১৯১০ সাল। করোলি টাকাক্স, হাঙ্গেরির এক পরিবারে জন্ম নেয়া এক ছোট শিশু। যে ছেলে পরাজিত হতে শিখেছে কিন্তু কখনও হার মানতে শিখেনি। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন পিস্তল শুট্যার হবে, নিজের দেশের জন্য কিছু করবে। স্বপ্নপূরণের প্রথম লক্ষে যোগদান করে হাঙ্গেরিয় সেনাবাহিনীতে। করোলির তীব্র মনোভাব আর কঠোর পরিশ্রম তাকে নিজ দেশের সবচেয়ে বড় শুটার করে তোলে। হাঙ্গেরির জাতীয় স্বর্ণপদকসহ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে পদক অর্জন করেন। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি কারন স্বপ্ন যে ছিল দেশকে কিছু দেবেন। স্বপ্নটাকে আর একটু কঠিন করে নিলেন, সিদ্ধান্ত নিলেন ১৯৪০ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অলিম্পিকে পিস্তল শুটিংয়ে নিজ দেশের হয়ে লড়বেন।
করোলির স্বপ্নটা এতো সহজ ছিল না, গত কয়েকটা বছর খুব কঠোর পরিশ্রম করেছেন, নিজেকে কষ্টের চরম সহ্যসীমায় নিয়েগেছেন কিন্তু হার না মানতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অলিম্পিকের আর মাত্র কয়েক বছর বাকি। নিজেকে গড়ে তোলা প্রায় শেষ, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
১৯৩৮ সাল। হাঙ্গেরিয় সেনাবাহিনীর একটা অপারেশনের দায়িত্ব দেয়া হলো তাকে। কে জানতো সেই দিনটা তাঁর সবচেয়ে বড় স্বপ্নের উপর সবচেয়ে গভীর আঘাতটা হানবে। অপারেশনটাতে তাঁর ডানহাতে একটা গ্রেনেড ফেটে পুরো হাত উড়িয়ে নিয়ে যায়। যে হাত দেশের জন্য স্বর্ণপদক এনে দেয়ার অপেক্ষায়, সে হাত-ই চলে গেল। তাঁর সামনে দুটো পথ খোলা ছিল, হয় সারাজীবন কাঁদতে থাকো না হয় লড়াই করো। একমাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে শুরু করলেন লড়াই।
তাঁর যা ছিল সেটার কথা চিন্তা না করে যা আছে সেটা নিয়ে আবারও শূন্য শুরু করলেন; বেছে নিলেন নিজের বাম হাত। যে হাত দিয়ে কখনও কলম ধরতে পারতেন না সে হাতেই তুলে নিলেন পিস্তল, শুধু জানতেন তাকে অলিম্পিক জিততে হবে।
১৯৩৯ সাল। করোলি নিজের বামহাত নিয়ে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে গেলেন, কিন্তু কেউ জানত না তিনি গত একবছর কঠোর শ্রম দিয়ে নিজেকে আবার গড়ে তুলেছেন। ঐ দিন দেশের সবাইকে চমকে দিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। নিজেকে আবার গড়ে তুলতে থাকেন ১৯৪০-এর অলিম্পিকের জন্য।
১৯৪০ সাল। করোলির স্বপ্নপূরণের বছর কিন্তু আরেকটা আঘাত হানল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৪০-এর অলিম্পিক বন্ধ ঘোষনা করা হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারনে। তিনি আশা ছাড়েন নি, এবার লক্ষ্য ১৯৪৪-এর অলিম্পিক। আর সেটাও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হলো। নিজের লক্ষ্যে একের পর এক বাঁধা, তিনি এবারও হাল ছাড়েন নি। লক্ষ্য ছিল একটাই, শুধু জিততে হবে।
১৯৪৮ সাল। দুইবার বন্ধ থাকার পর আবার অলিম্পিক শুরু হয়েছে। করোলির বয়স তখন ৩৮ বছর, এই বয়সে এসে লড়াই করা খুব সহজ ছিল না তবুও তিনি নিজের লক্ষ্যে অবিচল। এত বছর ধরে যে স্বপ্ন দেখেছেন তাকে মরতে দেননি করোলি। অলিম্পিক যেদিন শুরু হবে ঐ দিন তাঁর এক প্রতিদ্বন্দ্বী তাকে দেখে বলেছিল, "তুমি এখানে কি করছ?" করোলি বলেছিলেন, "আমি এখানে লড়াই করতে এসেছি, আমি জিততে এসেছি।" অলিম্পিকের ঐ আসর শেষ হয়ে গেল, কে জিতেছিল স্বর্ণপদক!..ঐ বামহাতি পিস্তল শুটার, করোলি টাকাক্স। শুধু তাই নয়, তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মতো পিস্তল শুটিংয়ে স্বর্ণ জেতেন যা এর আগে অলিম্পিক ইতিহাসে কেউ কখনও করতে পারেনি।
তবে আমরা কেন পারব না!
Writer- Anisul Islam Faisal
Info Help- Wikipedia
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১৭