somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিঁপড়া সমাচার

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তোমরা ওই ছড়াটা নিশ্চয়ই পড়েছো, ওই যে ‘পিপীলিকা পিপীলিকা / দলবল ছাড়ি একা / কোথা যাও, যাও ভাই বলি’। আজ আমরা চলো সেই পিপীলিকা বা পিঁপড়া নিয়ে খানিক গল্প করে আসি। তোমরা হয়তো ভাবছো যে এইটুকু পিচ্চি একটা প্রাণী- পিঁপড়া, তাকে নিয়ে আবার গল্প হয় নাকি! আহা, শোনোই না! আজ হয়তো এমন কিছু জানতেও পারো যা তোমাদের এতদিন জানাই ছিলো না

পিঁপড়া হচ্ছে এমন একটি প্রাণী, যে সব ধরনের প্রকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করেও লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পৃথিবীতে বেঁচে আছে। প্রায় ১২ হাজার প্রজাতির পিঁপড়া রয়েছে পৃথিবীজুড়ে। যে কোনো প্রজাতিতেই সাধারণত তিন ধরনের পিঁপড়া থাকে- রাণী পিঁপড়া, সৈনিক পিঁপড়া ও শ্রমিক পিঁপড়া। রাণী পিঁপড়া ও শ্রমিক পিঁপড়ারা মেয়ে হয়, অন্যদিকে সৈনিকের ভূমিকা পালন করে ছেলে পিঁপড়ারা। রাণী পিঁপড়ার একমাত্র কাজ হলো ডিম পাড়া। তাদের চিনবে কিভাবে? শুধু রাণী পিঁপড়াদেরই পাখা থাকে।

সারাজীবন ধরে রাণী পিঁপড়া শুধু খায়, ঘুমায় আর ডিম পাড়ে। তার সেবার জন্য রয়েছে শ্রমিক পিঁপড়া। এদের কাজ হলো ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করে আনা। আর সেই খাবার পাহাড়া দেয়ার দায়িত্ব থাকে সৈনিক পিঁপড়াদের ওপর। তাছাড়াও অন্য পিঁপড়াদের জায়গা-জমি দখল করতে এবং নিজেদের বাসাবাড়ি রক্ষা করার দায়িত্বও সৈনিক পিঁপড়াদের। অন্যান্য পিঁপড়া বস্তি আক্রমণ করে সৈনিক পিঁপড়া খাবার ও ডিম নিয়ে আসে। সেই ডিম ফুটে যে পিঁপড়ার বাচ্চারা বের হয় তারা নতুন বস্তিতে চাকর-বাকরের মতো ফাই-ফরমাশ খাটে। ভাবছো পিঁপড়া তো খুব খারাপ প্রাণী, তাই না? কিন্তু এটাই যে ওদের সমাজের রীতি!

পিঁপড়া ঠিক মানুষের মতোই বেশ সামাজিক জীব। অর্থাৎ এরাও দল বেঁধে থাকে। এক একটা পিঁপড়ার বস্তিতে সাধারণত মাত্র একটা রাণী পিঁপড়া থাকলেও শ্রমিক ও সৈনিক পিঁপড়ার সংখ্যা কয়েক লক্ষ থেকে কয়েক কোটি পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত এরা মাটির নিচে বাসা বানিয়ে থাকে।

আর একটা মজার বৈশিষ্ট্য রয়েছে পিঁপড়াদের। এক একটা পিঁপড়া তার নিজের ওজনের চেয়ে ২০ গুণ বেশী ওজনের জিনিস বহন করতে পারে। ব্যাপারটা কিরকম? ধরো, ক্লাস টু তে পড়া এক ছেলে কাঁধে একটা গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে! কি বিশাল ব্যাপার তাই না?

পিঁপড়ারা কিন্তু কানে শোনে না। ফলে মাটির কম্পন অনুভব করেই তাদের কানে শোনার কাজ চালাতে হয়। এদের আবার ফুসফুসও নেই। তার বদলে রয়েছে সারা গায়ে অসংখ্য ছোট ছোট গর্ত। সেগুলো দিয়েই শ্বাসকার্য চালিয়ে নেয় ওরা। ও হ্যাঁ, আর একটা কথা। পিঁপড়ারা খুব বেশি মারামারি না করলেও, একবার শুরু করলে শত্রুকে খুন না করা পর্যন্ত কিন্তু থামেনা!

