somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রয়োজনীয় বিরক্তিকর সঙ্গী

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিরক্তিকর সঙ্গী যখন নিজের স্ত্রীকে মনে হয় তখন অন্য কোন মেয়ের দিকে আড়চোখে তাকানোর ইচ্ছা জাগে না কৌশিকের। যান্ত্রিক শহরের মানুষ নিজেকে যন্ত্রের মত ভাবতেও কুণ্ঠাবোধ করেনা সে। অফিসে এক মনে কাজ করে যায় বিকাল অবধি। পাশের ডেস্কে বসে কাজ করা সুন্দরী স্মার্ট সহকর্মীটির দিকে ফিরে তাকানোর সময় হয় না তার। অফিস শেষে আশ-পাশে না তাকিয়ে সোঁজা বাসায়। তবে পথিমধ্যে ট্রাফিক জ্যামে যে সময়টুকু ব্যয় হয় তার তিনগুন সময় ব্যয় হয় ঐ সময়টুকুর হিসাব দিতে। নব বিবাহিত কৌশিক একটা বেসরকারী মাল্টিন্যাশনাল ফার্মে কাজ করে প্রায় তিন বৎসর। অত্যান্ত নিষ্ঠা এবং সততার পরিচয় দিয়েছে এই সংক্ষিপ্ত কর্মজীবনে। যে কারনে অফিসের বস কৌশিকের প্রতি যথেষ্ট সন্তুষ্ট। কাজে কখনো ফাঁকি দিয়েছে এমন ইতিহাস নেই কৌশিকের।

স্ত্রী কাকলী পিতার একমাত্র কন্যা। পিতা শহরের নামকরা ব্যবসায়ী, অঢেল সম্পত্তি তার। একমাত্র কন্যা হওয়ার পিতা-মাতার আদর পেয়েছে অনেক। কখনো কেউ কাকলীর আবদার রাখেনি কিম্বা কাকলীর কথার বাধ্য হয়নি এমনটি খুজে পাওয়া দুস্কর। এমনকি কৌশিকের সঙ্গে বিবাহও হয়েছে কাকলীর পছন্দে। পাত্র পছন্দের ব্যপারেও কেউ কোন আপত্তি করেনি। কৌশিক দেখতে সুশ্রী, স্মার্ট আর লম্বা হওয়ায় যে কোন মেয়ের পাত্র হিসাবে পছন্দ হবে এটাই স্বাভাবিক। চলনে আধুনিক, দেহ মানানসই, চোখ দুটো মায়াবী, বিদ্যায় অপ্রতিদ্বন্দি এমন গুনসম্পন্ন পাত্রকে কাকলী পছন্দ করেছে বলে তার পরিবার মেয়ের বিবাহে বাঁধা দেয়নি তা কিন্তু নয় বরং যে কোন ছেলেকেই পছন্দ করলে কাকলীর পরিবার বাঁধা দিতো না। পিতার সকল সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারীনী কাকলী। তাছাড়া কাকলীর বয়স ২০ পার হয়েছে ইতিমধ্যেই। স্নাতক শেষ করার পর বিবাহ হয়েছে তার। তাই নিজের ভাল-মন্দ সে নিজেই ভাল বুঝে।

কৌশিক বরাবরই ক্লাসে প্রথম হতো। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান কৌশিক মাষ্টার্সে ভাল রেজাল্ট করার কারনে দেশের নামকরা মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে চাকুরী পায় অনায়াসেই। বেতন পায় যথেষ্ট তবে স্ত্রী কাকলীর জন্য যৎসামান্য। ধনী পরিবারের মেয়ে কাকলী অভাব কাহাকে বলে সেই বিষয়টা জানা ছিল না। পিতা ব্যবসায়িক কারনে তার মাকে খুব বেশী সময় দিতে পারতোনা। যার কারনে তার মা খুব একটা সুখী হতে পারেনি জীবনে। এই বিষয়টি অবশ্য কাকলী অনুভব করতো মায়ের বিভিন্ন আচরনে। পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকেও গুরুত্ব সহকারে দেখেছে কাকলী। অথচ কৌশিকের পরিবারের কোন ইচ্ছা বা অনিচ্ছার গুরুত্ব দেয়নি কাকলীর পরিবার। তবে পাত্রী এবং তার পরিবারের স্বচ্ছলতা দেখে অসম্মতিও জানায়নি কৌশিকের পরিবার। যতটুকু ভাবার বিষয় ছিল সেটাও কাকলীর পরিবারের আগ্রহের কারনে ভাবতে সময় পায়নি তারা।

