বর্তমান ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ অশান্ত সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ইসলামের কোন বিকল্প নেই। কেননা ইসলামই মানুষের জীবনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে, যিনি সারা জাহানের সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, মৃত্যুর পর বিচারকর্তা। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞ, নিদ্রা বা তন্দ্রা তাকে স্পর্শ করতে পারে না। এগুলো কোন কথার কথা নয় বরং এর ওপর আমাদের অকৃত্রিম বিশ্বাস স্থাপন আমাদের ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ। সমাজের প্রতিটি মানুষ যতদিন পর্যন্ত সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট তাদের যাবতীয় কর্মকান্ডের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করবে ততদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র সরকারের পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য প্রশাসনিক যন্ত্রের ভয়ে সেই জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে না। কেননা তাদেরকে ফাঁকি দেয়া যায় কিন্তু সদাজাগ্রত, সর্বজ্ঞ, সর্বদ্রষ্টা, মহাশক্তিশালী আল্লাহকে ফাঁকি দেয়া যায় না। তবে হ্যাঁ এক্ষেত্রে কর্ম সম্পাদনকালে আল্লাহর ভয় স্মরণে রেখে এর সহায়ক হিসাবে সরকারের সকল প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এদিক থেকে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ইসলামী ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই।
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হচ্ছে সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগানো। মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে যদি তাদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগানো না যায় তবে তাদের মধ্যে কোনদিন ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। তাই ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জাহেলী যুগে যখন সমাজে অশান্তি আর বিশৃঙ্খলা চরমসীমায় পৌঁছেছিল তখন মহান আল্লাহ পৃথিবীর সকল মানুষকে ডেকে বলেছিলেন, "আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামত স্মরণ কর। যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করে দিলেন। অতঃপর তার অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেলে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা হিদায়াত প্রাপ্ত হও।" (আল ইমরান-১০৩)
এই আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালার রজ্জু বলতে কুরআন সুন্নাহ তথা আল্লাহর 'দ্বীন' বা জীবন বিধান 'ইসলাম'কে বুঝানো হয়েছে এবং সেই ইসলামকে বাস্তব জীবনে কার্যকর করার মাধ্যমে সকল প্রকার গোমরাহীর অনল থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে ভাই ভাই হিসেবে চলার কথা বলা হয়েছে। এখানে পারস্পরিক সম্পর্ক 'ভাই ভাই' না বলে বন্ধু বা অন্যকোন সম্পর্ক বলা যেতে পারত। কিন্তু তা করা হয়নি। এর কারণ সম্ভবত এই যে, ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কটি মৌলিক, এর মধ্যে কোন কৃত্রিমতা নেই। কেননা মহান আল্লাহ এই বন্ধন একই মায়ের উদর হতে দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভ্রাতৃত্ববোধের গুরুত্ব কত অধিক পরিমাণে ইসলাম প্রদান করেছে।
ইসলাম সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ভ্রাতৃত্বের নিবিড় বন্ধনকে যেহেতু প্রাধান্য দিয়ে থাকে সেহেতু সেই ভ্রাতৃত্ববোধ প্রথমই বিশ্বাসীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছে। আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে।
"নিশ্চয়ই বিশ্বাসীরা পরস্পর ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও।" (সুরা হুজরাত-১০ )।
মুমিনরা যেহেতু ইসলামে দীক্ষিত সেহেতু ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার এ দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে ইসলাম তাদেরকেই দিয়েছে। তারা যখন এর সুফল দেখাতে পারবে তখন তা অমুসলিমরাও অকপটে গ্রহণ করবে এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই এর সুফল ভোগ করতে পারবে।
বর্ণিত কুরআন-হাদীসসমূহে যদিও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার এই নির্দেশসমূহ শুধুমাত্র মুমিন মুসলমানদের জন্য প্রদান করা হয়েছে কিন্তু তা মুমিন মুসলমান কর্তৃক যথাযথভাবে পালিত হলে এর ফল জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই পেতে থাকবে এবং তা দেখে সমাজের অমুসলমানরাও উৎসাহিত হবে। এভাবে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সকলে মিলে ভ্রাতৃত্ববোধ সম্পর্কে একটি ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণ ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে এভাবেই আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সম্ভব।
মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে পারস্পরিক সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করে বসবাসের তাওফিক দান করুন। আমিন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




