হটাত নিজেকে আবিষ্কার করলাম মরুভূমির বড় বড় পাথরের সারির একটির মধ্যে আমি বসে আছি। ঐ পাথর থেকে নামতে হলে লাফ দিয়েই নামতে হবে এতটা উঁচু পাথর। খেয়াল করলাম পাথর গুলোর উপরি ভাগ কাচের মত স্বচ্ছ এবং যে ভাবে বড় থেকে ছোট সারি বদ্ধ ভাবে সাজানো হয়েছে, মনে হচ্ছে যেন মানুষের পায়ের আঙ্গুল, দেখতে দেখতে পাথর গুলো লড়ে উঠতেই চিৎকার দিয়ে লাফ দিলাম, নিচে পড়েই উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি তাল গাছের মত বিশাল এক মানুষ। আমার চিৎকারের শব্দ হাওয়ায় বেসে যাচ্ছে এবং তাল গাছের মত মানুষটির মুখের দিক থেকেও একটি শব্দ এসেছে, কিন্তু শব্দটা পরিচিত হলেও বুঝতে পারিনি। বুঝতে না পারার কারণে আমার মুখ থেকে বের হয়ে গেল " লা ফাহাম" অনেক দিন থেকে সৌদি আরবে থাকার কারণে প্রায় সময় নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে আরবি বের হয়ে আসে। " লা ফাহাম মালিশ" এই কথাটি সাধারণত আমরা যদি আরবিদের কথা না বুঝতে সক্ষম হই তখন ব্যবহার করি, এর অর্থ দুঃখিত বুঝি নি। আমার এই কথা শুনার সাথে সাথেই তার জবাব " মাফি খোপ আনা ইনসান আল গমর" অর্থাৎ ভয় পেওনা আমি চাঁদের মানুষ। আমি কিছু বলার আগেই আবার বলে বসল " আনা আরেফ এন্তা ইনসান আল আর্থ" অর্থাৎ আমি জানি তুমি পৃথিবীর মানুষ। আরবি একটু আধটু জানি বলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম এবং তার কথা গুলো সহজেই বুঝতে পারলাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে আমি এইখানে কি ভাবে আসলাম? সে বলে, আমি জানিনা তুমি কি ভাবে এসেছ, আরও বলে যে তুমি আমার সাথে আমার বাসায় চল, আমার বাসায় আর এক জন পৃথিবীর অতিথি আছে তার সাথে আলাপ করলে হয়তো বুঝতে পারবে কি ভাবে এসেছ। আমি রাজি বললাম চল। সে এক কদম দিতেই আমি যত দৌড়লাম তার আর এক পা পর্যন্ত যেতে পারলাম না। তখন আমি চিৎকার করে বললাম, তুমি হাঁটছ কিন্তু আমি তোমার সাথে দোরেও পারছিনা। পারার কথাও নয় আমি তার পায়ের পাতার উপরি ভাগের সমান লম্বা। তখন সে বলে আস তুমি আমার হাতের তালুতে বসে থাক আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি। হাতের তালুতে নেয়ার কারণে আমি উপর থেকে চাঁদের দেশের সকল স্থাপনা, মাট গাঁঠ সব কিছু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। বিশাল বিশাল জমিন দেখা যাচ্ছে একটু কাদা কাদা মনে হচ্ছে। আমি জানতে চাইলাম তোমাদের এই খানে কি বৃষ্টি হয়? সে বলে তোমাদের পৃথিবীর মত বৃষ্টি হয় না, তবে এই মছুমটা আসলে মাটি একটু বীজে থাকে এবং আমরা এই সময়ে ফসল ফলাই। আমি ফসল লাগানোর উদ্দেশ্যে এখানে না আসলে তোমার সাথে দেখা হতো না। সে বলে আল্লাহ কাছে শুকরিয়া আদায় কর যে এখানে আমাদের দেখা হয়েছে, যদি শুষ্ক মোছুম হতো তাহলে তুমি জীবিত থাকতে কিনা আল্লাহই ভাল জানে। আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম এবং মনে মনে ভাবলাম এদেরও আমাদের মত আল্লাহ তায়লার উপর বিশ্বাস আছে। তখন আমি কৌতূহল বশত তার কাছে জানতে চাইলাম, তোমরা কি ধর্ম বিশ্বাস কর? সে বলে অবশ্যই। আমাদের এই খানে তোমাদের পৃথিবীর মত অনেক ধর্ম আছে, তবে ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্ম গুলো তোমাদের পৃথিবীর অন্যকোন ধর্মের সাথে মিল নেই। এবং আলহামদুলিল্লাহ আমি সেই শান্তির ধর্ম ইসলামই পালন করি। প্রথম ভয় লাগলেও মানুষটির ব্যবহারে তাকে খুব আপন মনে হচ্ছে। