somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রস্তাবিত উপাধি 'বীর মাতা' কেন? 'মুক্তিযোদ্ধা' নয় কেন?

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বীরাঙ্গনা .হালিমা পারভীনের বক্তব্যঃ

‘‘মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও খাবার সরবরাহ, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা শুশ্রূষা থেকে শুরু করে গোয়েন্দাগিরি, সম্মুখ যুদ্ধ, যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ এবং রাজাকার ও পাক বাহিনীর হাতে বন্দি৷ শত্রুসেনায় বন্দি অবস্থায় শারীরিক ও যৌন নির্যাতন৷ এতো কিছুর বিনিময়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার পরও আজ বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরতে হচ্ছে আমাদের৷ সরকার কি পারে না এসব মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনামূল্যে আবাসন, খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে? স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪০ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে৷ ইতিমধ্যে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন অধিকাংশ বীর সাহসী সৈনিক৷ মাত্র কিছুদিন পরেই হয়তো ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ আর বেঁচে থাকবেন না৷ অথচ এখনও আমরা চিকিৎসা কিংবা যথাযথ মান-সম্মান পেলাম না এই জাতির কাছ থেকে৷''

ডয়চে ভেলের সাথে টেলিফোন সংলাপে অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে কথাগুলো বলছিলেন নারী মুক্তিযোদ্ধা হালিমা পারভীন৷ নিজের অসুখের কথা বলতে গিয়ে হালিমা বললেন, ‘‘বিনা ওষুধেই আমি মারা যাচ্ছি৷ আমার শরীরে তো হরমোন তৈরি হয় না৷ বাইরে থেকে হরমোন সরবরাহ করতে হয়৷ অথচ তা বেশ ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে আমি নিয়মিত সেই চিকিৎসা করতে পারি না৷''

যশোরের বাঘারপাড়ায় ১৯৫৬ সালের ৩ এপ্রিল জন্ম হালিমার৷ পিতা ইসরাইল বিশ্বাস এবং মা আমেনা খাতুন৷ ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন গ্রামের এক দুরন্ত মেয়ে হালিমা৷ নবম শ্রেণীতে পড়তেন৷ জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিলে গ্রামের তরুণ, ছাত্র, জনতা মুক্তিযুদ্ধের জন্য স্থানীয় সংগঠন গড়ে তোলেন৷ সেই সংগঠনের শুরু থেকেই সক্রিয়ভাবে কাজ করতে থাকেন হালিমা৷ মামার বাড়িতেই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি৷ ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধের প্রশিক্ষণে অংশ নেন তিনি৷ পুরুষ যোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একাধিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন৷ বাঘারপাড়া থানা থেকে লুট করে আনেন ১৬ টি রাইফেল৷ পাক সেনা ও রাজাকারদের অনুপ্রবেশ ও যাতায়াত ঠেকাতে রাতের অন্ধকারে ধ্বংস করেছেন বাঘারপাড়া-নারিকেলবাড়িয়া সড়কের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু৷ ডয়চে ভেলের সাথে আলাপচারিতায় জানালেন যুদ্ধের সময় তাঁর নানা বীরত্বপূর্ণ ঘটনার কথা৷
মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন অভিযানে হালিমার এমন সক্রিয় ভূমিকার জন্য এমনকি পাক সেনা ও রাজাকাররা হালিমাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ঘোষণা করেছিল ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার৷ এক পর্যায়ে আগস্ট মাসে এক সম্মুখ যুদ্ধের সময় গুলিবিদ্ধ হন হালিমা৷ ঐদিনের ঘটনা তুলে ধরেন হালিমা৷ তিনি জানান, গুলি খাওয়া সত্ত্বেও তাঁর হাতে থাকা গ্রেনেড ছুঁড়ে মারেন৷ কিন্তু এরপরই অজ্ঞান হয়ে যান তিনি৷ ধরা পড়ে যান পাক সেনা ও রাজাকারদের হাতে৷ প্রথমে বেয়নেটের আঘাতে জর্জরিত করে হালিমাকে সেনা শিবিরে ধরে নিয়ে যায় পাক বাহিনী৷ দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে পাক সেনাদের হাতে আটক ছিলেন তিনি৷ এসময় তাঁর উপর চালানো হয় নির্মম শারীরিক ও যৌন নির্যাতন৷ ৭ ডিসেম্বর যশোর শত্রুমুক্ত হলে তিনিও অন্যদের সাথে বন্দি দশা থেকে মুক্তি পান৷

Click This Link

উনার নিজের কন্ঠে শুনুন সেসব কাহিনী,

Click This Link


‘‘মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের প্রাণবাজি রেখে লড়াই করেছেন৷ দেশকে স্বাধীন করেছেন৷ কিন্তু দেশ স্বাধীন করতে আমরা আমাদের মান-সম্ভ্রম উৎসর্গ করেছি৷ আমাদের মানের কি কোনই মূল্য নেই?'' -- বীরাঙ্গনা রাহেলা বেগম

‘‘বঙ্গবন্ধু আমাদের মাথায় হাত দিয়ে বলে গিয়েছিলেন আমাদের জীবন-জীবিকার দায়িত্ব সব তাঁর৷ কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলেও আমাদের কোন খোঁজ খবর নিলেন না৷ সরকারের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ কিংবা কোন ভাতাও আমাদের ভাগ্যে জোটেনি৷''

‘‘বিয়ের মাত্র তিন মাস পর দেশে যুদ্ধ বাধে৷ আর যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর চোখের সামনে দুই সারিতে ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে পাক সেনারা৷ এরপর বর্বরোচিত নির্যাতন নেমে আসে আমার নিজের উপর৷ রাজাকার ও পাক সেনাসহ ১৩ জন একের পর এক ধর্ষণ করে৷ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায় নদীর ধারে৷''

-- বীরাঙ্গনা শামসুন্নাহার বেগম


Click This Link


এসব শ্রদ্ধেয় বীরাঙ্গনারা কি কেবল সম্ভ্রমই হারিয়েছেন? আর কিছু নয়? উনাদের অনেকেই জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন, কেউ কেউ গোয়েন্দাগিরি করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে, তাহলে কেন শুধু 'বীরমাতা' উপাধির প্রস্তাব করা হচ্ছে? আমরা উনাদের পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করা হোক এই দাবী করছি। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় উনাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে যাবতীয় সাহায্যভাতা, চিকি্তসাভাতা প্রদানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

Click This Link


এটা ২০১১ সাল, ১৯৭২ নয়।

সেই সাথে সারাবিশ্বে যেসব বাংলাদেশী যুদ্ধশিশু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তাদের অন্ততঃ একবার এদেশে আসার আ্মন্ত্রণ জানানো যায় কিনা তাদের জানা-অজানা, চেনা-অচেনা মায়েদের সাথে সাক্ষাত করার জন্য, সে ব্যাপারে মাননীয় সরকারকে ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।







[ কৃতজ্ঞতা: এ পোস্টের সবগুলো তথ্যই ডয়চে ভেলের সৌজন্যে পাওয়া। বিভিন্ন সময়ে সামহোয়ারের ডানপাশে উনাদের সংবাদলিঙ্কগুলোতে ঢু মারি। অনেক খবরের ভিড়ে হারিয়ে যাবে বলে সেইভ করে রেখেছিলাম কিছু।]



একই প্রসংগের এর আগের দুটো পোস্টঃ


একটি রাত, একটি দুঃস্বপ্ন


বীরাঙ্গনাদের তালিকা চাই, যুদ্ধশিশুদের তাদের মায়েদের সাথে সাক্ষাতেরও ব্যবস্থা চাই

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:২৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×