অফিসের সহকর্মী মিথিলা বরাবরই নজরকাড়া সৌন্দর্যের অধিকারিনী। বস থেকে শুরু করে অফিসের সকলেই মনের অজান্তে হলেও একবার তার দিকে নজর দিবেই, ব্যতিক্রম কেবলমাত্র কৌশিক। যেন দেখেও না দেখার মত এড়িয়ে চলে মিথিলাকে। মিথিলা বিষয়টাকে খুব লক্ষ্য করে। মাঝে মাঝে মনে করে একবার না হয় কৌশিকের সঙ্গে আগবাড়িয়ে কথা বলেই দেখি, আবার থেমে যায় "না কি ভাববে লোকটি!" তবে কৌশিকের মনের মধ্যে একটা বিরাট অশান্তি বিরাজ করছে এটা বুঝতে খুব অসুবিধা হয়না মিথিলার। অবিবাহিতা মিথিলা কিছু বলতে সাহস পায় না আবার পিছে লোকে কি বলে! এই ভেবে। তবুও মনের ভিতরে এক অজানা সহমর্মিতা জাগে সহকর্মীর জন্য। এই অফিসে একই সাথে নিয়োগ পেয়েছিল কৌশিক এবং মিথিলা। তখন দু'জনই অবিবাহিত ছিল। খুব বেশী জানা-শোনা না থাকলেও কৌশিক একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সেটা বুঝতে পারে মিথিলা। কৌশিকের সঙ্গে তার বিবাহ হলে খারাপ হয় না একথা বারবার ভেবে ঠিক করে রেখেছিল মিথিলা। অথচ কৌশিকের পক্ষ থেকে কখনো প্রেম বা বিবাহের প্রস্তাব না পাওয়ায় মিথিলা কখনো সেটা প্রকাশ করেনি। আর করবেই বা কেন? মেয়েরা কখনো ছেলেদেরকে প্রস্তাব দেয় না, মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হিসেবে এটা ছিল মিথিলার ধারনা।