এতোক্ষণ তো পিঁপড়া সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। এবার শোনো বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পাঁচটি পিঁপড়ার কথা।

আগুন পিঁপড়া (Fire Ants)

এই পিঁপড়ার কামড় খেলে কামড়ের জায়গাটা অনেক্ষণ ধরে আগুনের মতো জ্বলতে থাকে। এ কারণেই এর নাম হয়েছে আগুন পিঁপড়া। ভুলক্রমেও যদি এই পিঁপড়ার বাসায় পা দিয়েছ বা কোনোভাবে একে বিরক্ত করেছো, তো মরেছো। একটা আগুন পিঁপড়া যদি কাউকে কামড় দেয় তো তার পেছন পেছন লক্ষ লক্ষ আগুন পিঁপড়া কামড়াতে এগিয়ে আসে। যদি দৌড়ে পালাতে না পারো তাহলে তো খবরই আছে বলতে হয়! ছোট ছোট প্রাণী এমনকি গরুর বাচ্চার (বাছুর) মতো বড়ো প্রাণীদেরও এই আগুন পিঁপড়া নিমিষেই কাবু করে ফেলতে পারে।

আর্জেন্টিনার পিঁপড়া (Argentine Ants)

আর্জেন্টিনার পিঁপড়া হচ্ছে পিঁপড়াদের মধ্যে সবচেয়ে দখলদার। এরা সব সময় অন্যান্য পিঁপড়াদের বাসা দখল করার চিন্তায় থাকে। মাঝেমাঝে তো এরা মানুয়ের বাসাও দখল করে ফেলে। যেখানে বেশির ভাগ পিঁপড়াই মাটির নিচে বাসা বানিয়ে থাকতে পছন্দ করে, সেখানে এদের মানুষের ঘরের ভিতরে বাসা বানাতেও আপত্তি নেই।

সৈনিক পিঁপড়া (Army ant)

ভয়ঙ্কর শক্তিশালী হয় সেনা পিঁপড়াদের চোয়াল। তোমার গায়ে কামড় দিলে তুমি যদি একে টেনে ছুটাতে চাও, দেখবে পিঁপড়ার শরীরটা ছিঁড়ে চলে এসেছে কিন্তু মাথাটা ঠিকই তোমাকে কামড়ে ধরে আছে। এদের এক একটি দলে দুই কোটিরও বেশী পিঁপড়া বাস করে। রাণী সেনা পিঁপড়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পিঁপড়া হিসেবে পরিচিত। এরা যেখানেই যায়, পুরো দলবল সাথে নিয়ে যায়, আর যে প্রাণীকেই পথে পায় তাকেই আক্রমণ করে বসে। আফ্রিকান এই পিঁপড়াকে দেখলে হাতির মতো বিশাল প্রাণীও দৌড়ে পালায়। ও ভালো কথা, সেনা পিঁপড়ার আরেক নাম কিন্তু ‘খুনিপিঁপড়া’।

বুলডগ পিঁপড়া (Bulldog Ant)

বুলডগ পিঁপড়া যে কতোটা ভয়ঙ্কর তা বোঝানোর জন্য এর চেহারাই যথেষ্ট। অস্ট্রেলীয়ায় প্রায় প্রতিবছরই এই পিঁপড়ার কামড়ে বেশ কিছু মানুষ মারা যায়। আর বুলডগ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন প্রজাতির পিঁপড়াদের মধ্যে অন্যতম। প্রচন্ড দক্ষ শিকারী এবং প্রখর দৃষ্টিশক্তির অধিকারী এই বুলডগ পিঁপড়া।

গুলি পিঁপড়া (Bullet Ants)

শরীরে গুলি লাগলে যেমন যন্ত্রণা হয়, এই পিঁপড়ার কামড় খেলেও একই ধরনের ব্যাথা হয় বলেই এর নাম গুলি পিঁপড়া। গুলি পিঁপড়া পৃথিবীর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হুল-এর অধিকারী। মৌমাছি, ভোমরা, কাকড়া বিছা এর কাছে কিছুই না। দক্ষিণ আমেরিকায় কিছু উপজাতি আছে যারা নিজেদের শক্তি প্রমাণ করার জন্য ইচ্ছে করে এই পিঁপড়ার কামড় খেয়ে থাকে। যে যত বেশীক্ষণ ধরে চিৎকার না করে এই পিঁপড়ার কামড় সহ্য করতে পারবে, তাকেই সবচেয়ে শক্তিশালী বলে ঘোষণা করা হয়। এই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর অবশ্য কয়েকদিন তাদের বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁপতে হয়। দেখো, ভুলেও যেন নিজের শক্তি দেখানোর জন্য পিঁপড়ার কামড় খেতে যেওনা। মনে রেখো, সাইজে ছোট হলেও পিঁপড়া কিন্তু মানুষের চেয়ে অনেকগুণ বেশী শক্তিশালী।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×