুঁজে"? কথাটি চরম সত্য! এমন বিচিত্র দেশ এই পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। এই দেশের শত্রুরাই সর্বোচ্চ মর্যাদা পায়। দেশের শত্রুরাই পারে মন্ত্রীসভায় স্থান পেতে। দেশের শত্রুদেরই সবচাইতে বেশি মূল্য। সময়ে-সময়ে সকল রাজনৈতিক দল হাত বাড়ায় ওদেরই দিকে। না না!! ওদের গলা টিপে ধরতে নয়! ওদের হাত-পা চাটতে। ওদের মাথায় তুলে নাচতে! এই দেশে সবাই দেখে ক্ষমতার ক্ষমতা। ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি! আরেহ...... দেশের প্রধান! এর উপরে আর কিছু আছে নাকি!??? হায়... মাঝেমাঝে দেশ কোথায় গেল বলে রব ওঠে। আরে! দেশ রসাতলে গেলে তোদের কি? তোরা তো এখন শুধুই ক্ষমতা পাগল। যে কাজ করতে গেলে তোদের হাত কাঁপার কথা, সেটা করতে গেলে তোদের কিছুই হয় না। হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাগজে স্বাক্ষর করতে। কারণ ওরা যে তোদেরই বন্ধু! ওরে ছাগলের দল! দেশ কাকে বলে, জানিস তোরা? স্বাধীনতাকে তোরা ভাবিস, প্রাত্যহিক বৈকালিক জলযোগের মত। যেটা কোন ব্যাপারই নয়। তাই না? ধরেছিস ঠিকমতো একবারও হাতে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের হাল? তা করবি কেন! তোরা তো মুগ্ধ হয়েছিস রাজাকারদের দেশপ্রেম(!) দেখে! তাই তো ওদেরকে নিজেদের অংশ করে নিতে পেরেছিস! তোদের বাপ-মা দেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছেন, তোদের নিজেদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার জন্য নয়। তোদের চাইতে দেশ বড় ছিল তাঁদের কাছে। উনারা যদি জানতেন, তোরা দেশটিকে এইভাবে কুরে কুরে খাবি কুকুরের সাথে হাত-পা-মুখ মিলিয়ে, তাহলে শুরুতে উনারা তোদেরই গলা টিপে মারতেন। দুঃখের বিষয়, উনারা তোদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। আজও তাঁদের মাঝের বেশিরভাগই রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ান। উনারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন! এখনও আছেন। নিজের জীবনে সৎভাবে বেঁচে থাকার জন্য উনারা আজও যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। রাস্তাঘাটে উনারা এখনও কাজ করে খাচ্ছেন, তবুও তোদের মত ভিক্ষে করে নয়। কারণ, উনারা মুক্তিযোদ্ধা। উনাদেরই আজকের ক্ষতবিক্ষত হাতের উপরেই ভর করে এসেছে এ দেশের স্বাধীনতা। অথচ উনাদের পদসেবা না হোক, অন্ততঃ নিরাপদ বাসস্থান প্রদান করার দায়িত্ব ছিল তোদের। তোরা কি করেছিস তার বদলে? উনাদের বাসস্থানের জায়গায় তোরা করেছিস নিজেদের আড্ডাখানা।
উনারা তোদের মত নির্লজ্জ নন। তাহলে এই স্বাধীনতার নাম করে তোরা সব বেচে খেতে পারতি না। তবে কি, জানিস তোরা? উনারাও বাবা-মা। সন্তানের প্রতি ভালোবাসা উনাদেরই বেশি থাকবে। তবে যে সন্তান নয় কুঃসন্তান, তার কোন স্থান হয় না এই পৃথিবীতে। তোদেরও সেইদিন আসছে। আজ তোরা তোদের বাপ-মা'র রক্ত ঝরিয়েছে যারা, সেই কুকুর-হায়েনাদের সাথে একসাথে উঠাবসা করিস। তাতে এই দেশের কিছু হয়নি। এটা দেশ, আমাদেরই মাতৃভূমি। তবে দুঃখের ব্যাপার কি, জানিস? তোরা যে ক্ষমতাকে সর্বোচ্চ জ্ঞান করছিস, এটা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে। এটাই সব নয়। এমন দিন আসছে, যেদিন দেশের পরবর্তী প্রজন্ম তোদেরকে নরকে পাঠাবে। এই দেশে তোদের বিন্দুমাত্র স্থান হবে না। তোদের স্থান হবে তোরা যাদের পা-চাটা কুকুর, তাদের সাথে।
তোরা যদি ক্ষমতাই হাতে রাখতে চাস, তবে কিন্তু তোরা এটা আরও ভালোভাবে করতে পারতি!
বুঝে দেখ তাহলে। এই ছোট শিশু তো শুধুই দেখেছে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি হয়নি। বাইরের জগতে আরও কি কি ঘটে চলেছে, তোরা কিভাবে যুদ্ধাপরাধীদের পা চেটেই চলেছিস, সেটা তো আর দেখেনি! দেখলে হয়তো এরাই হাতে বন্দুক নিয়ে বেরিয়ে পড়বে, তোদের সবাইকে হত্যা করতে। সেটাই হোক, এটাই চাই!
আমরা ভীরু-কাপুরুষরা তো কিছুই করতে পারলাম না! উপরে উপরে দেশপ্রেম দেখাতে পারি শুধু! চায়ের কাপে ঝড় তুলে দেশ নিয়ে উপচে পড়া প্রেম প্রকাশ করতে পারি শুধু। সময়ে সময়ে আমরাও তো তোদের পা চাটি! তথা তোদেরকেই তো ভোট প্রদান করে নির্বাচিত করি নির্বাচনের সময়! হায় জনগণ!! তোমরা সবাই যদি আর একটি বার এক হতে পারতে! তবে আরেকটি স্বাধীনতা যুদ্ধ আমরা পেতাম! ১৯৭১ পরবর্তী আফসোস আমাদের মনে থাকত না। কিন্তু তা তো হবে না। আমরা যে ভীরু-কাপুরুষ। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের যাতে এমনটা না হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব তো আমাদেরই!
আমার দেশপ্রেম, হিসেবমতে এটাই হল আমার পোষ্টের শিরোনাম। কিন্তু এক কথা থেকে অন্য কথায়ই সরে এসেছি প্রায়।
সর্বোপরি, আমার কথা হল, আমি আজ দেশপ্রেম দেখাচ্ছি। কিন্তু যাদের জন্য আজ এই দেশপ্রেম দেখাতে পারছি, তাঁদেরই কোন স্বীকৃতি নেই এই দেশে। উল্টো রাজাকারগুলো সব স্থানে বিচরণ করে বেড়ায়। রাজাকারগুলোরই দাম বেশি।
মাঝেমাঝে ভাবি, এটাই কি আমার মাতৃভূমি! তাহলে কেন এই অবিচার?!
কষ্ট লুকানোর কোন স্থান নেই। মনের কষ্ট মনেই থাকুক না হয়?
অঃপ্রাসঙ্গিক প্রলাপ হয়ে গেলো বোধহয়? দুঃখিত সেজন্য।
ভালো থাকুন সবাই। কারও মনে আঘাত দেওয়ার জন্য এই পোষ্টটি লিখিনি। কেউ আঘাত পেলে দায়িত্ব আপনার।
বিঃদ্রঃ আমার পরিচয় সম্পর্কে কারও সন্দেহ হলে আগেই বলে রাখি, আমি এই ব্লগের এককালের "নির্ভয় নির্ঝর"। আমার ওই নিকটির পরিণতি বোধহয় প্রায় সবাই জানেন। এটি আমার নতুন নিক।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





