somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৩য় স্থান অধিকারী একটি ভালবাসার গল্প, পড়তে পারনে

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাম: গল্পটা ভুল বোঝাবুঝিরও হতে পারতো!

তিতলি হেসে ফেললো। অথচ আমি ওকে রাগানোর জন্য কথাটা বলেছি। বরাবরই আমি ওর হাসি দেখে মুগ্ধ হই। হাসলে গালে একটা টোল পড়ে। উপরের সারির দাঁতগুলো বের হয়। ঠোঁটদুটো একটু ফাঁকা হয়ে যায়। মুগ্ধ হওয়ার জন্য আসলে এসব মূল কারণ নয়। মুগ্ধ হতে হয় বলে হই, ব্যাপারটা তাও নয়। কিন্তু আমি মুগ্ধ হই! প্রতিদিন সকাল হওয়ার মতো ধুব্র সত্য হলো ওর হাসি আমাকে মুগ্ধ করে। তার চেয়েও বড় সত্য আমি ওকে ভালবাসি।
হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকালো তিতলি। বললো, ‘হ্যা লাগে।’
এবার আমার রাগ হলো। তীব্র রাগ নিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ও আবারও হাসলো।
‘তবে একজনের সঙ্গে।তুই জানিস না এটা তুই। তুই ছাড়া আমার কে আছে কথা বলার।’
খুব যখন রেগে যায় তিতলি তখন ‘তুই’ করে বলে। আমি ওকে নিষেধ করিনি। কারণ মাঝে মাঝে, খুব আবেগ যখন ভিতরে চলে আসে তখন আমিও বলি। ঐ মুর্হুতটা কিন্তু আলাদা। অবশ্য তিতলির মাঝে মাঝে আরও একটা জেদ চাপে। আমাকে সে আপনি করে বলবে। হঠাৎ হঠাৎ ফোন করে বলবে, ‘রবি, শোন আজ থেকে আমি তোমাকে আপনি করে বলবো। বুঝছেন।’ আমি হেসে বলি, ‘ঠিক আছে বলো। আমিও তাহলে তোমাকেও আপনি করে বলবো।’
কিন্তু তা হবে না। শুধু ওই বলবে। আমি সম্মতি দেয়ার পর বলবেও কিছুন।
তিতলির চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। আমার সঙ্গে দেখা করে সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরতে হবে। আমি ওকে রিকশায় তুলে দেই। বরাবরের মতো ও হাত নাড়ে। রিকশা চলার সময় যথারীতি পিছনের পর্দা সরিয়ে আমার দিকে তাকায়। সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহুর্তে আসা একটু আলো পড়ে ওর মুখে। কি যে সুন্দর লাগে। বৃষ্টি নামার আগ মুর্হুতে আকাশ যেমন হয় সেরকম মুখটা বানিয়ে হাসার চেষ্টা করে। আমি জানি যেতে যেতে কমপক্ষে ৪বার ফোন করবে। পৌছে একবার। তারপর একটু পর পর।
আজ ওর রিকশাটা চলতে শুরু করার পরই আমার মনে পড়ে যে, ব্যাপারটা নিয়ে আমার গতকাল থেকে খারাপ লাগছে। যে ব্যাপারটা নিয়ে অনেক রেগে গিয়েও আমি প্রকাশ করিনি। যে ব্যাপারটা নিয়ে আমি কয়েক ঘণ্টা ধরে কয়েক’শ বছরের সমান পুড়ছি। সেই ব্যাপারটাই ওকে বলা হয়নি। কেন ওর ফোন গতকাল রাতে আমার সঙ্গে কথা বলার পর আবার ওয়েটিং ছিল? কেন আমি জানতে চাইলাম না রাত ১টার পরে আমি ছাড়া ওর কার সঙ্গে কথা বলা জরুরি?
তিতলি আর আমার সর্ম্পক চার বছর এগারো মাস। ও প্রেম ব্যাপারটা বুঝতে শেখার পরপরই ও আমাকে বেছে নিয়েছে। আর আমি প্রেম সর্ম্পকে খানিকটা জেনেই ওর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছি। কিভাবে এই প্রেমটা সম্ভব হলো এটা অন্য গল্প। সব প্রেমিকের মতো আমারও মনে হয় আমার প্রেমটা যেভাবে শুরু হয়েছে এটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শুরু হওয়া। এভাবে কেউ কখনই হওতো প্রেমে পড়েনি, করেওনি। করবেও না।

