somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সকল নবীই বিশ্বনবী???

১২ ই জুন, ২০১০ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সদালাপে বাশারভাই একটা পোস্ট দিয়েছেন, তাতে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে কোরান নাকি বলে যে সকল নবীই বিশ্ব নবী। আমরা কোরান দিয়ে দেখার চেষ্টা করবো যে আসলে এধরণের কোনো আয়াত আদৌ কোরান শরীফে আছে কি না। কিন্তু তার আগে সেই আয়াতগুলো দেখবো আমরা যেই আয়াত দিয়ে মুহম্মদ স.-কে বিশ্বনবী বলি।

১. ৬:১৯
আপনি জিজ্ঞেস করুনঃ সর্ববৃহৎ সাক্ষ্যদাতা কে ? বলে দিনঃ আল্লাহ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। আমার প্রতি এ কোরআন অবর্তীর্ণ হয়েছে-যাতে আমি তোমাদেরকে এবং যাদের কাছে এ কোরআন পৌঁছে সবাইকে ভীতি প্রদর্শন করি। তোমরা কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহর সাথে অন্যান্য উপাস্যও রয়েছে ? আপনি বলে দিনঃ আমি এরূপ সাক্ষ্য দেব না। বলে দিনঃ তিনিই একমাত্র উপাস্য; আমি অবশ্যই তোমাদের শিরক থেকে মুক্ত।

২. ২১:১০৭
আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।

এই দুই আয়াতে বিশ্বনবীত্বের ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়েছে। ৬:১৯ আয়াতে বলা হচ্ছে এই কোরান যার কাছেই পৌঁছাক, তারই জন্য মুহম্মদ স. রাসুল। আর, ২১:১০৭ আয়াতে ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট করা হচ্ছে।

৩. ৭:১৫৮:
বলে দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল।

এই আয়াতে আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এই আয়াতেই পরে আরো বলা হচ্ছে:

সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।

৪. ৩৪:২৮
আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।

______________________________
এবার আমরা পর্যালোচনা করবো বাশারভাইয়ের উল্লিখিত আয়াতগুলো যাতে তিনি দাবী করেছেন যে সকল নবীই নাকি বিশ্বনবী।

বাশারভাইয়ের উদ্ধৃতি:

{{{হযরত ইব্রাহিম:
১. [২: ১২৪] এবং স্মরণ করো! ইব্রাহিমকে তার প্রতিপালক তার ভক্তির পরীক্ষা নিলেন আর তাতে সে উত্তীর্ণ হলো; তখন আল্লাহ ঘোষণা করলেন, আমি তোমাকে মানব জাতির নেতা মনোনিত করলাম।-!
২. [ ২: ১৩০] বর্বর, কাফের ব্যতীত ইব্রাহিমের ধর্মাদর্শ থেকে আর কে বিমুখ হয়! বিশ্বের বুকে আমি তাকে মনোনিত করেছি, পরকালেও সে সত কর্মীদের অন্তর্ভূক্ত।}}}

এই দুই আয়াতে ঠিক কীভাবে ইব্রাহীম আ. কে বিশ্বনবী বলা হলো বুঝলাম না। মানবজাতির নেতা, বিশ্বের বুকে মনোনয়ন…এই দুটো ফ্রেজ দিয়ে কি বুঝা যায় যে ইব্রাহীম আ.কে আল্লাহ বিশ্বনবী করে পাঠিয়েছেন?
__________________
বাশারভাইয়ের উদ্ধৃতি:
{{{হযরত মুছা
১. [৬: ১৫৪] সত কর্মশীলদের জন্য মুছাকে দিয়েছিলাম কিতাব; তাতে ছিল সমস্ত কিছুর ব্যাখ্যা (পূর্ণ), পথ নির্দেশ ও রহমত [রহমাতুল্লীল আলামীন]।
২. [৭: ১৪৪] বললেন, হে মুছা! আমি তোমাকে আমার প্রেরণা [রেছালত] ও বাক্য [অহি] দিয়ে মানুষ জাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠতা দিয়েছি; সুতরাং আমি যা দিলাম তা আকড়ে থাকো ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো।}}}

আমি নিজে চেক করলাম ৬:১৫৪ আয়াত: অতঃপর আমি মূসাকে গ্রন্থ দিয়েছি, সৎকর্মীদের প্রতি নেয়ামতপূর্ণ করার জন্যে, প্রত্যেক বস্তুর বিশদ বিবরণের জন্যে, হোদায়াতের জন্যে এবং করুণার জন্যে-যাতে তারা স্বীয় পালনকর্তার সাথে সাক্ষাতে বিশ্বাসী হয়।

মূল আরবিতে রহমাতুল্লীল আলামীন শব্দ নেই!!! ৬:১৫৪ তে কি বিন্দুমাত্রও ইঙ্গিত আছে যে মুসা আ. বিশ্বনবী??? ৭:১৪৪ আয়াতে বলা হচ্ছে রিসালাত এবং বার্তা পাঠিয়ে মুসা আ.-কে মানুষদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতা দান করা হয়েছে। যাকে আল্লাহ রিসালাত এবং ওহি পাঠান সে তো শ্রেষ্ঠই। কিন্তু তাতে বিশ্বনবী হবার কী ঘটলো? বিশ্বের সকল লোক, যে কোনো লোক কি আল্লাহর নির্দেশে মুসা আ. -কে মানতে বাধ্য ছিলো? এমন কোনো আয়াত পাওয়া যায়???
__________________
বাশারভাইয়ের উদ্ধৃতি:

