মুসলমানগণ দীর্ঘকালব্যাপী ইসলামী খেলাফত তথা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত থাকায় এবং কুরআনের সাথে যে ধরণের সম্পর্ক থাকা উচিত ছিল, তা না থাকায় ইসলামের প্রকৃত রূপ ও পরিচয় সম্পর্কে তারা বিস্মৃতির অতল গভীরে তলিয়ে গেছে। শত শত বছরের অবনতি ও পতোন্মুখ এ জাতির এক বিরাট অংশ আজ ইসলামকে আনুষ্ঠানিক ইবাদাত ও ব্যক্তিগতভাবে কিছু তাসবীহ-তাহলীল সর্বস্ব চার দেয়ালে আবদ্ধ করেছে। তাদের মনে আজ এ ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনা করা কোন ঈমানদার ব্যক্তির কাজ নয় বরং এগুলো সমাজের ভন্ড-বদমায়েশ, অসচ্চরিত্রের লোকেরা পরিচালনা করবে। কিন্তু কুরআন যারা অভিনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করেন এবং রাসূল (সাঃ) এর জীবনের প্রতিটি কাজের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের প্রতি গভীর ও নিবিড় দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, তারা কখনো ইসলামের মধ্যে এ ধরণের বিভক্তির রেখা টানতে পারেন না। যে কোন মুসলামনের জন্য ইসলামকে আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক ইসলাম নামে ভাগ করা এক ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ হবে। নবী করিম (সাঃ) কে বিচ্ছিন্নভাবে শুধুমাত্র একজন আধ্যাত্মিক নবী অথবা শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলা তাঁর প্রতি মহা অন্যায় করা হবে। বরং ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা এবং রাসূল (সাঃ) একজন পূর্ণাঙ্গ মহামানব। ইসলাম পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যেখানে আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক উভয়ের সফল সম্মিলন ঘটেছে। আর শেষ নবী, মানবতার অকৃত্রিম বন্ধু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পৃথিবীর এমন এক মহান ব্যক্তিত্বের নাম যাঁর জীবনে মহাসম্মিলন ঘটেছিল বহুমূখী প্রতিভার। তিনি একাধারে সুমহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, আদর্শ শিক্ষক, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ী। রাসূল (সাঃ) আল-কুরআনের একজিন বিশেষজ্ঞ, যাকে "জীবন্ত কুরআন" নামে অভিহিত করা হয়, তাই কুরআনের আলোকে একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ পক্ষান্তরে এ আল-কুরআনের বদৌলতেই তিনি একজন আধ্যাত্মিক মহাপুরুষও বটে।
এ ধরণের ব্যক্তিত্ব মানব ইতিহাসে অদ্যাবধি পরিলক্ষিত হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। বৈচিত্র আর বর্ণাঢ্য এ জীবন ছিল একাধারে রাতের আঁধারে মহান প্রভুর দরবারের এক দীনহীন ভিক্ষুক, দিনের আলোতে একজন প্রভাবশালী মহান ও সফল রাষ্ট্রনায়ক, যুদ্ধের ময়দানে মহানবী (সাঃ) সেনাধ্যক্ষ আবার মসজিদে নববীর একজন ইমাম। সুতরাং রাসূল (সাঃ) কে বিশেষ কোন প্রান্তের জন্য বিশেষায়িত করা, ইসলামকে বিশেষ কোন স্থান কাল ও পাত্রের জন্য আবদ্ধ ও সীমাবদ্ধ করা মারাত্মক ভুল হবে। বরং ইসলামকে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা এবং রাসূল (সাঃ) কে একটি জীবন একটি আদর্শ হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে। রাসূল (সাঃ) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্যের অনন্য নজির স্থাপন করে গেছেন।
কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় "আধ্যাত্মিক, তাকওয়া-মুত্তাকী ও তাযকিয়াতুন্নাফস" শব্দুগুলোর পরিচয় এবং এগুলোর ব্যবহার নিয়ে অতিরঞ্জিত ও বাড়াবাড়ি হয়। সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতিকে আল্লাহদ্রোহীদের কর্তৃত্বে ছেড়ে দিয়ে নিজে আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দর্শন লাভের জন্য বিভিন্ন কসরত শুরু করেন। আধ্যাত্মিকতা হলো মূলত আত্মার পরিশুদ্ধি। যিনি এ আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে আধ্যাত্মিকতা হাসিল করেছেন তিনি অবশ্যই এমন ব্যক্তি হবেন যিনি সর্বাবস্থায় আল্লাহ ও মানুষের অধিকারকে আল্লাহরই ভয়ে সংরক্ষণ করবেন। যার হৃদয় বিশ্ব মানবতার দুরবস্থা দেখে কেঁদে উঠে এবং এ দুরবস্থা থেকে মানবতাকে মুক্তি দানের চিন্তা-চেতনা তার অন্তরকে অস্থির করে তুলবে। মূলতঃ এটিই তাকওয়া। তাকওয়া বা আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য সর্বপ্রথম আল-কুরআন ও আল-হাদীসের জ্ঞানে নিজেকে সমৃদ্ধশালী করতে হবে। অন্যথায় সেটা হবে শয়তানের পথে আত্মশুদ্ধি।
তাই আসুন আমরা সবাই বিভ্রান্তিমূলক কথায় কর্ণপাত না করে আল-কুরআন ও আল-হাদীসের আলোকে জীবন পরিচালনা করে ইহকাল ও পরকালের শান্তি প্রাপ্তির আশায় সমন্বিত জীবন ব্যবস্থা ইসলামের অনুসরণ করি। আল্লাহ পাক আমাদেরকে সে তাওফীক দান করুন। আমিন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




