somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহর নিকট নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ

১০ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহামহিম আল্লাহর সর্বোৎকৃষ্ট ও সুন্দর সৃষ্টি মানুষ। তিনি অনন্য বৈশিষ্ট ভূষিত করেছেন এই মানুষকে। দিয়েছেন বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগের ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তি। মানুষের বিভিন্ন জাতিসত্তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা অনুগ্রহপ্রাপ্ত জাতিটি হচ্ছে আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্মের অনুসারী মুসলিম জাতি। মুসলিম জাতি আশীর্বাদপ্রাপ্ত। এই জন্যে যে, তাদের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহ প্রদত্ত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নিয়ামত আল-কুরআন। আল্লাহর অভিপ্রায় হল যে, প্রতিটি মুসলমান আল-কুরআনের পথনির্দেশ মেনে চলবে, আন্তরিকভাবে শুধু তাঁরই ইবাদত করবে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর নিকট নিরংকুশ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে, বিচার-বুদ্ধি ও ইচ্ছাশক্তির অভূতপূর্ব সমন্বয়ে নিজ ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করবে, পাশাপাশি নিত্যনতুন কল্যাণময় সৃজনশীলতা দিয়ে সমাজ-সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করবে। আল্লাহর আরো অভিপ্রায় এই যে, তার যোগ্য খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মানুষ সমাজের সর্বক্ষেত্রে 'আদল' বা ন্যায়বিচার ভিত্তিক সুশাসন কায়েমে সচেষ্ট থাকবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে সুষ্পষ্ট তাগিদ হলোঃ "আকাশ মন্ডলকে তিনি উচ্চ-উন্নত করেছেন এবং মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইহার ঐকান্তিক দাবি এই যে, তোমরা মানদণ্ডে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে না।" (সুরা আর রহমান, আয়াত ৭ ও ৮)

বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উৎকর্ষের যুগ। অথচ মানুষ বৈষয়িক লোভ-লালসায় আকীর্ণ হয়ে সার্বজনীন ত্যাগের মহিমার পরিবর্তে পার্থিব সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন এবং ভোগ-বিলাসিতার দৌরাত্মে মেতে ওঠেছে। অপরের হক বা অধিকার হরণ কিংবা সমাজ-সভ্যতার প্রভূত ক্ষতি, কোন কিছুই আমলে না নিয়ে যেকোন উপায়েই অর্থবিত্ত অর্জনের ইঁদুর-দৌড়ে লিপ্ত রয়েছে। প্রাচুর্য অর্জনে অন্ধ ও মোহাচ্ছন্ন মানুষ।

সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ঘুষ-দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার আজ চরমে ওঠেছে। দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত লোকজন সমাজে যোগ্য ও কার্যকর লোক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আর সৎ ও ধার্মিক লোকেরা অকার্যকর বনে যাচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এ সমাজে মানুষ হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার বিষয়টি যেন তিরোহিত হতে বসেছে। ক্রয় ক্ষমতা এবং ভোগ-বিলাসিতার মাত্রা যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষকে মূল্যায়নের মানদণ্ড। ঘুষ-দুর্নীতি ও অন্যায় পথে যারা সম্পদের পাহাড় গড়ছেন, তারাই সমাজে অধিক মর্যাদা ও সুবিধা ভোগ করছেন। সমাজের কলকাঠিও নাড়াচ্ছেন তারাই। পক্ষান্তরে সততার ধারক-বাহক মানুষগুলো এই সমাজে নিদারুণভাবে উপেতি হচ্ছেন। তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় আজ তারা সততার কোন উপযোগিতাই খুঁজে পাচ্ছেন না। এটা আরো দুর্ভাগ্যজনক যে, অনেক উচ্চ শিক্ষিত লোকও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ অর্জনকে নিজেদের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে দ্বিধা/ কুণ্ঠাবোধ করছেন না। অথচ তাদের মেধা, শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান এসব কিছুই আল্লাহর নিয়ামত। এই সব নিয়ামত মানবতার কল্যাণে ব্যবহারের বিষয়টি তারা সম্পুর্ণরূপেই বিস্মৃত হচ্ছেন। অথচ এই বিষয়ে আল্লাহর সুষ্পষ্ট হুঁশিয়ারি: "ইহার পর অবশ্যই সেইদিন তোমাদিগকে নিয়ামত সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হইবে।" (সুরা তাকাছুর, আয়াত-৮)

