আগামী ১৯/১২/০৯ তারিখে আসছে মুসলিমদের অতি স্মৃতিবিজড়িত সেই পবিত্র আশুরা তথা হিজরী নববর্ষ। তাই সকলের প্রতি রইল আমার হিজরী নববর্ষের শুভেচ্ছা।
আজ অতি প্রয়োজন, সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে থাকা ভুল ধারণার অপনোদন করে সঠিক ইতিহাস মানুষের কাছে তুলে ধরা। অনেকে মনে করেন, ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও ইয়াজিদের মধ্যে ক্ষমতা দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতা দখলের জন্য ইমাম হোসাইন (রাঃ) প্রাণ বিসর্জন দেননি। তিনি মুসলিম খিলাফতের বিকৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। আজ আমাদেরকে সেই চেতনা মানুষের মাঝে জাগ্রত করতে হবে। আজ মহররম এলে বের হয় ত্যাজিয়া মিছিল, চলে রঙের হোলি খেলা, লোক দেখানো মাতম। এ যেন শোক পালনের নামে এক ব্যতিক্রমী আনন্দোৎসবের আয়োজন। কিন্তু দেশে দেশে ইয়াজিদের বর্তমান বংশধরেরা আজও হোসাইন হত্যার যে তান্ডব চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে এসব মিছিলকারী আর মাতমকারীরা নীরব, শুধু নীরবই নয়, আশ্চর্যজনকভাবে নিশ্চুপ। নিকট অতীতের বসনিয়া, চেচনিয়া, আজারবাইজান,বর্তমানে আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, ইরাক, কাশ্মীর, সোমালিয়ায় চলছে কারবালার তান্ডব। মানবতা আজ নিষ্ঠুরতার হাতে বন্দী। বিচারের বাণী কাঁদে নিভৃতে। আজ প্রয়োজন ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর মত ঈমানের তেজে বলীয়ান হয়ে সর্বাত্মক প্রতিরোধে ঝাঁপিয়ে পড়া। কিন্তু প্রতি বছর আশুরা আসে, আশুরা যায়; আমাদের চেতনা ফিরে আসেনা। নিছক কিছু আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আমরা আমাদের দায়িত্ব শেষ করতে চাই। অথচ আল্লাহ্ বলেন, "তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা (অর্থাৎ শিরক, কুফর, জুলুম, দাঙ্গা-বিশৃংখলা, গৃহযুদ্ধ ইত্যাদি) দূরীভুত হয় এবং দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় কেবল আল্লাহরই জন্য।" (আনফাল-৩৯)। আর জিহাদের সেই সর্বাত্মক চেতনা যতদিন মুসলিমদের মনে জাগ্রত না হবে ততদিন এই জাতির ভাগ্যোন্নয়নের কোন সম্ভাবনা নেই একথা বলতে আজ আর কোন গবেষণার প্রয়োজন হয় না। স্থুল দৃষ্টিতে কারবালার ময়দানে ইয়াজিদের জয় হলেও প্রকৃত বিজয় হযরত ইমান হোসাইন (রাঃ) ও তাঁর আদর্শেরই হয়েছিল, আর পরাজয় ঘটেছিল ইয়াজিদ ও তার দোসরদের। কারণ, ইমাম হোসাইন (রাঃ) জীবন দিয়েছেন কিন্তু বাতিলের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। তাই কোন কবি বাস্তবিকই বলেছেন, "বৃক্ষের জন্য যেমন পানি প্রয়োজন, জাতির জীবনে রক্ত তেমনি সঞ্জীবনী সুধা বিশেষ।" ইতিহাস সাক্ষী, যে মাটিতে ঈমানদারদের রক্ত ঝরেছে সে মাটিতেই ইসলামের বিজয় ত্বরান্বিত হয়েছে। হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও তাঁর সাথীরা মুসলিম উম্মাহর জন্য বুকের তাজা খুন ঢেলে দিয়ে গেছেন, সে রক্তের সঞ্জীবনী ধারা আজ কোটি কোটি মুসলিমের শিরায়-উপশিরায় প্রবাহমান। আজও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কারবালার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইমাম হোসাইনের (রাঃ) অগণিত উত্তরসূরী, মর্দে মুমিনরা আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছেন। আমরাও কারবালার সেই শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাব, এবারের আশুরায় এটাই হোক আমাদের প্রতীজ্ঞা। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