আজ কৌশিককে খুবই বিমর্ষ দেখাচ্ছে। অফিসের কাজে মনযোগ নেই, যেন এক কঠিন অস্থিরতা তার মধ্যে। অন্য কেউ না বুঝতে পারলেও মিথিলা ঠিকই বুঝতে পারে। নিজেকে সামলে নিতে পারেনা, বারবার কৌশিকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে আবার অজানা ভয়ে থমকে যায়। কি কথা দিয়ে শুরু করা যায় সেই কথার মালা সাজাতে গিয়ে বারবার গাঁথা মালার ফুলঝুরি ছিড়ে পড়ে যায়। তবুও শেষ চেষ্টা করতে প্রস্তুত মিথিলা। অনেকটা অনাকাঙ্খিতভাবে মিথিলাকে কৌশিক ডাক দেয়। সে ডাকের শব্দের মুর্ছণা অনেকটা সময় বাঁজতে থাকে মিথিলার কানে।
জ্বি ভাইয়া আসছি..
আমার শরীরটা আজ বেশী ভাল নেই। তোমার যদি খুব কাজের ব্যস্ততা না থাকে তাহলে এই ফাইলটা দেখে একটা রিপোর্ট তৈরী করে দিও।
ভাইয়া আপনার কি জ্বর বা অন্য কোন কিছু......
না, আছে একটু সমস্যা। আসলে মনটা ভাল নেই।
কিছু দিন হল আপনাকে বেশ আনমোনা মনে হচ্ছে। আসলে আপনাকে কারনটা জিজ্ঞেস করবো করবো করে করা হয়নি। আপনি অনেকটা বদলে গিয়েছেন ইদানিং। আপনাকে প্রথম যখন দেখেছিলাম সেই কৌশিক ভাইয়া কিন্তু এখন আর আপনার মধ্যে নেই।
মুচকি হেসে কৌশিক বলে "তাই নাকি, অনেক দুঃখের মধ্যেও তুমি আমাকে হাসালে"
না আসলে ভাইয়া অন্যভাবে নিবেন না। আপনাকে ৩ বৎসর যাবৎ চিনি। এই তিন বৎসরে আপনার সাথে একই অফিসে পাশা-পাশি ডেস্কে কাজ করেছি। কখনো আপনার কোন সহযোগীতা করতে পারিনি। আজ আপনার সামান্য কাজ পেয়ে যারপর নেই খুশি হয়েছি আমি। অন্ততঃ আপনার জীবনে ক্ষনিকের সামান্য সহযোগীতা করার সৌভাগ্য আমার হলো, এই আমার শান্তনা।
তাহলে উপকার করার ইচ্ছা তোমার ছিলো?
ঠিক উপকার নয় ভাইয়া, সহযোগীতা বলতে পারেন।
কৌশিকের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় যা কেবল কৌশিকই বুঝতে পারে। দু'চোখের পাতা জলে ভিজে আসে কিন্তু কাঁদতে পারেনা। নিজেকে অভিশাপ দেয় কৌশিক, কেন সে আগে মিথিলার সঙ্গে নিজের মনের কথাগুলো বলতে পারেনি। অথচ এই মিথিলাকে প্রথম দেখাতেই ভাল লেগেছিল কৌশিকের। অর্থই যে সকল সুখের মূল নয় সে কথা আজ অক্ষরে অক্ষরে টের পাচ্ছে কৌশিক। কাকলীর পিতার অঢেল সম্পত্তি কৌশিককে কোন সুখ দিতে পারেনি। বরং বাড়িয়েছে অশান্তি। কাকলীর গাঁয়ের রঙ কালো হওয়ায় কৌশিককে সে সবসময় সন্দেহ করেছে। অথচ কৌশিক কাকলীর হৃদয়ে সুন্দর একটি বাসা বাঁধতে নিজর মনের সাথে যুদ্ধ করেছে অনবরত। কাকলী যেদিন প্রথম এসেছিল কৌশিকের অফিসে, সেদিনই মিথিলাকে সে দেখেছিল কৌশিকের পাশের ডেস্কে। দিনের পর দিন মিথিলাকে সে সন্দেহ করেছে কৌশিকের কাছের মানুষ হিসাবে। অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলেই কাকলী ভাবতো এই সময়টা বুঝি মিথিলার সঙ্গে কাঁটিয়েছে কৌশিক। তাইতো বাসায় ফিরলেই কৌশিককে প্রতিটা সেকেন্ডের হিসাব দিতে হয়েছে কাকলীর নিকট। পিতার অঢেল সম্পত্তির মালিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর কাকলী কৌশিককে ভালবাসার মানুষ হিসাবে গ্রহণ করতে পারে নাই কখনো। বরং হিংসা তার প্রেমকে ধ্বংস করেছে একটু একটু করে সবটুকু। সম্পদ দিয়ে মানুষের মন পাওয়া যায় না, মানুষের মন পাইতে হলে আরেকটি মানুষের মন থাকা লাগে। এই সত্যটা আজ কাকলী উপলব্দি করতে পারলেও সম্পদের গৌরবে হার মানতে নারাজ কৌশিকের নিকট। অথচ কৌশিক জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েও কাকলীর হৃদয়ে ভালবাসার ঘর তৈরী করতে পারেনি। আজ মিথিলার সঙ্গে কথা বলে জীবনে কত বড় ভুল করেছে সেই হিসাবটা খুব সহজেই করে ফেলে কৌশিক। জীবনের অংকটা একবার ভুল হয়ে গেলে আর কখনো মিলানো যায় না সেটাও বুঝতে পারে সে।
ভাইয়া আপনার শরীরে মনে হচ্ছে অনেক জ্বর, এই বলে ডান হাতটা কৌশিকের কপালে রাখে মিথিলা। জ্বরের উত্তাপে গাঁ পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থা দেখে বিস্ময়ে কেঁপে ওঠে সে, কিন্তু হাত কপাল থেকে সরিয়ে নেয় না। মিথিলা খুজে পায় কৌশিকের হৃদয়ের উত্তাপ। ভুলে যায় সে এখন অফিসে, এটা কোন সেবাশ্রম নয়। অনেক আশার চাওয়ার পর প্রাপ্তির আনন্দে মিথিলার চোখে জ্বল নেমে আসে, যার এক ফোটা গড়িয়ে কৌশিকের শরীর স্পর্শ করে। কৌশিক মিথিলার হাতের পরশ পেয়ে হয়ে যায় বাক্যহীন। কখনো কাকলীর নিকট থেকে এমন স্নেহমাখা পরশ পেয়েছে কিনা সেই ভাবনায় ব্যকুল। হাত সরিয়ে নিতে বলে না আবার হাতটা আরো কিছু সময় রাখতেও বলে না সে।