তিতলির ফোনটা আজও ওয়েটিং। আমার মেজাজও গরম হয়ে গেল যথারীতি। গত বছর যে জ্বর হয়েছিল সেটাও এত গরম করতে পারেনি আমার শরীর। কিন্তু তিতলির ফোন ওয়েটিং আমাকে তারচেয়েও বেশি গরম করে দিল। অপো করতে লাগলাম। কখন তার ফোন দেয়ার সময় হয়। ১মিনিট, ২ মিনিট, ৩ মিনিট...৫ মিনিট। মিনিটগুলো কি যে দীর্ঘ মনে হচ্ছে। টানা ১০ মিনিট পর ফোন এল। আমি ফোনটা ধরে কিছুই বললাম না। কিছু জানতেও চাইলাম না। আমি মাঝে মাঝে এমন করি। খুব যখন রেগে যাই তখন। শুধু বললাম, তিতলি, আজ আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। ঘুমালাম। তিতলি জানে, এই মূহুর্তে কথা বাড়াতে গেলেই চরম রাগারাগি হয়ে যাবে। এই রাগারাগি না খেয়ে থাকা পর্যায়ে চলে যাবে। তার চেয়ে এই ভাল।
আমার একটা স্বভাব হলো খুব রেগে গেলে কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে পারিনা। শুধুমাত্র ঘুম ছাড়া। মাঝে মাঝে খুব যখন রেগে যাই, ক্ষোভ জমে যায় তিতলি উপর তখন খুব ইচ্ছে করে একেবারে ঘুমিয়ে যাই। নিরব ঘুম। যে ঘুম আর ভাঙবে না।
রাগ ভাঙার পর তিতলিকে যখন কথাগুলো বলি। তিতলি আমার মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে, ‘ওরকম ঘুম ঘুমানোর সময় আমাকে সঙ্গে নিও। খবরদার আমাকে রেখে কখনই ঐ ঘুমে যাবে না। বুঝছো পল্টুর বাপ।’ (তিতলি মাঝে মাঝে আমাকে পল্টুর বাপ বলে ডাকে। কারণ আগেই কথা হয়েছে, বিয়ের পর ছেলে হলে নাম রাখবো পল্টু, মেয়ে হলে তুনতুন।)
এভাবে চলে কয়েকদিন। যেদিন রাগটা চরম পর্যায়ে চলে যায় সেদিন তিতলির মোবাইল ফোন থেকে ফোন দেয় রুনা আপু। আমি ধরে চুপ করে থাকি! তারপর রুনা আপুই বলতে থাকে। কি ব্যাপার রবি, কথা বলছো না কেন? আমি তোমার রুনা আপু।’ সালাম দেয়ার পর কথা বলে ওঠেন তিনি। ‘শোন, কদিন ধরে তুমি তিতলির ফোন ওয়েটিং পাচ্ছ বলে রেগে আছ মনে হয়। শোন আমার ফোনটা হঠাৎ করে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ওর ফোন দিয়ে তোমার হবু দুলাভাইয়ের সঙ্গে রাতে আমি একটু কথা বলছি। আজই আমি নতুন ফোন কিনবো। তুমি ওর সঙ্গে রাগারাগি করোনা ভাই। প্লিজ।’
কথাগুলো শোনার পর আমার সকল রাগ বরফ হয়ে গলে পরে। আমি খুব লজ্জায় বলে উঠি,‘আপু ওকে কি একটু দেয়া যাবে?’


(গল্পটি প্রথম আলোর সাময়িকী ছুটির দিনে, এ মাসের ভালবাসার অনুগল্প সংখ্যায় ৩য় স্থান অর্জন করেছে। কোন কারণে অপূর্ণ বাদ দিয়ে শুধু রুবেল দিয়ে ছেপেছে তা আমার জানা নাই। আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম।)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৩৪
১৯টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×