গতকাল ৩০শে ডিসেম্বর সকাল ৯ঃ১৭ মিনিটে ব্লগার ফকির ইলিয়াস “বিদেশী দূতাবাসগুলো তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী রাখতেই পারে” View this link একটি পোষ্ট দিয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাইঃ-
বিদেশী দূতাবাসগুলো তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী রাখতেই পারে:
১।কোন সূত্র বা রেফারেন্সের উপর বা রেজুলেশনের ভিত্তি করে একথা বলেছেন আপনার পোষ্টে তার সুস্পষ্ট কোন উল্লেখ নেই ।
আপনার অবগতির জন্য বলছি, জাতিসংঘের সনদ জেনেভা কনভেনশনের কোথাও কিন্তু উল্লেখ নেই যে কোন দেশ অন্য দেশে অবস্থিত তার দুতাবাসের নিরাপত্তার জন্য তার নিজস্ব ইউনিফর্মড বাহিনী নিয়োগ করতে পারে।
২।জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী প্রত্যেকটি দুতাবাসকে সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করা রিসিভিং কান্ট্রি বা স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব।
৩।কোন দুতাবাস যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তবে স্বাগতিক দেশের সরকারের কাছে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য আবেদন করতে পারে এবং স্বাগতিক সরকার তার যথার্থতা যাচাই পূর্বক বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে।
৪।কোন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন যুদ্ধ, রাজনৈতিক দাঙ্গা বা এমন কোন অবস্থার সৃষ্টি হয় যার কারনে স্বাগতিক দেশের পক্ষে দুতাবাসগুলিকে পর্যাপ্ত বা নিশ্চিত নিরাপত্তা বিধান অসম্ভব হয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে যে কোন দুতাবাস স্বাগতিক দেশের অনুমতি সাপেক্ষে তার দুতাবাসের নিরাপত্তা বিধানে নিজস্ব ইউনিফর্মড বাহিনী মোতায়েন করতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও কোন দুতাবাস স্বাগতিক দেশের অনুমতি ব্যতিরেকে দূতাবাসের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব বাহিনী মোতায়েন করতে পারে না।
৫।জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী একটি দেশের দূতাবাস বা তার আভ্যন্তরীন এলাকা সেই দেশের একান্তই নিজস্ব। সেই দুতাবাসের চার দেয়ালের ভিতর তারা ডিপ্লোমেটিক ইমুউনিটি ভোগ করতে পারেন। স্বাগতিক দেশের নিরাপত্তা বাহিনী অনুমতি ব্যতিরেকে দুতাবাসের ভিতর ঢুকতে পারে না। তবে এই ডিপ্লোমেটিক ইমুউনিটিরও কিছু সীমারেখা আছে। ইচ্ছা করলেই সেই চার দেয়ালের ভিতর নিজস্ব বাহিনী, ট্যাংক, কামান ইত্যাদি বসাতে পারে না।
“ঢাকাস্থ আমেরিকান দুতাবাসে অনেক মার্কিন কর্মী রয়েছে যারা নিরাপত্তা রক্ষা করে:”
১। আপনার এই উক্তিটি সত্য। শুধু কর্মী নয় তারা উইনিফর্মড বাহিনী সোজা কথা আমেরিকান মেরীন কোরের সদস্য। মার্কিন দুতাবাসের বাহ্যিক বা এর চারপাশে নিরাপত্তার জন্য একটি প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানীর বাংলাদেশী কর্মীরা নিয়োজিত থাকলেও এর আভ্যন্তরীন নিরাপত্তার জন্য মার্কিন মেরীন কোরের প্রচুর সদস্য নিয়োজিত আছে। এমনকি তাদের দুতাবাসের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ও এদেশে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঢাকাস্থ মার্কিন দুতাবাসে একটি পৃথক উইং রয়েছে। যার প্রধান লেঃ কর্ণেল পদ মর্যাদার মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন অফিসার। এটা উইং কিন্তু ঢাকাস্থ মার্কিন দুতাবাসের সামরিক উপদেষ্টা বা ডিফেন্স এ্যাটাসে অফিস থেকে একদমই পৃথক একটি উইং। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন কোন দুতাবাসের নিযুক্ত সামরিক উপদেষ্টা সেই দুতাবাসের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেন। আসলে সামরিক উপদেষ্টার দায়িত্ব হচ্ছে সেনডিং ও রিসিভিং কান্ট্রির মধ্যে সামরিক সহযোগীতা প্রদান।
২।এখন প্রশ্ন উঠতে পারে জেনেভা কনভেনশনে কোন ধারা না থাকা সত্ত্বেও ঢাকাস্থ মার্কিন দুতাবাসে কিভাবে মেরীন কোরের সদস্যদের নিয়োজিত করলো? এর সরাসরি উত্তর হচ্ছে মার্কিনীরা জেনেভা কনভেনশনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করেছে। এটা তারা করেছে তাদের পেশী শক্তি বা বিশ্বব্যাপী তাদের দাদাগিরীর কল্যাণে।
আপনারা জানেন সোভিয়েট উইনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর মার্কিনীরা সারা বিশ্বব্যাপী তাদের একছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই একছত্র আধিপত্যের বলেই মার্কিনীরা বাংলাদেশ সহ বিশ্বের উন্নয়নশীল অনেক দেশেই তাদের দুতাবাসগুলিতে মেরীন কোরের সদস্যদের মোতায়েন করেছে। কিন্তু তাই বলে কি আমরা অন্যদেশকেও যেমন ভারতকেও মার্কিনীদের সমকক্ষ ভাববো??