অফিসে যাওয়ার সময় কাকলীর সাথে কৌশিকের মনমালিন্য নতুন কিছু নয়। আজও সেটার ব্যতিক্রম ছিল না। রাত থেকেই কৌশিকের শরীরটা ভাল লাগছিলোনা। সর্বাঙ্গে ব্যাথা অনুভব করায় বিনয়ের সাথে কাকলীকে শরীরটা ম্যাসাজ করতে অনুরোধ করতেই মনমালিন্যের সূত্রপাত ঘটে। "আমি তোমার সেবাদাসী নই যে না ঘুমিয়ে সারারাত তোমার শরীর ম্যাসাজ করতে হবে" বলেই কাকলী কোলবালিশটা নিয়ে অন্য কক্ষের বিছানায় ঘুমিয়ে রাত কাটিয়েছে কৌশিককে একা রেখে। সারারাত কৌশিকের ঘুম হয়নি, যদিও একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়েছিল তখন শুধুমাত্র ভুল বাক্যলাপ করেছে একা একাই। সকালে নাস্তা না খেয়ে অফিসে রওনা হওয়ায় কাকলী "ছোটলোক" বলেই শুরু করে সংলাপটা। বরাবরই কাকলী ঐ বাক্যটি প্রয়োগ করে কৌশিকের সাথে। তবে কৌশিক ভাগ্য দেবতাকে দোষারোপ করেই নিজেকে শান্তনা দেয় সবসময়। তবে আজকের ব্যপারটা ছিল ব্যতিক্রম। কৌশিক সচরাচর কাকলীর ভৎসনার কোন জবাব দেয় না। আজ শুধু ভাগ্য বিধাতাকে দোষারোপ করে "আমার কপালে কেন যে এই অপদেবী জুটেছিল!!" বলে একটা দির্ঘশ্বাস নেওয়ায় কলহটা মাত্রা ছাড়িয়ে ঝগড়ায় রূপ নেয়।

"মিথিলা আমি বড় অন্যায় করেছি আমার বিবেকের সাথে, তোমার সাথে। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও" বলে কৌশিক মিথিলার হাত চেঁপে ধরে কপালে সাথে।
"আপনার জ্বর খুব বেশী, আপনাকে দ্রুত ক্লিনিকে নেওয়া প্রয়োজন" বলে কৌশিকের কপাল থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়ে অফিসের বসসহ অন্যান্য সহকর্মীদের অসুস্থতার সংবাদটা জানিয়ে দেয় মিথিলা। সংবাদ পেয়ে অফিসের অন্যান্য সহকর্মীরা এসেছে কৌশিককে দেখার জন্য। কৌশিকের বাসায় ফোন করা হয়। কাজের বুয়া ফোন রিসিভ করে জানিয়ে দেয় "খালাম্মা বাসায় নেই"। কাকলীর মোবাইল নম্বর জানেনা অফিসের কেউ। তাই কাকলীকে সংবাদটা জানানো সম্ভব হয় না তাদের। সকলের সিদ্ধান্তে কৌশিককে চিকিৎসার জন্য ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। অন্যদের সাথে মিথিলাও ক্লিনিকে গিয়েছে কৌশিককে দেখার জন্য। সহকর্মীরা কৌশিকের নিকট তার স্ত্রী কাকলীর মোবাইল নম্বর জানতে চাইলে কৌশিক অস্বীকৃতি জানায় নম্বর দিতে। ডাক্তার ইতিমধ্যে কৌশিককে দেখে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য বলেছেন।

