somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষখেকো কুকুর

২৬ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চারদিকটা মোটামুটি অন্ধকার। আমি বাসের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে বিষন্ন হয়ে তাকিয়ে আছি। রাস্তার গাড়িগুলোর হেডলাইটের আলো চারদিকের অন্ধকারকে খানিকটা ঘুচিয়েছে।
আমি জানালার পাশের সিটে বসে, আর চোখ দুটো বাইরে অন্ধকারে তাকিয়ে। কি সুন্দর কালো রং!

চিটাগাং থেকে বিকাল চারটার গাড়িতে ঢাকায় রওনা দিয়েছিলাম। আমি সচরাচর বিকেলে রওনা দেই না; ঐদিন কি জানি খুব দরকারে দিতে হয়েছিল।
রাত দশটার মধ্যেই বাসায় পৌঁছানোর কথা। রাত এখন প্রায় বারটা। আমি বাসেই বসা। রাস্তা পুরোটা জ্যাম। কালো অন্ধকারটাও বিষন্ন লাগছিল। নিস্তব্ধ বাসের প্রতিটা প্রানির মুখেই বিরক্তির ছায়া। চারদিকের নিরব নিস্তব্ধতার সাথেই একটু পরেই আকাশের কান্না শুরু হলো। সেই কান্নার সুর বাসের ছাদে টুপটাপ আওয়াজ করে আমার কানে এসে বাঁধল। গভীর নিস্তব্ধতা, এক পশলা বৃষ্টি আর চারদিকের এমন পরিবেশ কারো শরীরের একটা পশমকে ও শিহরিত করলো না।

রাত দেড়টা। আমি গাড়িতেই বসে। তেমন বেশি বৃষ্টি হয়নি। যেটুকু হইছে সেটা মাটির তৃষ্ণাও মেটাতে পারেনি। পশ্চিম-দক্ষিন কোণে সাদা রংয়ের চাঁদটা উকিঁ মেরে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। সাদা বস্তুটায় কেন জানি একটু কালো ছোপ ছোপ রং ছিটানো। বিরক্তিতে আমার কপালের ভাজটা হয়তো চাঁদের গাঁয়েও পড়ছে। বাস একটু পরপর দুই মিনিট চলে, আবার পনেরো মিনিট বসে
থাকে। কি সুন্দর রিদম!
বাস থেকে নেমে আমাকে দশ মিনিটের মতো সিএনজি করে যেতে হবে। রাত একটা পর্যন্ত সিএনজি পেতে তেমন ঝামেলা হয় না কিন্তু এরপরে পাওয়া কষ্টকর।
আমার মাথায় শুধু চিন্তা বাস থেকে নেমে কিভাবে যাবো।বাসের বাইরের এমন পরিবেশও ঐ চিন্তাকে দমাতে পারেনি। আমার পাশের সিটে বসা মানুষটার জন্য খারাপ লাগছিল খুব। গরীব মানুষ; সাধ্য নেই মায়ের লাশটা ফ্রিজারে রাখবে। জ্যামের জন্য নিজ মায়ের কবরে শেষমুঠো মাটিটাও দিতে পারলো না। কি বাস্তবতা!

একটু পরেই আমার বাস থেকে নামার সময় হলো। রাস্তা পার হলেই সিএনজি স্ট্যান্ড; ওপাশে একটা দেখা যাচ্ছে। ভাগ্যটা হয়তো ভালো ছিল। কিন্তু আমি রাস্তা পার হতে হতেই ওটা চলে গেল।
সাবধানে রাস্তা পার হয়ে ওপাশে গেলাম। সবগুলা দোকান বন্ধ; শুধু একটার ভিতরে হালকা লাল রংয়ের বাতি জ্বলছে। সোডিয়াম বাতির মতোই আলো। আজকে চাঁদেরও আলো নেই। আমি দাড়িয়ে আছি অন্ধকারে, পুরো জনশূন্য একটা পরিবেশ। হাইওয়েতে গাড়িগুলো এখনও জ্যামে বসে আছে। এরই মধ্যে হয়তো আরেক বেচারার প্রেয়সীর লাশটা শেষবারের মতো দেখার আগেই দাফন হয়ে গেল।