আল্লাহ ব্যবসায়কে হালাল করেছেন। আল-কুরআন নির্দেশিত ব্যবসায়ীর দেখা মিলছে না আজকাল। ওজনে কম দেওয়া, ভেজাল দ্রব্য তৈরী ও সরবরাহ এবং মুনাফালোভী মানসিকতায় নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট তৈরী করে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী করা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থনীতি ব্যক্তিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ব্যক্তির লাগামহীন সম্পদ অর্জনের অভিযাত্রাকে বৈধতা দিয়েছে। ব্যক্তির ঐ কর্মকাণ্ডে সমাজ-সভ্যতার কতটা মঙ্গল/ অমঙ্গল সাধিত হচ্ছে, তা মূল্যায়িত হচ্ছে না।

এভাবে সমাজের অধিকাংশ সম্পদের অধিকারী হচ্ছেন মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ। তাদের মধ্যে বাড়ছে ভোগ করার তথা সম্পদ অপচয়ের নগ্ন প্রতিযোগিতা। অন্যদিকে লাখ লাখ মানুষ জীবন ধারণের ন্যূনতম অধিকার তথা সম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুর্নীতি ও অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন বন্ধের পার্থিব কৌশল/কর্মপন্থা অবৈধ টাকার স্রোতের প্রবল তোড়ে ভেসে যাচ্ছে। সমাজ ও সভ্যতা মানবিকতাহীন হয়ে পড়ছে। বাড়ছে ধনী ও গরীবের বৈষম্য। ফলে সমাজ হয়ে পড়ছে অস্থিতিশীল। এহেন পরিস্থিতিতে মুসলমানদেরও নৈতিক চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের দুর্ভাগ্যজনক অধঃপতন ঘটেছে; আল্লাহর খলিফা তথা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের নৈতিক যোগ্যতাটুকও তারা হারিয়ে ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে মুসলমানদের করণীয় কি? কীভাবেই বা হতে পারে মানুষের তথা মানবতার সার্বজনীন কল্যাণ? পথ ও কর্মপন্থা একটাই। তাহল মুসলমানদেরকে আজ আল-কুরআনের রহমত ও বরকতময় পথে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। মূল লক্ষ্য হবে মহান স্রষ্টার পরম সন্তুষ্টি অর্জন। আর এটা অনস্বীকার্য যে, তাক্ওয়া তথা আল্লাহভীরুতা ও আল্লাহর নিকট নিরংকুশ জবাবদিহিতাই এই সন্তুষ্টি অর্জনের একমাত্র পথ। আল্লাহর নিকট পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ মানুষের মধ্যে এই আল্লাহভীরুতা বা তাক্ওয়ার সৃষ্টি করে।

আল্লাহভীতি তথা আল্লাহর নিকট নিরংকুশ জবাবদিহিতা একজন মুসলমানের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বিস্তৃত করে। মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে মানুষকে সমাজ ও সভ্যতার সার্বজনীন কল্যাণ সাধনের বিশাল কর্মযজ্ঞে নিজ ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে যুক্ত করে নিতে হয়। আর তাহলেই অর্জিত হয় কর্মের সার্বজনীনতা। আর তাহলেই সংকীর্ণ পরিধি ছাড়িয়ে একজন মুসলমানের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ধারণ করে মহাসমুদ্রের বিশালতা। আর এভাবেই একজন মুসলমানের মধ্যে সঞ্চারিত হতে পারে বৈষয়িক লোভ-লালসা ও সম্পদ অর্জনের মোহকে উপেক্ষা করে কল্যাণময় আগামীর দিকে ছুটে চলার প্রেরণা।

কাজেই, আল্লাহর নিকট প্রতিটি মুসলমানের পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ ও নিরংকুশ জবাবদিহিতাই হচ্ছে আল-কুরআনের মর্মবাণী। একজন মুসলমানের সকল চিন্তা-চেতনা ও কর্মের চূড়ান্ত লক্ষ্য সেটাই। তাই আসুন মহান আল্লাহর নিকট পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ ও নিরংকুশ জবাবদিহিতার অনুভূতি নিয়ে লক্ষ্য পানে এগিয়ে যাই। আমিন।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×