এখন আমি গত সপ্তাহ খানেক ধরে উপরোক্ত ইস্যুতে বাংলাদশ সরকারের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চোর পুলিশ খেলার ব্যাপারে কিছু বলতে চাই। প্রসঙ্গটিতে যাওয়ার আগে আমরা একঝলক দেখি এই দুই মন্ত্রণালয় থেকে গত কয়েক দিনে কি ধরনের বক্তব্য দেয়া হয়েছেঃ
পররাষ্ট্র সচিব ঃ ঢাকাস্থ ভারতীয় দুতাবাসে ভারতীয় নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন এর ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (বা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) ঃ ব্যাপারটি এখনও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঃ এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। ওয়েট এন্ড সি!!
বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা যা জেনেছি অর্থাৎ ঢাকাস্থ ভারতীয় দুতাবাসে নিজস্ব বাহিনী মোতায়েনের খবরটি যদি সত্য ধরে নেই (সত্য ধরে নেই বলছি এই কারণে যে সরকার বা নির্ভরযোগ্য কোন কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারটি এখনও নিশ্চিত করেনি) তাহলে প্রশ্নাতীতভাবে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বক্তব্য “ডাহা মিথ্যা” তার কারণগুলি বিশ্লেষণ করা যায় এই ভাবে ঃ
১। একটি দেশের দুতাবাসের নিযুক্ত লোকবলের সাইজ কি হবে তা অবশ্যই স্বাগতিক দেশের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে। তা হলে ঢাকাস্থ ভারতীয় দুতাবাসে তাদের নিজস্ব বাহিনী লোক আসলো আর বাংলাদেশ সরকার জানে না তা এক কথায় অসম্ভব। সরকারের না জানার কোন কারণই নেই।
২। ৪০-৫০ ভারতীয় নাগরিক একসঙ্গে ভারত থেকে এদেশে নিশ্চয়ই দিল্লীস্থ বাংলাদেশী দুতাবাস থেকে ভিসা নিয়ে এসেছে। ভিসা নেয়ার সময় অবশ্যই এদেশে তারা কোথায় অবস্থান করবে বা কি কারণে এদেশে আসবে তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়েছে। আর যখনই এগুলো তারা দিল্লীস্থ বাংলাদেশী দুতাবাসে জানাবে তৎক্ষনাৎ বাংলাদেশ দুতাবাসের মাধ্যমে আমাদের পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা সরকারের জানার কথা। সুতরাং সরকারের না জানার কোন কারণই নেই। আর যদি সরকার বলে যে তারা জানে না, তবে কি এই সব ভারতীয় নাগরিক বিনা ভিসায় এদেশে এসেছে? এটা কিভাবে সম্ভব?? কেননা বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশ ভারতের কোন প্রদেশ নয়।
৩। বিদেশী দুতাবাসে কর্মরত কুটনৈতিক বা এর অফিসিয়াল ষ্টাফ এবং তাদের পরিবারে প্রতিটি সদস্যদের এদেশে আগমন ও বর্হিগমনের সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি নির্দিষ্ট বিভাগে Arrival & Departure notification পাঠাতে হয় দুতাবাসের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। পÍাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে Arrival notification পাওয়া মাত্রই সরকারের জানার কথা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর আগমন বার্তা। সুতরাং বাংলাদেশ সরকারের না জানার কোন কারণই নেই।
৪। দুতাবাসে নিযুক্ত যে কোন ডিপ্লোমেট বা অফিশিয়াল ষ্টাফ এদেশে আসে তারা তাদের দেশে রিসিভিং কান্ট্রির দুতাবাস থেকে স্বল্পকালীন ভিসা নিয়ে। স্বাগতিক দেশে আসার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ রিসিভিং কান্ট্রির সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোমাটিক বা অফিসিয়াল ভিসা এর জন্য আবেদন করতে হয় দীর্ঘমেয়াদে এদেশে অবস্থানের জন্য। সুতরাং সরকারের না জানার কোন কারণ নেই।
৫। সর্বোপরি জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী স্বাগতিক দেশের সাথে আলাপ আলোচনা ছাড়াই সে দেশে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানোর কোন অবকাশই নেই। কেননা জেনেভা কনভেনশনে সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে সকল স্বাধীন দেশ এক কাতারে। এখানে ছোট বা বড় রাষ্ট্রের আলাদা কোন ব্যাপার নেই। সুতরাং সরকারের না জানার কোন কারণ নেই।
আশা করি উপরের নিশ্লেষণ থেকে এটা পরিস্কার যে ঢাকাস্থ ভারতীয় দুতাবাসে ভারত সরকার তার নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী পাঠাবে আর বাংলাদেশ সরকার তা জানবে না তার কোন অবকাশই নেই।
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে সরকার দেশের সাধারণ জনগনের সাথে কেন এই চোর পুলিশ খেলা খেলছে?
আর মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলছি- “ওয়েট এন্ড সি” দ্বারা আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন?
কি দেখাতে চান দেশের জনগণকে??
সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কল্যানে দেশ আর কত রসাতলে যেতে পারে-তা...??
বিঃদ্রঃ ডিপ্লোম্যাটদের নিয়ে লেখা আমার ১ম পোষ্টটি পড়তে পারেন।View this link
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৫১