আমার ভাগ্যটা আসলেই অনেক ভালো, একটু পরেই
আরেকটা সিএনজি আসলো। সব দুশ্চিন্তার কিছুটা উপশম হয়েছে। উঠে বসলাম আমি। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে; কোন যাত্রী আসছে না। আমি চারজনের ভাড়া দিব বলার পরও ড্রাইভার যেতে রাজি হচ্ছে না। পাঁচজন দরকার। লোকটার বাসায় হয়তো চাল নেই; হয়তো বড় ছেলের পরীক্ষার ফিস দিতে হবে কিংবা ছোট মেয়ে দুইটার জন্য খাতা কিনতে হবে। তাইতো পেটে খাবারের চেয়ে টাকার ক্ষুদা বেশি। যে ক্ষুদার যন্ত্রণা আমরা বুঝতেই পারিনা।
কিছুক্ষন পর একটা মহিলা এসে উঠলো গাড়িতে; বোরকা পড়ানো। আমি তো একটু অবাকই হয়েছিলাম। এত রাতে এই মহিলা একা একা কোথা থেকে আসলো। উনাকে দেখে খুব বিচলিত মনে হচ্ছিল। বোধহয় খুব ভয়ে আছে। কামড়ে খামচে মানুষ খাওয়া কুকুরদের ভয়ে।

রাত প্রায় দুইটার কাছাকাছি। সিএনজিতে আমরা তিনজন; আমি, ড্রাইভার আর ঐ মহিলা। আর দুজন হলেই গাড়ি ছাড়বে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আরও দুইজন চলে আসলো। কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারলাম দুইজনই বাস ড্রাইভার। আর ঐ মহিলা গার্মেন্টসে কাজ করে। প্রতিদিন নাকি বারটার দিকে কাজ শেষে ছুটি দেয়; আজকে জ্যামের জন্য আসতে দেরী হয়ে গেছে। কথাগুলো উনি একা একা বিরবির করে বলতে লাগলো। পুরো শরীরে ভয়ের ছাঁয়া; একা এত রাতে বাসায় যাচ্ছে ভয় তো স্বাভাবিক। কিন্তু নিজ পরিবারের সদস্যদের পেটের ক্ষুদা মেটানোর কাছে এই ভয় তুচ্ছ। একটু পর ভয়ে ভয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি কোনদিকে যাবো। আমার বাসার ঠিকানা বললাম; উনার বাসার উল্টো দিকে। সিএনজি থেকে নেমে নাকি আরও ১০/১৫ মিনিট হাটতে হবে। উনার বাসায় যাবার রাস্তাটা আমি চিনি, জীবনে দুই একবার গিয়েছিলাম হয়তো। যাবার পথে ঠিক পাশেই একটা কবরস্থান পড়বে। হেটেই যেতে হবে। রাত দুইটায়; একা একা। কি ভয়ংকর বাস্তব জীবন!

লোক দুইটা নেমে গেল। আর একটু পর আমাকেও নামতে হবে। সিএনজি স্ট্যান্ডে চলে আসছে। আমি টাকা দিয়ে নেমে গেলাম। ফোনের ফ্লাশটা অন করে হাটছি। অন্ধকারে নিজের ছাঁয়া দেখে ভয় পেয়েছিলাম একটু। অথচ কতটা সাহস থাকলে একজন মহিলা রাত দুইটায় কাজ করে বাসায় ফিরতে পারে! আমাকে বিশ্বাস করুন, বাধ্য না হয়ে কেউ কোনদিন এই ভয়ের সম্মুখিন হবে না।

একটু পরেই আমার সাথে কয়েকটা কুকুরের দেখা। রাস্তার ধারে আড়ি পেতে বসে আছে এক টুকরা মাংসপিন্ডকে কামড়ে-খামচে খাওয়ার জন্য। আমি খুব দ্রুত পায়ে হাটছি আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কুকুরগুলোর কাছে মাংসপিন্ডটা সত্যিই কত অসহায়!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:২৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×