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম তোমরা ইসলাম কি ভাবে পালন কর? সে বলে কোরআন পড়ি এবং আমল করি। নামাজ,রোজা, হজ্জ, যাকাত আল্লাহর সকল নির্দেশই পালন করি, তবে তোমাদের মত বেদআত গুলো আমরা পালন করিনা। তোমাদের কোরআন আর আমাদের কোরআনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আমি তার সাথে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে বললাম, সবাই বিদআত পালন করে তা কিন্তু সঠিক না। পৃথিবীর মুসলমানদের কিছু অংশ বিদআত পালন করছে এর মধ্যে অনেকেই ইসলামকে সঠিক ভাবে না জানার কারণে। আর কিছু আছে সঠিক ভাবে জেনেও ভণ্ডামি করে অর্থ উপার্জন করার জন্যে বিদআত নিয়ে পড়ে আছে। তাদেরকে মানুষ রুপি শয়তান বললে ভুল হবে না। সে বলে নতুন কিছু জানলাম। আমি বললাম তুমি যে এতক্ষণ পৃথিবী সম্পর্কে এত কিছু বলেছ তা কি ভাবে জানলে? বলে, তোমাকে বলছি না আমার বাসায় আর এক জন পৃথিবীর মানুষ আছে। কথা বলতে বলতে তার বাসায় পোঁছে গেলাম। আমাদের দশ তলার মত উঁচু তাদের একতলা বাড়ি। সে আমাকে হাতে নিয়েই ঘরে ঢুকলও এবং পৃথিবীর মানুষটির পাঁশে নামিয়ে দিল। মানুষটির শারীরিক গঠন দেখে আমার বুঝতে কষ্ট হল না যে এটাই পৃথিবীর মানুষ। আমাকে নামিয়ে দিয়ে চাঁদের মানুষটি বলে তোমরা পরিচয় হও এবং দুই জনে আলাপ কর আমি পরিষ্কার হয়ে আসি। এই বলে সে চলে গেল।
পৃথিবীর মানুষটিকে দেখে মনের মধ্যে কিছুটা আনন্দ উপভোগ করছি। তার গায়ের বর্ণ এবং চেহারা গঠন দেখে মনে হল বাংলাদেশী। তাই সালাম দিয়ে বাংলায় জিজ্ঞেস করলাম কেমন ভাই কেমন আছেন? লোকটি সালামের উত্তর দিয়ে বলে আই ভালা আছি আন্নে ভালা আছেন নি? আমার বুঝতে কষ্ট হল না, উনি যে আমাদের বৃহত্তর নোয়াখালীরই মানুষ। আমি বলি আলহামদুলিল্লাহ আমি ভাল, ভাই কেমনে আসলেন এই চাঁদের দেশে? বলে কেন্নে আইছি মনে নাই, আন্নে কেন্নে আইছেন? আমি বলি আমারও মনে পড়ছে না কি ভাবে আসছি, আচ্ছা ভাই খাওয়া দাওয়া কি ভাবে খাচ্ছেন, এরা কি খায়? আমার খুদা লাগলে মাথা ব্যথা করে। এখন একটু একটু ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। নোয়াখালীর ভাই বলে, ধরেন আরে এই রুটি আর মাখন খাইতে দিছিল, অল্প কুদ্দুর খাই আর হেড বরি গেছে, আমনেও খাইতে হাইরবেন। আমি ধন্যবাদ দিয়ে বিসমিল্লাহ পড়ে খাওয়া শুরু করলাম। আর বললাম এরা তো দেখি ইন্ডিয়ান পাকিস্তানিদের মত রুটি খায়, চাউল পাকায় না নাকি? সে বলে, জানিনা কই আরেত অনও চাইল টাইল খাইতে দেয় ন, আচ্ছা ভাই ইন্ডিয়ার কথা কইছেন হেমনে মনে অইছে, আন্নে কিচ্ছু জানেন নি, বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়া নাকি সাইবার যুদ্ধ চইলতেছে? আমি বলি হমম, বাংলাদেশী টাইগাররা অনেকটা জয়ী, বাংলাদেশের বীর সেনানীরা ইন্ডিয়ার প্রায় ২০/২৫ হাজার সাইট হ্যাক করেছে। সে বলে মনে-অয় এটা ঠিক অরনা, আঙ্গো লগে হাতাগো যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হেইটা নষ্ট অই যাইতে হারে। আমি বলি, ভাই আমনে যেমনি ইন্ডিয়ারে বন্ধু মনে করে কথা কইলেন, তাতে মনে হইলো আপনি সেই গোত্রীয় যারা নিজেকে সর্বাধিক দেশ প্রেমিক বলিয়া বড়াই করে, আবার ভারত বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তাদের কে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আদর করে ঢাকে ভারতের দাদা যা সংক্ষেপে ভাদা। সত্যি করে বলেন তো আপনি সেই গোত্রের কেউ নয়তো? এই কথা শুনেই বেচারা চটে গেল, কইছত কি বলেই, আমারে ধাক্কা দিল, আর আমি নিজেকে খুঁজে পাইলাম জাগ্রত অবস্থায় শরীরের অর্ধেক অংশ খাট থেকে পড়ে যাওয়ার অবস্থায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




