somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: আদর্শ স্ত্রী

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আমার জীবনে সবচেয়ে অল্প সময়ে লেখা একটা গল্প। বিষয়: আমাদের শাহবাগ।)

টিভিটা বন্ধ করলেন তিনি। হাতে তসবি ছিল সেটা সরিয়ে রাখলেন বালিশের পাশে। অনেকক্ষণ ধরেই টিভি দেখছিলেন। সন্ধ্যার পরে ঈশার নামাজের আগ পর্যন্ত তিনি নিয়ম করে টিভি দেখেন। ঈশার নামাজের আযান হলো মাত্র। অবশ্য আর দশটা গৃহিনীর মতো তার পছন্দের তালিকায় স্টার জলসা, জিটিভি বা স্টার প্লাস নাই। নেই বাংলাদেশী কোন চ্যানেলও। তিনি দেখেন পিচ টিভি ও ইসলামিক টেলিভিশন। জাকের নায়েকের অনুষ্ঠান তার পছন্দের তালিকার এক নম্বরে। আহা... কত সুন্দর করে ইসলামের কথাগুলি বর্ণনা করেন এই মহান মানুষটা।
তবে প্রিয়তে রাখা চ্যানেলগুলি দেখা খানিকটা বিরতি দিয়েছেন তিনি। যেদিন থেকে...। থাক! এটাও তার একটা কষ্ট। তিনি এই কষ্টটা কারো সঙ্গে শেয়ারও করতে পারেন না। যদিও সবাই মোটামুটি জানেই। কিন্তু তার ভিতরের কষ্টটা! এইযে দীর্ঘ জীবন পার করে এসে তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন তবুও কখন কাউকে বলতে পেরেছেন? মাকেও বহুবার চেষ্টা করেছেন বলতে। পারেননি। এই না পারার তালিকায় যে কতকিছু রয়েছে! ছেলেটাকে মানুষ করতে চেয়েছেন নিজের মতো করে। পারেননি। চেয়েছেন মেয়েটাকে নিজের মতো করে বড় করে নিজের পছন্দে বিয়ে দেবেন। পারেননি। অবধারিতভাবে বিয়ের পর থেকেই এ বাড়িতে থেকেছেন কুয়োর ব্যঙ হয়ে। তার সব কথা যেন কুয়োতেই বন্দি থেকেছে এতদিন। নিভৃতে কুয়োতেই ফেলেছেন চোখের জল। সে জলের রং সাদা না কালো দেখার সুযোগ হয়নি কোনদিন।

দুই
বেশ কিছুদিন ধরেই প্রিয়তে রাখা টিভি চ্যানেলের তালিকা পরিবর্তন করেছেন তিনি। এখন যা মন চায় তাই দেখেন। হুট করে মাঝে মধ্যেই তিনি এমটিভি খুলে বসেন। অবিবাহিত সালমান খানের বুক খোলা গানটা দেখতে তার মজাই লাগে। আর কি যে অভ্যাস হয়েছে, ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে মাথায় চিরুণি করতে করতে গুন গুনও করেন। তাও আবার হিন্দী গান। এই বয়সে কি যে সব শুরু হয়েছে নিজের মধ্যে। ভাবতে ভাবতে নিজেই অবাক হন। মানুষটা কতদিন তার কাছে নাই। এই বয়সে শরীরের মধ্যে কোন তাড়নাও নেই তার। তবুও মাঝে মাঝেই ঐ মানুষটা কি জানি ট্যাবলেট খেয়ে আসতো তার কাছে। সেদিন শরীর আর শরীর থাকতো না। যেদিন না পারতো মানুষটা চলে যেত কমলার মা’র কাছে। কমলার মা চিৎকার করে উঠতো তবুও কাউকে বলার ভাষা ছিল না। সেইসব রাতগুলোর কথা প্রায়ই মনে পরে তার। দূর থেকে মনে হতো ওরকম স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অথচ ভেতরটা...! কতটা নোংরা! এই ভাবনা প্রায়ই ভাবিয়ে তোলে প্রায় বৃদ্ধা হতে যাওয়া এই মানুষটাকে।

তিন
বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি বাংলাদেশী চ্যানেল দেখছেন। রিমোট চালিয়ে যে চ্যানেলই দেখতে যান সবখানেই একই দৃশ্য। শাহবাগের প্রজন্ম চত্তর। বাসায় যে পত্রিকাটা রাখা হয় সেটা অবশ্য উল্টো কথা বলে। শাহবাগে সব মুরতাতরা হাজির হয়েছে ফ্যাসিবাদি আন্দোলন কায়েম করতে। কিন্তু টিভিতে সরাসরি প্রচার দেখতে দেখতে অবাক হয়ে যান। এতগুলো তরুনের ঐ একটাই দাবি, একটাই চাওয়া। নিঘূর্ম চোখগুলো ঐ একটা দাবি নিয়ে কি উৎসুক হয়ে আছে। কতদিন অপেক্ষা করতে হবে কে জানে! যতদিন দাবি আদায় না হয় ততদিন রাজপথ না ছাড়ার ঘোষনা দিয়েছে তারা। একারনেই সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললেন তিনি। শাড়িটা ঠিক করে কপালে টিপ পরলেন। বিয়ের পর প্রথমবারের মতো বাইরে বের হলেন বোরকা ছাড়া। কালো বোরকাটা ছুড়লেন তার খাটের নিচে। একটা বড় আর্ট পেপারে লিখলেন।
‘আমার স্বামী কাদের মোল্লার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না।’

১০.০২.২০১৩, হাতিরপুল, ঢাকা
প্রকাশ: `প্রজন্ম চত্তর' বুলেটিন -১২.০২.২০১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×