কৌশিকের রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে আরো কিছু সময় বাঁকি আছে। মাথায় ঠান্ডা পানি দেওয়ায় জ্বর কিছুটা কমেছে। কৌশিক ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে তাকে দেখতে যেসকল সহকর্মীরা এসেছে তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় জানাচ্ছে। অনেকে চলেও গিয়েছে অফিসে। মিথিলা একলা বসে কৌশিকের কেবিনের বিছানার পাশে। নির্বাক দুই জোড়া চোখ একে অপরের দিকে তাকিয়ে। যেন সমুদ্রের ওপারে মরিচিকার মাঝে কিছু দেখার চেষ্টা। না তেমন কিছুই দেখতে পায়না দুই জোড়া চোখ। তবুও চেষ্টা নিরন্তর। বিরক্তিকর সঙ্গী নয় বরং প্রয়োজনীয় সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা খুজে ফিরে চার'টি চোখ। নিরবতা ভেঙ্গে কৌশিক প্রশ্ন ছুড়ে দেয়-
তুমি অফিসে যাবে না?
হ্যাঁ, আপনার স্ত্রী না আসা পর্যন্ত আমি আছি, তিনি আসলেই আমি চলে যাবো।
আর যদি না আসে?
৪টি শব্দ দিয়ে গড়া প্রশ্নটির উত্তর খুজে পায় না মিথিলা। কাঁচের জানালার বাইরে ব্যস্ত শহর। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বাইরের শব্দ প্রবেশ করার সুযোগ পায় না। তবুও আশ-পাশে তাঁকিয়ে দেখে নেয় মিথিলা। না কেউ নেই আশ-পাশে। কৌশিকের চোখে চোখ রখে অগত্যা বলে ওঠে "সুখের সময় না পারেন অন্ততঃ দুঃখের সময় আমাকে আপনার সহযোগীতা করার সুযোগ দিলেই নিজেকে ধন্য মনে করবো"।
সত্যি বলছো?
হ্যাঁ সত্যি বলছি।
আবার দুই জোড়া চোখ একই সরল রেখায় আঁটকে যায়। অনেকটা সময় কেঁটে যায় এভাবেই। নার্স এসে নিরবতা ভেঙ্গে কৌশিকের শরীরের তাপ মেপে স্বাভাবিক দেখতে পায়। অভয় দিয়ে নার্স প্রস্থান করলে মিথিলাও চলে যেতে উদ্যত হয়।
দাড়াও মিথিলা.. তুমি না বলেছো আমার স্ত্রী না আসা পর্যন্ত তুমি থাকবে?
হ্যাঁ বলেছিলাম, কিন্তু আর কতক্ষন?
যতক্ষন না আমার স্ত্রী আসে।
ভাইয়া বিকেল হয়ে যাচ্ছে, বাসা থেকে চিন্তা করবে। আপনার স্ত্রীকে সংবাদ দেন, তিনি দ্রুত চলে আসবেন।
সে আর কখনোই আসবে না, তাও কি তুমি চলে যাবে?
এটা কি বলছেন ভাইয়া, ভাবীকে সংবাদ দিন প্লিজ।
তোমার ভাবী আজ সকালে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গিয়েছে। আর কখনো ঐ মুখ আমি দেখতে চাই না। প্লিজ মিথিলা তুমি তোমার কথা রাখো....
থমকে দাড়ায় মিথিলা। জীবনের কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য খুব কম সময় মিথিলার হাতে। জানালার কাচের মধ্যে দিয়ে যতদুর চোখ যায় তার সবটাই ব্যস্ত নগর। এত বড় ব্যস্ত নগরের মাঝে থমকে দাড়িয়ে থাকতে বিব্রতবোধ করে সে। সময় পেরিয়ে যায় টিক টিক ঘড়ির শব্দে। হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে সময়ের সাথে। নির্বাক কণ্ঠে কি বানী শোনাবে সে প্রতিক্ষায় কৌশিকের দু'টি কান। সম্মূখে পা বাড়াবার দুঃসাহস হয় না মিথিলার। মুখ ফিরিয়ে কৌশিকের দিকে তাকাইতে লজ্জবোধ করে মিথিলা।

ডাক্তার এসে মিথিলার হাতে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়ে দেয় "রিপোর্টে তেমন অসুবিধা পাওয়া যায়নি। রাতে ঘুম কম হওয়ায় এবং স্নায়ু চাপ বেঁড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। আপনার স্বামী বিপদমুক্ত, তবে ঝুঁকিমুক্ত নয়। ওনাকে টেনশন ফ্রি রাখতে ভুল করবেন না। ইসিজিতে হার্টে সামান্য সমস্যা ধরা পড়েছে। এই ঔষধগুলো সময়মত খাইয়ে দিবেন। আশা করি আর কোন সমস্যা হবে না। আপনাদের দাম্পত্য জীবন সুখময় হোক এ কামনা রইল।"

ডাক্তার দ্রুত বিদায় নিয়ে চলে যায়। কেবিনে দুই জোড়া চোখ একে অপরের দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধ হাসির পরশে খুজে পায় জীবনের অনাবিল আনন্দ। সে আনন্দ শুধু আজকের নয়, আগামীর...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ২:১৯
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×