somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"গীবতমুক্ত সমাজ গড়ি"

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন ব্যক্তির ভুলত্রুটি বা দোষ সংশোধন করার উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে কেবল হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে যে প্রচার বা গালগল্প করা হয়, তাকেই পরচর্চা, গীবত বা নিন্দা বলা হয়। একে নেতিবাচক সমালোচনাও বলা যেতে পারে। পরচর্চা সকল সমাজে, সকল শ্রেণীর লোকদের মধ্যে কমবেশি সর্বকালেই ছিল। কোনো সমাজে পরচর্চা বেশি, আবার কোন সমাজে খুব কম। কোনো কোনো লোকের মাঝে এটা প্রকট আকারে আছে, আবার স্বল্পসংখ্যক লোকই ব্যক্তিগত জীবনে পরচর্চামুক্ত থাকতে পারেন। আমাদের দেশে শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রাম্য সমাজে তুলনামূলকভাবে পরচর্চা বেশি এবং অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক। সাধারণত কর্মচঞ্চল ব্যস্ত মানুষ এবং তাকওয়া সম্পন্ন সচেতন ব্যক্তিরা পরচর্চা করার মানসিকতা পোষণ করেন না। এর বিপরীত ব্যক্তিদের মধ্যে পরচর্চার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

পরচর্চা সমাজের নিন্দনীয় কাজগুলোর মধ্যে একটি। শুধু নিন্দনীয় বললে কমই বলা হবে, এটা গর্হিত অপরাধ। পরচর্চাকারীরা সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে পারঙ্গম। এরা নিরাপরাধ মানুষের নামে কুৎসা রটনা করে সামাজিকভাবে মানুষটিকে খাটো করার ব্যর্থ প্রয়াস চালায়। এই কুৎসা রটনা করতে গিয়ে পরচর্চাকারী নিজেই মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলে। কারণ তার অভ্যাসই এমন যে সে প্রত্যেকের সম্পর্কেই কটুক্তি করতে পছন্দ করে। যেকোনো ব্যক্তি বা বস্তু তার চোখে পড়লে সে প্রথমেই গড়মিল, অসামঞ্জস্য, ভুলত্রুটি খুঁজে বের করে বিচার-আচার শুরু করে দেয়। নেতিবাচক মানসিকতার অধিকারী এরা। জীবনকে নেতিবাচক খাতে প্রবাহিত করতে চাইবে। কথায় কথায় অন্য ব্যক্তিকে নেতিবাচক বিশেষণে বিশেষায়িত করা এদের অভ্যাস।

আত্মসমালোচনা করে মানুষ তার নিজের ভুলত্রুটি বুঝতে পারে, নিজেকে সংশোধনের প্রয়াস পায়। গঠনমূলক সমালোচনা দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের ভুলত্রুটি নির্দেশ করে সংশোধনের পথ বাৎলে দেয়া যায়। কিন্তু পরচর্চা, পরনিন্দা বা ছিদ্রান্বেষণের মাধ্যমে ব্যক্তিকে দোষের আকর, হীন, নীচ বা ব্যর্থ হিসেবে তুলে ধরতে ছিদ্রান্বেষণকারী সর্বদা যেমন সচেষ্ট থাকে তেমনি অন্যদেরকেও এসব কাজে প্ররোচিত করে থাকে। সাধারণত ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে সদ্ভাব না থাকা অথবা হিংসা, বিদ্বেষ কিংবা মানুষকে সহ্য করতে না পারা ইত্যাদি মনোভাব থেকে পরনিন্দা করতে মানুষ প্ররোচিত হয়ে থাকে। তাছাড়া অপরকে নীচে দাবিয়ে রাখার ইচ্ছা থেকেও নিন্দার উদ্ভব ঘটে।

যে ব্যক্তির নিন্দা বা গীবত করা হয় পরচর্চাকারী সেই ব্যক্তির প্রতি অন্যদের শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট করে দেয় বা বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ব্যক্তি বিশেষের দোষত্রুটি খুঁজে নিয়ে সেটা প্রচার করতে নিয়ে দেখা যায় যে, তিলকে তাল করা হয় বা অন্যের ব্যাপারে অসম্ভব বিষয়কে সম্ভব করে তোলে এই পরচর্চাকারী। অর্থাৎ মিথ্যার ফুলঝুরি ছড়িয়ে এক ধরনের আনন্দ লাভ করে থাকে। সুতরাং বলা যায়, কিছু কিছু পরচর্চাকারীর কাছে এটা এক ধরনের মুখরোচক আলোচনাও বটে। সঙ্গদোষে লোহা ভাঙ্গার মতন এই ধরনের ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে অনভ্যস্ত ব্যক্তিও পরচর্চা শিখে ফেলে। যে শিশু ছোটবেলা থেকে বাড়ির লোকদেরকে পরচর্চা করতে দেখে বড় বয়সে তার মনন-চিন্তা ও গড়নে এই পরচর্চা মারাত্মক ছাপ ফেলতে পারে। পরচর্চা করা কতটা যে গর্হিত অপরাধ তা আল কুরআনের সুরা হুজুরাতের ১২ নম্বর আয়াত পাঠে আমরা উপলব্ধি করতে পারি। এখানে বলা হয়েছে, "হে মুমিনগণ তোমরা বহুবিধ অনুমান হইতে দূরে থাক। কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করিও না এবং একে অন্যের পশ্চাতে নিন্দা করিও না। তোমাদিগের মধ্যে কি কেহ তাহার মৃত ভ্রাতার গোশত ভক্ষণ করিতে চাহিবে? বস্তুত তোমরা তো ইহাকে ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।" সুতরাং এটা যে মারাত্মক অপরাধ তা কুরআনের আয়াত পাঠেই বুঝা যায়।

পরচর্চা করার মাধ্যমে মানুষের উপর মারাত্মক অত্যাচার বা জুলুম করা হয়। যিনি অহেতুক নিন্দার শিকার হন, তিনি এর মাধ্যমে ব্যথিত, নিপীড়িত, লাঞ্ছিত বা অপমানিত হয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সে অবস্থায় স্বাভাবিক কাজকর্ম, চিন্তা-চেতনার ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়, কথা-বার্তায় কিছুটা খেই হারিয়ে যায়। এভাবে কষ্ট দেয়া অনেক বড় অপরাধ। সুরা বুরুজের ১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "যারা মুমিন নারী-পুরুষকে নিপীড়ন করেছে, অতঃপর তওবা করেনি, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি আর দহন যন্ত্রণা।"

তাই সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এবং পারস্পরিক সদ্ভাব বজায় রাখার লক্ষ্যে পরচর্চা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। অহেতুক নিন্দা করার মাধ্যমে মানুষের সাথে মানুষের দূরত্ব সৃষ্টি হয়, মমত্ববোধ নষ্ট হয়। অন্যদের চিন্তা ও মনে মিথ্যা ধারণা সৃষ্টি হয়। সে সঙ্গে যাপিত জীবনের স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হয়। পরচর্চাকারীও এর মাধ্যমে সবার কাছে অবিশ্বস্ত হয়ে ওঠে। তদুপরি, পরকালেও এর জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। তাই পরকালের শাস্তির ভয়ে এবং ইহজগতে সামাজিক শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে পরচর্চা পরিত্যাজ্য বিষয় হিসেবে সবার জীবনে পরিগণিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই আসুন গীবত বা পরচর্চা হতে নিজে মুক্ত হই এবং গীবতমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×