somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যৌন হয়রানী রোধক নীতিমালা এবং আরেকটি ব্যর্থ সমাধান

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ১৪ই মে যৌন হয়রানী রোধে নীতিমালা প্রকাশ করে হাইকোর্ট। বিচারপতি মামুদ হোসেন ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দীকীর সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ এ রায় দেয়। ২০০৮ সালের ৭ই আগস্ট মহিলা আইনজীবি সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী খান কর্মস্থল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী ও শিশু যৌন হয়রানী রোধে দিক নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে বর্তমানের এ রায়। এ নীতিমালায় যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞায় বলা হয়, শারিরীক ও মানসিক যে কোন ধরনের নির্যাতন, ইমেইল, এস.এম.এস, ফোনে বিড়ম্বনা, পর্নোগ্রাফি, অশালীন উক্তি এমনকি কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দরী বলাও এর আওতায় অপরাধ বলে গণ্য হবে। এমনকি পথে চলাচলের সময়ও খারাপ মন্তব্য, অশালীন ইংঙ্গীত যৌন হয়রানীর মধ্যে গণ্য হবে (১৫ই মে, দৈনিক প্রথম আলো)।

তাত্বিক অর্থে খুবই চমৎকার! তবে প্রশ্ন হচ্ছে এই নীতিমালার আলোকে বহুল পচারিত একটি সাবানের বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে ‘ সুন্দরীতমা, সুন্দরীতমা ’ বলে মডেলের পিছনে সাবক্ষনিক ঘুড়ে বেড়ানোকে কি যৌন হয়রানী বলে গণ্য হবে? নাকি তাকে প্রকাশ্যে সুন্দরী বলা হয়েছে এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যাবে? উক্ত বিজ্ঞাপন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে কোন উৎসাহী তরুণ যদি একই গান কোন সাধারণ মেয়ে যিনি কিনা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে অর্থ উপার্জন করেন না, তাকে দেখে গাওয়া হয় তবে? আবার এ নীতিমালার আলোকে কোন পুরুষ তা যেকোন পেশা বা বয়সের হোক না কেন সে যদি বিলবোর্ডে প্রদর্শিত কোন নারীর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকায় তবে কি এই নীতিমালার আলোকে সে অপরাধী বলে গণ্য হবে না? তা যদি হয় তবে আমাদের আদালত আর জেলগুলোতে তো এ ধরনের অপরাধীতে ভরে যাবে কিংবা বলা যায় সেখানে তাদের স্থান সংকুলান হবে না। আর এ নীতিমালার আলোকে সুন্দরী প্রতিযোগীতা ও ফ্যাশন’শোগুলোকে কোন কাতারে ফেলা যাবে যেখানে মেয়েদের অর্ধবসনা করে, রং-চং মাখিয়ে শত লোলুপদের সামনে হাজির করা হয়, যারা তাকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তার গায়ে নাম্বার লাগাতে সাহায্য করে? একদিকে আমাদের রাষ্ট্র মেয়েদের যৌনতার প্রতীক হিসেবে মেয়েদের উপস্থাপন করছে এবং উপস্থিত হতে উৎসাহ দিচ্ছে আবার অন্যদিকে হয়রানী রোধে কঠোর নীতিমালার পক্ষে রায় দিচ্ছে। উৎসকে নিরাপদে রেখে তৃণমূলে অপরাধী তালাস!

এ ধরনের রায়ের কার্যকারীতা অপরাধীদের মনে হাস্যরস ছাড়া আর কিছুর উদ্রেক করবে বলে মনে হয় না। এ রায় আসলে আমাদের বিচার ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা তথা রাষ্ট্রের দ্বৈত রূপেরই প্রকাশ ঘটায় যা আমাদের যৌন হয়রানী কেন সব ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে তার ব্যর্থতা প্রকাশ করে। যে ব্যবস্থায় আমাদের আশা, আকাংখা কিংবা বিশ্বাসের প্রতিফলন নেই তার তো এরকমই হবার কথা।

এ রায় প্রকাশিত হবার পর অনেকেই আনন্দিত হয়েছে, কিছু পত্রিকার আনন্দের মাত্রা ছিল অতি মাত্রায় বেশী(মজার ব্যাপার হলো নারী স্বাধীনতার নামে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপনের প্রতিযোগীতায়ও তারা অগ্রগামী )। তারা এ রায়কে যৌন হয়রানী রোধে ‘মাইল ফলক রায়’ হিসেবে রায় হিসেবে মন্তব্য করেছে। তাদের মতে “এই রায়ের ফলে দীর্ঘদিনের আন্দোলন সার্থক হলো এবং প্রতিবাদ তার ভাষা ফিরে পেলো।” আলোকিত নামধারী, প্রগতীর বাহক এই বরেন্য ব্যক্তিবর্গ যে রাষ্ট্রে এ দ্বৈত রূপ এবং এই রায়ের কার্যহীনতা বুঝতে পারছেন না, তা নয়। বরং জেনে বুঝেই এই অসহণীয় ব্যবস্থা বজায় রাখতে জনমতে মিথ্যা আশা জাগাতে আর কিছু সময়ের জন্য ক্রোধকে প্রশমিত করে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এ ধরনের নাটকের আয়োজন করা হয়। তবে তাদের মনে রাখা উচিত, একসাথে সবাইকে বোকা বানানো যায় না। খুব বেশী দিন আর তাদের এসব পুরনো কৌশল কাজে আসবে না। সমাজের সত্যিকারের সচেতন অংশ একসময় ঘুমন্ত অংশকে জাগিয়ে তুলবেই ইনশাআল্লাহ্। জনগণ এই অনাচার ও হঠকারীপূর্ণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, খিলাফাহ্-র পক্ষে অচিরেই ঐক্যবদ্ধ হবে। যেখানে উৎস থেকেই সকল সমস্যার সমাধান করা হবে, কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠির সুবিধা মাথায় রেখে আইন প্রণয়ন করা হবে না। ফলে দ্বৈততা বিবর্জিত এ ব্যবস্থায় আমাদের আকাঙ্খার সঠিক প্রতিফলন ঘটবেই।


( পূর্বে প্রকাশিত: ‘আগামীর পরিবর্তন’ সংখ্যা: ১৯ )

যে কোন মন্তব্য বা প্রশ্নের জন্য মেইল করুন:
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×