{{{{হযরত দাউদ
১. [৩৮: ২৬] হে দাউদ! আমি তোমাকে বিশ্বের প্রতিনিধি করেছি-!}}}

বাশারভাই অনুবাদ উঠানোর সময় খুব অদ্ভুত একটা কাজ করেছেন। তিনি {{আমি তোমাকে বিশ্বের প্রতিনিধি (আরবি শব্দ: খলিফা) করেছি}} এর পরের অংশ বাদ দিয়ে গেছেন। এর পরের অংশ হলো: {{তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি, এ কারণে যে, তারা হিসাবদিবসকে ভূলে যায়।}} পরের অংশ থেকে এই প্রতিনিধিত্বের অর্থ পাওয়া যায়। তাকে রাজত্ব দেয়া হয়েছিলো।

রাশাদ খলিফা দেখছি এখানে প্রথম অংশটার অনুবাদ করেছেন: O David, we have made you a ruler on earth. পরের অংশ চিন্তা করলে খলিফা শব্দের অর্থ এখানে রুলার হওয়াটাইতো যৌক্তিক। এখানে কোথায় বলা আছে, দাউদ আ.-কে আল্লাহ গোটা পৃথিবীতে নবী হিসেবে পাঠাচ্ছেন?
____________________________
বাশারভাইয়ের উদ্ধৃতি:
{{{হযরত ঈসা
[৩: ৪৫] স্মরণ কর! যখন ফিরিশতাগণ বললো, হে মরিয়াম! আল্লাহ তোমাকে তার পক্ষ থেকে একটি সুসংবাদ দিচ্ছেন; তার নাম মসীহ, মরিয়ামের ছেলে ঈসা; সে সমগ্র বিশ্বে এমনকি পরকালেও সম্মানের অধিকারী এবং সেও সম্মানীতগণের একজন।}}}

কী আশ্চর্য কোটেশন!!! এই আয়াতে প্রমাণিত হয় যে ইসা আ. বিশ্বনবী? সমগ্র বিশ্বে সম্মানের অধিকারী হলেই বিশ্বনবী?
______________________

[৩: ৩৩] আদমকে, নুহকে ও ইব্রাহিমের বংশধরকে এবং এমরানের বংশধরকে বিশ্ব জগতে শ্রেষ্ঠতা দান করেছেন।
[৬: ৮৪-৮৬] এবং তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়াকুব– পূর্বে নুহকেও, এবং তার বংশধর দাউদ, সুলায়মান, আয়ুব, ইউসুফ, মুসা ও হারূনকেও- এবং জাকারীয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা এবং ইলিয়াসকেও, আরো সত পথে পরিচালিত করেছিলাম ইসমাইল, আল- ইয়াসা, ইউনুস ও লুতকে; এবং শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম বিশ্ব-জগতের উপর প্রত্যেককে।

বাশারভাইয়ের কন্সেপ্টে খুব বেসিক একটা গলদ রয়ে গেছে। একজন নবী তো অবশ্যই বিশ্বজগতে শ্রেষ্ঠতার অধিকারী। একজন নবীকে অবশ্যই আল্লাহ বিশ্বজগতের শ্রেষ্টতা দান করেন। সব নবীই তো তাই। কিন্তু শ্রেষ্ঠতা দানের সাথে বিশ্বনবী হবার রিলেশন কোথায়?
_________________________
উপরোক্ত আলোচনায় এটুকু আশাকরি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে কোরানে অন্য কোনো নবীকে সমগ্র পৃথিবীর জন্য নির্দিষ্ট করেননি। শুধুমাত্র মুহম্মদ স.-কে সেই দায়িত্বটা দেয়া হয়েছে। জোর করে অন্য নবীদেরকে বিশ্বনবী বানানোর মূল কারণটা যদি জানা যেত!

বাশারভাই এবং সমমনাদের জন্য ছোট একটা নোট:
১. বাশারভাই খুব দূর্বল একটা যুক্তি দিয়ে এই লেখা শুরু করেছেন। এখানে যেই কয়জন নবী-রাসুল স.-কে তিনি বিশ্বনবী বলতে চাইছিলেন, তাদের সবাইকেও যদি বিশ্বনবী মেনে নিতাম, তবু কিন্তু প্রমাণ হতো না যে “সকল সবীই বিশ্বনবী”। কারণ তিনি অন্য নবীদের কথা জানেনও না। আল্লাহও কোনো একটা আয়াতেও বলেন নি যে সকল নবীই সারা বিশ্বের জন্য। সুতরাং তার কথা গোড়াতেই গলদযুক্ত রয়ে গেছে।
২. সুতরাং যদিও তার মূল লেখাটা খুব দূর্বল ছিলো, এবং সেইটা প্রমাণ করা অনেক সহজ কাজ ছিলো, আমি সেদিকে না গিয়ে এ্যাটেম্প্ট নিলাম সমস্ত আয়াত চেক করার। আর দেখলাম, কঠিন কাজটাই (শুধুমাত্র মুহম্মদ স.-ই যে সমগ্র বিশ্বের জন্য) বরং সহজ হয়ে আছে। আমি সেই কাজটাকে তার/তাদের সামনে প্রকাশ করলাম। সত্য এখন গ্রহণ করার তাদের ব্যাপার।
৩. বাশারভাইদের স্বার্থটা কী? এই আয়াতগুলো কোনোটাই তো মুহম্মদ স.-কে বিশ্বনবী বলার আয়াতের মত করে বলেনি যে এই নবীরাও সমগ্র বিশ্বের জন্য। তিনি কেন জোর করে আল্লাহ যেটা বলেননি, তা জোর করে আল্লাহর নামে বলাচ্ছেন? আল্লাহকে তো অন্তত সামান্য ভয় পাওয়া উচিত!
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×